কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, August 3, 2017

টেস্টনি আসলে হ্যাকিং ও সমস্ত তথ্য চুরির বেষ্টনী |

টেস্টনি ক্লিক করা বন্ধ করুন নয়তো প্রস্তুত থাকুন হ্যাকিং,স্প্যামিং ও তথ্য অপপ্রয়োগের।

একেই বোধহয় বলে বিশ্বজোড়া ফাঁদ। চিটফান্ডের চেয়ে অমায়িক, জোচ্চুরির চেয়ে আধুনিক, যেচে প্রশংসার থেকে স্বাস্থ্যকর।

ভাবুন তো কয়েক বছর আগেও থার্ড পার্টি ভেন্ডারদের কি কাল ঘাম না ফেলতে হত ডেটা সংগ্রহ করতে। মলের সামনে কাগজ হাতে, ফোন কম্পানিগুলোকে ঘুষ খাইয়ে, কলেজের ছেলে মেয়েদের প্রতি ১০০ ডেটাবেস প্রতি অর্থ দিয়ে।

তারপর এল সেই বৈপ্লবিক বিপণন বুদ্ধি। সোশাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে, মজার ছলে, অজান্তে সব তথ্য নেওয়া ও সিলেক্টিভ ইউজের সম্মতি নিয়ে তথ্য হাসিল। টেস্টনি আসলে তাই। একটা ডেটা কালেকশন সফটওয়্যার। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন স্যাম্পল সাইজ, সেগমেন্ট, কনজিউমার ভাগ করে বিভিন্ন সহজ খেলা, ফ্যান্টাসি গেম, ইম্যাজিন ও রোল প্লে গেম খেলা।

শুধু একটা ছোট্ট গল্প আছে। এই খেলার বা কুইজের রেজাল্ট পেতে গেলে আপনাকে আপনার মোবাইল ও প্রোফাইল এর সমস্ত তথ্য ব্যবহার ও সংগ্রহ করার অনুমতি দিতে হবে। আপনি উত্তর জানার আনন্দে ঝটপট দু তিনটে বোতাম টিপে ওকে বলে দেন। ডট ডট ঘুরতে থাকে, আপনার ডেটা কালেক্ট করা হচ্ছে বলা হয়, একটা থার্ড পার্টি ভেন্ডার যার প্রোফাইল জানেন না, ওয়ার্ক প্যাটার্ন জানেন না, কোথায় রেজিস্টারড জানেন না, তাকে সমস্ত তথ্য দিয়ে দেন। ভাবেন জুকারবার্গ সামলে নেবে।

না আসলে ফেসবুক দায় নেবে না। ফেসবুক ক্যান্ডি ক্রাস বা ফেসবুক লাইভের দায়িত্ব নিতে পারে কিন্তু ফেসবুক পলিসিতে কোথাও টেস্টনি বা তার মত হাজার খানেক জেনে নিন অমুক, দেখে নিন তমুক সাইটের দায়িত্ব নেয় না।

শ্রীজিত, মীর,শ্রীজাত বা এদের মত আরো কয়েক ডজন তারকা দেখি এদের ফাঁদে পা দিয়েছেন। মজা পাচ্ছেন, শেয়ার করছেন, বাকিদের রেজাল্ট রিপোষ্ট করছেন। আসলে অজান্তে নিজেদের অনলাইন সমস্ত তথ্য, কন্টেন্ট, ইমেল লিস্ট, ফোনবুক, সার্ফিং প্যাটার্ন, ব্রাউজিং হিস্ট্রি এক অজানা, অচেনা থার্ড পার্টিকে দিয়ে দিচ্ছেন। এদের কোন একাউন্টেবিলিটি আছে? কোটি কোটি যে তথ্য এরা জোগাড় করছে তা কিসে ব্যবহার হবে আমরা জানি? স্প্যামিং বা হ্যাকিং হবে না এই তথ্য ব্যবহার করে কোন নিশ্চয়তা আছে?

টেস্টনির সাইটে পরিষ্কার লেখা আছে তারা ব্যাবসাহিক কাজে আপনার তথ্য ব্যবহার করবে। আপনি হয়তো নিউজলেটার, মেল, এসএমএস পেতে পারেন হাজার প্রোডাক্ট সম্পর্কিত। তারপরই লেখা এটা আমেরিকা ও ইউরোপ এর দেশগুলিতে প্রযোজ্য। অর্থাৎ ভারতে এর ক্ষেত্রে এর ইউটিলিটি স্পষ্ট নয়।

আসলে মজার ছলে এসব খুনসুটি। কেই বা এত কিছু ভাবে? কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর লড়াইটা তো ছিল তথ্যের অধিকার ও রাইট টু প্রাইভেসি- একই সাথে। ডেটা ইস দি নেক্সট ওয়েল।

আপনার ফোনবুক, কত ঘন্টা কথা বলেন, মাঝরাতে কোন সাইট দেখেন, কোন ছবি ডাউনলোড করেছেন, কোন প্যাটার্ন সাধারণত থাকে পাসওয়ার্ড এর, কার সাথে কোন শব্দ সবচেয়ে বেশী বার ব্যবহার করেছেন- এদের সব জানা চাই। বা হুক অর বা ক্রুক। না জানতে পারলে কেমিক্যাল ওয়েপেনের মত টেস্টনি ছড়িয়ে দাও। বোকা বোকা সাদৃশ্য,অলীক কল্পনা, জনপ্রিয় চরিত্রায়ন করুন। করতে বাধ্য করুন। টকিং পয়েন্ট হবে। আরো ক্লিক অর্থাৎ আরো ডেটা।

আমরা সবাই দিবাস্বপ্ন দেখি। সবাই লুকিয়ে থাকা সুপারহিরো পুষি আর তার সাথে সামান্য মিল কেউ মিলিয়ে দিলেই জাহির করি। কেউ আসলে কথা বলি না। একে অপরের উত্তর পড়ি। মজা পাই যখন নিজেকে টেস্টনি সিনেমায় সত্যজিৎ, কবিতায় সুনীল, ঔরসে বাহুবলী ও রাজনীতিতে মমতার সাথে তুলনা করে। খিল্লি করি, অবাক হই, জাহির করি, ট্যাগ করি, খিস্তি করি কিন্তু শেয়ার করি। করতেই থাকি।

ফোর জি লাইফকে জিংগালালা করেছে। মুঠোয় অগাধ নেট ডেটা কিন্তু সেই নেট ডেটা ব্যাবহার করতে শিখুন। আপনার নিজেকে শক্তি, সুনীল, বুদ্ধদেব, বিবেকানন্দ ভাবতে ভালো লাগতে পারে কিন্তু নিজের সমস্ত প্রাইভেসি সমর্পণ করে নয় নিশ্চই।

No comments:

Post a Comment