| এখন নয়তো কখন? |
---ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
গোটা রাজ্য জুরে মাংসপোঁড়া গন্ধ। জমে থাকা রাগের উষ্ণতা খেটে খাওয়া ঘামের সাথে দড় দড় করে পরছে আমার আপনার গায়। আপনি স্টার জলসা আর ঘন্টাখানেক এর মাঝে টের পাচ্ছেন না। এখন যদি দারুন রাগে যুদ্ধ না হয়, তবে কখন হবে?
গোটা রাজ্যে বিগত এক দশকে একটাও নতুন ভারী শিল্প আসেনি। কোন উল্লেখযোগ্য বহুজাতিক সংস্থা অফিস খোলেনি, সেক্টর ফাইভেই আইটি স্বপ্ন শেষ। কোন চাকরী নেই, ফোট। এখন যদি রগ না চটে তবে কখন?
একটা বিশাল বৃদ্ধাশ্রম। নাম কলকাতা। প্রবাসের বহু ছেলেমেয়ে এই বৃদ্ধাশ্রমকে নিজের ঘর বলে মনে করে। বাড়ি বানায়ে দিল্লী,বম্বে,লন্ডন।
কলকাতায় রমরমা বাড়ে আয়া সার্ভিস, ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডার এর হোম ডেলিভারি, একাকিত্ব দূর করতে স্কাইপ শেখানো, ফিজিওথেরাপি, ডিলাক্স বৃদ্ধাশ্রম এর। এগুলোই রমরমা শিল্প। এখন অভিমান নয়তো কখন?
অন্য রাজ্যে টাটা বিদায় নিলে শোক পালন হয়, এখানে দেবীর জন্ম হয়। দেবী উদযাপনেই খুশি। বদল এখন নয় তো কখন?
কিছু লুম্পেন ধর্মের নামে ঘর জ্বালাবে, পুলিশ মারবে, হেলমেট না পড়ে বাইক চালাবে, অস্ত্র মিছিল করবে আর তাদের মাথা মেরে গুঁড়িয়ে দেবো না? তাদের তোষন করতে হবে? এখন?
বিএ পাশ, এমএ পাশ করছে ছেলেমেয়েরা। পুরুষতান্ত্রিক বাংলায় প্রেমিকের হাতে রুমাল ধরিয়ে মেয়েগুলো বিয়ে করে মুম্বাই, দিল্লী, লন্ডন চলে যাচ্ছে আর ছেলেগুলো সিন্ডিকেট বা ওলা উবের এর লাইসেন্স নিচ্ছে। খুব বেশী হলে পৌরসভায় কাজ। অন্য রাজ্যে এই শিক্ষাগত যোগ্যতায় ম্যানেজার হয় লোকে। ফি বছর ১৫% ইনক্রিমেন্ট নিয়ে।
কোন নতুন চ্যানেল নেই, খবরের কাগজ নেই, আপিস, স্টার্টআপ,স্বপ্নঘোর বৃদ্ধি নেই। থাকার মধ্যে হতাশা চায়ের দোকানে, ক্যারাম আর তাস পেটানোয়।
এখন রাগ হবে না তো কখন হবে? বাদুরিয়ার আগুন আমার বাংলা নয়। আমার বাংলা বিসমিল্লার সানাই এ শুভ দৃষ্টি, ব্রাহ্মণ দলিত মুসলিম নির্বিশেষে বিরিয়ানিপ্রেম, টপ শটে হাওড়া ব্রিজ।
আসুন না, যেটা যার ভুল সেটা বলি। যদি মসজিদ ভেঙে দেওয়া হয় আসুন ঘেন্না করি একসাথে, যদি মন্দিরে গরুর মাংস ছুড়ে দেওয়া হয় সেটার ও নিন্দা করি।
আসুন না দুই ধর্ম থেকেই হাত ধরি শপথ নিতে। কেউ যদি বেশী পায়, পাওয়ার হিসেব নাও কেন না অনেক লোক ভালো সব পায়না। লড়াইটা চাকরি পেতে, দু বেলা খেতে, পড়তে পাওয়ার জন্য হোক। মন্দির, মসজিদ তৈরি করলে শিল্প আসেনা। আগুন জ্বালালেও আসেনা।
উন্নয়ন এর রথ যাত্রা কবে হবে এই পোড়া দেশে? কবে দাঙ্গা বাঁধবে বিশ্বমানের কারখানা, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প পেতে নিজের মাটিতে। দেখবেন প্রত্যেক কারখানা তখন মন্দির, মাজার হবে। ধর্ম হবে উন্নয়নের গতি।
যারা অস্ত্র মিছিল করছে, ঘর জ্বালাচ্ছে, রথ পোঁড়াচ্ছে, মাজারে ঢিল ছুঁড়ছে, তাদের চাকরিজীবন দিন। ব্যাবসা দিন। ব্রোকার, ডিলার, রিটেইলার হতে দিন। মতাদর্শ দরজা খুলুন। শিল্প বৃদ্ধি আনুন। ধন্দা সে বড়া কোই ধরম নেহি হোতা!
এবার কাজ দিন। অনেক অনেক কাজ। নয়তো অলস মস্তিষ্কজাত পিটিয়ে মারা, দাঙ্গা বাধানো, গুজব ছড়ানো চলতেই থাকবে আমার বাংলায়। ভিক্টোরিয়া, দার্জিলিং, খোয়াই, লালমাটির বাংলায়।
© ---ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment