কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Friday, July 6, 2018

সৃজিত এরপর ছবি না করলেও চলবে: একটা "উমা"ই সিভিতে যথেষ্ট

| সৃজিত এরপর ছবি না করলেও চলবে: একটা "উমা"ই সিভিতে যথেষ্ট |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

"ইয়েতি ভালো লাগেনি না? আশা করি উমা ভালো লাগবে।"

মেসেঞ্জারে আমি আমতা আমতা করে লিখলাম, ইয়ে মানে লেগেছে যেমন সৃজিতের সব ছবিই বাঙালিদের ভালো লাগে কিন্তু কোথাও একটা কি যেন খুঁতখুঁত করছে।

"খুঁতখুঁতটা ন্যারেটিভের। হাজার হোক ন্যারেটিভ সিনেমা তো। উমাতে এটা জোরদার। "

৯ই ওক্টোবর ২০১৭ সালে সৃজিত বাবুর সাথে কথোপকথন। এরপর গঙ্গা, যমুনা, আরবসাগর দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। ওনার পিতৃবিয়োগ হয়েছে, বাবা হাসপাতালে থাকাকালীন দীর্ঘ অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেককিছুর, শহরটাকে আবার নতুন করে চেনা হয়েছে আর এই অধমের মুম্বাই থেকে দিল্লি বদলি হয়ে আসা হয়েছে। কলকাতার জন্য মনখারাপ দীর্ঘতর হয়েছে, হোমসিকনেস ও।

আমি মাঝে একটু বেশীই খুঁতখুঁতে হচ্ছিলাম সৃজিতের ছবি নিয়ে। প্রত্যাশা দ্বিগুণ করে দিয়েছিলো ঋতুপর্ণ ঘোষ চলে যাওয়াতে। বাঙালি হরবখত একজন আইকনকে খোঁজে। আমরাও ও হয়তো আইকন হান্টে নেমেছিলাম। তাই কাঁটাছেঁড়া করছিলাম ওর সব সৃষ্টি নিয়ে। লিখছিলাম ও। শেষ বোধহয় চতুষ্কোণ ভালো লেগেছিল। হ্যা ওটাই। তারপর ছবি ভালো লাগেনি কিন্তু রুটিনমাফিক দেখেছিলাম সবই। অবশ্যই মোহতা ও সোনি বাবুর এতে আনন্দিত হওয়ার কথা। কিন্তু কোথাও কি যেন খঁচখঁচ করছিল।

পরিচালক "উমা" লিখেছেন দুটো ঘটনা মাথায় রেখে নিশ্চই। এক, কানাডার ওই বাস্তব বা পরাবাস্তব ঘটনা নিয়ে যেখানে সত্যি সমস্ত সহনাগরিক হাতে হাত মিলিয়েছিল, কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিলো এক সাত বছরের শিশুর শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে অকাল ক্রিসমাস উদযাপন করে। দ্বিতীয়টা একটি অস্কার মনোনীত জার্মান ছবি "গুড বাই লেনিন"। ছবির কাহিনী শুরু হয় সমাজতান্ত্রিক পূর্ব জার্মানিতে।  ছেলে ও মায়ের গল্প। মা ডেডিকেটেড কমিউনিস্ট।

চারপাশের পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে। যে-কোনো মুহূর্তে পূর্ব জার্মানিতে সমাজতন্ত্র ভেঙে পরবে। এমন একদিন নায়কের মা একটা গণতন্ত্রের দাবিতে হওয়া ডেমোন্সট্রেশনে যোগ দেয়, মিছিলে ধাক্কাধাক্কিতে মাথায় চোট পায়। জ্ঞান হারিয়ে কোমা। ইতিমধ্যে দুই জার্মানি এক হচ্ছে। পাঁচিল ভাঙছে, মুক্ত অর্থননীতি ঢুকছে।

ছেলেকে ডাক্তার বলেন কোনো পরিবর্তনের কথা জানতে পারলেই তার মায়ের স্নায়ুর ওপরে প্রচণ্ড চাপ পড়বে। মারা যেতে পারে। এতো বড়ো পরিবর্তনের কাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে আর আসে নি, এই সংবাদ কিভাবে মায়ের কাছ থেকে লুকোবে, বুঝবে পারে না ছেলে।

বার্গার কিং, পর্নোগ্রাফি, স্যাটেলাইট টিভি আসছে। মা যদি এসব জানতে পারেন, নির্ঘাৎ মরে যাবে। তিনি পুঁজিবাদী পরিবর্তন কল্পনাও করতে পারে না। অগত্যা শুরু হলো সমাজতান্ত্রিক পূর্ব জার্মানির পুনঃনির্মাণ। গোটা শহরটাকে সেই পাঁচ বছর আগের কমিউনিস্ট মুল্যবোধ, রাষ্ট্রীয়করণ, লেনিনের নস্টালজিয়াতে রুপান্তিত করতে হবে। অন্তত মায়ের সামনে। ছেলে মাকে বাঁচিয়ে রাখতে ঠিক এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়।

'উমা' এই সমস্ত আইডিয়ায় এক অসামান্য ফসল। নিখুঁত এক ন্যারেটিভ। আবেগে গুড বাই লেনিনকে দশ গোল দেবে। হাউজফুল মাল্টিপ্লেক্সে মানুষ কাঁদছে, হেসে ফেলছে, হাততালি দিচ্ছে, কোন চরিত্র কোন দেবতাকে অনুকরণ করে তৈরি তা পাশের দর্শকের অসুবিধা সৃষ্টি করে উঁচু গলায় বিশ্লেষণ করছে, অনির্বাণ ঠিক কতগুলো নাটক করেছে তার জি.কে ঝালিয়ে নিচ্ছে, সারা অঞ্জনা ভৌমিক বা নীলাঞ্জনার চেয়ে ভালো অভিনয় করবে কিনা তা নিয়ে মতবিরোধ চলছে। এ সমস্ত কিছুই আড়াই ঘন্টা ধরে হলে চলছে। টানটান।

গোটা ছবিটাকে বেঁধে রেখেছে কয়েকটা গান। মণিরত্নমের নাম যদি স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকে এআর রহমানকে আবিষ্কার করার জন্য, বনসালী সাহেব যদি কদর পায় ইসমাইল দরবারকে চেনানোর জন্য তবে সৃজিত মুখুজ্জে নির্দিষ্টভাবে ক্রেডিট পাবে অনুপম রায় নামক 'মায়াবী কি যেন একটার' সাথে বাঙালিকে আলাপ করিয়ে দেওয়ার জন্য। এখানে সুর কথা বলে। কন্ঠ পুরস্কার দাবী করে।

এবার আসি, Anjan Dutt অঞ্জন দত্ততে। ভদ্রলোক খারিজ ছবিটার পর হয়তো এই উচ্চতায় আর কোন ছবিতে নিজেকে নিয়ে যান নি। আরো অনেক মশলা বাকি আছে স্যার, দেখিয়ে যান। কোথাও দার্জিলিং বো ব্যারাকের গন্ধ নেই, জ্যাজ নেই, কালো চশমার কেত নেই। থাকার মধ্যে আছে একটা রক্তমাংসের চরিত্র। বহ্মানন্দ। বহ্মানন্দ। বহ্মানন্দ।

আমি Rudranil Ghosh Rudy,  অনির্বাণ, নীলকে নিয়ে সমালোচনা করার যোগ্যতা লাভ করিনি এখনো। সারা সেনগুপ্ত দীর্ঘায়ু হোক। অনেক অনেক বড় হোক। ভালো ছবি করুক। ওর বাবা যিশুকে নিয়ে কিছু বলবো না। যে ঋতুদার ব্লু আইড বয় তাকে নিয়ে নৈব নৈব চ। এখুনি আকাশ থেকে ঋতু দা বাঁদরমুখো, ঢ্যাঙাবদন ইত্যাদি আজগুবি গালাগাল শুরু করবে নয়তো।

সৃজিতের বরাবরের অভ্যেস চটক, চমক, রেকর্ড মাখা একটা সিন বা শট বা ছাপ রেখে যাওয়া নিজের ছবিতে। ওই যে অটোগ্রাফে রুদ্রপ্রসাদ, জাতিস্বরে প্রফেট সুমন গোছের। এখানে তিনটে চটক। এক, এতগুলো পরিচালক এক ছবিতে। দুই, বহুদিন পর সিধু ও পটা একসাথে 'এসো বন্ধু' গানে। আর তিন, ওই হাসপাতালে মনোজ মিত্রের দৃশ্যটা। আজীবন ইউটিউব ভিডিও হয়ে অমরত্বলাভ করবে। গলার কাছে দলা পাকিয়ে থাকবে।

Srijit Mukherjiকে অভিনন্দন। রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহেরা একটা রঙ দে বসন্তী করেছে, গোয়ারিকর একটা লাগান, হিরানী একটা থ্রি ইডিয়ট। আপনি মাথায় রাখবেন আপনি একটা উমা বানিয়েছিলেন। সিভিতে রেখে দিন। এবার আরাম করুন। আপনাকে নিজের প্রথম রাজনৈতিক ছবিটাও বানাবার জন্য। কে কখন গরু খাবে, কে কখন নামাজ পরবে তা একান্তই আমার বিষয়। মহিতোষ শূর বা আমি যাদের বদ সাম্প্রদায়িকাসুর বলি তারা নিপাত যাক বা কলকাতার জল বাতাসে পালটে যায়। অসামান্য অভিনয় করা, দু হাত তুলে একটা বাচ্চা মেয়ের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য নেত্ত করা বাবুল দা ও সেটা জানে। বাবুল দা ও তো আদপে বাংলাঅন্তপ্রাণ। বাংলাকে নিয়ে যে যতই ভলিবল খেলার চেষ্টা করুক না কেন বাংলা থাকবে বাংলাতেই ওই এপিগ্লটিসে দলা পাকানো কি একটা হয়েই।

ধ্যাত!  আমি ও এই এঁদো নয়ডায় বসে বড্ড মিস করছি কলকাতার এই মানুষগুলোকে। যারা একহাতে বোরোলিন আর এক হাতে মাংকি ক্যাপ নিয়ে সব চ্যালেঞ্জ নিতে পারে। সব!

অক্ষয় থাক আমার শহর! শিগগির ফিরছি।

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment