কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Saturday, February 25, 2017

| ওপাশ ফিরে দেখি কঙ্কাল জড়িয়ে পার্থ শুয়ে |


অবশেষে গল্পটা শেষ হল। শেষটা অনেকেই হয়তো এরকম হবে ভেবেছিল। একটা এসএমএস বা ফেসবুক পোল করলে হয়তো নব্বই শতাংশ ভোটার আত্মহত্যার পক্ষেই ভোট দিত।

পোড়া মাংস, মিকি মাউসের ছবি, দিদির কঙ্কাল, বাবার আগুন এ জ্বলতে থাকা চিৎকার, ইকো হয়ে চলা বয়স্ক বিশ্লেষক এর ইনসেস্ট তত্ত্ব।

স্বাধীনতার পর সবচেয়ে আলোচিত 'সাইকো' সংবাদ। "মাল শেয়ানা" সব ওর জন্যই হয়েছে। "আবার বিয়ে করবে বলছিল"। ঘরে মহিলা ঢুকলে কি কি বলেছিল?

লেখাটা লিখবো কি লিখবো না ভেবে অবশেষে লিখছি। লিখতে বাধ্য হচ্ছি কারন পার্থ দে অনেক গুলো মানুষের গভীর ঘুম নষ্ট করে চুল্লিতে ঢুকছে। ওপাশ ফিরে শুলে হয়তো পার্থর মুখ ভেশে উঠবে। আমাদের প্রধানত, যারা সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত। যারা এই পরিবার টা খুব কাছ থেকে দেখেছি, মুখস্থ করেছি এদের বংশ তালিকা, ঘটনাবহ।

প্রতিটা নিউজ স্টোরির পিছনে একাধিক স্টোরি থাকে। গল্প থাকে একাধিক পাওয়া বা না পাওয়ার। কিছু নিউজরুম এ চাপা পরে থাকে, কিছু ফিসফাস হয়ে প্রেস ক্লাবের দেওয়াল এ লেপ্টে থাকে।

সেই সময় আমি বাংলার একটি টিভি চ্যানেল এ কাজ করি। কোন একটি সাধারণ রাতে অফিসের কাছে রবিনসন স্ট্রিট এ একটি আত্মহত্যার খবর আসে। সাধারণ খবর, খবরের ভাষায় ভট। সাংবাদিক এর কাজ করে সাংবাদিক বাড়ি ফিরে আসে। ঘুমিয়ে পরে। কলকাতা জেগে ওঠে এক ভয়াবহ ভূতের গল্পে।

২০১৫ সালে রবিনসন স্ট্রিটে পার্থ দে’র বাড়ি থেকে তাঁর বাবার অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। উদ্ধার হয়েছিল পার্থ’র দিদি দেবযানীর কঙ্কালও। এর পর প্রথমে হাজতে এবং পরে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন কাটিয়ে পার্থ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল। এসেছিল না ক্রমশ আরো জড়িয়ে পরেছিল তা বলার জন্য আর কোন চরিত্র বেঁচে নেই, কিন্তু যা বেঁচে থাকবে তা হল কিছু প্রশ্ন।

পার্থ মরা মানুষকে আগলে রেখেছিল তারা বেঁচে ফিরবে ভেবে। আমরা তাকে উন্মাদ, বিকৃতকাম তকমা দিলাম। অথচ সন্ত বা গুরুর দেহ আগলে ভক্তরা মাসের পর মাস যখন হোম, প্রার্থনা করতো, আমরা অলৌকিকতার আশা রাখতাম। ভাবতাম বাবা ফের ফিরে আসবে। ফুল, চন্দন, মধুর গন্ধে বাবা ফের আমাদের মাথায় হাত রাখবে।

পার্থ বাবাকে জ্বলতে দেখেও বাঁচাতে যায় নি। আমরা যেরকম মৃতপ্রায় বাবাকে ফেলে রাখি অন্তঃজলির আশায়। বা কোন বৃদ্ধাশ্রম এ।

পার্থ মৃত মানুষদের খেতে দিত। জল,ক্যাডবেরি, পছন্দের বই পাশে রেখে দিত। যদি দিদি ফিরে এসে এক কামড় দেয় খাওয়ার এ বা পছন্দের বই হাতে ওই চেয়ারটায় বসে? আমরা ও তো তাই করি। শ্রাদ্ধ, মৎসমুখীর নামে। পিণ্ডি দেওয়ার নামে। আমরা যারা সুস্থ।

আমরা শান্তি তে এপাশ ওপাশ করতে পারবো তো? আমরা যারা ইনসেস্ট এর তত্ত্ব দিলাম কঙ্কাল এর সাথে। আমরা যারা প্রবলভাবে যে গুলো গল্পে চেয়েছি, সেগুলো সেকরম ভাবে ঘটছে দেখে দারুণ ফেটে পরলাম উল্লাস এ? মশলা মাখিয়ে?

ধন্যবাদ পার্থ আপনাকে। একটানা একঘেয়ে খবর দেখতে দেখতে ক্লান্ত ও স্টার জলসা, জি বাংলা তে শাশুড়ি বউমা কাহনে নতুন টুইস্ট আনতে অক্ষম প্রডিউসারকে নতুন রসদ দেওয়ার জন্য। আমরা  পয়সা দিয়ে ভয় পেতে ভালোবাসি তাদের মনোরঞ্জন দেওয়ার জন্য। ভূত পরিক্রমা হবে এর পরে। লোক মুখে চক্রান্ত তত্ত্ব উঠে আসবে। পার্থকে সুইসাইড করতে ব্রেনওয়াশ করলো না তো তারা যাদের গোটা সম্পত্তি লিখে দিয়েছিল লোক টা?

একটা লোক ফ্ল্যাট এ পুড়তে থাকলো কিন্তু পাশের ফ্ল্যাট এ কেউ টের ও পেল না। পাওয়ার কথা ও নয় এই ব্যস্ত সময়। এগিয়ে চলার সময়। আসলে We all are hiding a skeleton in our closet. হয়তো।

আমার কোলবালিশ চেপে আজ রাতে পার্থ শোবে। গল্প শেষ। কঙ্কাল নেই। নোটে গাছ শুকিয়ে গেছে পচা গন্ধে। এই অসুখ আমাদের। পাগল এর মাথায় হাত বোলাবে কে?

বিদায়।

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment