| তাজ এর ঝাড়বাতিতে শত্রুর খোঁজ |
কি অদ্ভুত সমাপতন। বাংলাদেশ এর স্বাধীনতা দিবস পালন হল মুম্বাই তাজ হোটেল এ। সাক্ষী থাকলো মুজিবর রহমান আর জামশেদজী টাটা। দুজনেই স্বপ্ন দেখতো।
একটা দেশ যেখানে প্রত্যেক দিন আত্মঘাতি হামলা চালাচ্ছে উগ্রবাদীরা আর সরকার তার জবাব দিচ্ছে দাঁতে দাঁত চেপে তার স্বাধীনতার দিন উদযাপন। ৫০,০০০ বাঙালীর রক্তের বিনিময়, বাংলা ভাষায় কথা বলার জেদের স্বাধীনতা।
আর একটা শহর যার মেরুদন্ড বার বার ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে উগ্রবাদীরা কিন্তু সে শহর আবার মাথা তুলে ব্যস্ত হয়ে যায়। এই হোটেল সাক্ষী। এই সিঁড়ি, ওই যে গলিপথ, বিলিতি ঝাড়বাতি, দেওয়াল এর ছবি। এরা সবাই মাথা তুলে আবার দাঁড়িয়ে।
অনেক খুঁজলাম দেওয়াল এ আর বুলেটের দাগ নেই। মেঝেতে রক্তের গন্ধ নেই। যেরকম মুজিব এর ছবি বসানো হয়েছে আজ। ১৫ আগস্ট এর রক্তপাত ঢাকার বাসাতেও তো নেই। তাজ থেকে বাইরে এলেই ইন্ডিয়া গেট তারপর আরব সাগর। ওখানে নৌকো চলে। নৌকো চেপেই মৃত্যু এসেছিল। ২৬ তারিখেই। দুটো দেশ। একই শত্রু।
একটা দেশ লড়াই করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল, আর একটা দেশ আজ ও প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। তাজ, লিওপল্ট, লোকাল ট্রেন, উড়ি, বারামুলা। অর্থাৎ শত্রু তারাই। গোটা দেশ। নাকি নয়? স্বাধীনতা উদযাপন এ রুনা লাইলা এসেছিলেন। মহারাষ্ট্র এর মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ এর স্ত্রী অমৃতা এসেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ তে লড়াই করেছেন এরকম ভারতীয় সৈনিক এসেছিলেন, বহু দেশের কুটনীতিবিদ এসেছিলেন।
রুনা দি নিজের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানটা ধরলেন। বলরুম এর কেতাদুরস্ত আদব, সাহেবিয়ানা, রাষ্ট্রগত শিষ্টতা তখন ভেঙে চুরমার। রুনা লাইলা দামা দম মস্ত কলন্দর/ আলি শাহবাজ কলন্দর গাইছেন। বাবা বুল্লে শাহ এর সেই বিখ্যাত কাওয়ালি। লাল শাহবাজ কলন্দর এখনো পাকিস্তান এ আছে। পাকিস্তান এর পাঞ্জাব প্রদেশ এর এই গান শাহবাজ কলন্দর এর দরগাতে এখনো গাওয়া হয় কিছু রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে।
এই দরগা বানানোর সময় ইরান থেকে শ্রমিক, লাল পাথর আর কিছু সুর এসেছিল। টাটারাও তো ইরান থেকেই এসেছিল। টাটাদের এই স্থাপত্য,তার দেওয়াল, ঝাড়বাতি, গোলাপ কাঠ এর দরজাতে আস্তে আস্তে বাবা বুল্লে শাহ হাত রাখছেন, মস্ত কলন্দর,মস্ত কলন্দর, মস্ত কলন্দর মন্ত্রচ্চারন এর মত গোটা হল পাকিস্তানি গান গাইছে। তাহলে শত্রু কে?
লাল শাহবাজ কলন্দর দরগাতে আগের মাসেই সন্ত্রাসবাদী হানা হয়েছিল। প্রার্থনা চলছিল তখনো। আর সন্ধেবেলা গান। তাহলে শত্রু কে? দুমুঠো ভাত জন্নতে গরুর ঝাল দিয়ে খাওয়ার স্বপ্ন দেখা মানব বোমা ওপারে না এপারে নৌকো থেকে নেমে হাসতে হাসতে মানুষ মারা যন্ত্র মানুষ যে ফাঁসির আগে বিরিয়ানি খেতে চায়?
অস্ত্র ব্যাপারীরাও খায় নিশ্চিত। যেরকম বাড়ি ফিরে মেয়ের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে ভাত খায় নেতা। বেওয়ারিশ লাশ বদলে গিয়ে হয় সন্ত্রাসবাদীর, সন্ত্রাস হানায় নিহত মানুষ এর স্তুপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় জেলে পিটিয়ে মারা নাম। নির্দিষ্ট নাম। পদবী। শত্রু কে?
বাইরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে গেটওয়ের দিকে। অনেক দূরে পাকিস্তানি বন্দর। ওখানেও কেউ গান গাইছে রুনা লাইলার। কেউ লুকিয়ে ছবি দেখছে শাহরুখের। দামি মোবাইল আছে ওদের। সস্তা ইন্টারনেট। অন্ধকার থেকে একটা গলা এল: জন্নত যাবি? ভালো খাওয়া, কাপড় পাবি। তোর বিস্ফারণ এ মৃত্যু, আমার শত্রুতাকে জিন্দা রাখবে।
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment