| মাউন্ট রাধানাথ শিকদার |
#আজকেরদিনে #বিস্মৃতবাঙালি
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
হ্যাঁ ঠিক এই নামটাই হওয়া উচিৎ ছিল মাউন্ট এভারেস্টের। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার। হিমালয়ের মহালঙ্গুর হিমাল পর্বতমালায় অবস্থিত। ২৯ মে, ১৯৫৩। আজকের দিনেই তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন৷ প্রথম পা রাখেন।
স্যার জর্জ এভারেস্ট ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের সার্ভেয়ার-জেনারেল। জনপ্রিয় হয়েছিলেন দক্ষিণ ভারত থেকে নেপাল পর্যন্ত মধ্য বৃত্তাকৃতি গ্রেট ট্রিগোমেট্রিক সার্ভে করার জন্য। কিন্তু মাউন্ট এভারেস্ট মাপ জোঁকে তার কোন ভূমিকা ছিলনা।
১৮৫২ এর আগে, পৃথিবী কাঞ্চনজঙ্ঘাকেই বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করতো। ১৮৪০ সালে বাঙালি গণিতবিদ রাধানাথ শিকদার ত্রিকোণমিতিক জরীপ কাজে অংশ নেন। এটা সেসময় ব্রিটিশ সরকারের এক মহাযজ্ঞ ছিল। ৫০০ কেজি ওজনের ভারী ভারী থিওডোলাইট যন্ত্র দিয়ে পাহাড় এর উচ্চতা মাপার কাজ।
রাধানাথ হিমালয়ের বরফে ঢাকা কিছু পর্বতশৃঙ্গ উচ্চতা মাপার কাজ শুরু করলেন।তখনকার দিনে নাম না দেওয়া হিমালয়ের পর্বতশৃঙ্গগুলো সূচিত হত রোমান সংখ্যা দিয়ে। এরকম একটা শৃঙ্গ ছিল পিক 15 (Peak XV)। রাধানাথের নেওয়া প্রায় ছয়টি রিডিং প্রমাণ করলো, পিক 15র উচ্চতা ২৯,০১৭ ফুট, যা পুরনো মাপ অনুযায়ী উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার চেয়েও বেশি উঁচু।
এভারেস্ট সাহেবের পরে ভারতের সার্ভেয়র জেনারেল হন অ্যান্ড্রিউ স্কট ওয়াহ। তিনি নিজে তথ্যটি যাচাই করে জনসমক্ষে রাধানাথের ফর্মুলাকেই স্বীকৃতি দিলেন। এই পিক ফিফটিনই হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্বতশৃঙ্গ।
কিন্তু এর নাম কী হবে ? এভারেস্ট যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন তিনি স্থানীয় এলাকার মানুষের মুখের নাম অনুযায়ী পর্বতশৃঙ্গ নাম প্রস্তাব করতেন। এভাবেই কাঞ্চনজঙ্ঘা, নন্দাদেবী ইত্যাদি নাম প্রচলিত হয়েছে। কিন্তু এই পিক 15 নাম নিয়ে ঝামেলা হলো। কারণ পিক ফিফটিন নেপাল আর তিব্বতের মাঝে অবস্থিত। কোন এক দেশের নাম না দিয়ে ব্রিটিশ নাম প্রস্তাবিত হলো।
কর্ণেল ওয়া নিজের পুরনো প্রভুকে একজন বাধ্য ভৃত্যের মতো খুশি করতে চাইলেন। তিনি রয়াল জিওগ্রাফিক সোসাইটিকে একটি চিঠি লিখে পিক ফিফটিনকে ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ নামের প্রস্তাব জানালেন। যে শৃঙ্গ আবিষ্কার বা পরিমাপে এভারেস্টের কোনো ভূমিকাই ছিল না তার নাম হয়ে গেল মাউন্ট এভারেস্ট।
রাধানাথ শিকদার থেকে গেলো সেই জুনিয়ার স্টাফের মত যে রাতের পর রাত ওভারটাইম করে, মাথা খাটিয়ে, রিসার্চ করে প্রোজেক্ট বানায় ক্লায়েন্ট প্রেজেন্টেশনের জন্য আর আসল দিনে বস নিজে ক্রেডিট নিয়ে বসে। পার্টি থ্রো করা হয় সাফল্যের যেখানে টপ বসেরা একে অপরের তারিফ করতে ব্যস্ত। কেউ পোছে ও না যে পুরো কাজটা করলো দিনের পর দিন খেটে।
মাউন্ট এভারেস্ট যদি আজ ও নেপালে সগরমাথা, তিব্বতে চোমোলাংমা নামে পরিচিত হতে পারে, স্বীকৃত হতে পারে, তবে বাংলায় কেন একে মাউন্ট রাধানাথ শিকদার নামে পরিচয় দেবো না? থাক না ইংরাজি নাম এভারেস্ট সাহেবের নামে। আমরা না হয় আঞ্চলিক স্থরে একে শিকদার নামেই চিনি।
আগামী প্রজন্মকে রাধানাথ শিকদারের মত বিস্মৃত বাঙালির সাথে পরিচয় করিয়ে যাওয়ার কাজ টা এখন থেকেই শুরু করতে হবে আর সেই কাজটা মাউন্ট শিকদার চড়ার মতই কঠিন। বন্ধুর।
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment