| প্রিয় বন্ধুর অবিচুয়ারি |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
আমি মানুষটি Ambivert গোছের। মানে এক্সট্রোভার্ট আর ইন্ট্রোভার্ট এর মাঝামাঝি কিছু।
ভীড়ের মাঝে দারুণ বাচাল কিন্তু সুযোগ বুঝে
মুখচোরা। স্টেজে ফাটিয়ে দিই আবার কি ভীষণ লজ্জা লোকসমক্ষে সৃজনশীল কিছু পরিবেশনে। যার কারনে আমার নাকি বাইপোলার মুড দেখা যায় অভরান্যের বাইসনের মতো। কিছু জনে কহে ও নাকি আমার উন্নাসিকতা বা অহংবোধ। আসলে একলা হওয়ার টার্কি জাগা বা ক্রনিক লাজুকপনা।
Ambivert মানুষ হলে ও কপাল গুনে আমার বন্ধু বেশখানেক। বৃত্ত বিশাল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নিজের coterie বা খোপের মধ্যেই কিছু বন্ধুযাপন করি। দীর্ঘদিনের সব বন্ধু কিন্তু একই বন্ধু, আলাদা আলাদা খোপে হাতে গোনা কিছু মানুষ৷ ভালো বন্ধু আর কি।
আমার প্রথম বন্ধু ছিল আমার থেকে ষাট বছরের বড়৷ দোকতা পাতা, গোপাল জর্দার গন্ধমাখা এক বন্ধু। নারকেল তেলের গন্ধ মাখা এক বন্ধু। জাপ্টে ধরলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় যে বন্ধু৷
সে বন্ধুই ভীড়ের মাঝে জড়তা কাটিয়ে উঠে উদ্দাত্ত হতে শিখিয়েছিলো। অন্ধকার লাইব্রেরিতে গুপ্তধনের সন্ধান দিয়েছিলো। লেখার সাহস জুগিয়েছিলো। কান্না পেলে নারকেল নারু, গোকুল পিঠে সামনে এনে দিয়েছিলো।
দিদা দাদুরাই বোধহয় এমন বন্ধু যারা বাবা মায়ের খুব ঘনিষ্ঠ হলে ও আমাদের পক্ষের কমরেড। বয়ঃসন্ধির কোন বেয়াদবী বা ছেলেবেলার কোন দুষ্টুমিই হয়তো পাঁচ কান করতো না। বা করতো ভালোর জন্য৷
আজ বন্ধুত্বের দিন এই অসমবয়সী বন্ধুদের কথা বড্ড মনে পরছে। বড্ড হাত ধরতে ইচ্ছে করছে। পাশে শুয়ে চাঁদমামা আর ঘুতুম পেত্নীর গল্প শুনতে ইচ্ছে করছে। ওই যে রুকু যেভাবে দাদুর সাথে ফন্দি এঁটে আফ্রিকার রাজার মুখের ভিতর গনেশটা লুকিয়ে রেখেছিল, সেরকম কিছু করতে ইচ্ছে করছে৷
পয়লা জুন আমার প্রিয় বন্ধু আমাকে ছেড়ে দুম করে চলে গেলো। মনখারাপ হয়েছিল কিনা কি জানি। আমি দিল্লিতে ছিলাম। প্লেন চেপে যখন পৌছলাম ওর পাশে, আর পাঁচ টা দিনের মতোই শুয়ে ছিল৷ স্রেফ আমার পায়ের আওয়াজ শুনে কি জানি কি জাদুবলে এবার আর বললো না, "কে পুটু এলো নাকি? দেখি সোনাটাকে কাছ থেকে একটু"।
এবারের বন্ধুর দিন দিদার জন্য রইলো। প্রথম বন্ধু৷ প্রিয় বন্ধু। টাটা।
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment