| সুজ্জাত বুখারি মরিয়া প্রমান করিলেন তিনি দেশদ্রোহী নন |
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
সুজ্জাত বুখারির বরাবর আপত্তি ছিলো কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ত্রাসবাদী বলায়। উনি দিকভ্রান্ত বলতেন ওদের। উনি বিশ্বাস করতেন একটা সকাল আসবে যখন গোটা কাশ্মীরে আর সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হবেনা, একটাও পেলেটগানের দরকার হবেনা, একটাও লাশ কাঁধে বাবাকে জেহাদ পুষতে হবেনা।
সুজ্জাত বুখারি পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। কাশ্মীরীয়তের প্রেমে মশগুল ছিলেন। উনি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে একটা পরমাণু শক্তিধর দেশ থেকে আলাদা হতে গেলে আর একটার সাহায্য নিতে হবে। স্বাধীনতা সেভাবেই আসতে পারে। শান্তির পথ যেমন।
সুজ্জাত বুখারি যাদের হয়ে কলম ধরেছিলেন, সরব হয়েছিলেন, ইয়া বড় এক রাষ্ট্রকে তুলোধোনা করেছিলেন, আজ তাদেরই হাতে ওকে খুন হতে হলো।
জানিনা যীশুর পুনঃজন্ম হয়েছিলো কিনা। জানিনা সুজ্জাত বলতে পেরেছিলো কিনা: "হে ঈশ্বর এদের ক্ষমা করে দাও। এরা নিজেরাই জানেনা এরা কি করছে"। কিন্তু সুজ্জাত শেষদিন অবধি নিজের কথাগুলো লিখে যেতে পেরেছিলো। ওদের হয়ে লড়ে যেতে পেরেছিলো।
কয়েক ঘন্টা হয়েছে মাত্র। লাশ এখনো ঠান্ডা ও হয়নি হয়তো। এরপরই শুরু হবে একে শহীদ বা দেশদ্রোহী সাজানোর পালা। যারা গৌরী লঙ্কেশ খুনে পরোক্ষ অভিযুক্ত তারা অক্সিজেন পাবে। ক্রমশ কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে তাদের যারা রাষ্ট্রকে সমালোচনা করে থাকে। তারপর সমস্ত লঙ্কেশ, পানসারে, ডাভোলকারদের রক্ত ধুয়ে ফেলা হবে সুজ্জাত বুখারির মৃত্যু দিয়ে।
অনেক মৃত্যু ঠেকে শেখায়। কালোকে কালো সাদাকে সাদা বলতে শেখায়। সুজ্জাতের মৃত্যু সেরকমই ঈদের আগের এক সতর্কবাণী। কাশ্মীর নামের এক আগ্নেয়গিরি ফেটে পরার আগে। যে হাতে এখনো পাথর আছে সেহাতে কালাশনিকভ ধরার আগে। যে মেধাবী ছাত্র স্বপ্ন দেখতো মুম্বাই বা দিল্লীতে বড় চাকরি করবে তার সবকিছু ছেড়ে হিজবুলে নাম লেখানোর আগে। যে বৃদ্ধ আজ ও মেহেমান নৌয়াজিতে বিশ্বাসী তার কাল মানববোমা হওয়ার আগে।
রোম্যান্টিকতা ছেড়ে মুখ খুলুন। স্পষ্ট করুন মতামত। যারা ঈদের তোয়াক্কা না করে, আল্লার নামে একজন সাংবাদিককে মেরে ফেলতে পারে তারা সন্ত্রাসবাদীই। এরাই বাংলাদেশে রাজাকার, মধ্যপ্রাচ্যে আইসিস, পাকিস্তানে লস্কর বা আপনার কলকাতায় ওই যারা কোন নির্বাসিত লেখিকার নিষিদ্ধ কোন বইয়ের একপাতা ও না পড়ে শহরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
একটা সময় শুরু হয়েছে যখন সিনেমাহল থেকে শৌচাগার সব জায়গায় নিজের দেশত্ববোধের পরিচয় দিতে হচ্ছে। না হলেই দেশদ্রোহী বলে দেগে দেওয়া হবে। এরকম এক সময় সুজ্জাত বুখারি জিবদ্দশায় না পারিলেও মরিয়া প্রমান করিলেন তিনি দেশদ্রোহী নন। সন্ত্রাসবাদীর বুলেট তার শরীর ও ঝাঁজরা করতে পারে।
সুজ্জাত বুখারি একটা অলীক স্বপ্নে বিশ্বাস করতেন। উনি বিশ্বাস করতেন একটা সকাল আসবে যখন গোটা কাশ্মীরে গোলাপ ও টিউলিপ ফুটবে। একটাও লাশের দরকার হবে না স্বাধীনতা পেতে, একটা ও পেলেট অন্ধ করে দেবেনা আগামী প্রজন্মের। এই অসময়ে গল্পবলিয়ে, ব্লগার, সাংবাদিকরাই তো স্বপ্ন দেখবে। তা নিয়ে লিখবে দিনবদলের ভোরে।
সুজ্জাত বুখারির চে গেভারার সাথে আলাপ ছিলোনা। আজ চে'র জন্মদিন ছিল। আজ স্পর্ধার জন্মদিন। আজ প্রতিস্পর্ধার মৃত্যুদিন।
©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment