| বিরাট একটা শাদি,অজানা তথ্য,বেশ ভয় আর শেষে টুইস্ট |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
এ যেন রূপকথার বিয়ে। স্বপ্নের নায়ক আর রাজকন্যার বিলেতের রাজবাড়িতে বিয়ে।
বিয়ের ছবিটা বড্ড মিষ্টি। যেমন দারুণ বরকে লাগছে তেমন সুন্দর বউকে। ঝকঝকে এক নবদম্পতি। দেখলেই মন ভালো হয়ে যাওয়া। আসুন কিছু অজানা তথ্য দিই এই বিয়ে নিয়ে। শেষে ভয়ের কারন।
১). এলব্যামের সব ছবি তুলেছেন পৃথিবী বিখ্যাত ওয়েডিং ফটোগ্রাফার জোসেফ রাধিক। প্রতিদিনের শ্যুটে সাধারণত পাঁচ লাখ করে হাঁকেন দিল্লি বা বম্বে হলে, বাইরে হলে ডবল। এইক্ষেত্রে বিয়ে হল টাসকানি ইটালিতে, প্রায় দুকোটি খরচা হয়েছে কেবল ছবি ও ভিডিওফিল্মিং এ। 'ফিল্ম'ই বটে।
২). অনুষ্কা ও বিরাটের বিয়ে ও বউভাতের সব ছবির এক্সক্লুসিভ রাইট বেচে দেওয়া হবে নির্দিষ্ট ম্যাগাজিন ও বিনোদন চ্যানেলকে। দুকোটির অনেকটা উঠে আসবে ওখান থেকে।
৩). বিয়ের পর বউভাত হবে দিল্লির তাজ ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ এ। রিসেপশনের নিমন্ত্রণপত্র ছাড়াও একটা মস্ত মিষ্টির বাক্স ও ড্রাই ফ্রুটসের ঝুড়ি উপহার দেওয়া হয়েছে। নিমন্ত্রণপত্রতে একটা ইউনিক QR Code আছে। সেটি স্ক্যান করা আবশ্যিক। নচেৎ নয়।
৪). সব্যসাচী মুখার্জী অনুষ্কার পোষাক ও গয়নার দ্বায়িত্বে ছিলেন। সব্যসাচী হেরিটেজ জুয়েলারি কালেকশন থেকে কেনা দশ লাখি হিরের নেকলেস পড়েছিল নায়িকা। আনকাট ডায়মন্ড, মাঝে চুনি ও নিচে মুক্তো বসানো। সাথে একই রকম ঝুমকো।
৫). বিয়ের পোষাক ছিল গুলকন্দ বারগেন্ডি রঙের। কলকাতার শ্রেষ্ঠ কারিগর দ্বারা হাতে বোঁনা জরদৌসি ও মারোরি লহেংগা, মাঝে মুক্তোদানা বসানো।
৬). বিরাট দিল্লির পাঞ্জাবি ছেলে। তার জন্য ছিল হাতে বোঁনা বেনারসি কাজের নকশী করা শেরওয়ানি যাতে গোলাপ কাঠের বোতাম লাগানো। সাথে গোলাপি রঙের কোটা সিল্কের পাগড়ী। বুকে পিতলের ব্রোচ। একটিও মান্যবর থেকে কেনা নয়।
৭). পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ছিল শাদিস্কোয়াড নামক সংস্থা। চার মাস ধরে প্ল্যানিং চলেছে। টপ বস ছাড়া বাকি সদস্যরা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। সবাই জানতো বড়লোক কোন ক্লায়েন্ট এর বিয়ে হবে বিদেশে। সেই মতো সেট ডিজাইন, লজিস্টিক সাজানো হয়।
৮). হানিমুনে ভিরুষ্কা যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা।দুজনের কেউ কাজে যোগ দেবে না।
এ তো গেল বিয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। পাঠক গোগ্রাসে গিললো। এবার ভয় পাচ্ছি যা নিয়ে তা শুনুন নাকি?
ভয়টা অনুষ্কার মত ওই অসম্ভব সুন্দর মেয়েটা আর বিরাটের মত চঞ্চল একরোখা ছেলেটাকে নিয়ে। হাজার ওয়াটের আলো, নিউজপ্রিন্ট, বাইট, জয়ধ্বনি, ফ্যানক্লাব, স্টেডিয়াম এর আওয়াজ এর মাঝে টিকিয়ে রাখা একটা দাম্পত্য নিয়ে। কারন
আজ থেকে রোজ, প্রতিবার, প্রতি ম্যাচে, প্রত্যেকটা টুর্নামেন্ট এ বিরাট একটা বোঝা নিয়ে মাঠে নামবে। ওকে ভালো রান করতেই হবে। জিততেই হবে। অন্তত বিয়ের এক বছর। নয়তো নববধূকে "ডাইনি" "অপয়া" "পানৌতি" "কালমুহি" সহ একাধিক নামে ডাকা হবে। বলা হবে যবে থেকে বিয়ে হল, বিরাটের ফর্ম নেই।
অন্যদিকে অনুষ্কা যে ছবিই করুক, বলা হবে কেরিয়ার শেষ, জরিপ করা হবে কতো কেজি ওজন বাড়লো। ঠোঁটে চর্বি জমলো?ছবি ফ্লপ হলে তো কথাই নেই। এবার বাচ্চা টাচ্চা করে বাড়িতে থাকুক না বাপ!
ডবল সেঞ্চুরি, রেকর্ড ভাঙা ইনিংস খেলেছে বিরাট। এবার আসল ইনিংস। সমাজের সাথে লড়াই করে, ঘরেবাইরে মানিয়ে চলে, অনেক খারাপ লাগা আপোষ করে ভীরুষ্কার সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষারত দেশ। শুভাকাঙ্ক্ষী।
দুজনেই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা, মধ্যবিত্ত ভালোলাগা, পাড়ার ছেলে, পাশের বাড়ির মেয়ে থেকে একদিন রাজপুত্তুর আর রাজকন্যা হওয়া। অনেক অল্প বয়েসে অনেক কিছু পাওয়া। যত্নে থাকুক এই ভালোবাসা। হাজার পাপারাজ্জি আর গুজব আর মশলামাখা নিউজপ্রিন্টের মুখে ঝামা ঘোঁষে।
এত গেল বিয়ের তথ্য, খুঁটিনাটি, ভয়। এবার শেষ পাতের টুইস্ট টা হল, মান্যবর ওয়েডিং কালেকশনের বিজ্ঞাপণী ছবিটা মনে আছে নিশ্চই? বিয়ের পর কি কি করবে তার প্রতিজ্ঞা নিচ্ছে দুজন? এবার মান্যবর দ্বিতীয় একটা ভিডিও নাকি বের করছে যেখানে দুজনের সাতপাক ও অগ্নিসাক্ষী রাখার দৃশ্য দেখা যাবে। বিয়ে করার দৃশ্য তখনই শুটিং করে নেওয়া। তুখোড় বিপণনী বুদ্ধি দিন গুনছিল বিয়ের। এবার সেই ভিডিও গাঁক গাঁক করে চলবে। খুনের খবরের মাঝে, ধর্ষণের খবরের মাঝে, খারাপ খবরের মাঝে।
রূপকথা দেখতে কার না ভালো লাগে? সবকিছু ঝকঝকে, গ্লানি নেই, দারিদ্র নেই, ক্ষোভ নেই। থাকার মধ্যে আছে একটা বাজার নির্ধারিত গুড লাইফ। অনেকটা বড় পকেট আর এক আকাশ ভোগবাদ।
©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ