ভারতবর্ষ মানে কি শুধু দিল্লি? প্রজাতন্ত্র দিবস এর রাষ্ট্রীয় অভিবাদন প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে এই বিশাল ভারতের এক একটা শহর এ করা যায় না?
কালাহান্ডি, তাওয়াং, বুদগাম, কন্যাকুমারী, ছিটমহল এ আনা যায় না গোটা রাষ্ট্রকে? কেন প্রতি বছর ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরে কিছু খুচরো প্রতিনিধি নাচবে-কুদবে, প্রবল দেশোদ্ধার করতে টেম্পো সাজাবে?
ভাবুন না, এমন এক ২৬ জানুয়ারি, পল্টন সমেত রাষ্ট্র এসেছে পাল্টু দের বকুলবাগান মাঠে, ফি বছর যেখানে চরকের মেলা হয়। সেনা প্রধান, রক্ষামন্ত্রী, নাবিক, জওয়ান, রাষ্ট্রপতি কন্যা সমেত, ভিন্নদেশীয় অভ্যাগত, যুদ্ধ জাহাজ, ঘোড়সওয়ারি।
কিংবা ভাবুন, অরুণাচল প্রদেশ এর কোন অরণ্য ছোয়া গ্রাম এ প্রধানমন্ত্রী নেমে এসেছেন বায়ুসেনার হেলিকাপ্টার চেপে, টফি হাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীরর ছেলের জন্য। সেই ছেলে টা যে বন্দুকের নল এ খেলনা খুঁজেছে, বারুদ এর গন্ধে কেক আর দেশ বলতে মায়ের কোল।
ভারত কবে ভারত কে লাটিয়ান্স দিল্লীর বাইরে ভাবা শুরু করবে? সাত মহলা বাংলো বাড়ি, শুক্রবারের স্কচ, রাষ্ট্রদূত এর বাগান বাড়ির মেয়েছেলে, সেন্ট্রাল হল থেকে অট্টরোল, বামপন্থী সিগার এর গন্ধ গভীরতম সেমিনারে, রুপোর কাপে চা দেশের জিডিপি নিয়ে ভাবতে ভাবতে।
এই ভারতবর্ষ মৃদু হাততালি দেয় কুচকাওয়াজ দেখে, পিছনের সারিতে বসা দর্শক গলার কাছে পিন্ড পাকানো কান্না চেপে সিটি মারে, চিংকার করে। অনেক পিছনে। ক্ষমতা যেখান থেকে বসা শেষ করে সেখান থেকে। তাদের ও সামনের সারি ভাবতে শেখায় একই ভাষায় কথা, একই সুর এ গান, একই রকম হাসি, একটি মাত্র রাগ। বাকিটা ডিসেন্ট। কথায় বেয়ারা, দেশদ্রোহী, বাজে গান, কিম্ভুত ভাবধারানুসারী।
এই কিম্ভুত মানুষগুলো ধানক্ষেতে দেখা যায়, বরফ এ ভাই এর কবর খুঁড়তে দেখা যায়, ঘামের গন্ধ, পান্তা ভাত, মোটা কাপড় এর খুঁট এ দেখা যায়, কিছুটা ময়লা ও বাকিটা চোখের জল।
মণিপুর এর মেয়েটি যাকে রোজ কাপড় খুলে প্রমান করতে হয় সে মানব বোমা নয় সে ও ভারতীয়, সে ও তো প্রজাতন্ত্র।
রোদ-জল-বন্যা তে দু মুঠো চালের খোঁজে লড়াই করা "প্রজাতন্ত্র থেকে কিচ্ছু টি না পাওয়া" সমস্ত পদ-দলিতই তো প্রজাতন্ত্র। কাঁটাতার এর কাছাকাছি থাকা মানুষগুলোই তো বোঝে কাঁটাতারের ক্ষত। তাদের যদি দেশ এর বুকে নিয়ে আসা হয়,ক্ষততে সাময়িক মলম পরে, কিন্তু যদি গোটা দেশটাই হাতে হাত রাখে প্রান্তিক হৃদয়ে?
আসলে সময়টাই বোধহয় গোলমেলে। বহুত্ববাদ খায় না মাথায় দেয়, তা গুলিয়ে দেওয়ার খেলা চলছে। কে কত দাঁত খিঁচিয়ে, চোখ রাঙিয়ে দেশবাসী কে বোঝাতে পারবে এক দেশ এ একই নিয়ম, একই ভাষার ব্যাবহার, একই বিশ্বাস।
শেষ পাতে থেকে যাচ্ছে প্রজা, ওই কাঁটাতার এর পাশে থাকা মানুষ গুলোর মত। মূল ভূখন্ড থেকে অনেক দূরে টিভি তে চোখ রেখে আপ্প্রান ভারতীয় হওয়ার চেষ্টায়।
বিউগল বাজছে, সন্ধ্যে নামছে, পতাকা যত্ন করে ভাঁজ করে নামিয়ে নেওয়া হল। ভারতীয় এক ঘর এবার রাতের খাবার খাবে। ভাত,ডাল, কাঁচা লংকা, শাক ভাজা, মুরগির ছাল ঝাল ঝাল আর শেষ পাতে দিনবদলের স্বপ্ন।
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment