কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Monday, August 22, 2016

| যেতে পারি কিন্তু কেন যাবোই |


আমরা সবাই ছেড়ে চলে যাই। কিছু না কিছু। যাওয়ার সময় হুজুক থাকে, তাগিদ থাকে। বেঁচে কুচে যা পরে থাকে, তা থেকেই যায়।
যেরকম চার পেগ খেয়ে বিল মেটানোর পরেও পরে থাকে মাংসের টুকরো, বিটনুন, কয়েকটা কাজু বাদাম। ওগুলো প্রত্যেকটা জরুরি ছিল, ভিষন গুরুত্বের ছিল। কয়েক ঘন্টার ফারাকে ডাস্টবিনে যাওয়ার প্রস্তুতিতে।
ছোটবেলায় দৌড়ে যেতাম। উষার মাঠ, শিবমন্দির, উষার স্টাফ কোয়ার্টার, কারখানার পাঁচিলের চারপাশে। বিকাল সাড়ে তিনটে থেকে গমগম করতো এলাকাটা। আমার কৈশোর। তখন চারধারে প্রচুর কাঁটা ফলের গাছ ছিল। ওগুলো এর ওর চুলে আটকে দিতাম। আর কুলের আচার খেতাম। কুলের বিচি থুঃ করে মুখের জোরে কতদূর যেতে পারে তার কম্পিটিসন হত।
সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব হত। তারপর সব চলে যেত। সব্বাই। পরে থাকতো একটা গোটা মাঠ হাজার খানেক ম্যাচের স্কোর কার্ড, শালপাতা আর ঝগড়ার গল্প আগলে। শিবমন্দির এ অবশ্য এক দারোয়ান কাম পুরোহিত ছিল। সে আজও আছে। পরিবার বিহারে, সে বয়সের ভারে নুব্জ। একদিন সেও চলে যাবে। উষার মাঠের শিবকে ছেড়ে বৃহত্তর দেব সংসারে। তখন শিবমন্দির এ নিয়ম করে ঘন্টা বাজাবে কে? ওর জন্য কান্নাকাটি করবে কে?
স্কুলের শেষ দিন ও তো হুজুগে কেঁদে ফেলা ছিল। একে অপরের স্কুলের জামায় বার্তা ছিল, scrap book এর অনুলিপি ছিল, লিপস্টিক এর স্মৃতি ছিল। কিন্তু সেই জামাও তো এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সাজানো ছিল কলেজের জার্সি, মেডেল, সোস্যাল এর ছবি। স্কুলের ওই লেখালেখি করা জামাটা কোথায়?
স্কুলে ধুমা প্রেমে পরেছিলাম। কিসে কিসে যেন চুমু খেয়েছিলাম। স্কুলবাস, ট্যাক্সির পিছনের সিট, অটো, বৈষবঘাটার এঁদো গলি। হাফসোল ও। মনে হতো ইহার পরে জীবন বাকি নাই। আইসিইউ তে ঢুকে পরেছিল বেঁচে থাকার মানে।
আমার রাগ হতো। ছেড়ে চলে যেতে পারে কেউ ভাবতে ভালো লাগতো না। তবু তো যেতেই হত। যেভাবে মনের মিল নেই বলে এক অষ্টাদশীকে ছেড়ে গেছিলাম। ফোনে ওর কান্না শুনবো না বলে প্রিয় বন্ধুর নম্বরে divert করে দিতাম ওর কল। প্রতিরাতে।একদিন ছেড়ে চলে গেল কান্নাকাটি।
কলেজে যে ক্লাসরুমে বসতাম, তাও তো ছাড়তে হয়েছে। ক্লাসরুম একই আছে কিন্তু বদলে গেছে মুখগুলো। ওগুলো ও ছেড়ে চলে যায়। যেভাবে এসএফআই ছেড়ে যায় ইউনিয়ন রুমে থাকা লেনিনের এর ছবি, কালেকশন এর কৌটো।
আমার ভারি পছন্দের একটা ঠেক ছিল hardinge hostel। বিধানসরনীর উপর আমাদের সন্ধ্যা কাটতো বিহারী কাকুর সেদ্ধ ছোলা, চিপস আর master blend হুইস্কি সহযোগে। একদিন বন্ধুরা যখন ওই হোস্টেল ছেড়ে যে যার পথ বেছে নিল, ওই রাত জেগে ভূতের গল্প আর প্লাস্টিক এর গ্লাসে পানীয় আর ছাদের থেকে হাওড়া ব্রিজ চাপা পরে থাকলো রুম নাম্বার একশো আট এর চৌকির নিচে। ধুলো আর পুরনো নোটসের টুকরোর সাথে।
এভাবে এক এক করে এই শহরে থাকাকালীনই তো অনেক কিছুই ছেড়ে চলে গেছি। যখন শহর ছেড়ে দেওয়ার পালা, তখন কেন শক্তি আওরাবো? যেতে পারি আর চলে যাবোই।
কেন যাবোই তার ফর্দ রাজপথে বিছিয়ে দেবো। পৃথিবীর গাড়ি থামবে। আমি যাবো। পথে শিল্প আসেনা। গাড়ি থামে না। রাজপথ মেশে বিশ্ববঙ্গ সরনীতে।
এই শহরের গন্ধ কি ওই বৃষ্টি ভেজার পরে পাওয়া যায় না মায়েদের আঁচলে যে রান্নামাখা গন্ধ থাকে সেখানে মেলে? পূর্নিমার ঘোলাটে চোখে রাত জাগে প্রেমিক, খোয়াই জানে। কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত কিছু দীর্ঘশ্বাস পলিতে জমে।
এরা কেউ রাত বাড়লে আটকাতে আসেনি আমায়। বলেনি কপালে চুমু খেয়ে যেতে হবে না।
আমার শহর এর রঙ ধূসর। দেখতে বাদাম এর মত। চরিত্রেও তাই। বাদাম খেতে ভালো। খোসা ছাড়িয়ে খেলে সাদা আসল মন মেলে। এটা খেলে পেট ভরে না তবে খেতে ভালো, পুষ্টি ও মেলে অল্প। কিন্তু ধূসর এই বাদাম এর মতো শহরে স্মৃতিদেরই কর্মসংস্থান হয়। পেছনে গৌরব, সামনে স্থিতি। এর মাঝে, রাউন্ড এন্ড রাউন্ড, রাউন্ড এন্ড রাউন্ড ঘুরে চলেছি। কোন বৃদ্ধি পাবে না। মা কালির দিব্বি।
যেতে পারি কিন্তু কেন যাবোই তার কৈফিয়ত উগরে দিলাম। এবার চাঁদ ডাকুক আয় আয় বা রাতের কলকাতা। আমি যাবোই।
তবে যাওয়ার আগে একটা চুমু খাবোই। খেয়ে পাড়ি দেবো আরব সাগরপার। আমরা সবাই তো জাহাজের দলে নাম লিখিয়ে ছিলাম, আদার ব্যাপার সপ্নে ছিল কই?
---------------------ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment