কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Friday, July 6, 2018

কাজের লোক আজ আসেনি, ঝলসে গেছে?

| কাজের লোক আজ আসেনি, ঝলসে গেছে? |

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আজ বাড়িতে কাজের লোক আসেনি। ভোট দিতে গেছে। কাল ফিরে আসবে ঝলসে যাওয়া লাশ, পোঁড়া মাংস, বুকের কাপড় খুলে দেওয়ার, সপাটে চড় মারার নানা কিসসা নিয়ে। ধরুন আপনার মডিউলার কিচেনে রান্না করতে করতে, বা ভিট্রিফায়েড ফ্লোর মুছতে মুছতে যদি এসব গল্প শোনায় ও? বমি পাবে?

আমরা যারা আজকের দিনটা আর পাঁচটা দিনের মতই আপিস, ক্লাবে, ক্যাবে, বিগ বাস্কেট বা ফেসবুকে কাটাচ্ছি, তাদের জানানোটা দরকারি।

আমরা যারা আজ হাহুতাস করছি পঞ্চায়তে ভোটার কাজের মাসি কাজ করতে এলো না বলে, তাদের জানানো টা দরকারি।

যে ছেলেটা খবর পড়ে টুইটারে আর লাইক মারে ইন্সটাগ্রামে তাকে জানানোটা দরকারি। হ্যাশট্যাগে হ্যাশট্যাগে #PanchayatPoll #DeathOfDemocracy ট্রেন্ড করানো দরকারি।

যে মহিলা গোটা দিন সিরিয়ালে সিরিয়ালে মগ্ন তাকে টেনে হিঁচড়ে ব্রেকিং নিউজ টা দেওয়া দরকারি।

এটা জানানো দরকারি যে পশ্চিম বাংলায় আজ দুজন মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ তারা সিপিআইএম করতো বলে। সে ভোটে প্রার্থী হয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম গনতন্ত্রের এক সামান্য অংশ হতে চেয়েছিল বলে। জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
ধরুন আপনাকে কেউ সপাটে একটা থাপ্পড় মারলো। যে মারলো তাকে মনে রাখবেন? বা আপনার চোখে একটা সজোরে ঘুষি মারলো কেউ? বা আপনার বউ এর শাড়ি সবার সামনে খুলে দিলো। ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়ার অজুহাতে ওর বুকে পেটে হাত বুলিয়ে নিলো। কিংবা আপনার বাবাকে আপনার সামনে কুপিয়ে দিলো বা ঘাড় ধাক্কা দিলো আপনাকে কেউ?  আপনি মনে রাখবেন ওদের? যারা এগুলো করলো?

মানুষ কিন্তু মনে রাখছে। তিলতিল করে রাগ জমিয়ে রাখছে চড়াই পাখির মর কলজেতে। এই কলজেই না বাজপাখির মত বৃহৎ হয়। খুবলে খায় প্রতিরোধে।

আজ দুটো মানুষকে কয়েকজন জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরে দিয়েছে বলে অভিযোগ। ওদের দোষ বলতে একজন পৃথিবীর বৃহত্তম গনতন্ত্রের অংশ হতে চেয়েছিল আর আরেকজন মানে তাঁর স্ত্রী পাশে ছিলো পুরোটা সময় লাল কোন এক পতাকা শক্ত করে ধরে।

আপনার যদি বেগুন, চিংড়িমাছ বা মাশরুমের মত সিপিআইএমে এলার্জি থাকে, তবে জানুন, উনি এক বিবাহিত সাংসারিক মানুষ ছিলেন, গ্রামের মেঠো মানুষ ছিলেন, গরিব ঘামের গন্ধওয়ালা মানুষ ছিলেন, ধর্মে হিন্দু মানুষ ছিলেন, জাতে পিছিয়ে পরা মানুষ ছিলেন, খেটে খাওয়া মানুষ ছিলেন। এবার রাগ হচ্ছে? জ্যান্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এই এতগুলো পরিচয়ে বাঁচা মানুষ টাকে। স্রেফ ভোট প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার অপরাধে। এর কয়েকদিন আগে, আরেক জনকে, গুলি করে মারা হল। কৃষক ছিল সে। মুসলিম ছিল, লড়াকু ছিল, সরকারবিরোধী ছিল। হাফিজুল ছিল।

এই মানুষ গুলো, অর্থাৎ হিন্দু হোক বা মুসলিম,  উঁচু জাত হোক বা দলিত, তারা কেউ সুরক্ষিত নয় বাংলায়।

এরা ধর্ম বলতে খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থাকা বুঝেছিল। উন্নয়ন বলতে বুঝেছিল হাতে হাতে কাজ, বৃদ্ধি। এই সামান্য দাবী নিয়ে যাদের লড়াই এক আকাশ, অভিযোগ তাদের পুড়িয়ে মারা হল। দেখা গেলো মন্ত্রী থাপ্পড় মারছে।

মরে গেল তো শেষই হয়ে গেলো। কিন্তু এরএরা যারা বেঁচে যাচ্ছে? এরপর ধুলো বালি ঝেড়ে, চোঁয়াল শক্ত করে, রক্তাক্ত অবস্থায় যদি যে বিরোধী যেখানে শক্তিশালী তার পাশে ঠান্ডা চোখে দাঁড়ায়? ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেয় পাল্টা চড়াম চড়াম শব্দকল্পদ্রুম? খুব কি খারাপ হবে?

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment