| শব্দবাজি = দেশাত্মবোধক ভেল্কিবাজি |
আমি যুদ্ধ দেখিনি। যুদ্ধ যুদ্ধ শব্দ শুনেছি। একটা যুদ্ধক্ষেত্রে আজ বাস করছি। শহর এর নাম মুম্বাই। এখানে আজ সারা রাত শেলিং হবে তার পর সব শান্ত। বেঁচে থাকবে পাড়া জাগানো আজান এর মাইকের আওয়াজ এর এক রাশ দোষারোপ। বাকিটা দেশজ মন কি বাত যার মাইকিং হয় ফি রোববার।
এখানে দুমদাড়াক্কা বোম ফাটে, কানে তালা পরে যায় কয়েকটা শুনলেই। এর পর যে বাচ্চাটা ভয়ে কেঁদে ফেল্লো, যে অসুস্থ বুড়া ঘাবড়ে গেলো, যে কুকুর কুকড়ে খাটের তলায় জবথব, তাদের শোনা যায়না।
আসলে গোটা শহরটা তিরঙ্গা ছাপ ও সৈনিক এর ছবি দেওয়া বাজির বাক্স খুলে শব্দবাজি দেখাচ্ছে। কেউ বাড়ির ছাদ থেকে দুম করে একটা বোম মারলো, তাই দেখে পাশের রাস্তার ছেলে পাঁচটা ছুঁচোবাজি এক সাথে মারলো রে রে করে।
আজ কেউ কারোর কথা শোনে না। কেউ ফিসফাস করে না ফুলঝুরির আলোয়। মাঝেমধ্যে ছিটকে আসে এক আধটা ফুল্কি। ওটা দেশাত্মবোধ এর বিচ্ছুরণ।
আজ আমি মোল্লা না হয়ে ও anti- ন্যাশনাল এই প্রবল আওয়াজ এর প্রতিবাদ করলে। যে দিওয়ালীর আগে পাশের দেশে ঢুকে ওদের গুলি করে ও বিরিয়ানি খেয়ে আসি, যে দিওয়ালীর আগে এত জওয়ান শহীদ হয়, সেই দিওয়ালীতে আরো জোরে বোম ফাটাবো।
শুনলাম কলকাতার মহানাগরিক Kanan Chatterjee ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন রাজ্যবাসীর কাছে শব্দ দৈত্য রুখতে না পেরে ব্যথাহত হয়ে। শোভন দা, খারাপ লাগার কিছু নেই। একটা গোটা মানচিত্রের অধিকাংশ জায়গাতে আজ ডেসিবল ২০০। দেশাত্মবোধ এর পারদ তুঙ্গে, নির্বাচনী বৈতরনী পার করতে দরকার হয় দেশাত্মবোধক ভেল্কিবাজ বা নিদেন পক্ষে একটা দাঙ্গা।
গো বলয় কালিপটকা ফাটিয়ে নিজেদের আধিপত্য জাহির করে। নিঃশব্দ যা কিছু সব জানালা দরজা আটকে শোবার চেষ্টা করে। পাছে মাঝরাতে দেশাত্মবোধের পরিক্ষা দিতে হয় বা ফ্রিজ খুলে দাঁড়াতে হয় লৌহ পূরুষদের সামনে।
--ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
mayukhrghosh.blogspot.com
No comments:
Post a Comment