| বর্ষা বাড়ি |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
বর্ষা এলো বম্বে জুরে। অঝোর। সারা রাত। সকাল ও। কাল রাত থেকে এসেছে সাদা হয়ে।আমার জানালার গ্রিলে, ওই যে কাপড় মেলার দড়িতে, কাঁচে, কব্জাতে, রঙ চটে যাওয়া প্লাস্টিক এর ক্লিপে।
ভোরবেলা থেকে শুয়ে আমার ঘর আগলে ছিল। এখন ভিজে আছে চারপাশ। এক বৃষ্টিজলের পিঠে আরেক বৃষ্টিজল।
আমাদের শোয়ার ঘরের জানালার ঠিক ওপরে এসি আউটলেট এ দুটো পায়রা থাকে। আজ ওরা বড্ড জুবুথুবু।
তিনটে পুচকি গাছ কিনে এনেছিলাম। পাতাবাহার, টগর আর এলোভেরা। ছোট্ট পাতা, গুটলি গুটলি চোখে চেয়ে থাকতো। অনেকটা মাটি জুরে মুখ বাড়িয়ে থাকতো আমি অফিস যাওয়ার আগে। অনেক রাতে বাড়ি ফিরলে একবার চোখ খুলে দেখে নিত। আর কার্বন দীর্ঘশ্বাস এ ছাড়তো।
ইদানীং বড় হচ্ছিল। চোখে মুখে আকাশ ছোঁয়ার স্পষ্ট ছাপ ছিল। আজ দেখি অনেকাংশ সবুজ বেশী, বড় হয়েছে, বেশ লাগছে।
দূরে একটা ফ্ল্যাট বাড়িতে একটা ন্যাংটো বাচ্চা খালি গ্রিল বাজাচ্ছে বৃষ্টি পেয়ে। আর এক ফ্ল্যাটের আলুথালু বউদি দেখছি মেলা কাপড় তুলে নিতেই ব্যস্ত। রান্না চাপানো আছে বোধহয়। আতপ চাল খায় ওরা।
এই সময় সব শব্দ স্পষ্ট শোনা যায়। ঝমঝম ঝমঝম ক্রমাগত। এবার রান্নাঘর এ কৌটোয় চাল তোলার শব্দ শোনা যাবে, ডাল এ কাঁকর বাছার শব্দ ও। চপ বোর্ড এ আলু, কপি, পেঁয়াজ ছুরি দিয়ে কাটার শব্দ। কান পাতো গ্যাস জ্বালানো শব্দ শুনতে। চাপা ধুপ করে একটা শব্দ। পেঁয়াজ রসুন মিহি করার শব্দ। কড়াই ওভেন এ রাখলে কোন শব্দ হয়না। মিঠে শব্দ হয় মশলা তেল এক সাথে এলে। ঝমঝম ঝমঝম ক্রমাগত ঝাঁঝ। আজ খিচুরি হবে।
ঘরে অনেক কাপড় মেলা এখন। বাস্প প্রচুর চার দেওয়াল জুরে। এসব রবিবার খিচুরি, মামলেট, আনুষঙ্গিক ভাজা খেয়ে বর্ষা ঘুমের। একপাশ ফিরে বালিশ এ মাথা দিয়ে আরেক কান দিয়ে বৃষ্টি আওয়াজ শোনার।
এ শহর বছর এ চার মাস বর্ষার মঙ্গলকাব্য শোনে। আজ সেরকম এক দিন। মেঘলা। বাড়িতে বন্দি থাকার। সারাদিন।
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment