কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Monday, August 20, 2018

বাঙালির তরে যদি বাঙালি না কাঁদে

| বাঙালির তরে যদি বাঙালি না কাঁদে |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

প্রবাসে বসে "বাংলা" এই শব্দবন্ধটা শুনলেই যে জিনিস টা প্রথম মনে পরে তা হলো, ঘরে ফুটতে থাকা গরম ভাতের গন্ধ৷ ওপরে ঢালা হবে ঘি, পাশে থাকবে আলু চোখা, ডালের বড়া, বর্ষাকালীন ইলিশ, ইলিশের তেল, কাঁচা লংকা, নুন-গন্ধরাজ লেবু।

এরপর নাকে লাগে, সোঁদা মাটির গন্ধ, মায়ের হলুদমাখা আঁচল, কলমি শাক ভাজা, শ্বশুরবাড়িতে বাঁকুড়ার পোস্ত। বাঙাল ঠাকুমার প্রিয় চোকলা-মানে সব্জির খোসা ভাজা,বকফুল, তেলের বড়া৷ এরকম আরো অনেক এপার ওপারের জিনিস আছে যেটা কেবলমাত্র বাংলার। বাঙালির। দেশভাগের পরে ও।

বাঙালি আজীবন আত্মবিস্মৃত জাত। সৌখিন নাম উদার, বিশ্বনাগরিক। কিন্তু ওদিকে ওই উদারতার সুযোগ নিয়ে মুঘল, হুন, ফারসি, পারস্য, পর্তুগিজ, মারোয়ারি, গুজ্জু ও একে স্যান্ডেলের সোলে  পুনর্বাসন দিয়েছিল। বাঙালি লিবারেল জাত। ইয়েস স্যার ব্যতীত অন্য শব্দ প্রয়োগ করেনি। উত্তম কুমারের মতো ভূবন ভুলানো হেসে সব ভুলে গেলো ব্যাকস্ট্যাব৷ রয়ে গেলো বাংলাতেই বাঙালির সেকেন্ডারি সিটিজেন হয়ে থাকা। দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক।

পশ্চিমবঙ্গকে বাংলা পুনঃনামাংকিত করাতে অনেকের অনেক গোঁসা। বাংলা মানে তো মদ। সাথে দেশ যুক্ত করলেই একটা গোটা ইসলাম রাষ্ট্র ইত্যাদি। ইতিহাস কিন্তু বাংলা রাজ্যকে অতটা খেলো করে দেখে না। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি কিন্তু আদপে ছিল লোকমুখে বাংলা প্রেসিডেন্সি। ব্রিটিশ ভারতের সবচেয়ে লাভদায়ক, সম্ভাবনাময় অঞ্চল। গোটা ভারতের ঈর্ষা, অহংকার।

বাংলা কি করে যেন বদলে গেল বেঙ্গল, বাংগাল এ। কারোর কোন আপত্তি ছিল না, যদি না বাংলাকে সামাজিক,  সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকভাবে পাল্ট দেওয়ার চক্রান্ত নেওয়া হতো। বাংলাকে বাংগাল বানিয়ে গো বলয়ের সাকরেদে পরিনত করা। অর্থাৎ আমার পেঁয়াজ আর পান্তা ভাতকে বদলে দেওয়া রাজমা চাওয়ালে। আমার দুর্গাপূজাকে বানিয়ে দেওয়া মা শেরাওয়ালীতে৷

আমাকে দিল্লি ও মুম্বাই তে সব্বাই জিজ্ঞেস করে, ভাই তোরা মাচ্ছি ও খাস, জল ও খাস। পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ ব্যক্ত করতে কোন বিভেদ করিস না। আমি ঠান্ডা গলায় বলি, ভাই আমরা জেন্ডার সেনসেটাইসড৷ নারী পুরুষে ওভাবে সব ক্ষেত্রে ভাগাভাগি করি না। গো বলয়ের ভাই আমার বড় বিমর্ষ হয়ে গেছিল। সে আজ ও নারীর থেকের গোমাতাকে গুরুত্ব দেয় বেশী।

যারা বাংলার বাইরে থাকেন, তারা জানেন যখন কোন রাষ্ট্রপ্রধান বাংগাল না বাংলা বলেন, তখন এপিগ্লটিসে কি যেন হয়। যখন কেউ মিষ্টি দই আর রসগোল্লার বাইরে বাংলাকে সরপুরিয়া, বোঁদে, মিহিদানা, ছানাপোড়াতে অন্বেষণ করেন তখন কিরকম লাগে।

বাংলা ভাষা ভারতীয়দের জাতীয় সংগীত দিয়েছে। নোবেল দিয়েছে, অস্কার দিয়েছে, নেতাজীর নামে দ্রোহ দিয়েছে। বন্দে মাতরম ও তো বাংলাতেই, যেমন উই শ্যাল ওভারকাম। আমরা করবো জয়।

এমন এক শব্দে কিভাবে বিরোধ থাকতে পারে? সেই অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ ও নেই, সেই সাহেব শুভর হিন্দু মুসলিমকে বিভাজন ও নেই। এখন ঈদের নামাজের জন্য জায়গা করে দেয় চক্কবত্তী৷ এখন হালিম বানানো হয় ইয়াসমিন, বিলাল, খান, মুখার্জির জন্য ও৷ এখন অষ্টমীর অঞ্জলিতে সাবরিনা কে ও দেখা যায়। এখানে বড়দিনে কেক কাটে ইয়াসমিন।

কি ভালোই না লাগবে যখন সবার শেষে না, দ্বিতীয় স্থানে আমার রাজ্য বলবে, আসন গ্রহন করবে। কি ভালোই না লাগবে যখন আমিত শাহ বা নরেন্দ্র মোদি বাংগাল না 'বাংলা' বলবে।

বাংলা মানে আজো পোড়া মাংসের গন্ধ, বিভাজনের রাজনীতি না। বাংলা মানে গরম ভাতের গন্ধ৷ ওপরে ঢালা হবে ঘি, পাশে থাকবে আলু চোখা, ডালের বড়া, বর্ষাকালীন ইলিশ, ইলিশের তেল, কাঁচা লংকা, নুন-গন্ধরাজ লেবু।

খুব খারাপ লাগে যখন বাঙালির পেছনেই কাঠি করে বাঙালি, দিল্লির আদেশে৷ খারাপ লাগে। মধুসূদন, নবারুনকে প্ল্যানচেট করে আনতে ইচ্ছে করে বাংলায় এই অসময়ে।

আমি তুলসিদাস বা গালীব পুরো পড়িনি কিন্তু নবারুন পড়েছি। সে লিখেছিলঃ বাঙালির তরে যদি বাঙালি না কাঁদে চুতিয়া বলিয়া তাকে ডাকো ভীমনাদে।” কবি পুরন্দর ভাট-এর মুখে নবারুণ লিখেছিল৷ আজ যাই৷ আবার দিল্লির সেন্সার বোর্ড উংগলি করতে পারে৷ নিষিদ্ধ হতে পারে বাংলা লেখা।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment