কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Monday, August 20, 2018

১২দিন হয়ে গেলো, একমুঠো মুখে তোলেনি

| ১২দিন হয়ে গেলো, একমুঠো মুখে তোলেনি |

#মেডিক্যালকলেজ 

----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

সবকিছুর জন্য কি লাভ-ক্ষতি-যুক্তি খুঁজতে আছে? সব্বাই যদি মাথা গুঁজে লেখাপড়া করে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে, পাঁচ তারা হোটেল সমান হাসপাতালে মেডিকেল এক্সিকিউটিভ হয়ে বসে, বাউন্ডুলে হবে কারা? কারা মাঝরাতে স্টেথো নিয়ে বেড়িয়ে যাবে গ্রামের হেলথ সেন্টারে? কারা বিনাপয়সায় ক্যাম্প করতে যাবে সুন্দরবনে? কারা সরকারি হাসপাতালে পেশেন্ট পার্টির হাতে মার খাবে? তারপর ফের তাদেরই আপ্রাণ চেষ্টা করবে সুস্থ করে তুলতে?

ধরুন একদিন আপনার কর্পোরেট করোটির ডানদিকে একটা ঝাঁকুনি অনুভব হলো ১২দিন পরে। এরপর আপনার বিভিন্ন গ্রন্থির থেকে নিঃসৃত রাসায়ানিক উপাদারগুলোর কারনে প্রবল 'ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো' আবেগ জন্ম নিলো। আপনার মনে হলো একটা সমষ্টির বা শ্রেনির বা প্রজন্মর জন্য একটা নতুন ভোর, একটা আমূল পরিবর্তন আনতে হলে একটা ছোট্ট কিছু থেকে শুরু করতে হবে। একটা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার হোমে স্পর্ধার আহুতি দিতে হবে। একটা লিলিপুটিয়ান আলোড়ন ফেলতে হবে আপনার বিরাট ফ্ল্যাটবাড়ি, বিপুল মিউচুয়াল ফান্ড আর রোজনামচার স্টারখচিত সিরিয়াল দেখার মাঝে। কিংবা স্রেফ এই দ্রোহের পাশে থাকতে হবে। একে উদযাপন করতে হবে। এর বারুদ ছড়িয়ে দিতে হবে আগামীর আগুন জ্বালানোর জন্য। ১২দিন হয়ে গেলো, একমুঠো মুখে তোলেনি।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কিছু ডাক্তারির ছাত্র আজ ১২দিন হলো একটা দানা ও মুখে না তুলে প্রতিবাদ-অনশন করছে হস্টেলের দাবিতে। ইতিমধ্যে রক্ত বমি, প্রেসার ফল করা ইত্যাদি ঘটেছে। এরপর মারা যেতে পারে। কারণ এরা এখনো কাঁচা মাথায় চকোলেট, প্রোটিন বার খেয়ে অনশন করতে শেখেনি পাকা রাজনীতিবিদদের মতো।

ওই ছেলেগুলোর না খাওয়া গ্রাসকে সমবেদনা জানিয়ে একবেলা অভুক্ত থাকতে পারবো না আমরা? আপনার ভাগাড়ের মাংস, ফর্মালিন দেওয়া মাছ, বিষাক্ত শাক সব্জি একবেলা না খেলে কি খুব ক্ষতি হবে? ধরুন একবেলা আমরা না খেয়ে যদি মেডিক্যাল কলেজে এই সলিডারিটির বার্তা পৌঁছে দিতে পারি? যদি ওদের জানান দিতে পারি যে এই শনিবার বারঠাকুর না, লড়াকু মানুষদের জন্য উপোস করছি আমরা।

ভগৎ সিং ভারতীয় রাজনৈতিক বন্দীদের ন্যায্য অধিকার ও সম্মানের দাবিতে ৬৪ দিন জেলে অনশন করেছিল। সে সময় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধর্ষক বা খুনিদের থেকেও অধম মনে করা হত। তিনজন স্রেফ না খেয়ে থেকেছিল সামান্য কিছু দাবি নিয়ে। সবার জন্য মাটিতে শোয়ার কম্বল, সকালের খবরের কাগজ, লেখার কালি-কলম-পাতা, আইনজীবীর সাথে কথা বলার সুযোগ। ব্যাস! এই ছেলেমেয়েরা ও মঙ্গল গ্রহে ফ্ল্যাট চাইছে না।

বিপ্লব করতে বোধহয় সাত পাঁচ ভেবে, একটা বিশাল দেশদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হয়না। দুম করে একটা ব্যানার নিয়ে শাহবাগে দাঁড়িয়ে হাজার মানুষের অপেক্ষা করা ও বিপ্লব৷ এই মেধাবী ছেলেগুলোর কলেজে হস্টেলের দাবিতে না খেয়ে অসুস্থ হওয়ার জেদ ও বিপ্লব। পারমাণবিক শক্তিধরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আচমকা ভিয়েতনামে রুখে দাঁড়ানো ও বিপ্লব।

আমরা যারা আজ কলকাতার বুকে মিছিল করবো, যারা লোকসভায় রিয়েলিটি শো নিয়ে চায়ের কাপে তুফান তুলবো, যারা উইকএন্ডে রেস্তোরাঁয় ছেলেমেয়েকে খাওয়াতে নিয়ে যাবো। যারা ফ্রিতে বিরিয়ানীর প্যাকেট পাবো, তারা যেন এটাও মনে করি, এই শহরে ১২দিন হয়ে গেলো, কয়েকটা দামাল ডাক্তারির ছেলে একমুঠো মুখে তোলেনি। এরা কেউ মঙ্গল গ্রহে ফ্ল্যাট দাবি করেনি। মেডিকেল কলেজে থাকার জন্য হস্টেল চেয়েছিল।

কাল একবেলা খাবো না। সবকিছুর জন্য কি লাভ-ক্ষতি-যুক্তি খুঁজতে আছে? একবেলা না খেলে মরে যাবো না কিন্তু ওরা মরে গেলে সৌখিন আয়নায় আর নিজের চোখের দিকে তাকাতে পারবো না।

বার্তাটা ছড়িয়ে দিন। ওদের জন্য একবেলা আমরা কেউ খাবো না।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment