| কেরলকে বেঁচে ফেরাতে ওদের পাশে কেন থাকবেন?|
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
১). রিজার্ভ ব্যাংকের একজন ডিরেক্টারের মতে, সবরিমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ করতে দেওয়াতেই নাকি কেরালায় ভয়াবহ বন্যা!
২). ডানপন্থীদের মন্তব্য, গরু কাটতে কাটতে পাপের ঘড়া ভরে গেছিল৷ তাই কেরালায় ভয়াবহ বন্যা!এসূত্রে জানিয়ে রাখি, কেরালার বিফ ডবল ফ্রাই মালাবার পরোটা দিয়ে যারা খাননি, তারা এখনো পৃথিবীতে আছেন। স্বর্গ কি তা চেখে দেখেন নি তারা।
৩). বিশাল হৃদয় সম্রাটদের বক্তব্য, কেরালা লাল পতাকা, দেশদ্রোহীদের ভিড়ে ভরে গেছিল। ভীড় কম করছে ভগবান।
৪)৷ টুইটার এ অনেকে বলছে, সব যদি কেন্দ্র করে, রাজ্য কি করবে? হেলিকপ্টার থেকে নৌকো সব যদি কেন্দ্র পাঠায়, রাজ্য সরকার কি কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো পড়ে শোনাবে?
এক এক করে মাধ্যমিকের প্রশ্নবিচিত্রার উত্তরমালা পাবে৷ এসব সময় মাথা ঠান্ডা রাখাটাই মূখ্য। মোটা চামড়া হওয়াটাই শ্রেয়। কারণ পথে ঘাটে কৌটো ঝাকাতে হবে৷ পতাকা বিছিয়ে টাকা তুলতে হবে। রবিবার সকালবেলা লুচি আলুরদম পরিত্যাগ করে বেরিয়ে পরতে হবে কাপড় জামা, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন জড়ো করতে। এসব দিনে ভুলে ও রাগ পুষবেন না। ভাববেন না, আমাকে তো ভোট দেয়নি৷ কেন করবো!
পতাঞ্জলীর চবনব্রাশ খেলে নাকি মন ও ঠান্ডা হয়। শান্ত হন। মাথায় রাখুন, ঠিক এই কারনেই আপনি লালচে রঙের যা কিছু আজ ও পছন্দ করেন। দলমত নির্বিশেষে। শক্তি চাটুজ্যে বলে গেছেন। মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও।
এবার উত্তরমালা :
১).অনেক কট্টরপন্থী পক্ষের অনেক কথা উপেক্ষা করে মন্দির মসজিদ নিজের দরজা খুলে দিয়েছে৷ ধর্মের জন্য মানুষ না মানুষের জন্য ধর্ম। তাই ত্রিভাঙ্কুর দেবসম, যারা সবরীমালা সহ ১২০০ মন্দির নিয়ন্ত্রণ করে কেরালাতে, তারা অর্থসাহায্য করে ও মন্দিরের প্রধান ফটক খুলে বানভাসি মানুষের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে দিয়েছে৷ গির্জাতেও তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২). ঋগ্বেদের যুগে আর্যদের কাছে গাই মানে মহিলা গরু ছিল খুব মূল্যবান অর্থনৈতিক সম্পদ। তাই পুরুষ গরুকেই ভক্ষণ করা শ্রেয় ছিল। বেদে ‘অঘ্ন’ লেখা সত্ত্বেও সেযুগে গরুকে যজ্ঞে উৎসর্গ বা বলি দেওয়ার চল ছিল ও তার মাংসও খাওয়া হত, এমনকি গরুর চামড়ারও প্রচুর ব্যবহার ছিল। ঋগ্বেদে মুখ্য দেবতা অগ্নিকে ঘিয়ের সাথে যেসব মাংস আহুতি দেওয়া হতো তার মধ্যে আছে ‘অশ্ব, ঋষভ অর্থাৎ বলদ, উক্ষ্ণ অর্থাৎ ষাঁড়, মেষ এবং ‘ভশা’। সে বড় সুস্বাদু ছিল। কিন্তু ততদিনে কাস্ট সিস্টেম এসে গেছে। নরম মাংস ব্রাহ্মণ খাবেন। ইদানীংকালে যা ভক্ষন করেন, তা পুরুষ গরু বা মোষ। মানে বাফ!
৩). কেরলে মানুষের গড় আয়ু এখন ৬৮। প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার ২৩জন। ভারতের গড় ৩৭। শিক্ষার হার ৯৫% মানে বোধবুদ্ধিহীনতার হার ৫% শতাংশ। সুতরাং কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, তারা বোঝে। ভোট ও সেভাবে দেয়। পাঁচ বছর বামফ্রন্ট, পাঁচবছর কংগ্রেস জোট। বাংলার মতোই ওখানে ও একটা চাড্ডি এলার্জিন বাতাসে ঘোরে। কিছু বেগড়বাই দেখলেই সবাই একজোট হয়ে যায়। এখানে লাল পতাকা মানে হক কথা সোচ্চারে বলবার পতাকা। না বললে, সে পতাকা বর্জন করে লোকে। এখানে লাল পতাকা লড়াই এর। খেটে খাওয়া মানুষের পাশে থাকার। বানভাসি মানুষের পাশে থাকার৷ একে নামিয়ে দেওয়া কঠিন।
৪). অনেকে বলছে বটে যে সব কাজ কেন্দ্র করলে, রাজ্য কি করবে। ইগনোর করুন। তারা একদম গবেট টাইপ ফেসবুকে লাইক পেতে এসব করছে। যাদের নূন্যতম যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো সম্পর্কে ধারনা আছে, তারা জানবে। হেলিকপ্টার নৌসেনার নৌকো, স্পিড বোট এসব কেনা হয় আমার আপনার, রাজ্যের টাকা দিয়ে। কিন্তু দরকার পরলে এগুলোকে ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রের পারমিশন লাগে৷ সেনাবাহিনী বা নৌসেনা ও একদিনে কেরালার ম্যাপ হৃদয়াঙ্গম করে ফেলে নি। রাজ্য সরকার, জেলার প্রশাসনের সাথে প্রতি মুহূর্তে কথা বলে, কাজ করছে। রোজ সকাল বিকেল বৈঠক হচ্ছে কেন্দ্র রাজ্যের। বাজার গরম করতে এসব বলা। খোঁজ নিয়ে দেখুন, যারা এসব প্রশ্ন করছে, তারা একটাকা ও ডোনেট করেনি। বরং নাথুরাম গোডসের মূর্তি বসাতে ডোনেট করতে আগ্রহী হতে পারে। যতসব!
ছোটবেলায় দেখতাম বন্যা, ভূমিকম্প জাতীয় কিছু হলেই একদিনের বেতন দান করা দস্তুর ছিল। তারপর থাকতো চালা ডাল দান করা ভারত সেবাশ্রমকে। কাপড় অর্থ দান করা লাল পতাকা বিছিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পাজামা ফতুয়াকে। ওরাই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতো।
এখন ওসব দেখা যায় না বিশেষ। পেটিম এ চোখের পলকে ট্রান্সফার হয়ে যায় দান। জাগো জাগো সর্বহারা উচ্চারণ করার ও আগে। তবু ওই যে রামকৃষ্ণদেব আউড়ে ছিলেন না, পাদপদ্ম-তত্ত্ব-বোধ-শান্তি-সৌখ্য-দায়কম্ সক্ত- চিত্ত ভক্ত-সূনু নিত্য-বিত্ত-বর্ধকম্। যে সব্জি বেচে, যে রিক্সা টানে, যে মুটে, যে মজদুর, যে ক্ষেতচাষী, যে মাথায় একতাল গু নিয়ে ম্যাথরের কাজ করে, একবার কান পেতে শুনুন। তার ও দান করতে মন চায়। সে ও একদিনের বেতন দিয়ে দেবে ঠিক করে ফেলে। সে ও গলার কাছে দলা পাকানো কি যেন সামলে বলে ফেলে, পাশে আছি।
শুনলাম অনেক সাংসদ, বিধায়ক একদিনের বেতন দান করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। আরাভাকুরুচির চাষী ও শপথ করেছে। রোহতাকের ম্যাথর ও ঠিক করেছে। গুঁড়্গাও এর শ্রমিক ও ঠিক করেছে। নিতান্তই অল্প হবে সে টাকা কিন্তু শোনা যায় এসব দানে নাকি আত্মীয়তার পরশ লেগে থাকে। মৃতপ্রায় ও জীবন্ত হয়। এবার বলো কে জিতলো তবে?
©--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment