| কর্মসূচি শেষ:বিপ্লবী পাপারাৎসিরা বাড়ি ফিরে গেছে |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
সবে ধুপকাঠিটা নিভবে। চোখের জল শুকিয়ে গেছে বোধহয়। এরপর ছুটতে হবে যে যার মত ঘর সন্ধে নামার আগে। রান্না করতে হবে, সিরিয়াল দেখতে হবে, আড্ডা দিতে হবে, বাজার করতে হবে, মেয়েকে টিউশন নিয়ে যেতে হবে।
শোকসভা শেষ। অনেক অনেক ভিডিও করা আছে। ছবি ও তোলা আছে অনেক। সব্বাইকে পাঠিয়ে দিতে হবে। কান্নার ছবি, হাহাকারের ছবি, অসহায়তার ছবি, অনাথ হলে কেমন লাগে তার লাইভ ছবি তোলা - সবটা পাঠিয়ে দিতে হবে। বুর্জুয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করেই শ্রেণীযুদ্ধ করতে হবে, সেলফি তুলতে হবে, ফেসবুক করতে হবে, বাজারি মিডিয়াকে গাল মন্দ করতে হবে, যন্ত্র সেজে চোঁয়াল শক্ত করতে হবে ক্যামেরার সামনে, কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। নেতৃত্ব নির্দেশ দিয়েছে কোথাও।
এটা দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার ছবি হতে পারতো। বদলা নেওয়ার, কসম খাওয়ার ছবি হতে পারতো, বুকের ভিতরে দারুণ আগুন পুষে রাখার ছবি হতে পারতো। পারতো।
এ ছবি শেষমেশ হলো এক অনাথ ছেলের কান্নায় ভেঙে পরার ফ্রেম। তখন চারদিক থেকে পাপারাৎসিরা ঘিরে ধরেছে ওকে। সবকটা ক্যামেরা সবকটা চোখের জল বন্দি করবে, নাটকীয় হবে বদলা নেওয়ার হবু-স্ক্রিপ্ট। লাশের চেয়ে বড় কোন মহাকাব্যের চরিত্র হয়না।
সব্বাই বাড়ি ফিরে যাবে ছবিটা গ্রুপে গ্রুপে, ফেসবুক দেওয়ালে শেয়ার করে। কারোর মা অপেক্ষা করছে, কারোর বাবা, কারোর সদ্য দুনিয়া চিনতে শেখা ছেলে। এদের নিয়েই আগে বাঁচতে শিখিয়েছে নব্য মেনিফেস্টো। আর শিখিয়েছে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে। হৃদয়াঙ্গম হোক বা না হোক। সমব্যাথী হই বা না হই, স্বজন হারানোর যন্ত্রনা বুঝি বা না বুঝি।
সব্বাই বাড়ি ফিরে যাবে। ওই দুটো ফ্রেমের মৃতদেহ আর ছেলেটা ছাড়া। ফ্রেম গুলো ক্রমশ মঞ্চ হবে বা শহীদ নগর বা বার্ষিক শোক আয়োজন। সব্বাই নতুন লড়াই পাবে। নতুন শোক, নতুন রাগ, বাজারি মিডিয়ার মত নতুন ফ্রেম প্রথম পাতা পাবে।
এর মাঝে কোন শহীদের বাবা আধ পাগল হয়ে বেহালা বাজায় মাঝরাতে আর ছেলের ছবি নিয়ে মঞ্চে উঠে পরে তা দেখাতে বয়েই গেল। যা পাব্লিক খাবে তাই দেখাতে হবে। বুঝলে কমরেড?
শৃঙ্খল ছাড়া ও আর একটা জিনিস হারানোর আছে। বোধবুদ্ধি।
©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment