কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, March 22, 2018

| বিরাট একটা শাদি,অজানা তথ্য,বেশ ভয় আর শেষে টুইস্ট |

| বিরাট একটা শাদি,অজানা তথ্য,বেশ ভয় আর শেষে টুইস্ট |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

এ যেন রূপকথার বিয়ে। স্বপ্নের নায়ক আর রাজকন্যার বিলেতের রাজবাড়িতে বিয়ে।

বিয়ের ছবিটা বড্ড মিষ্টি। যেমন দারুণ বরকে লাগছে তেমন সুন্দর বউকে। ঝকঝকে এক নবদম্পতি। দেখলেই মন ভালো হয়ে যাওয়া। আসুন কিছু অজানা তথ্য দিই এই বিয়ে নিয়ে। শেষে ভয়ের কারন।

১). এলব্যামের সব ছবি তুলেছেন পৃথিবী বিখ্যাত ওয়েডিং ফটোগ্রাফার জোসেফ রাধিক। প্রতিদিনের শ্যুটে সাধারণত পাঁচ লাখ করে হাঁকেন দিল্লি বা বম্বে হলে, বাইরে হলে ডবল। এইক্ষেত্রে বিয়ে হল টাসকানি ইটালিতে, প্রায় দুকোটি খরচা হয়েছে কেবল ছবি ও ভিডিওফিল্মিং এ। 'ফিল্ম'ই বটে।

২). অনুষ্কা ও বিরাটের বিয়ে ও বউভাতের সব ছবির এক্সক্লুসিভ রাইট বেচে দেওয়া হবে নির্দিষ্ট ম্যাগাজিন ও বিনোদন চ্যানেলকে। দুকোটির অনেকটা উঠে আসবে ওখান থেকে।

৩). বিয়ের পর বউভাত হবে দিল্লির তাজ ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ এ। রিসেপশনের নিমন্ত্রণপত্র ছাড়াও একটা মস্ত মিষ্টির বাক্স ও ড্রাই ফ্রুটসের ঝুড়ি উপহার দেওয়া হয়েছে। নিমন্ত্রণপত্রতে একটা ইউনিক QR Code আছে। সেটি স্ক্যান করা আবশ্যিক। নচেৎ নয়।

৪). সব্যসাচী মুখার্জী অনুষ্কার পোষাক ও গয়নার দ্বায়িত্বে ছিলেন। সব্যসাচী হেরিটেজ জুয়েলারি কালেকশন থেকে কেনা দশ লাখি হিরের নেকলেস পড়েছিল নায়িকা। আনকাট ডায়মন্ড, মাঝে চুনি ও নিচে মুক্তো বসানো। সাথে একই রকম ঝুমকো।

৫). বিয়ের পোষাক ছিল গুলকন্দ বারগেন্ডি রঙের। কলকাতার শ্রেষ্ঠ কারিগর দ্বারা হাতে বোঁনা জরদৌসি ও মারোরি লহেংগা, মাঝে মুক্তোদানা বসানো।

৬). বিরাট দিল্লির পাঞ্জাবি ছেলে। তার জন্য ছিল হাতে বোঁনা বেনারসি কাজের নকশী করা শেরওয়ানি যাতে গোলাপ কাঠের বোতাম লাগানো। সাথে গোলাপি রঙের কোটা সিল্কের পাগড়ী। বুকে পিতলের ব্রোচ। একটিও মান্যবর থেকে কেনা নয়।

৭). পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ছিল শাদিস্কোয়াড নামক সংস্থা। চার মাস ধরে প্ল্যানিং চলেছে। টপ বস ছাড়া বাকি সদস্যরা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। সবাই জানতো বড়লোক কোন ক্লায়েন্ট এর বিয়ে হবে বিদেশে। সেই মতো সেট ডিজাইন, লজিস্টিক সাজানো হয়।

৮). হানিমুনে ভিরুষ্কা যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা।দুজনের কেউ কাজে যোগ দেবে না।

এ তো গেল বিয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। পাঠক গোগ্রাসে গিললো। এবার ভয় পাচ্ছি যা নিয়ে তা শুনুন নাকি?

ভয়টা অনুষ্কার মত ওই অসম্ভব সুন্দর মেয়েটা আর বিরাটের মত চঞ্চল একরোখা ছেলেটাকে নিয়ে। হাজার ওয়াটের আলো, নিউজপ্রিন্ট, বাইট, জয়ধ্বনি, ফ্যানক্লাব, স্টেডিয়াম এর আওয়াজ এর মাঝে টিকিয়ে রাখা একটা দাম্পত্য নিয়ে। কারন

আজ থেকে রোজ, প্রতিবার, প্রতি ম্যাচে, প্রত্যেকটা টুর্নামেন্ট এ বিরাট একটা বোঝা নিয়ে মাঠে নামবে। ওকে ভালো রান করতেই হবে। জিততেই হবে। অন্তত বিয়ের এক বছর। নয়তো নববধূকে "ডাইনি" "অপয়া" "পানৌতি" "কালমুহি" সহ একাধিক নামে ডাকা হবে। বলা হবে যবে থেকে বিয়ে হল, বিরাটের ফর্ম নেই।

অন্যদিকে অনুষ্কা যে ছবিই করুক, বলা হবে কেরিয়ার শেষ, জরিপ করা হবে কতো কেজি ওজন বাড়লো। ঠোঁটে চর্বি জমলো?ছবি ফ্লপ হলে তো কথাই নেই। এবার বাচ্চা টাচ্চা করে বাড়িতে থাকুক না বাপ!

ডবল সেঞ্চুরি, রেকর্ড ভাঙা ইনিংস খেলেছে বিরাট। এবার আসল ইনিংস। সমাজের সাথে লড়াই করে, ঘরেবাইরে মানিয়ে চলে, অনেক খারাপ লাগা আপোষ করে ভীরুষ্কার সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষারত দেশ। শুভাকাঙ্ক্ষী।

দুজনেই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা, মধ্যবিত্ত ভালোলাগা, পাড়ার ছেলে, পাশের বাড়ির মেয়ে থেকে একদিন রাজপুত্তুর আর রাজকন্যা হওয়া। অনেক অল্প বয়েসে অনেক কিছু পাওয়া। যত্নে থাকুক এই ভালোবাসা। হাজার পাপারাজ্জি আর গুজব আর মশলামাখা নিউজপ্রিন্টের মুখে ঝামা ঘোঁষে।

এত গেল বিয়ের তথ্য, খুঁটিনাটি, ভয়। এবার শেষ পাতের টুইস্ট টা হল, মান্যবর ওয়েডিং কালেকশনের বিজ্ঞাপণী ছবিটা মনে আছে নিশ্চই? বিয়ের পর কি কি করবে তার প্রতিজ্ঞা নিচ্ছে দুজন? এবার মান্যবর দ্বিতীয় একটা ভিডিও নাকি বের করছে যেখানে দুজনের সাতপাক ও অগ্নিসাক্ষী রাখার দৃশ্য দেখা যাবে। বিয়ে করার দৃশ্য তখনই শুটিং করে নেওয়া। তুখোড় বিপণনী বুদ্ধি দিন গুনছিল বিয়ের। এবার সেই ভিডিও গাঁক গাঁক করে চলবে। খুনের খবরের মাঝে, ধর্ষণের খবরের মাঝে, খারাপ খবরের মাঝে।

রূপকথা দেখতে কার না ভালো লাগে? সবকিছু ঝকঝকে, গ্লানি নেই, দারিদ্র নেই, ক্ষোভ নেই। থাকার মধ্যে আছে একটা বাজার নির্ধারিত গুড লাইফ। অনেকটা বড় পকেট আর এক আকাশ ভোগবাদ।

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| কন্ডোম: দেখবো না, বলবো না, পরবো না |

| কন্ডোম: দেখবো না, বলবো না, পরবো না |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

রাষ্ট্রহুজুর আদেশ করেছেন টিভিতে সকাল ৬ ঘটিকা হইতে রাত ১০ ঘটিকা অব্দি কোন প্রকার প্রতিক্রিয়াশীল, ভারতীয় সংস্কৃতিবিরোধী নিরোধ অর্থাৎ কন্ডোমের বিজ্ঞাপণ সম্প্রচার করা যাইবে না। এটি হয়তো একটি চায়নার চক্রান্ত।

দশটার পর যখন নাগপুরের প্রধান দপ্তরের সমস্ত আলো নিভে যায়, ভাগবান নিদ্রা যান, রাম মন্দিরের দাবী আজকের মত ক্ষান্ত হয়, তখন দেখানো হোক।

তবে দিনভর গোমূত্রের সুফল, ডিও স্প্রের নিরীহ খুনসুটি, শ্রী শ্রী জ্যোতিষীর বিশ্লেষণ, "সাবধান ইন্ডিয়ার" নামে রোজ রাতে ধর্ষণের পুনর্নির্মাণ, ক্ষুদে প্রতিযোগীর আরো খুদে কাপড় পড়ে হানি সিং এর গানে যৌনকাতর নাচ, সানি লিউনির বিনোদনমূলক আইটেম নাম্বার, রাত নটায় সংখ্যাললঘুদের জেহাদ-ফন্দি ফাঁস, উন্নয়নের ফিরিস্তি চাইলেই পাকের নাপাক ইরাদার ধারাভাষ্য একটানা চলতেই পারে।

কন্ডোম একটি অপদেবতার আবিষ্কার। এটি একটি লম্বা রবারের নাস্তিক খাপ যেটি যৌনসংসর্গের সময় কাপুরুষ পুরুষাঙ্গে পরে নিতে হয়। কারন হিন্দু পুরুষ সিংহ এক হুংকারে প্রেগন্যান্ট করে দেয়, সূর্য দেবতা পেটে লাইট তাক করলেই বাচ্চা ঢুকে যায়, মুনি ঋষি হলে মনে মনে ভাবলেই পেট।

কন্ডোম যোনিতে হিন্দুত্ববাদী, দেশপ্রেমিক ও পেহলাজ নিহালিনির মত সংস্কারি শুক্রাণুর প্রবেশ প্রতিরোধ করে যা হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণের পরিপন্থী।

পুরুষাঙ্গ ও যোনির সংস্পর্শ হওয়ার আগেই এটি উত্থিত পুরুষাঙ্গে পরে নিতে হয়, যা প্রগাঢ় কঠিন কাজ। দিনভর রক্ত গরম থাকে দেশদ্রোহীদের দেখে, জাতীয়তাবাদী পুরুষাঙ্গ বলিষ্ঠ রাখতে হয় জেএননিউ, যাদবপুর, ওসমানিয়া, আলীগড়ের দেশবিরোধের সাথে পাল্লা দিতে গেলে। উন্নত শিরদাঁড়া রাখে ওরা, আমরা রাখি গোমূত্র মাখা ব্যাম্বু, রাতে নরম থাকে, ভজন কীর্তনের পরে ঘুমোতে যায় এক রামমন্দিরের স্বপ্ন নিয়ে। হিক!

কন্ডোম গর্ভনিরোধের একটি সুরক্ষিত উপায় নয় নয় নয়। মনুসংহিতাতে লেখা আছে, আমেদাবাদ মুম্বাই বুলেট ট্রেনের ভিতর লেখা আছে, সবার ব্যাংক এ যে ১৫লাখ টাকা ঢুকেছে তার পাসবুকে লেখা আছে। খনার বচনেও লেখা আছে যে এরকম একটি দিন আসবে যবে একটি প্লাস্টিককুন্ড হিন্দু ধর্মের বৃদ্ধি বিরোধী হবে। মুসলমানরা পকাপক জন্ম দিয়ে যাবে দেশদ্রোহী।

মাকু ও নাস্তিকেরা বলে কন্ডোম এইডস ও অন্যান্য যৌনসংক্রমণ প্রতিরোধ করে। বোগাস। এইডস হয় কামদেবের অভিশাপে। যৌনসংক্রমণ হয় লাভ-জিহাদ, গুজরাট মডেলের প্রতি অবিশ্বাস বা ভীনধর্মে বিয়ে করলে। এর সাথে প্রাচীন জ্যোতিষ বিজ্ঞানের কোন সম্পর্ক নেই।

আসলে কন্ডোম যৌনসঙ্গমের বাবরি মসজিদ ভাঙার যে স্বতঃস্ফূর্ততা ও পিটিয়ে মারার যে আনন্দ তা কমিয়ে দেয়, নতুন ভারতের করসেবক ও ফেক আইডি থেকে ক্রমাগত ঢপের প্রচার করতে সক্ষম শিশুর প্রজনন হ্রাস করে । তার উপর কিছু মানুষের রবারে অ্যালার্জি থাকে। যেমন লম্বা দাড়ি, ফেজ টুপি, আজানে অ্যালার্জি থাকে।

যৌনসঙ্গমের সময় যথেষ্ট পিচ্ছিলতা না থাকলে অথবা যদি ঠিক ভাবে পরা না হয় কন্ডোম ছিঁড়ে যেতে পারে। এর জন্য হিন্দু পুরুষদের উচিৎ বেশি করে বিনয় কাটিয়ার ও প্রবীন তোগারিয়ার বক্তৃতা শোনা। পেট্রিয়োটিক অর্গাজম যে সে ব্যাপার না।  এর জন্য রোজ তিন প্যাকেট পতাঞ্জলীর আটা নুডল খেয়ে তরোয়াল মিছিল করা। প্রবল পরাক্রমে কোন সংখ্যালঘুর ঘরে রাত বারোটায় জয় শ্রী রাম বলাতে প্রবল পুরুষত্ব আছে। ঘন পতাঞ্জলী ঘি এর মত ঔরস।

কন্ডোমের বিজ্ঞাপণ শিশুদের অস্বাস্থ্যকর বিষয়ে কৌতূহল তৈরি করতে পারে, এর চেয়ে তাদের সাভারকার, গডসের ইতিহাস পড়া উচিৎ। গুজরাট দাঙ্গার বীরগাঁথা শোনা উচিৎ। বিশ্বাস করা উচিৎ যে তার জন্ম হয়েছিল মা বাবার গোমাতা ও জয় শ্রী রামে ভরসা রাখার ফলে। টপ করে কোলে এসে পরেছিল অযোদ্ধা থেকে।

জজ সাহেব বলে গেছেন ময়ূর এর চোঁখের জল আসলে বীর্য। তাজমহল ছিল তেজো মহালয়া। যেরকম গরু আসলে মা আর গনতন্ত্রের পীঠস্থানে অর্ধশিক্ষা লো জিডিপির কারন। সুতরাং অযথা ভারতের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, আফ্রিকার মত এ দেশেও সম্ভাব্য এইডস, STDর মহামারির আকার ধারণ বা যে বাচ্চা সারাদিন ইন্টারনেট এ মুখ গুঁজে পরে থাকে তার থেকে কন্ডোমের বিজ্ঞাপণ দূরে সরিয়ে রাখার কারন জানা উচিৎ তবে জানতে নেই। কারন সিয়াচেন মে হামারে জাওয়ান মর রহে হে। কোন আলবালগরুর পালের প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন করুন জলবিমানে চড়ে কেমন লাগলো, রাম মন্দিরের দেওয়ালে কি কি স্লোগান থাকবে, রিলিজ হওয়ার আগে পদ্মাবতী কেন গো বলয় সমিতিকে দেখানো হল না?

পেট্রিয়োটিক অর্গাজম যে সে ব্যাপার না।  এর জন্য রোজ পাঁচটা করে মিথ্যাচার সোশাল মিডিয়াতে বেদ পুরান, ধর্ম, জাতের মশলা মাখিয়ে শেয়ার করতে হয়। তবে গিয়ে বিদ্বেষ, দাঙ্গা, দ্বন্দ্ব প্রসব হয়। বেয়ারা কন্ডোম আসলে ওগুলো ও আটকে দেয়।

তবে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল, প্ল্যান তো ছিল কন্ডোম না পড়ে হিন্দু মায়ের কোলে দশ সন্তান জন্ম দেওয়ার। এই বিজ্ঞাপণ বন্ধ হলে যদি মুসলমান বাড়িতেও আবার ২০ সন্তান জন্ম দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়?

©------- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| লুকিয়ে থাকা সান্টা ক্লসের খোঁজে |

| লুকিয়ে থাকা সান্টা ক্লসের খোঁজে |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

সাদামাটা এক ছাপাখানায় অবসরের পর ও হাজার দুয়েক আয় হবে বলে কাজ করতো এক দাদু। বাড়ি ফেরার সময় ময়লা প্যান্টের পকেট থেকে দশটা টাকা বের করে ছটা গুজিয়া কিনে আনতো নাতির জন্য। বড়দিনে বালিশের নিচে রেখে দিত সুগন্ধি রবার, রঙ পেন্সিল, অনেক গুলো মন ভালো করে দেওয়া হজমিগুলি। নাতি ঘুমোতে যাওয়ার আগে দিদার কাছে শুনতো সান্তা ক্লসের গল্প, রাজকন্যার গল্প, ঠাকুমার ঝুলির গল্প। মাথায় হাত বুলিয়ে দিত দিদা।

বছর দশেক পর, দিদার মারা যাওয়ার পর পরই দাদু মারা গেছিল। নাতির সেদিন সেমিস্টার। যেতেই হত। ঘাট কাজ সেরে ফেরার পর, দাদুর আলমারি খুলে এ জিনিস ও জিনিস ঘাঁটতে গিয়ে এক দিস্তে হলদে কাগজ বেরিয়ে এসেছিল। নাতির করা হিজিবিজি, রঙ পেন্সিল দিয়ে আঁকিবুঁকি, অনেক বছরকার।

পুজোয় কক্ষনো বাবার কিচ্ছু দরকার হত না। বাবার সব ছিল। দেখা যেত না যদিওবা। কাঁচভাঙা চিনে মোবাইলে সেলোটেপ লাগানো, একাধিক সেলাই করা একটাই চামড়ার জুতো, কনফারেন্স এ পাওয়া কাঁধের ব্যাগ। সেই ব্যাগ থেকেই ছেলের জন্য একদিন বের করেছিল একটা ল্যাপটপ। উত্তেজিত ছেলে একবার ও জানতে চায়নি এলআইসির কাজ করে  বাবা কিভাবে কিনলো ও জিনিস। বিশ্বাস করেছিল সান্টা আছে কোন এক দেশে। ঠিক চলে আসে এ সময়। দামী কিছু নিয়ে।

মা কখনো চাকরি করেনি। তবু ও নানা রকম খেলনা কিনে দিত। স্কুল থেকে ফেরার পথে আইসক্রিম, বুড়ির চুল, আলো জ্বলা জুতো, ক্যাম্বিস বল, রহমানের ক্যাসেট।

দাদাভাই তো দিনভর ঝগড়া করতো। চুল ধরে টানতো, আমি ও দিতাম ঘুষি। একদিন খুব কেঁদেছিলাম সন্ধেবেলা। আসলে ভোম্বল কিছুতেই ব্যাটিং দেবে না বলেছিল। ও রোজ ব্যাট আনতো। আমায় তো বল কেনার টাকাও দিত না বাবা। আমি লজ্জায়, অপমানে একটানা ফিল্ডিং করেছিলাম। দাদা সবটা দেখেছিল। বড়দিনে কে যেন একটা ক্রিকেট ব্যাট উপহার দিয়েছিল আমায়। এরপর আর কোনদিন দাদার সাইকেলটা চোখে পরেনি। বাবাকে বলেছিল চুরি হয়ে গেছে। থাপ্পড় ও খেয়েছিল। মুচকি হেসেছিল স্রেফ।

বোন বরাবর খুব চুপচাপ। বন্ধু ও ছিল না সেরকম। খালি পড়াশোনা করতো আর দাদাকে দেখতো আড্ডা মারছে, গান লিখছে, প্রেম করছে। মাধ্যমিক এ বোন প্রথম হয়েছিল। দাদা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, একটা সেমিস্টারে ফেল করেছে, স্যার গাঁজাখোর বলে, বাকিরা Loser। মাধ্যমিকের রেজাল্ট এর দিন, টিভিতে বোনের ইন্টারভিউ দেখেছিল দাদা। বোনকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, তোমার আইডল কে? মেয়েটা চকচকে চোখে বলেছিল, দাদা। আমার আইডল আমার দাদা। টিভির ওপারে loser এর গলার কাছে কি যেন আটকে তখন।

O Henry's "Gift of the Magi" এর গল্প মনে আছে? বরের সামান্য আয়, বউ এর সাদামাটা শখ দামী এক চিরুনি কেনার। ঘন লম্বা চুলের জন্য। বরের ও একটা দরকার ছিল। শখের ঘড়িটার স্ট্র‍্যাপ বদলানোর। দুজনেরই শখ পূরণ হয়েছিল। তবে বউ নিজের চুল বেঁচে দিয়ে বরের ঘড়ির স্ট্র‍্যাপ কিনেছিল আর বর ঘড়িটাই বিক্রি করে বউ এর চিরুনি কিনেছিল। সান্টাকে ওরা কেউ দেখেছিল বলে মনে হয় না।

আপনি সান্তা ক্লসকে কখনো চাক্ষুষ দেখেছেন পাড়ায়? ছুঁয়ে দেখেছেন কাছ থেকে ওই নরম লাল কোট, সাদা তুলো? দুটো কথা বলেছেন ওর ভাষায়?

সান্তা ক্লস আমাদের চার দেওয়ালেই আছে। পাজামা পরে, নোংরা শাল জড়িয়ে, হলুদ মাখা আঁচলে, সিঁদুর, সোহাগ এ। ওদের বড়দিন লাগেনা মন ভালো করতে। কেক লাগেনা, ঘন্টা লাগেনা, লাল টুপি, স্লেজ গাড়ি, Elf লাগেনা। এরা রোজ নিজের সন্তানদের একটা দিনবদলের গল্প বলে, একটা সুন্দর সকাল উপহার দেয়, ফেলে আসা দারিদ্র্য ঢেকে দেয় রকমারি বেলুন, লজেন্স, রামধনুতে।

আমাদের মা, বাবা, দাদু, দিদা, দাদাভাই, বোন কেউ প্যালেস্টাইন, সিরিয়া, হামাস, আইসিস, মানববোমা, যুদ্ধ জাহাজ, আংকেল স্যাম এর গল্প বলে না। বাবা মায়ের ধর্ম আধপেটা খেয়ে মোজা ঝুলিয়ে রাখা, উপহার দিয়ে যাওয়া সান্টার নাম করে, একটা ঝলমলে সকাল উপহার দেওয়া সন্তানকে।

পৃথিবীর সব মৃত বাবা মা ই চেয়েছিল সন্তানের কপালে চুমু খেয়ে যেতে। সান্টা ক্লস সাজতে, বন্দুক, আফিম, ড্রাগস এর বদলে কেক, পেস্ট্রি রেখে যেতে।

আসুন রোজকার জীবনের এই সান্টা ক্লস, ওই সুপার হিরোদের ভালোবাসি, ভালো করে দুটো কথা বলি। কাজ না হয় পরে হবে, চাকরি ও হবে। দু চার কথা বলি, মাথায় হাত বুলিয়ে দিক সান্টা।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

#দিল্লিরডায়েরি পর্ব ২

| নয়ডা একটি শহরের নাম, শীতঋতু ইদানীং |

#দিল্লিরডায়েরি পর্ব ২

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ফেলুদা তোপসেকে বলেছিল যে কোন শহর চিনতে হলে পায়ে হেঁটে দেখাই সবচেয়ে ভালো উপায়। ওতে শহরের শ্বাসপ্রশ্বাস, দিনলিপি, ব্যস্ততা, অলস দুপুরের অনেক ছবি চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।

আমার ও পায়ে হেঁটে শহর দেখার বাতিক আছে। তবে দিল্লি আসার পর এই বেয়াদব ঠান্ডা, প্রগাঢ় ল্যাদ আর এই আখাম্বা দিল্লি-নয়ডার জিওগ্রাফি আমাকে ইস্তক জবুথবু করিয়া ফেলিয়াছে। সুতরাং বন্ধুর থেকে একটি  Activa ধার নিলাম, জ্যাকেটের ওপর জ্যাকেট তার ভিতরে থার্মাল তার ভিতরে আমি। চললাম একটা গোটা ছুটির দিন,সময় নিধন করতে।

নয়ডা একটি মজার শহর। এখানে সবাই রাজা যোগীর এই মহান রাজ্যত্বে। যে যেদিক দিয়ে পারে গাড়ি চালায়, বা চালায় না, বা থেমে যায় বা ঝড়ের বেগে যায়। পুরোটাই গণতান্ত্রিক। কেউ মাইন্ড করে না। পুলিশ আছে কোথাও একটা ভগবানের মত কিন্তু নেই।

গোটা শহরটাই একটা রাজারহাট-নিউটাউন। কেবল দিদির ছোঁয়াটাই যা নেই। ত্রিফলা নেই, ঝোপের মধ্যে রোশনাই নেই, দুমদাম শিল্পকলা নেই। থাকার মধ্যে মাখন রাস্তা, আরো মাখন দিয়ে মালিশ করা একদম সোজা রাস্তা, উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ি, সিক্স লেন হাইওয়ে আর দিগন্ত বিস্মৃত ফাঁকা জমি। এককালে চাষার ছিল এখন শিল্পপতি বা সরকারের। চাষার ঘরে বিপুল টাকা ঢুকেছিল। তাতে জমি, ট্র‍্যাক্টার, তিন তলা বাড়ি, দামি গাড়ি, কাঁচা টাকা ঢুকেছিল, বন্দুক কেনা হয়েছিল, মাথা গরম হলেই দুমদাম গুলি চলেছিল আর ছেলেকে বলা ছিল: পুলিশ ধরলেই বলবি, জানতা হেয় মেরা বাপ কৌন হে?

সোহাগি শীতের ওড়না জড়িয়ে থাকা লম্বা রাস্তা ধরে দিকভ্রান্ত সফর ও তো এক আনন্দ। দু পাশে নিরাপদ গাছের ঝাড়, শীতের সকালে ঝিমিয়ে থাকা ধুলো, সদ্য ফিরে যাওয়া কুয়াশা, মিঠে রোদ পিঠে এসে বসে। চলার পথে কাজে লাগে বেশ।

মুম্বাই এর মত এ শহর সদা হাইপার নয়। এর মিঠে রোদ নেওয়ার সময় আছে, নান রুটি তন্দুরে সেঁকে যত্ন করে মাখন লাগিয়ে, মটর পনির দিয়ে খাওয়ার সময় আছে মাত্র ২০টাকায়, এরপর শীতকালীন আড্ডা।

দিল্লির শেষ ও নয়ডার শুরুতে একটা গোটা মল সমর্পণ করা হয়েছে মদ্যপায়ীদের জন্য। তিন তলা স্টার সিটি মল জুরে গোটা ২৫ মদের দোকান, সোডা চিপসের দোকান, কাবাব, তন্দুর, পাব, বার ও বসার জায়গা। নয়ডা এখান থেকেই বোতল তোলে। কারন এখানে ইউনিয়ান টেরিটোরির দামে মাল পাওয়া যায়।

এখানে সন্ধে নামার আগে বেশির ভাগ লোক এলাকাতে ফিরে আসে। এরপর পাড়ায় পাড়ায় তন্দুরের ঠেক, মোমোর দোকান থেকে ধোঁয়া ওঠা সাংসারিক খুনসুটি হয়। বাকিদের জন্য কার ও বার বসে হানি সিং এর গানে গানে। গ্লাস ওখানেই পাওয়া যায়। কেউ কাউকে বিরক্ত করতে আসেনা। সবাই শীত পোয়াচ্ছে চুমুকে।

গোটা শহরটা হিম শীতল এখন। ঠান্ডা ৮,৯ এর ঘরেই অভ্যস্ত। শীর্ষেন্দু লিখেছিলেন, বোধ হয় শীতের অপরাহ্নের মতো বিষন্ন সময় আর হয় না। কেমন যেন মৃত্যু আকীর্ণ চরাচর। এরকম এক চরাচরই ছুটি থাকলে কাছ থেকে দেখার সুযোগ মেলে। বাকিদিন তো অফিসের হিটার ও নিউজব্রেকের উষ্ণতা।

অনেকটা লম্বা পথ ধরে ফিরে এসে, গলা শুকিয়ে যায়, তখন আকণ্ঠ পান করতে হয়। দূরভাষ নিশ্চুপে থাকে গানে, আজ সশব্দ জানান দিলে পারতো প্রেম। এই ঠান্ডা প্রদেশে। আয় চুমু পান করি তারিয়ে তারিয়ে। নারী পুরুষ মিলে মিশে এক হয়ে যাক।

আমি শুরু করি অনিদ্রা উদযাপন, বিষন্ন পৃথিবী তার পূর্বাপর বন্ধুদের ভুলে গেলেও আমি মনে রাখি গত জন্মের প্রেম। গত শহরের প্রেম, উদযাপন। শহর বড্ড ঘন ঘন বদলাচ্ছি আমি।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| তিন তালাক ছাড়া আরো প্রথা আছে: নিষিদ্ধ হোক |

| তিন তালাক ছাড়া আরো প্রথা আছে: নিষিদ্ধ হোক |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

তিন তালাককে ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে মান্যতা দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। আজ বিলটি সংসদে পাশ হল। ভালো কথা। যে পুরুষ মেরুদণ্ডহীন হয়ে একটা মেয়েকে তিনটে শব্দ উচ্চারণ করে ছেড়ে দিতে পারে, কোন ভরণপোষণ ছাড়াই, তার জেলেই পচা উচিৎ।

তালাকের পর স্বামী ও স্ত্রী আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তবে তা শর্তসাপেক্ষ। শর্তটি এই যে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে অন্য কারো সঙ্গে যথাযথভাবে বিয়ে করে শুতে হবে এক রাত এবং নতুন স্বামী তালাক প্রদানের পর আগের স্বামীর সঙ্গে পুনর্বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

কিন্তু মুসলিমদের এই প্রাগৈতিহাসিক প্রথার মত আরো কিছু প্রথা আমাদের ভারতীয় সমাজে রয়ে গেছে যার ফলে কোটি কোটি মেয়ে আজও অবহেলিত, নিপীড়িত। এর সবটাই যে মুসলিম সমাজে ঘটছে না! এগুলোর সংস্কার কবে হবে?

মাথায় রাখবেন, তিন তালাকের ঘটনা ঘটে কেবল ২০লাখ মেয়ের সাথে। বাকি অজস্র মেয়ে অন্ধকার বুকে চেপে আছে।

১). অনেকেই জানে না, গোয়া সহ কোংকান- মালওয়ানী এলাকাতে আজ ও কোন হিন্দু পুরুষ চাইলেই তার স্ত্রীকে এক দিনের মধ্যে ছেড়ে দিতে পারে যদি সে ২৫ বছরের পর ও সন্তানধারণ করতে অক্ষম হয়। বলা বাহুল্য, এই প্রথা আজ ও বহু সমাজে রয়েছে। কথা হয় না।

২). কোন পারসি মহিলা যদি তার সম্প্রদায়ের বাইরে কাউকে বিয়ে করে, তবে তাকে সব পারিবারিক সম্পত্তি, অংশীদারি থেকে বহিষ্কার করা হয়। কোন খুশি বা মৃত্যুর দিনে তাকে ডাকা হয় না।

৩). মনিপুর, নাগাল্যান্ড, মেঘালয় এর মেয়েদের নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যেই বিয়ে করতে হয়। না হলে তাদের একঘরে করা হয়, অনেকক্ষেত্রে খুন ও হয়। হ্যা অনার কিলিং কেবল গো বলয়তেই হয় না।

৪).  হিন্দুরা নামেই একটি বিয়েতে বিশ্বাসী। আদপে একই সাথে বহুবিবাহ এর ঘটনার সাক্ষী আছে ইতিহাস। এখন ও একাধিক পুরুষ আছে যারা একই সময় দুই বউ এর সাথে ঘর করছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

৫). নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটে আজ ও আইনত রক্ষিতা রাখার চল আছে বিবাহিত পুরুষদের। গুগল করুন "মৈত্রী কারার" প্রথা। এই প্রথা অনুসারে পুরুষ তার পছন্দের শরীর সঙ্গীকে খাতায় কলমে সই করে নিজের সাথে রাখতে পারে। যতদিন তার ইচ্ছে। তার জন্য আলাদা ঘর বরাদ্দ থাকে ও তাকে ঝি এর কাজ করতে হয় একটু আধটু।

৬). ভারতে বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধ কিন্তু বাল্য বিবাহ রীতি রেওয়াজের নামে হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আর তাই স্ত্রী এর বয়স ১৫ পেরোলেই তার সাথে যৌন মিলন করা যায় ও ১৮ হলেই পোয়াতি করা যায়। মনে রাখবেন অবিবাহিত কোন মেয়ে যার বয়স ১৮র কম, তার সাথে যৌনমিলন করা কিন্তু ধর্ষণ। সেই মেয়েই যদি বিয়ে করে ফেলে ওই বয়েসে ও রোজ রাতে তার বর জোর করে মিলিত হয়, তা ধর্ষণ নয়।

৭). আপনার প্রাক্তন স্ত্রীকে ধর্ষণ করলে আপনার সাজা কম। কারন আপনার তখনো তার শরীরে কিছুটা দাবী থেকে যায়। স্ত্রীকে ধর্ষণ খাতায় কলমে হয়। আদপে আমাদের সমাজ মেয়েদের একটা বয়সের পর থেকে এটাই শেখায় যে বর যখন চাইবে তখনই কাপড় খুলে বউকে শুতে হয়। বর যদি ফোরপ্লে ছাড়াই মিলিত হয়, সেটাকেই নিয়ম বলে রোজ ধর্ষিতা হতে হয়, মশারির নিচে।

এসব যে কেবল তিন তালাকের ফলেই হয়, তা তো নয়। আজ ও রাজস্থানে সতিদাহ প্রথাকে উজ্জ্বল ভাবে দেখানো হয়। আজ ও মেয়েদের শেখানো হয় যে তার জন্ম একটা অভিশাপ। তার যেন কোনমতেই মেয়ে না জন্মায়। আজ ও বিনা ভরণপোষণ অজস্র অস্বাক্ষর মেয়েকে ফেলে অন্য মেয়ের হাত ধরে পুরুষ।  অসহায় মেয়েটি হয় কোন বৃদ্ধ আত্মীয়কে বিয়ে করে বা বাপেরবাড়ির এক কোনে পরে থাকে।

মুসলিম বিশ্বের অনেক জায়গাতেই 'তিন তালাক' পদ্ধতি নিষিদ্ধ। কিন্তু কোন রাষ্ট্র নায়ক যদি অল্প বয়সে তার স্ত্রীকে ফেলে চলে যায় রাজনীতি করবে বলে, তাকে কোন ভরণপোষণ না দিয়ে, কোন সম্বল না রেখে, বিবাহবিচ্ছেদ না করে, সেই প্রথাকে নিষিদ্ধ করনে কোন মন্ত্রীসভা?

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ