কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Wednesday, April 12, 2017

বিপ্লব = হনুমান এর বীর্যধারন না সানি লিওনিতে বীর্যস্খলন?

মুম্বাইতে যোগেশ্বরী স্টেশন এর থেকে একটু এগিয়ে একটা স্টেশন নতুন হয়েছে। নাম রাখা হয়েছে রাম মন্দির। রেল এর দেওয়া নাম। আদর- ভক্তি-নেশা ধরানো নাম।

যোগেশ্বরী, বেহেরামবাগ এলাকাটি ৭০% মুসলিম প্রধান। এখানে দোকান এর নাম হয় ইলাহি স্টোর, ফ্ল্যাট এর নাম হয় অল্ মদত, অটোর পেছনে বিসমিল্লায়ে রেহমান এ রহিম। স্টেশন এর নাম রাখাই যেত হাজি আলি। হয়নি এবং এই নিয়ে কারোর কোন মাথা ব্যাথা নেই। কারন স্টেশনটি হওয়াতে বহু মানুষ উপকৃত। পেছনে বিসমিল্লায়ে রেহমান এ রহিম লেখা সারি সারি অটো ভাড়া পাচ্ছে। চা এর দোকান, হালিম, কাপড়, কফি, বোরখা, মাফলার- সব সম্প্রদায়ের দোকানির জটলা।

কয়েক লক্ষ বার মানুষ গুলো রাম উচ্চারণ করে। এতটা পড়ার পর যাদের মনে হচ্ছে, সত্যি তো একটা আরবী নাম রাখা উচিত ছিল, তাদের জানিয়ে রাখা ভালো যে মসজিদ নামক সেন্ট্রাল লাইন এ একটি স্টেশন দীর্ঘকাল ধরে আছে। গায়ত্রী মন্ত্র জপ করে স্নান করে, ভাত খেয়ে, তিলক কেটে অনেক লোক তাড়াহুড়ো করে মসজিদ যায়। রোজ মসজিদ যায়। সেখান থেকে কাজে। ব্যাবসায়। ধান্দায়।

আম্মি বলেছিল, ধান্দার থেকে বড় কোন ধরম নেই। আর তাই ৯২' এর দাঙ্গা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল, কিভাবে এক সম্প্রদায়ের গাছের ডাল কাটলে আদপে গাছটাই রুগ্ন হয়ে পরে। অর্থনীতিতে ধস নামে। যেভাবে আধাসেনা নামে অলি তে গলিতে দাঙ্গা হলে। এক বুক অবিশ্বাস আর যত্নে রাখা ঘৃণা গৃহবন্দি তখন।

বাংলাতে এখন রাম, হনুমান নিয়ে মিছিল এর হিরিক পরেছে। ফেসবুকে জিফ ফাইল এ সবার বুক চিড়লে হনুমান বা রাম বেরোচ্ছে ইদানীং। হাতে ত্রিশূল, তরোয়াল। গদা বা তির ধনুক চোখে পরছে না। ওগুলোই তো রামায়ণ এ সাক্ষী ছিল বোধহয়।

টিভিতে দেখলাম প্রচুর তরুন, সদ্যযুবক, স্লাইট ধেড়ে যুবক অস্ত্র হাতে। তা নিক গিয়ে। অস্ত্রের প্রতি নেশা মা বাবাই ছোটবেলায় ধরিয়ে দেয়। ক্যাপ বন্দুক, জিআইজো, শব্দ করা স্টেনগান, ডাব্লু ডাব্লু এফ।সে আলোচ্য নয় এখানে। হলেই মহরম এর তুলনা টানা হবে। যেভাবে ইদানীং একটা খারাপ জিনিস ঢাকতে আর একটা খারাপ সিদ্ধান্তের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয় বা চৌত্রিশ বছরের উদাহরণ বা কিছুতেই যুক্তি তে না পারলে- সিয়াচেন ম্যে হামারে জাওয়ান মর রহে হ্যায়।

যে ছেলেগুলো বাংলাতে অস্ত্র হাতে হিন্দুবীর সাজছে তারা কেউ পুজো আচ্চাতে নেই। হনুমান এর বীর্যধারন না সানি লিওনিতে বীর্যস্খলন তারাই জানে। কিন্তু তারা একটা জিনিস বুঝেছে।
দুবার জয় শ্রীরাম বললে আর বিনি পয়সায়, উইদাউট কেস তরোয়াল হাতে রাজপথে ঘুরলে যদি চাকরি জোটে ক্ষতি কি?

এতে ধর্ম নেই। চাকরি পাওয়ার জীভ ঝোলা অর্গাজম আছে। বাবার কারখানা বন্ধ, ঘরে আধ পেটা খেয়ে থাকার পর মনোরঞ্জন এর ডোজ আছে। কলেজ এর পর ইট বালি সিমেন্ট এর সিন্ডিকেট এ না ঢুকতে পারার হতাশা আছে। ওটাই প্রধান শিল্প।

এই ছেলেগুলোকেই ব্রিগেড এ লাল পতাকা ধরতে দেখেছিলাম। এদেরকেই পরিবর্তন চেয়ে দেব এর সাথে পাগলু ডান্স করতে দেখেছিলাম। এরাই এবার অস্ত্র হাতে। জয় সিয়ারাম। জয় সিয়ারাম।

রাম আজ ও এদের বোতল বন্দি। নয় ছয় করে ১৪০ হাতে এলেই একটা পাঁইট। সাথে ছোলা, গরুর কিমা, শুয়োর ভাজা, জলজীরা, মারোয়াড়ী হাওয়া ঢোকানো রকমারি নোনতা। সব পাঁচ টাকা।এলাহি!

বাঙালি হিন্দু হাফিজ এর রেওয়াজি খাসি তে আছে, আসমার বিরিয়ানিতে আছে, বিয়ের ভোরবেলা থেকে বিসমিল্লার সানাই এ আছে, এক থালায় ভাত খেয়ে কৃশানু- রহিম নবীর খেলায় আছে। সাবিনা রুনার গলায় আছে। পদ্মার ইলিশ এর কানকোয় আছে। বাঙালি খারাপ আছে।

ভয় হয় যদি ওই অস্ত্র গুলো সত্যি ব্যাবহার করে ফেলে বাঙালি।  যারা তেভাগাতেও শিল্প হবে বলেছিল তাদের বিরুদ্ধে, পরিবর্তন মানে পুরনো কারখানা খুলবে, নতুন কোম্পানি আসবে তাদের বিরুদ্ধে, ধর্ম  নিয়ে বেসাতি করে, গরুকে মা বলে আর গফুর চাচাকে শত্রু- তাদের বিরুদ্ধে।

আম্মি বলেছিল, ধান্দার থেকে বড় কোন ধর্ম   নেই। ধান্দা পানির লড়াই করার পালা।

এক হও। অস্ত্র শানাও।

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment