□ পুরী □
বাংলার কিছু ঘরে একটা করে ছেলে অন্তত জন্মায় সমুদ্রে ফাঁড়া নিয়ে। এদের শুনেছি সমুদ্র মাঝরাতে ডাকে আয় আয়। সমুদ্র আর সেই ছেলেগুলো সারারাত ধরে জেগে থাকে।
বাংলার কিছু ঘরে একটা করে ছেলে অন্তত জন্মায় সমুদ্রে ফাঁড়া নিয়ে। এদের শুনেছি সমুদ্র মাঝরাতে ডাকে আয় আয়। সমুদ্র আর সেই ছেলেগুলো সারারাত ধরে জেগে থাকে।
অফিস থেকে যে ঘরটা মুম্বই শহরে আপাতত আমার থাকার জন্য দিয়েছে, তার চারপাশে
সমুদ্র। আমার শোবার ঘর থেকেই পর্দা সরালে দেখা যায় মেরিন ড্রাইভ সহ গোটা
আরব সাগর। এই মুহুর্তে আরব সাগর আর আকাশের মাঝামাঝি এক অদ্ভুত লালচে রঙ
দেখতে পাচ্ছি। চারপাশে অসংখ্য উঁচু ফ্যাটবাড়ি আর তার চেয়েও উঁচু আশা
আকাঙ্খা।
ওই ফ্যাটবাড়ি গুলো নিয়ে অনেক দীর্ঘশ্বাস এর গল্প জড়িয়ে আছে। এই গল্প গুলো টাউন থেকে যত দূরে এগনো যায় তত শোনা যায়। এই ফ্যাটবাড়ি গুলোতে নাকি বাথটবে চান করতে হয়, নাইট গাউন পরে বারান্দায় বসতে হয়, হাতে তিনটুকরো বরফ আর ষাট মিলি সিঙ্গল মল্ট এর গ্লাস। সামনে আরব সাগর।
আমার আপাদমস্তক মধ্যবিত্ততা। এসব এ বিব্রত বোধ করি। আমরা সেই শ্রেণীর অংশ যারা জুহুর সাতমহলাতে বসেও সমুদ্রে স্নান করার কথা ভাবি। দু তিন ঘন্টা লাফিয়ে ঝাপিয়ে ভেজা গায়ে তোয়ালে গলায় হোটেল ফিরে শাওয়ার এর তলায় স্নান করতে ভালবাসি। হোটেলের মুখে কল খুলে পা থেকে বালি ধুয়ে ফেলে ঘরে ঢুকতে হয় যদিও।
মুম্বইয়ের সমুদ্রের জল ঘোলাটে। শুনেছি তাই নাকি নেশার মতো লাগে রাতের আরব সাগর। নেশার ঘোরে নাকি অনেকে জলপরী দেখে ফেলে। মন্দাকিনীর মতো ডাগর আর ভেজা শাড়ি পরা। পা টা কেবল ল্যাজের মতো। প্রিমিয়ার পদ্মিনী গাড়িতে গিয়ে ওঠে। তার পর সোজা তাজ হোটেলের দিকে চলে যায়। শুনেছি ছাব্বিশ এগারোর রাতে খুব ভয় পেয়ে গেছিল। গার্ডরেল এর পিছনে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে সমুদ্রে ফিরে গেছিল। আশপাশে তখন বন্দুকের গুলির শব্দ।
আমি রোজ রাতে একবার এই বারান্দায় এসে দাঁড়াই। ন'তলা থেকে যদি কিছু দেখা যায়। যদি প্রচন্ড আওয়াজ করে কোন জলপরী আমাকে নিচে নামতে বলে?
একটা গোটা সমুদ্রের কোন গর্জন নেই। শান্ত ভাবে রাত জাগে। আর মাঝে মধ্যে কষ্ট হলে আছড়ে পরে। এই সমুদ্র নিজে কাঁদে, কেউ পাশে বসে কাঁদলে চুপটি করে আদর করে।
ভিষন রাতে ফেসবুকের নেশা দীর্ঘদিনের। সিগারেট ছাড়লেও এটা থেকে গেছে। অভিষার শেষের অপরাধ বোধের মত।
আজ ফেসবুকে একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো। কল্লোল দা একটা বিয়ার এর গ্লাস, এক খাবলা বালি আর অনেকটা সমুদ্রের ছবি দিয়েছে। ছবিটা পুরীতে তোলা। এসি ঘরে কোন এক গরমকালের ছবি। সমুদ্রের আওয়াজ পৌছয় কিনা কে জানে ওই ঘরে। আমি কিন্তু শুনতে পাচ্ছিলাম সমুদ্রের শব্দ। সাথে মেছো গন্ধ আর বিকট আওয়াজ। নেশার মত কিন্তু ছেলেমানুষি নেশা। ওই একুশটা লুচি চিনি দিয়ে খাওয়ার মত। আমার নাকতলার বাড়িতে রোববার গুলো যেরকম হতে পারে।
সমুদ্রের ধারে থেকেও কেন যেন ফেসবুক এর ছবিটা দেখে কপাল চিনচিন করে উঠলো। স্মৃতি থেকে তুলে আনা বেড়াতে যাওয়া। বাবার সাথে বিচে বালির রাজপ্রাসাদ বানানো, বোন কে বালির মধ্যে পুঁতে ফেলা, মায়ের চোরাবালির আতঙ্ক, বউকে ঢেউয়ের ধাক্কা থেকে বাঁচানোর ভান করে জাপ্টে ধরে ডুব।
ফেসবুকে পুরীর ছবিটা, নিচে কমেন্টগুলো কিরকম যেন একটা মাথাটা ঘুরিয়ে দিল। আমি সোজা বারান্দায় এসে সমুদ্রের সামনে। এ সমুদ্রের কোন গর্জন নেই। শান্ত ভাবে রাত জাগে। আর মাঝে মধ্যে কষ্ট হলে আদর করে।
এখান থেকে পুরী অনেকটা। বালি চাপা দেওয়া আমার শৈশবের ঘুরতে যাওয়াগুলো ঢেউ এর ধাক্কায় জখম হচ্ছে। ওগুলোকে বালির রাজপ্রাসাদ এ সযত্নে রাখতে হবে। চোরাবালিতে হারিয়ে গেলে মায়ের দুশ্চিন্তা হবে।
.................ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
ওই ফ্যাটবাড়ি গুলো নিয়ে অনেক দীর্ঘশ্বাস এর গল্প জড়িয়ে আছে। এই গল্প গুলো টাউন থেকে যত দূরে এগনো যায় তত শোনা যায়। এই ফ্যাটবাড়ি গুলোতে নাকি বাথটবে চান করতে হয়, নাইট গাউন পরে বারান্দায় বসতে হয়, হাতে তিনটুকরো বরফ আর ষাট মিলি সিঙ্গল মল্ট এর গ্লাস। সামনে আরব সাগর।
আমার আপাদমস্তক মধ্যবিত্ততা। এসব এ বিব্রত বোধ করি। আমরা সেই শ্রেণীর অংশ যারা জুহুর সাতমহলাতে বসেও সমুদ্রে স্নান করার কথা ভাবি। দু তিন ঘন্টা লাফিয়ে ঝাপিয়ে ভেজা গায়ে তোয়ালে গলায় হোটেল ফিরে শাওয়ার এর তলায় স্নান করতে ভালবাসি। হোটেলের মুখে কল খুলে পা থেকে বালি ধুয়ে ফেলে ঘরে ঢুকতে হয় যদিও।
মুম্বইয়ের সমুদ্রের জল ঘোলাটে। শুনেছি তাই নাকি নেশার মতো লাগে রাতের আরব সাগর। নেশার ঘোরে নাকি অনেকে জলপরী দেখে ফেলে। মন্দাকিনীর মতো ডাগর আর ভেজা শাড়ি পরা। পা টা কেবল ল্যাজের মতো। প্রিমিয়ার পদ্মিনী গাড়িতে গিয়ে ওঠে। তার পর সোজা তাজ হোটেলের দিকে চলে যায়। শুনেছি ছাব্বিশ এগারোর রাতে খুব ভয় পেয়ে গেছিল। গার্ডরেল এর পিছনে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে সমুদ্রে ফিরে গেছিল। আশপাশে তখন বন্দুকের গুলির শব্দ।
আমি রোজ রাতে একবার এই বারান্দায় এসে দাঁড়াই। ন'তলা থেকে যদি কিছু দেখা যায়। যদি প্রচন্ড আওয়াজ করে কোন জলপরী আমাকে নিচে নামতে বলে?
একটা গোটা সমুদ্রের কোন গর্জন নেই। শান্ত ভাবে রাত জাগে। আর মাঝে মধ্যে কষ্ট হলে আছড়ে পরে। এই সমুদ্র নিজে কাঁদে, কেউ পাশে বসে কাঁদলে চুপটি করে আদর করে।
ভিষন রাতে ফেসবুকের নেশা দীর্ঘদিনের। সিগারেট ছাড়লেও এটা থেকে গেছে। অভিষার শেষের অপরাধ বোধের মত।
আজ ফেসবুকে একটা ছবিতে চোখ আটকে গেলো। কল্লোল দা একটা বিয়ার এর গ্লাস, এক খাবলা বালি আর অনেকটা সমুদ্রের ছবি দিয়েছে। ছবিটা পুরীতে তোলা। এসি ঘরে কোন এক গরমকালের ছবি। সমুদ্রের আওয়াজ পৌছয় কিনা কে জানে ওই ঘরে। আমি কিন্তু শুনতে পাচ্ছিলাম সমুদ্রের শব্দ। সাথে মেছো গন্ধ আর বিকট আওয়াজ। নেশার মত কিন্তু ছেলেমানুষি নেশা। ওই একুশটা লুচি চিনি দিয়ে খাওয়ার মত। আমার নাকতলার বাড়িতে রোববার গুলো যেরকম হতে পারে।
সমুদ্রের ধারে থেকেও কেন যেন ফেসবুক এর ছবিটা দেখে কপাল চিনচিন করে উঠলো। স্মৃতি থেকে তুলে আনা বেড়াতে যাওয়া। বাবার সাথে বিচে বালির রাজপ্রাসাদ বানানো, বোন কে বালির মধ্যে পুঁতে ফেলা, মায়ের চোরাবালির আতঙ্ক, বউকে ঢেউয়ের ধাক্কা থেকে বাঁচানোর ভান করে জাপ্টে ধরে ডুব।
ফেসবুকে পুরীর ছবিটা, নিচে কমেন্টগুলো কিরকম যেন একটা মাথাটা ঘুরিয়ে দিল। আমি সোজা বারান্দায় এসে সমুদ্রের সামনে। এ সমুদ্রের কোন গর্জন নেই। শান্ত ভাবে রাত জাগে। আর মাঝে মধ্যে কষ্ট হলে আদর করে।
এখান থেকে পুরী অনেকটা। বালি চাপা দেওয়া আমার শৈশবের ঘুরতে যাওয়াগুলো ঢেউ এর ধাক্কায় জখম হচ্ছে। ওগুলোকে বালির রাজপ্রাসাদ এ সযত্নে রাখতে হবে। চোরাবালিতে হারিয়ে গেলে মায়ের দুশ্চিন্তা হবে।
.................ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment