কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Sunday, April 30, 2017

| জয় হিন্দ আর বিশ্ববাংলার ভীড়ে, জয় বাংলার "বিসর্জন" |

| জয় হিন্দ আর বিশ্ববাংলার ভীড়ে, জয় বাংলার "বিসর্জন" |

হিন্দুদের স্বপক্ষে লিখলে, মুসলিম বা মুক্তমনাদের সমর্থন করলে, সিয়াচেন এর জওয়ান, রাশিয়ার শৃঙ্খল এমন কি গরুর বন্দনা হলেও ক্যা বাত! কিন্তু বাংলা বা বাঙালিদের নিয়ে একটু কড়া করে গলা ফাটালেই তুমি প্রাদেশিক, কূপমণ্ডূক।

দক্ষিণ এর ছবি "বাহুবলী"কে সর্বাধিক হল দিতে বাংলাতেই হল থেকে সরিয়ে নেওয়া হল "বিসর্জন"। বিপুল জনপ্রিয় হওয়ার পর ও। টাকা দিয়ে মানুষ দেখতে চাওয়ার পরও।

যারা লোকাল কমিটিতে চা এর কাপ সরাবো কি সরাবো না- এই সিদ্ধান্ত নিতে তিনটে মিটিং ডাকে তারা বাজার অর্থনীতির গন্ধ পাবেন আর যারা মসনদে তারা বোঝার চেষ্টা করবেন এই ছবিটার হয়ে গলা ফাটালে কোন স্টিং অপারেশন হওয়ার ভয় আছে কি না! বেহুলা, মনসা, চাঁদসদাগড়, রাজশেখর এর রামায়ণ ভুলিয়ে যারা রাম, হনুমান ইনজেক্ট করতে ব্যস্ত বাঙালির মাথায়, তারা খুঁজবে চুপচুপে আবেগে ভাজা দেশ এর গল্প আছে কি না। বা নিদেনপক্ষে হাম্বা।

সেরা চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে "বিসর্জন"। একটা অসামান্য বাংলা ছবি। এমন ছবি অক্ষয় হোক। কিন্তু অর্থ বা হল না পেলে অবিলম্বে মৃত্যু হবে এই বাংলার সংস্কৃতির। আমরা তখনো ইন্টারন্যাশনাল। আমরা তখনো হিন্দি,হিন্দু, হিন্দুস্থান। আমরা তখনো রংধনু আর পানি।

তুমি কমিউনাল, গোঁড়া, অশিক্ষিত কারণ তুমি বাংলা ও বাঙালির হয়ে গলা ফাটাও। আধা ট্যাঁস, আধা হিন্দুস্থানি আর বাকিটা বিশ্ব নাগরিক হওয়ার চক্করে তুমি না ঘর কা না ঘাটকাই থেকে যাও। এদিকে বাকিরা নিজের রাজ্যের, নিজের জাতির হয়ে গলা ফাটিয়ে নিজেরটা বুঝে নিচ্ছে। এই ভূখন্ড থেকে। কখনো জলের দোহাই দিয়ে, কখনো সংরক্ষন এর চোখ রাঙিয়ে,কখনো ইঁদুর মুখে নিয়ে। গুছিয়ে নিচ্ছে।

আর আমরা মানে যারা বাংলা। আমরা মানে যারা মনে,প্রানে, কাজের বা জন্মসূত্রে বাঙালি তারা হাহুতাস করছি ওল্ড মঙ্ক খেতে খেতে। ফুটবল বা রাজনীতির মন ভালো করা আফিম চেবাতে চেবাতে, বাংলার কি ছিল!

দেশের রাজধানী থেকে প্রথম সারির শিল্প, একাধিক কম্পানির প্রধান দপ্তর, কারখানা, বিশ্বমানের শিক্ষা কেন্দ্র, গবেষণাগার, বেঙ্গল কেমিকেল, তথ্যপ্রযুক্তি হাব।

এককালে ছিল। এখন দূরবীন এ খোঁজ করি। এখন মগডালে সিপিএম বসলে গোটা গাছটাকেই উঁপড়ে ফেলি জাতীয় সড়কে। আর তৃণমূল কিছু করলে বাধ্যতামূলক বিরোধী হতেই হয়। রাজ্য যায় গাধার এতে!

পাগলা জগাই ভাবে কবে রাজ্যের জন্য, বাঙালির জন্য বাংলার সব দল একসাথে পথে নামবে। বাংলার সমস্ত সাংসদ একজোট হবে শিল্পের দাবীতে,কেন্দ্রের থেকে প্রকল্প, অনুদান, রেলপথ ছিনিয়ে আনার লড়াই এ।

কবে বাংলা ছবি দাদাগিরি করে সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে সবকটা হল, মাল্টিপ্লেক্স এ অ-বাংলা ছবির প্রদর্শন বন্ধ করে দেবে?

বাঙালির গাড়ি শিল্প গেছে, ভারি শিল্প গেছে, তথ্যপ্রযুক্তি ও গেছে। চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে যা খুচরো বড়াই, তাও ছিনিয়ে লিবা?

কি জানি। হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থানি, স্তালিন, লেনিন, মাটি, মা, গো-মা এর চক্কর এ না বাংলা টারই বিসর্জন হয়ে যায়। কালিদাস তখনো নিজের ডাল নিজেই কাটছে। "আমরা" না হয় ডাল ভেঙে চোট পাবো, "ওদের" যাত্রা ও তো ভঙ্গ হবে!

পুনশ্চ: মুম্বাই এ মারাঠি ছবির জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যায় হল বরাদ্দ থাকে। তা সে যতই অমিতাভ-রেখা-জয়ার কামব্যাক ছবি হোক। আর বিসর্জন এখানে স্ট্যান্ডিং অবেশন পেয়েছে। বাহুবলী ও কিন্তু আমরা দেখবো।

জয় বাংলা!

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment