কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Friday, July 6, 2018

ভাগাড়ে 'চক্রান্ত' ছিল,হুজুগে পাব্লিক চেটেপুটে খেলো রে তোপসে

ভাগাড়ে 'চক্রান্ত' ছিল,হুজুগে পাব্লিক চেটেপুটে খেলো রে তোপসে |

©----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

কখনো দেখেছেন আলু মাখার আগে কোথায় কোথায় হাত দেয় আপনার প্রিয় ফুচকা ভাই? বা ড্রেনের পাশে যে ডাঁশা ফুলকপি আর নিটোল ক্যাপসিকামের চপ গুলো ভাজা হয় যেগুলো এত বছর গোগ্রাসে খেয়েছেন, তা কি তেল দিয়ে ভাজা হয়? নিদেনপক্ষে যে চিকেন রোলটার স্বাদ অনেকক্ষণ অবধি জিভে লেগে থাকে, তা দেখতে গেছেন কোথা থেকে চালানি? ফেলুদার তীক্ষ্ণ প্রশ্ন জটায়ুকে।

নো স্যার। উত্তর দিল মনমরা জটায়ু। ইদানীং যিনি  ভাগাড়ের মাংস নিয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে যে বিশ্লেষণ চলছে তাতে যার পরনাই বিষণ্ণ ও হতবাগ। বেশ অনেকবার আমার কাছে হতাশা প্রকাশ করেছেন ওয়াটসআপে ভাইরাল হওয়া খিল্লি নিয়ে। কে কত কেজি বিড়ালের মাংস খেলো, মরা কুকুরের মাংস খেলো তাই নিয়ে স্টেটাস আপডেট চলছে। ভাবতে পারছো ময়ূখ ভাই।

মোগলাই,নর্থ ইন্ডিয়ান , সাউথ ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, টিবেটিয়ান, লেবানিজ সব খাবারের রাজধানীতে শেষে কিনা কুকুর বিড়ালের মাংস? উফফফফফ!

সিগারেটের ধোঁয়ার দুটো রিং ছেড়ে ফেলুদা বলতে শুরু করলো, গোলবাড়ির কষা মাংস, অনাদি কেবিনের মোগলাই পরোটা, কুসুমের কাঠি রোল, ফেয়ারলী প্লেসের ফিশ কাটলেট, টেরিটি বাজারের মোমো, মিট স্যুপ, মিত্র কাফের কবিরাজি কাটলেট, জামজামের বিফ মালাই, নিজামের ভুনা নিদেনপক্ষে ক্যাবলার কেবিনের কোন খাবার খেয়ে কখনো মনে হয়েছে কুকুর বেড়াল বা ভামবেড়াল খাচ্ছি?

এত বছর ধরে খাওয়া ম্যাগির সোডিয়াম গ্লুটামেট, চালানি মাছের ফর্মালিন, ডিমের প্লাস্টিক, সব্জির ভেজাল রঙ, কোলার এসিড, কাউয়া বিরিয়ানিতে ব্যবহৃত ভাগাড়ের মাংস- যা খেলেই ক্যান্সার হবে, সেসব খেয়ে এ যাবত কিছু মারণ রোগ হয়েছে কি?

উট যেমন মরুভূমির ক্যাকটাস কাঁটা বেছে খায় না, লালমোহন বাবু জেনে রাখুন ভেতো বাঙালি ও মানুষ, কুকুর বা বেড়ালের পচা মাংস খেতে পারে না। খেলে তার বিকট গন্ধ পাওয়া যেত। ভোঁটকা গন্ধ। কষটা স্বাদ। মন্দার বোসকে দিয়ে যাচাই করে নিতে পারেন। ও জিনিস পাঁঠা বা বিফ না। চিকেন তো নয়ই সব রাবিশ!

জেনে রাখুন, পচা, ভাগাড়ের কোন মাংস ফ্রিজে রেখে দিলেও তাতে ফাংগাস জন্ম নেবে। পচন ধরবে রান্না হলেও। খেলে ফুড পয়জেনিং অবধারিত। প্রথমে শ'য়ে শ'য়ে লোকের আন্ত্রিক হবে, তারপর ওলাওঠা, তারপর রক্ত বমি, পাতলা পায়খানা করতে করতে মৃত্যু হবে অর্ধেক কলকাতাবাসীর। অনেক লাশ। আমাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে কেস। বোমকেশ বক্সিকে আসতে হবে এই বধ্যভূমিতে।

যারা এই প্রচারটা করছে তাদের একাংশ  সুপরিকল্পিত ভাবে করছে রে তোপসে। তারা দেখবি বেছে বেছে কলকাতার স্ট্রিট ফুডওয়ালাদের টার্গেট করেছে।  তাদের যারা জিএসটির আওতায় নেই, যারা অসামান্য স্বাদু খাবার দিচ্ছে কম খরচায়, যারা এখনো ওয়ালমার্ট, পতাঞ্জলী ও রিলায়েন্স ফ্রেস এর কাছে মাথা নোয়ায়নি। যাদের খাবার খেতে এখনো দেশ বিদেশ থেকে লোক আসে কলকাতা কালচার চেখে দেখতে।

সরল মন। আমি জিজ্ঞেস করেই বসলাম। ফেলুদা একাংশ কেন বললে? আর এক অংশ তবে কে? কারা ভাগাড়, আমিষ, কুকুর, বেড়াল এসব জুরে আমাদের বমি করাচ্ছে?

সিলুয়েটে ছ'ফুটের ফেলুদা। অমোঘ উক্তি। মগনলাল মেঘরাজ অভি জিন্দা হে ভাই। ওর আমাদের Food habit নিয়েই এলার্জি। সাথে মোটা টাকার ক্রুনি ক্যাপিটালিজম সুড়সুড়ি। পতাঞ্জলী, রিলায়েন্স, মেট্রো,ওয়ালমার্ট ছাড়া কোন মাছ, মাংস, সব্জি, মুদির দোকান থাকবে না। থাকতে পারেনা।

"হাইলি সাসপিশিয়াস" অনেকক্ষন ফেলুদার মোনোলগ শুনে লালমোহনবাবুর রিয়েকশন। এরপর পঞ্চায়েত ভোট আসবে, ক্ষেতে খামারে লাশ পরবে যা ভেজাল রঙের চেয়ে বড় খবর। লালমোহন বাবু দিব্বি আবার চিকেন খাবে। প্রেফার করবে কেএফসি। যদিও কবেকার মাংস ভিনিগার দিয়ে দেওয়া হয়, কেউ প্রশ্ন করবেনা।

ফেলুদা আগেও যেমন রাস্তার বিরিয়ানি, রোল, কাটলেট খেতো, এখনো তাই খাচ্ছে। স্রেফ মগনলাল মেঘরাজ ইজ ব্যাক। যেন তেন ভাবে বাঙালিকে ও চাড্ডি ও শাকাহারি বানিয়েই ছাড়বে।

এসবের মাঝে সিধু জ্যাঠা বলেছিল, আমাদের বেঁধে বেঁধে থাকতে হবে। ভাগাড়ে পচা মাংস না 'চক্রান্ত' ছিল,হুজুগে পাব্লিক চেটেপুটে খেলো রে তোপসে। তাই থাকছি। হরি ও হায়দার মিলে।

পুনশ্চ : তপেশ রঞ্জন মিত্র এখানে ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ। তোপসে ইদানিং ভজহরি মান্না রেস্তোরাঁ চালায়। ভাগাড়ের মাংস দেয়না বলেই জানা গেছে।

©--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment