| ভারত পাক যুদ্ধং হেব্বি |
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
আজ রবিবার। আকাশ আংশিক মেঘলা। রোদ্দুর যেটুকু তাতে বারুদ বারুদ গন্ধ। আজ যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হবে। বাইশ গজ এ পারমানবিক বিস্ফারণ হবে দেশাত্মবোধের।
আজ দিকে দিগন্তে ভারত আমার ভারতবর্ষ এড্রেনাল রাশ। বদলা নেওয়ার শপথ চ্যানেল এ চ্যানেল এ। এক একটা ডেলিভারি মোক্ষম চাল পাকিস্তানকে পৃথিবীর ম্যাপ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার। প্রতিঘাতততততত!!!!!!!
কোন সালে কতগুলো ভারতীয় মেরেছিল পাক সেনা, কতগুলো বুলেট লেগেছিল মুম্বাইবাসীদের মেরুদন্ডে, কটা সেনার কাটা মুন্ডু সাক্ষী ছিল পাক হিংসার- আজ গুনতি হবে। প্রতি ওভারে। আমরা হিসেব রাখবো পকোড়া খেতে খেতে।
আজ বউদের বড় ব্যস্ততা। এ যুদ্ধে সেবাদাসী তারা। পুরুষ সিংহ তাঁর বন্ধুদের বাড়িতে ডেকেছে। বোতল বোতল দেশাত্মবোধ ঢালা হবে, সাথে আদর করে ভাজা পকোড়া, এক বুক রাগ, রাতে জেলুসিল।
বাজার থেকে দরদাম করে রেয়োজি খাসি আনা হচ্ছে। মালের দোকানে দোল এর দিন এর মত লাইন। পেঁয়াজ, রসুন,আদা, দই এর প্যাকেট, দেশাত্মবোধের পুড়িয়া। জাতীয়তাবাদী তেল এ রাঁধুন, উপরে ছড়িয়ে দিন কাশ্মীর হামারা হ্যা অহমিকা। স্বাদ খোলতাই হচ্ছে। বাজারের ব্যাগের ভিতরে লাজে রাঙা হুইস্কির বোতল। বউনি হবে সন্ধে নামার আগে। গেলাস বের করে রাখা।
আমার ফ্ল্যাট এর ওয়াচম্যান বৃদ্ধ মানুষ। সুরক্ষা কম, গল্প বলে বেশি। ৯২ এর দাঙ্গা দেখেছে, ৯৩ এর বম্বে ব্লাস্ট দেখেছে, ২৬/১১ দেখেছে। আজ বড় উসখুস করছে তিনটের আগে বাড়ি ফেরার। ম্যাচ দেখবে। জিতলে দারুন হাততালি আর সিটি দেবে। যেরকম বিএসএফ জওয়ানরা দেবে স্লোগান। ভারত মাতা কি জয়।
টিভির সামনেই এরা যুদ্ধ করে। মধ্যরাতে আয়নার সামনে বিপ্লব। এরা জানে সরকার আদপে চুলটিও ছিঁড়বে না প্রতিবেশীর। বিরয়ানী খেয়ে আসবে, বিদেশে হাত মিলিয়ে আম্মির খবর নেবে। প্রশ্ন করলে চুপ করিয়ে দেবে- সিয়াচেন মে হামারে জওয়ান মর রহে হে।
এ অভিশাপ আমাদের। রক্ত আমাদের হাতে লেগে। ক্ষত দেশ ভাগের স্মৃতিতে। এখানে আর কোন উপায় নেই টিভির সামনে বিপ্লব করা ছাড়া।
যাদের একজন ও কাশ্মীর এ গুলিবিদ্ধ হয়নি, যাদের স্ত্রী দাঙ্গার আগুন এ গনধর্ষিতা নয়, যার বন্ধু ২৬/১১ তে নিহত নয়,তাদের আজ মউকা মউকা!
আয়নার সামনে অসহায় যুদ্ধরত। এক সন্ধে আচ্ছে দিন। বাদ বাকিতো জাতীয়তাবাদী উচ্ছাস এ পিটিয়ে মারা, মুদ্রাবন্দি ভারত ও চুলবুল চুলবুল ধুম ধারাক্কা। হু হাঃ হু হাঃ!
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment