কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Saturday, February 25, 2017

| রোজ নতুন একজন বাংলা ভাষায় অনুপ্রাণিত হোক |

"এ রাত্তিরে দাঁড়িয়ে আছি এই টুকুনি আশায়/
লাশগুলো কাল কইবে কথা, আমার মাতৃভাষায়।"

আজ সারারাত লাশ গুলো আমার সাথে বাংলা ভাষায় কথা বলবে। জব্বর, তাজুদ্দিন অহমেদ পায়চারি করবে সারারাত রক্ত মাখা পাঞ্জাবি গায়ে, মেঝেতে আঁকিবুঁকি কাটা হবে অ আ ই ঈ। আমার বাংলা হরফে।

আমার প্রথম চুমুর শব্দ, আমার মন খারাপ এর বিড়বিড়, আমার মায়ের রান্নাঘর এ গুনগুনিয়ে বেঁচে থাকবে অক্ষর মালা। বাংলা।

আমরা বাঙালিরাই বোধহয় বিশ্বের সবচেয়ে আত্মবিস্মৃত জাতি। এমন এক ন্যাতানো বেগুনভাজা যার সমস্ত সম্ভাবনা ছিল মুচমুচে হওয়ার কিন্তু হাতে থাকলো রুমাল আর জেলুসিল এ আভিমান।

বাঙালি বেঁচে থাকলো ক্যালকাটা ক্লাব এর টাই আর মেনল্যান্ড চায়নার চিংড়ি চাউমিন উইথ মালাইকারি আর ম্যান্ডারিন সস এ।

ঢেকুর এর শব্দ শুনে এক সময় বাঙালি চেনা যেত। বুড়ো আঙুল চেটে, শেষ পাতে দই আর জোয়ান এর আড়ক খাওয়া ঢেকুর। কান পাতলে শোনা যেত মন্ত্রচারণ এর মত এক সাথে অ এ আম, খ এ খেজুর।

এখন চেনা যায় ফেসবুক লাইভে "হাই ফ্রেন্ডস কেমন আছো তোমরা?" শুনলে। "নমস্কার বন্ধুরা" আজ সেকেলে। যেরকম সেকেলে টানা বাংলাতে কথা বলা।

কেন বাঙালির নিজের ভাষার প্রতি অহংকার করবে না, তাই নিয়ে একটা যাদবপুর এ হোক গবেষণা হয়ে যেতে পারে। গোটা বিশ্বে কোথাও নিজের ভাষায় কথা বলার দাবিতে কেউ হয়তো একটা গোটা যুদ্ধ লড়ে না। লড়বে না।

একটা গোটা দেশ তৈরি হল বাংলা ভাষাভাষী দের জন্য, আর সেই দেশেই হায় রবীন্দ্রনাথ পাঠ্যক্রম থেকে সরে গেল, বাংলার উর্দুকরন চালু হল।

আর এদিকে চালু হল নস্টালজিয়া ট্রিপ। রবি ঠাকুর, সত্যজিৎ এর পর যা এলো তা হাগু। দ-এ দেব নাকি হাস্যকর, শ্রীজিত এর ছবি বোগাস, শ্রীজাতের লেখা নাকি ছড়া কাটা। অথচ এরাই কিন্তু বাংলা ভাষায় নিজেদের কাজ ভালো বা মন্দ হোক করে চলেছে।

আর আমরা যারা এদের খিস্তি করছি তারা বাংলার বাইরে গিয়ে প্রথম কাজটাই করছি বাংলা ভুলে স্বপ্নটা হিন্দিতে দেখার, বাংলাতে কিছু বলা হলে, কোন শিল্প বাংলায় হলেই তা আঞ্চলিক তকমা লাগিয়ে দেওয়ার।

অনেকে তো আবার বাংলা বলে কিছু আছে সেটাই সারা বছরভর ভুলে থাকে। মাঝেমধ্যে মা এর আঁচল মনে পরলে ওহ! ক্যালকাটায় মেয়াওনিজ দিয়ে মোচার চপ আর দুর্গা পুজোয় ধুতি। ব্যাস! বাকি সময় বাচ্চা কে যুদ্ধকাকালিন ভাবে বাংলা থেকে দূরে রাখার কাজ, আর শেখানোর মধ্যে একটা দুটি হাট্টিমাটিমটিম। তাই সই।

যখন একজন বিদেশি তার নিজের বাচনভঙ্গিতে, উচ্চারণ এ ইংরাজি তে কথা বলে, আমরা কল সেন্টার এ বিশেষ ভাবে তা রপ্ত করি, কিন্তু যখন আমরাই আমাদের উচ্চারণ এ ইংরাজি বলি, তা হয়ে যায় ভুল। বেংলিশ।

ইংরেজরা চলিয়া গেলেও হায়, হ্যাংওভার রাখিয়া গেছে। তাই হয়তো কোলকাতাতেই ময়লা উর্দি পরা কোন রেস্তোরা শ্রমিক ইংলিশ এ কথা বলা খদ্দেরকে আদেখলা খাতির আর বাংলায় কথা বল্লেই, রুক্ষ বলুন কি লাগবে-র মাঝামাঝি কোথাও রাখে।

নিজের ভাষাটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আগে, ভবিষ্যৎ এ আমার সন্তান অ আ ক খ কে প্রাচীন কোন গুহা ভাস্কর্য ভেবে নেওয়ার আগে আসুন সামান্য কিছু করি। বাংলার জন্য। বাংলা ভাষার জন্য।

বেঁচে থাকুক ২১ ফেব্রুয়ারি আর মানুষ ১৯ মে এর সংগ্রাম ও জানুক।

চলুন না, বাংলা হরফ এ লেখা শুরু করি। এত কিছু তো ডাউনলোড করি, বাংলা ফন্ট ও না হয় রেখে দিই মোবাইল এ। হোক বা বানান ভুল, হোক না হোঁচট খাওয়া তবু আসুন নিজের ভাষায় লিখি। যে ভাষায় কথা বলি, সে ভাষায় কথার পিঠে কথা চাপিয়ে যাই। আমি কিন্তু শুরু করে দিয়েছি। আর একজন কে অন্তত অনুপ্রেরিত করেছি বাংলা তে লিখতে।

প্রেমে ব্যথা পেয়ে মেয়েটির মুখে এসিড ছোঁড়ার থেকে অনেক ভালো হাফসোল খাওয়া বাংলা কবিতা লেখা।

জয় বাংলা,
ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment