কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Tuesday, December 12, 2017

| ওদের চোখে চোখ রাখতে পারছি না। ধর্মসূত্রে আমিও যে হিন্দু |

| ওদের চোখে চোখ রাখতে পারছি না। ধর্মসূত্রে আমিও যে হিন্দু |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

খুব গা গুলোচ্ছে। অস্বস্তি হচ্ছে সারা শরীরে।আজকের পর কিছুতেই ফিরোজ, সাবরিনা, ইলিয়াস, আয়েশার চোখে চোখ রাখতে পারছিনা। কিছুতেই তাকাতে পারছিনা ওদের দিকে।

গোটা দেশজুরে মাংসপোড়া গন্ধ। জমে থাকা ঘৃণার হিংস্রতা খেটে খাওয়া মানুষকে ধর্মের নামে চিহ্নিতকরণ করছে আর জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংখ্যালঘু। সেটা আবার ভিডিওবন্দি করা হচ্ছে, তারপর উদ্বাহু নৃত্য চলছে রাষ্ট্রীয় আসকারায়। শেষ বোধহয় এরকম ছবি জার্মানিতে দেখা গেছিল। আপনি স্টার জলসা আর ঘন্টাখানেক এর মাঝে টের পাচ্ছেন কিন্তু আপনার ও তো ধর্ষণ, পিটিয়ে মারা, কোপানো দেখতে ভালোই লাগে। তারপর মিডিয়াকেকে খিস্তি করতে।

এখন যদি দারুন রাগে যুদ্ধ না হয়, তবে কখন হবে? এখন মানুষের মাংস ঝলসানো হচ্ছে ঘৃণা আর সংখ্যাগুরুর আঁচে। আমরা দেখছি আমাদের নরম বিছানায় শুয়ে। অনেকক্ষন ধরে কোপানো হয়েছিল মালদার ছেলেটাকে। তারপর কোপ মারা হল গলায়। কেরোসিন ছিটিয়ে দেওয়া হল, তারপর জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া। মাংসপিণ্ডটা ইসলামধর্মী। চামড়াটা বাঙালির, হৃদপিন্ড প্রেমিকের ছিল, হাড়গোড় খেটে খাওয়া মজদুরের।

এরপর আপনাদের শীতের যে মজলিশটা হবে সৌখিন বারবিকিউতে, তাতে চেখে দেখতে পারেন এই মাংস। কিম্বা রোববার কষা কষা খেতে পারেন একে। অন্য কোন লভজেহাদি, লম্বা দাড়ি, ফেজ টুপিকে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য দেখতে দেখতে।

আমরা রোজ এক পা এক পা করে এগোচ্ছি এদের খেতে। একটা মস্ত আগুনের গোলা নিয়ে রোজ খেলছি আমরা। রোজ গা জোয়ারি করে মসজিদ ভাঙা জমিতে মন্দির তুলবো বলছি, নায়িকার নাক কাটার হুমকি দিচ্ছি, সিনেমা বন্ধ করে দিচ্ছি, শাটার নামিয়ে দিচ্ছি মাংসের দোকানে, সংখ্যালঘু ঘরের বাইরে লিখে দিচ্ছি ভগবানের নাম, দুমদাম ঘরে ঢুকে যাচ্ছি ফ্রিজে কি মাংস আছে দেখতে, কোথায় কে কোন বিধর্মীকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে খুঁজতে গিয়ে কুপিয়ে দিচ্ছি। আমরা রোজ আগুন নিয়ে খেলছি, রাষ্ট্র প্রতি সকালবেলা পেট্রল জোগাচ্ছে আরো নতুন মাংস পোড়ানোর জন্য এই আগুনে।

আমি রোজ আমার এক মুসলিম বন্ধুর সাথে আড্ডা দিই দেশ ও দুনিয়া নিয়ে। আমি সপ্তাহান্তে যে রাস্তার তন্দুরটা কিনে গেলাসের সাথে ফোয়ারা তুলি সেটা যত্ন করে ঝলসায় এক চাচা। আমার চুল কেটে, শেভ করে, হেড মাসাজ দিয়ে দেয় যে ভাইয়া, সে ও বিকেলে ফাঁক পেলে নামাজ আদা করে নেয়। আমার অনেক ভালো লাগা ভাগ করে নিই যে বান্ধবীর সাথে সে ঈদের বিরয়ানী আনবে বলেছিল।

আমি আজকের পর কিছুতেই এদের চোখে চোখ রাখতে পারছিনা। কিছুতেই তাকাতে পারছিনা ওদের দিকে। ভয় হচ্ছে যদি ওরা প্রশ্ন করে বসে? লজ্জা পাচ্ছি যদি নিজের থেকে মাঝ রাস্তায় ওরা কাপড় খুলে আমায় আশ্বস্ত করে যে ওরা জেহাদি নয় বা বোমা নিয়ে ঘুরছে না কিংবা উদাত্তকন্ঠে জন গন মন গেয়ে দেশত্ববোধ প্রমাণ করতে যায়?

ভারতে যে মুসলমানরা আছেন তারা স্বাধীনতার সময় স্বেচ্ছায় থেকে গেছিলেন এ দেশে কারন তারা মনে করেছিলেন হিন্দুস্থান তাদের। একটি ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া ইসলামিক রাষ্ট্র তাদের দেশ নয়। কিন্তু এই বধ্যভূমি ও কি এদের দেশ? যেখানে প্রতি পদক্ষেপে তাদের প্রমাণ দিতে হয় দেশত্ববোধের। যেখানে হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থানের বাইরে যে ২০০ বছরের উর্দু লব্জ আছে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে মোঘল স্থাপত্য ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

কাল থেকে সব বদলে যাবে। অবিশ্বাসের আগুনে তিলে তিলে জ্বলতে থাকবে কোন মোহিত আর সাবরিনার প্রেমের গল্প। কোন ফিরোজ আর বরুনের বন্ধুতা। কোন ইসমাইল চাচা আর খোকাবাবুর ছেলেবেলার গল্পগাছা। বেঁচে থাকবে ওই কোপের পর কোপ, উন্মত্ততা কোন মসজিদ গম্বুজে আর হিন্দু হৃদয় সম্রাট লৌহ পুরুষের পা ধরে আপ্রাণ আকুতি, এ দেশে বেঁচে থাকার।

ওদের চোখে চোখ রাখতে পারছি না। ধর্মসূত্রে আমিও যে হিন্দু। ওই মাংসপোড়ার কিছু ভাগ আমার ভাতের থালাতে ও যে পরেছে। আমাকে ও যে এক মুসলিমের রক্ত মেখে ভাত খেতে হবে।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| #দিল্লিডায়েরি- প্রথম পর্ব |

| #দিল্লিডায়েরি- প্রথম পর্ব |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

মাঝ আকাশে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বিমানে কি পরমাণু বিস্ফোরণ সম্ভব? রাজমা চাওয়ল খেলে বোধহয় হয়। একেবারে নিঃশব্দ বিপ্লব।

সৌখিন অন্দরে আলোড়ন ফেলে দেওয়া সে বিস্ফোরণ। কি আশ্চর্য কেউ মুখ বিকৃত করছে না, সব্বাই আরো গম্ভীর মুখে কর্পোরেট সাজছে। ফেলুদার ও সাধ্যি ছিলনা কাল্প্রিটকে পাকড়াও করা। মিঠে সুর ভেসে আসছে বটে কিন্তু নাকে তখন কার্পেট বোম্বিং হচ্ছে দুপুরের রাজমা অস্তিত্বের। এ পাশে ও পাশে সুমধুরভাষিণী বিমানসেবিকারা ও পাচ্ছেন কিন্তু কোম্পানি ওদের মুখ কোঁচকাতে বা বিকট গন্ধ নাকে গেলেও স্থিতধী থাকতে বলেছে।

আজ পুর্নিমা ছিল। একটা ইয়া বড় চাঁদ মুম্বাই বিমানবন্দর থেকে পিছু নিয়েছিল। গোটা বিমানপথ জ্যোৎস্না দিয়ে ধুয়ে দিয়েছিল। প্রথমে মুম্বাই এর জনপথ, ছোট হতে হতে মিলিয়ে যাওয়া বাড়ি, উড়ালপুল, বিদ্যুৎ এর খুটি। এরপর চিকচিক করতে থাকলো সমুদ্রজল। তারপর আরো কিছু জলজ। অনেকটা এগিয়ে গেছে প্লেন। ডানায় ও জ্যোৎস্না লেগেছিল। আমার ঠান্ডা লাগছিল। আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম ভরসায়। মুম্বাই থেকে একজন ছাড়তে আসছে আমাকে। পুরো ছায়াপথ।

যে বিমানসেবিকা সবচেয়ে ঝিলমিল লাগিয়ে দেওয়া তার নাম ছিল অবিনাশ। দিল্লির মেয়ে। ভীষণ বিব্রত হয়ে পরেছিলেন জল এর কন্টেনার খোলা হয় নি এদিকে আমি জল চেয়ে বসেছি বলে। অবিনাশ  তৃষার্ত আমাকে জলের জায়গায় কোক অফার করলো। ফ্রী বিষ ও শুনেছি অপ্সরাদের হাত থেকে নিয়ে নিতে হয়। সুন্দরী মেয়ের নামটা অবিনাশ হওয়াতে কিছুটা রিপালশন ছিল বটে।

এখান গোটা দিল্লি শহরে আবগারি আবহাওয়া। দুষণ নেই। রাস্তাঘাটে একটা ও ধর্ষক চোখে পরলো না। তবে মোটা সোয়েটারে আপাদমস্তক ঢাকা মেয়ে চোখে পরলো। একলা হেঁটে যাচ্ছে। বাইকের পেছনে জাপ্টে ধরে যাচ্ছে। ট্যাক্সি বাসে ও যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।

নয়ডাতে কনকনে ঠান্ডা। বোধহয় দিল্লিরর থেকে দু ডিগ্রি কমই হবে। শীতকাল এখানে এসে গেছে সুপর্ণা। এখানে সব মোমবাতি ভোজবাজীর মত নিবে যায় একসঙ্গে- থেকে যায় পাছুফাটানো শীতের চাবুক।

বাঙালির কাছে এ তিন মাস লেপের নিচে ঘুমিয়ে থাকার শীত। প্রেম করার শীত উষ্ণতা পেতে। "অপুর সংসার" নয়ডাতে হলে নির্ঘাত অপর্ণা অপুর জন্য উলের জাঙিয়া বুনে দিত। মাঝে অদ্যাক্ষর থাকতো 'অ'। সিগারেটের প্যাকেটে কড়া শাসন লেখা থাকতো। "কথা দাও যেখানেই যাও, ওটা পড়ে বেড়োবে।"

সত্যি বোধ হয় শাসন না থাকলে প্রেম নিবিড় হয় না। আমার বউ উল বুঁনতে পারেনা। আধুনিকা সানন্দা নারী। তিন জোড়া Amul Body warmer কিনে দিয়েছে। শীতকালীন গল্প লিখতে সুবিধা হবে।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| বংযাত্রীর বম্বে যাত্রা শেষ। প্রায়। |

| বংযাত্রীর বম্বে যাত্রা শেষ। প্রায়। |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

একবার নিজের পরিচিত খাট, কোলবালিশ, কোন দিকে অল্প ফুঁটোওয়ালা মশারি, কেস খেলে পরিচিত পুলিশ, মনখারাপ এর মদের ঠেক, সবকিছুর তিলোত্তমা পেরিয়ে এক সমুদ্দুর তেরো নদী পার হলে আর শহর নিয়ে ভাবতে নেই।

তা সে বম্বে যতই ভালো লেগে যাক না কেন। সে তো সেন কাকুর পুরির হলিডে হোম ও হেব্বি ছিল। একদম সি ফেস, নিচে সুইমিংপুল। ওটা আর পাঁচটা বাড়ি। কোলকাতা ঘর।

তা সে এক বাড়ি থেকে অন্য এক বাড়িতে যাচ্ছি। অর্থনৈতিক রাজধানী থেকে দেশের রাজধানী যেতে হবে এবার। একই চ্যানেল টাইমস নাও। স্রেফ রিপোর্টিং ফ্রম রেপ ক্যাপিটাল। রিপোর্টিং ফ্রম ঠ্যাই ঠ্যাই ঠ্যাই ঠ্যাই ঠ্যাই ক্যাপিটাল। ওফ ইন্ডিয়া।

যে শালা একবার বম্বে দুবছরের বেশি থেকেছে তার শালা সবচেয়ে জ্বালা। এ শহর ছাড়ার জ্বালা। এমন শহর কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, আরবসাগর রানী সে যে আমার কর্মভূমি।

মায়ার শহর, মাঝরাতে মনখারাপ ফুসমন্তরের শহর, স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন ভাঙার শহরের ডায়েরি তো ছাপার অক্ষরে গল্প বলবে কখনো।

আপাতত আমি শক্তি মজুদ করি। সাংবাদিকতা ও ব্লগামি করার। নভেম্বর শেষে দিল্লী যাওয়ার। ওটাও তো নতুন চ্যালেঞ্জ। দেশের রাজধানী,রাজনীতি, ঐতিহাসিক করিডরে বংযাত্রীর ইস্তেহার।

রোজনামচার ধাক্কা খাওয়ার, রাজা নৌকোর কিস্তিমাতের, প্রজার একা রাস্তায় দুর্বিপাকে ডায়েরি লেখা হবে। এখানেই।

যারা ভাবছেন বং যাত্রীর বম্বে ডায়েরি কি শেষ? তাদের বলি। বংযাত্রীর বম্বে যাত্রা প্রায় শেষ। ডায়েরি নয়। গল্প সবে শুরু।

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| মমতা ডিলিট পায়, হয় চ্যাং মুড়ি কানি |

| মমতা ডিলিট পায়, হয় চ্যাং মুড়ি কানি |

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিলিট টা আজ না হয় কাল পেতই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সিন্ডিকেটের জিনে লেখা আছে তেলা মাথায় তেল দেওয়া। বাকিটা সিস্টেমের নিতম্বের ফুঁটোতে তেল। আর বক্র মেরুদণ্ডী সিদ্ধান্ত।

সিপিএম ও বিক্ষুব্ধ বাম, স্কচখেকো উচ্চবংশীয় বাঙালি, ফ্ল্যাট বাড়ির ফ্লোটিং ভোটারের কাছে তিনি “যে হাতে পূজিনু আমি চণ্ডীকা জননী, সে হাতে না পূজিব কভু চ্যাং- মুড়ি কানি!

যে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগকে ছেলেখেলার জায়গাতে নিয়ে যেতে পারে প্রতিবছর এগারো মাস পরে রেজাল্ট বের করে, তাদের বিরুদ্ধতা করবার জন্য বাংলার কোন সাংবাদিক লেখে না। পাছে পিএজডি হাতছাড়া হয়।

যে যতটা পারবে মাখাবে তেল। এইচ.ও.ডি, মেন্টার, সেনেট মেম্বার, ভিসির ক্লোজ, নেতার ভাই। দাও  তেল, পাশ করে যাবে সারাবছরের ফেল।

যাদবপুর আর প্রেসিডেন্সি বরাবরের রাষ্ট্রবিরোধী, বখাটে,বেলেল্লাপনা। ওখানে দিদি বা টিএমসি ইউনিট মঙ্গলগ্রহে অক্সিজেনের মত। ডিলিট দুরস্ত।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিলিট নিয়ে যে এলিটিস্ট খ্যামটা চলছে তা প্রান্তিক। নন্দন যে দিন থেকে বুদ্ধবাবু, রুপাদি,রীনাদি, কাফকা,কামু, গোদার থেকে হরনাথ চক্রবর্তী, দেব, বচ্চন সেদিন থেকে ডিলিটের প্রিপারেশন শুরু।

বাংলার আপামর ধুতি পাঞ্জাবি, দেওয়াল লেখা, মার্ক্সবাদী সাহিত্য এক ঝটকায় পাগলু ডান্স আর একুশে জুলাইয়ের ধিতাং ধিতাং বলেতে যিনি deconstruct করতে পারে, তার নোবেল পাওয়া উচিৎ। পপুলার চয়েস। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সেই সহজ সত্যকে সম্মান জানিয়েছে।

মমতা ব্যানার্জিকে সাম্মানিক ডি-লিট প্রদানে যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তারা ভুটানের রাজাকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১০ সালে দেওয়া সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি নিয়ে নিরব। তখন কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। কারন, যুবরাজ জিগমে খেসর নামগিয়েল ওয়াংচুক প্রজাদের পয়সায় বিদেশে পড়াশোনা করেছেন। ঝরঝরে ইংরেজি বলতে পারেন। উত্তরাধিকার সূত্রে পরে রাজা হয়েছেন। অতএব বিরোধিতার কিছু নেই! এলিটিস্ট।

লালুপ্রসাদ, জ্যোতি বসু, অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানের অনোনারি ডক্টরেট নিয়ে আপত্তি থাকেনা। কারন তারা চাঁদ সওদাগর, ঝা চকচকে। মমতার সাম্মানিক ডিলিট নিয়ে বিরোধিতা থাকে কারন মমতা ঘামের গন্ধ, মমতা বস্তি, মমতা হাওয়াই চটি, মমতা ৩৪ বছরের ইতিসাসের পতনের কারন, মমতা চ্যাং মুরি কানি।

দুটাকা কেজির চাল, জঙ্গলমহলে সাইকেল, কন্যাশ্রীর টাকা আর পপুলার কালচার চটকে জঙ্গলা সাম্মানিক নোবেল দিক বাংলার সাব অল্টার্ন নেত্রীকে ভুখা -ism না বোঝা মানুষ। লড়াই চলতে থাক মমতাকে গদিচ্যুত করার। কারন মমতা এখন একটি প্রতিষ্টানে পরিনত। বিরুদ্ধতা ডিলিট হচ্ছে স্রেফ।

©--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| বহুত্ববাদী জাতীয় খিচুড়ি |

| বহুত্ববাদী জাতীয় খিচুড়ি |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

খিচুড়ি’ নামের মধ্যেই আছে এ দেশের বৈশিষ্ট্য। অভিধান বলছে, খিচুড়ি অর্থ ‘বৈসাদৃশ্যময় উপকরণে তৈরি মিশ্র খাদ্য।’ তাই বলে যার সঙ্গে তা মিশিয়ে কিছু একটা করলেই খিচুড়ি হয়ে যাবে, এমন ভাবা ঠিক নয়। যেরকম হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারশিক মুসলমান খ্রিস্টানি পাশাপাশি রাখলেই রাষ্ট্র হয়ে যায় না। যত্ন করতে হয়, একে অপরের চাপে গলে যাচ্ছে কিনা দেখতে হয়, সঠিক আঁচ, সঠিক স্লোগান দিতে শিখতে হয়।

খিচুড়ি করতে হলে চালের সঙ্গে ডাল মেশাতে হবেই। মসুর, মুগ, ছোলা, অড়হর যা ইচ্ছা। এক বা একাধিক। ডাল না মেশালে খিচুড়ি হবে না। এরপর মরশুমি সবজি থেকে ইলিশমাছ, পাঁঠা, শুয়োর বা গরুর মাংস, বাদাম, কিসমিস, তেল, ঘি, নুন, লঙ্কা, হলুদ—যার যেমন রুচি মেশানো সাধ ও সাধ্যমতো।

ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, বহুত্ববাদী জাতীয় খাবার নির্বাচন সহজ নয়। ভারত সরকার খিচুড়িকে জাতীয় খাবার হিসেবে তুলে ধরছে তা তো আহ্লাদের খবর। এতেও চক্রান্তকারী গন্ধ কেন? ব্রাহ্মণ, দলিত, কাফের, কবীর, সন্ত, শেখ এক পাতে যে খাবার খায়। সস্তায় পুষ্টিকর, অরাজনৈতিক, চাইলে মাংসাশী না চাইলে শষ্য ও শাকাহারি। খিচুড়ি তো জগাই ভালো। দেশের মত। বিবিধের মাঝে দেখো চালে ডালে মহান।

বিরিয়ানি ভালো, পোলাও পরোটা লববদার কিন্তু খিচুড়ি জনগণতান্ত্রিক। পাত বিছিয়ে বন্যাত্রানে, বাসন্তী পুজো আর বাউলগানে,কাঙালিভোজে, বৃষ্টি হলে, ইলিশ পেলে, বেগুন, নাবড়া, পাঁপড় খেলে। মন ভালো হয়, খিদে জুড়োয়।

ভোগের খিচুড়ি, ইলিশ খিচুড়ি, নবাবি খিচুড়ি, ভুনা খিচুড়ি, শীতের সব্জি দেওয়া খিচুড়ি। খিচুড়ির কোন ইগো নেই, দল নেই, ধর্ম নেই। এক টুকরো পেঁয়াজ পেলেই নিরামিষ খিচুড়ির নিঃসঙ্গতা ঘুচে গিয়ে হয়ে ওঠে উপাদেয়। আবার আদা রসুন পেঁয়াজ বাদে  ‘জগন্নাথ দেবের খিচুড়ি’ যা লোকমুখে সংক্ষেপে হয়েছে ‘জগাখিচুড়ি’, তা দৈব গুনে হয়ে ওঠে প্রসাদ যা নাকি শেষ হয় না।

খিচুড়িতে তো বিপ্লবের ও গন্ধ লেগে। তা সে দেশ ভাগের পর শরণার্থী শিবিরে হোক, এদেশের রিফিউজি কলোনি, মুক্তিযুদ্ধকালিন রিলিফ ক্যাম্প - বাস্তুহারা রান্নাচড়ানোর গল্প চাল, ডাল, তেল, লবন, মরিচ হলেই লেখা যায়।

চারিদিকে যুদ্ধ যুদ্ধ গন্ধ। যে যাকে পারছে দেশত্ববোধের পরিক্ষা দিতে বলছে, রাষ্ট্রীয় সংগীত, পতাকা, লৌহ পুরুষ, ইতিহাস হাইজ্যাক করে নেওয়ার অসম লড়াই। খিচুড়ি আমাদের। We The People এর। ক্ষেতে কিষান, কলে মজুর, খেটে খাওয়া নৌজওয়ানের। রিফিউজি পরিবারের, ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানের, বৃষ্টি হলে রসনার, রেড মিটের বাসনার।

বর্গী ও বিজয়বর্গীয়রা রান্নাঘর অবধি চলে এসেছে। হারে রে রে রে অস্ত্র মিছিল। ইমতিয়াজ আর আমি এঁঠো হাতে হাত রেখে বেঁধে বেঁধে আছি। খিচুড়ির হাঁড়ি পরে। কার হাঁড়িতে কি খিচুড়ি, তাতে কি মেশানো হচ্ছে তার জরিপ চলছে। পছন্দ না হলেই পিটিয়ে মারা হবে। সজাগ থাকুন খেতে খেতে। একসাথে। বিসমিল্লা।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| এলফিন্সটন ফুটব্রিজ ও ২২জন নিশিযাত্রী |

| এলফিন্সটন ফুটব্রিজ ও ২২জন নিশিযাত্রী |

#বংযাত্রীরবম্বেডায়েরি

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

এখন বেশ রাত। শেষ ট্রেন ১.৩০ এ। তারপর কোন ট্রেন নেই। সব যাত্রী বাড়ি ফেরার কিছু আগের রাতজাগা কোন এক স্টেশন ঘুমোতে যাবে এবার। এটা এলফিন্সটন স্টেশন। এখানে নাকি স্মৃতিরা ছায়ামানুষ হয়ে ঘুরে বেড়ায়। রাত কাটায় ফুটব্রিজ, প্ল্যাটফর্ম এ।

এটা এলফিন্সটন স্টেশন এর সেই ফুটব্রিজ। মনে পরছে? যেখানে লাশের পিঠে লাশ চাপা পড়ে ছিল। এর মাথা ওর পায়ে পিষে গেছিল। শেষ মুহূর্ত অবধি বাঁচার চেষ্টা করার পর গ্রিল থেকে ঝুলতে থাকা সামান্য নিশ্বাস খোঁজা মৃতদেহ ছিল।

ওদিন আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল ২২ জন ফুটব্রিজের দুধারের ফাইবাবের বেষ্টনী ভেঙে ফেলার। হাওয়া আসলে সব হয়তো বদলে দিত। আর একটু কম ভীড় হলে হয়তো অনেকে অফিস যেত। কিছুজন বাড়ি ফিরতো, বাকিরা ফের আপিস যাওয়ার জন্য তৈরি হতো, জামা ইস্তিরি করতো, পছন্দের টিভি সিরিয়াল দেখে ঘুমিয়ে পরতো।

সেদিন সকাল ১০.৪০ অব্দি এদের নাম ছিল। ধর্ম ছিল, জাত ছিল, গোত্র ছিল। এলফিন্সটন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্য ছিল। পদপিষ্ট হওয়ার পর থেকে এদের পরিচয় সংখ্যা দিয়ে।১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,১০,১১,১২,১৩,১৪,১৫,১৬,১৭,১৮,১৯,২০,২১,২২।

এক মাস পরে ফুটব্রিজে আর কোন দলা পাকানো কান্না নেই, রক্তের ছাপ নেই, চুড়ি ভাঙার শব্দ নেই, নিউজ চ্যানেলের বুম নেই, উঁকিঝুঁকি, নেই নেই নেই। এটাই মুম্বাই স্পিরিট। পিছনে ফিরে তাকানো নয়, স্মৃতি স্মারক বানিয়ে হাহুতাস নয়। আরো দৃঢ় প্রত্যয়ে দৌড় দৌড় দৌড়। এখানে কোন মৃত্যু নেই আর।

থাকার মধ্যে রোজ রাতে শেষ ট্রেনের চলে যাওয়ার পরে নিঝুম স্টেশনে একসাথে ফের জড়ো হওয়া। একে ওকে দেখে সামান্য সৌজন্য বিনিময়, জিজ্ঞেস করা কোন ট্রেন কত লেট, কোন স্টেশনে কে নামবে, অযথা কেউ দরজা আটকে দাঁড়িয়ে নেই তো? কোন অফিস যেতে হলে কোন ফুটব্রিজ নেওয়া যায়, শহরের তাপমান কত।

রোজ রাতে ঠিক একভাবে একই সময় একই ফুটব্রিজে ২২জন নিশিযাত্রী খোশগল্প করে, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, এ প্ল্যাটফর্ম ও প্ল্যাটফর্ম কাতর ভাবে খোঁজে নিজের কারো কে যদি দেখতে পাওয়া যায়। শেষে কিচ্ছু না দেখতে পেয়ে, কাউকে না ছুঁতে পেরে ফুটব্রিজে বসে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে। ভোররাতে আর্তনাদ শোনা যায় না। সকাল হলে সেই চোখের জলও ঝেড়ে সাফ করে দেয় রেল, রাষ্ট্র, রাজনীতি, উন্নতশীল সভ্যতা।

সকাল হলে এসব গল্প বলা যাবে না। তখন বড্ড কাজের চাপ, দৌড়ে ট্রেন ধরার চাপ, পেছনের লোক কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়ার চাপ, ভীষণ বৃষ্টিতে ফুটব্রিজে সামান্য আশ্রয় নেওয়ার চাপ।

সব ভূতের গল্প অশরীরী নয়। কিছু ভূতের গল্প করুন অতীত স্মৃতির ও বটে। বংযাত্রীর বম্বে ডায়েরিতে এখনো দগদগে।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| দাঁত অচ্ছে হে |

| দাঁত অচ্ছে হে |

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

#বংযাত্রীরবম্বেডায়েরি

দাঁত অনেকটা অফিসের নিঃশব্দ দক্ষ কর্মীটির মত। ঠিক সময়ে আসে, টিফিনবাক্স নিয়ে ক্যান্টিনে চলে যায়, নো ননসেন্স, নির্দিষ্ট কাজ শেষ করে বাড়ি চলে যাওয়ার মত। টুঁ শব্দ থাকে না। সচারচর সাতদিনের ছুটি নিয়ে পুরী ঘুরতে না গেলে বা অসুস্থ হয়ে বাড়ি বসে না গেলে, বোঝা যায় না তার গুরুত্ব।

বাঙালি চোঁয়া ঢেকুর আর অম্বলজনিত অসুখ নিয়ে এতটাই ব্যাস্ত থাকে আজীবন যে ওই দাঁতকে আর যত্ন বা প্রমোশন দেওয়া হয়না। যেমন সব চেয়ে হাঁই হাঁই করে যে কর্মীটি, বসেদের সব কথায় ইয়েস স্যার বলে যে কর্মীটি, ফোঁপরদালালি আর একে ওকে কাঠি করে ঘুরে বেড়ায় যে, সে ওই চোঁয়া ঢেকুর আর অম্বলের মত। যতক্ষণ আছে, যেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আসলে হজমিগুলি আর ইনোতেই দু মিনিটে দমন।

দাঁত যে ব্যাথা দেয় তা দমন করার ক্ষমতা মধ্যবিত্তের নেই। সে ব্যাথা অনেকটা নষ্ট হতে থাকা দাম্পত্যের মত। ভিতর থেকে ক্ষয় হচ্ছে দীর্ঘকাল, জীবাণু ও ছিল, কিন্তু যতক্ষণ না ফুঁলে ঢোল হচ্ছে, অমানুষিক ব্যাথা হচ্ছে, থেকে যেতে হয়। উপড়ে তো দেওয়াই যায় যখন তখন।

এখন আর উপড়ে ফেলতে নেই। রুট ক্যানাল চিকিৎসার মাধ্যমে দাঁত না ফেলে দাঁতের ব্যাথা সম্পূর্ণ কমিয়ে দাঁতকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সম্পর্কচ্ছেদের পর ফের দিব্বি এক সাথে কফি শপে কথা, চাপা দোষারোপ শেষে একসাথে আগের মত থাকার মত।

আমার একটি মোলার টুথ বহুদিন ধরে জ্বালাছিল। সাথে অমানুষিক ব্যাথা। তো আমিও রুট ক্যানাল ধরেই শান্তি পথ খুঁজছি। শীতকাল এসে গেছে, দাঁতের গোঁড়ায় হু হু যন্ত্রণার অনুশোচনা থেকে যাবে নয়তো।

বম্বের ডাক্তারদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, এরা সবাই পেশাদারী বিপণনী সংস্থার সাহায্য নেন পশার বাড়াতে। অর্থাৎ যিনি রিয়েল ট্যালেন্ট তিনিও বিজ্ঞাপনে সদা হাস্য, যিনি ফটকাবাজি তিনি ও। Yardstick অগত্যা হতে হয় নামের নিচের ল্যাজ। বিডিএস এর পর আর কি কি আয়ত্ত করেছেন, কোন দেশ থেকে, কিসে ইত্যাদি। এতে মানসিক শান্তি পায় দন্তধারী।

আমিও এধরনের এক প্রাজ্ঞজনের কাছে গেলাম। শুনলাম রুট ক্যানাল ছাড়া গতি নেই আর সে পথ ধরতে হলে লাগবে দশ সহস্র মুদ্রা। ক্ষত গভীর, বেড়ে খেললে সব দাঁতে ছড়িয়ে পরবে, মারক লাগবে, ঝড়ে গাছ পরে যাওয়ার মত সব একে একে শেষ হয়ে যাবে। স্নায়ু ও রক্তবাহী নলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাংসকষা বদলে যাবে আজীবন গলা ভাতে, আনাড়ি খোঁচাখুঁচি করলে ব্রেন ও ড্যামেজ হতে পারে বা সুষুম্নাকান্ড। তারপর আমৃত্যু দাঁতে আর দাঁতে থাকো আলু ভাতে।

দাদা গো আমি বাঁচতে চাই। রইলো দশ সহস্র মুদ্রা। লেগে পরুন। আমিও রাজি হলাম। এক রাশ আপসোস সহ। ডেন্টালে চান্স পেয়ে ও ডেন্টিস্ট না হওয়ার আপসোস। আজীবন দাঁতের পাটি আর মুখের গন্ধ মেরামত ছেড়ে চ্যানেলের বুম আর ব্রেকিং নিউজের ধুম নিয়ে মেতে ছিলাম, দাঁত ব্যাথা হলে ক্লোভ ওয়েল আর সেন্সোডাইন। এর বাইরে যে কিছু হয় তা ভাবতেম নি।

মধ্যবিত্ত মানুষ আমরা। দাঁত মাজার ৫০ টাকার পেস্ট ও কিছু দিন বেশি চালাতে একদম চেপেচুপে ফোল্ড করে, শেষ অবধি ব্যাবহার করি। ব্রাশ ও তাই। ব্রাশ তো তারপরও বেঁচে থাকে জুতো বা বেসিন পরিষ্কার করতে।

দশ সহস্র মুদ্রা খরচাই যখন হচ্ছে, আশা করেছিলাম মারকাটারি কোন ঘটনা ঘটবে, প্রচুর রক্তপাত, ডাক্তারবাবুর অস্থির হয়ে পরা ইত্যাদি। সিনেমাতে যেরকম হয়। লে হালুয়া এখানে লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া মারলো, অত্যাধুনিক যন্ত্র দিয়ে কিসব স্মার্টলি করলো, কিছু খোঁচাখুঁচি আর মাল মশলা পুশ করা। ব্যাস। এ ভাবে তিন দিন। শেষে দশ সহস্র মুদ্রা ব্যায়ের স্মৃতিস্বরূপ  এক ধরনের কৃত্তিম মুকুট পড়ানো। এ যেন সেই হাড়ানো পদক যা এক সময় বিয়ার বোতল খুলে ফেলতো, দামড়া ঠ্যাং চিবিয়ে ছাতু করে দিত, চুইংগামের সাথে সহবাস করতো।

ডাক্তার বাবু দাঁতগুলো জরিপ করতে করতে বললেন, আপকে বাকি দাঁত আচ্ছে হে। অর্থাৎ ওই একটাই হারামজাদা ছিল। বাকি সব অচ্ছে হে। বউদের মত। যত্নবান না হতে পারলেও অভিযোগ করেনা, খারাপ লাগা ফাঁকফোকরে আটকে থাকলেও বিদ্রোহ করে না। ময়লা জমতে জমতে একসময় সমস্যা হয়। তাই এর সঠিক সময়ে যত্ন নিতে হয় নয়তো পুরনো ক্ষত ভোগায় বড্ড। এক আধটা এরকম দারুন ব্যাথা লাগা আর গেঁজে যাওয়া ছাড়া যেরকম দাম্পত্য আচ্ছে হে। দাঁত অচ্ছে হে।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| খোয়া গেছে শীতকাল, মোয়াওয়ালা, রোদে দেওয়া হারমোনিয়াম |

| খোয়া গেছে শীতকাল, মোয়াওয়ালা, রোদে দেওয়া হারমোনিয়াম |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

হেমন্ত ছাতিমগাছে মৃত। শীতকাল এসে গেছে শহরাঞ্চলীয় আনাচে কানাচ। এবার বিষাদ আসবে। ঘিরে ধরবে চারপাশ অনেক রাত হলে। কনকনে ঠান্ডা তখন জানালায় ওপাশে। ওপাশেই। কারন এপাশে দীর্ঘনিশ্বাসের তাপ অনেকটা। ওতে ওম পাওয়া যায় শহুরে উইন্টারের। শীতকাল কবেই খোয়া গেছে আমাদের।

ছোটবেলার প্রথম আর শেষ শীতকালে পাড়াতে মুড়ির মোয়া, চিড়ের মোয়া, বাতাম তকথি, তিলের নাড়ু পিঠের বিশাল বস্তাতে নিয়ে ঘুরতো মোয়াওয়ালা কাকু। ওর কোন নাম ছিল না। হাঁক ছিল। মুরিরররররররর মোয়ায়ায়া, চিড়াররররর মোয়ায়ায়া।

তখন অরিয়ো মিল্কশেক অলীক সুখ, হট চকলোট সৌখিনতা, এক বাক্সজাত শক্ত মোয়াতেই মিলতো শীতকালের গন্ধ। আর অনেকটা অপেক্ষার পর জয়নগরের মোয়াতে আরাম। ওটা অবশ্য নরম, নলেনগুড়ে আদর করা। বাচ্চাকে কাজলের টিপ পড়িয়ে দেওয়ার মত একটা কিসমিস বসানো।

এসমস্ত দুপুরবেলা প্রাচীন বউদির গোপন চিঠি লেখার কথা থাকতো। কোলবালিশটা জাপ্টে বুকের কাছে, সব ওজন চাদরে, নেকলেসটা ঝুলছে। নিষিদ্ধ কিছু শিহরণ লেখা হবে। এসব দুপুরে রোদ পোয়াতে নেই। বিছানাপত্র, বন্ধ দরজায় উষ্ণতা বেশী। কান্নার ও।

সন্ধে নামলে রুপকথা লেখা হত বয়ঃসন্ধির খাতায়। পাশের বাড়ির রাজকন্যা গলা সাধতো হারমোনিয়াম নিয়ে। সপ্তাহে দুবার রোদে দেওয়া হত হারমোনিয়ামখানা।

মোয়াওয়ালা কাকুর বস্তা, নলেনগুড়ের আদর, প্রাপ্তবয়স্ক চিঠিপত্র, বয়ঃসন্ধির খাতা আর রোদে দেওয়া হারমোনিয়ামখানা চিলেকোঠার ঘরে রাখা থাকতো। রোজ ওখানে মিঠে রোদ এসে বসতো, পাখি খোঁজ নিত, নিষ্পাপ ভালোবাসার রঙ পেন্সিল দেওয়ালজুরে আঁকিবুঁকি কাটতো। চিলেকোঠার ঘরে।

চিলেকোঠার যে ঘরে রুকু, ক্যাপ্টেন স্পার্ক, প্রখর রুদ্র, কড়ালকুম্ভীর, আফ্রিকার রাজা ছেলেবেলার অজস্র অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে শীতের ছুটি কাটাতো, সেই ঘর সহ গোটা বাড়িটাই কোন এক মনখারাপের শীতকালে ভাঙা হয়েছিল। মগনলাল মেঘরাজ সেখানে ফ্ল্যাটবাড়ি তুলেছে।

ভিত আর পিলারের অনেক নিচে মাটিচাপা মোয়াওয়ালা কাকুর লাশ। প্রবল অর্থকষ্ট আর ধারদেনা মাথায় আত্মহত্যা করেছিল। ময়নাতদন্ত হলে পরে একটা বিশাল বস্তাতে মুরে আনা হয়েছিল। শীতের ভোরবেলা।

হারমোনিয়ামটার কাপড় ইঁদুর খেয়ে নিয়েছিল, সব রিড ভাঙা। ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরির সময় কোন এক প্রবল শীতের রাতে আগুন জ্বালানো জরুরী ছিল।

যে শ্রমিকজন রাতে থাকতো তারা হারমোনিয়ামটা  আবিষ্কার করেছিল। ইতস্তত করেছিল কিন্তু বড্ড কষ্ট পাচ্ছিল সে রাতে। দা দিয়ে এক এক করে ছোট ছোট তক্তা বানানো হয়েছিল হারমোনিয়াম কেটে। তারপর আগুন দেওয়া হয়েছিল কেরোসিন ছিটিয়ে। ওদিন সারারাত ওরা গান গেয়েছিল আনন্দে, আরামে। হারমোনিয়ামের আগুনের চারপাশে গোল হয়ে বসে। গ্রামীণ শব্দ, প্রচলিত সুর আবেশ এনেছিল।

অনেক রাত অবধি হারমোনিয়ামটা জ্বলেছিল।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ