কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Monday, August 8, 2016

| BREAKING: রবি ঠাকুরকে গনহত্যার মামলায় সমন |


তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই তুমি?
যেই প্রতাপে ঝলসে দিলে জন্মভূমি/
মধ্যবর্তী যেই বা আসলে খরকুটো,
শ্রাবণ মাসের বাইশে সমন মৃত্যু গুনি।

গুরুদেব প্রনাম। আপনার লেখা পড়ে বড়ই আনন্দ অনুভব করি। কিন্তু এই চিঠি লিখে আমি আপনার লেখা গান, কবিতা বা গদ্যের প্রশংসা করতে পারলাম না। আমি অপারগ।
এই লেখা মারফৎ আপনাকে সমন করা রবীন্দ্র সদন চত্বরে। একটি মৃতদেহদের আদালতে।
শ্রী রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, আপনি খুনি। আপনার বিরুদ্ধে IPC 301,302,306, 307 সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে কিছু মৃতব্যক্তি। জীবদ্দশায় তাদের মধ্যে কেউ কেউ কবি, লেখক, চিত্রকর হিসেবে পরিচিত ছিল।
আপনার হাতে যদি শতবার হাত ধোয়ার পরেও দোয়াতের কালি লেগে থাকে,তবে তা আপনার ভ্রান্তি। কলম বিলাস কখন ক্ষমতার উৎস হয়ে উঠেছে আপনি নিজেও জানেন না। ভালো করে গোল চশমা পরে হাত দুটো দেখুন। দেখবেন তাতে রক্ত লেগে কত অখ্যাত লেখকের। যারা আপনার তলায় চাপা পরে গেছিল।
অনেক দিস্তা কাগজ কলম খরচা করেও নতুন কিছু লিখতে পারেনি। প্রতি বছর প্রতি রাতে পায়চারি করেছে। যাই লিখতে গেছে, আপনি তা অনেক বছর আগে লিখে ফেলেছেন। বেচারা লিখে আবার কুচি কুচি করে সেই কাগজ ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে ঘরময়। কেবল সিলিং ফ্যান সাক্ষী ছিল ওর ব্যর্থতার। ওর না লিখতে পারা গল্পের। শেষে ওই সিলিং ফ্যানেই গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছিল ওকে।
যেভাবে সারাজীবন কেরানি হয়ে থেকে গেছিল কেউ কেউ কারন লেখক হতে চাইলেও নতুন কিছু লিখতে পারেনি। পারেনা।
আপনার সাথে আমার পরিচয় নিতান্তই বাড়ির চাপে। জোর করে মা দুটো গান আর তিনটে কবিতা মুখস্থ করিয়ে রেখেছিল। যেখানেই হোক, আউড়ে দিতাম। এতে শুনেছি মায়ের শান্তিতে ঘুম হতো।
এভাবে জোর করতে করতে একদিন কিছু কথার মানে বুঝতে শুরু করি। মানে বুঝে মন দিয়ে গেয়ে ফেললাম কিন্তু আপনার স্বঘোষিত স্তাবক-চ্যালার দল আমাদের ধমকালো। " বাবা, রবি ঠাকুরের গান রবিন্দ্রসঙ্গীত এর মতো গাও"!!!!
কিভাবে গাই। আমার তো WALKMan প্রজন্মে জন্ম। পরদেশী পরদেশী জানা নেহি গাইতে বেশি আনন্দ। এ আর রহমান আর চন্দ্রবিন্দু ভগবান। আপনি তো কেবল মা বাবার শাসন আর ইচ্ছেতে। আমার কৈশোরের সেই মুহূর্তগুলোর মৃত্যু আপনার কারনে।
গুরুদেব আপনি অজান্তেই বহু মানুষের, বহু প্রতিভা, বহু সম্ভাবনার অকাল মৃত্যুর কারণ। তারা আপনার তলায় পিষ্ট হয়ে থেকে গেছে রবীন্দ্র সদন এর গাছে, নন্দন এর পাচিঁল এ বা মোহরকুঞ্জতে । এদের সাধারণ মানুষ ভূত, দৈত্য বা পিষাচ বলে- আমরা বলি ব্যর্থ।
এরা এতটাই ব্যর্থ আর অপদার্থ যে পঁচিশে বৈশাখ এরা অদ্ভুতুরে কান্ড ঘটাতে পারে না, রবি ঠাকুর কে ভেঙে চুরমার করে একটা নতুন লেখা, ছবি, একটা গান গাইতে, লিখতে পারে না। ভয় পায়।
আজ বাইশে শ্রাবণ আপনি আসুন এই মৃত দেহ গুলোর সামনে। সালিশি হোক। আপনি কি সত্যিই গোঁড়া ছিলেন? আপনার মত লিখতে হবেই? গাইতে হবেই? একই বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে আপনার সুরে? না করলেই নাম খোদাই করে দেওয়া হবে কপালে- জর্জ বিশ্বাস?
হাজার হাজার মৃত কবি,লেখক, গায়ক আজ এসেছে আপনার কথা শুনতে। আপনি আসুন। আপনার ওজনে দুমড়ানো মোচড়ানো প্রতিভাগুলো একসাথে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে। বুকে নতুন কিছু আইডিয়া, একটা কথার মোচড়, কিছু সুর ঠাসা বিস্ফোরক নিয়ে।
সেদিন বিধাতা একা রবেন বসে, নীলিমাহীন আকাশে, ব্যক্তিত্বহারা অস্তিত্বের গনিততত্ব নিয়ে।
তখন দূরে, দিগন্তে, অনন্ত, অসংখ্য, লোকে লোকান্তরে এ বানী হয়তো ধ্বনিত হবে। হবেই।
--------ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment