কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, June 16, 2016

| এক অষ্টাদশীর বই বিক্রি আছে |

বইপাড়াতে অনেক গোপন দোকান আছে যেখানে যত্ন করে খুঁজলে সোনার গিল্টি করা বাঁধানো ডাইরি খুব কম দামে পাওয়া যায়। সারে পাঁচটা নাগাদ এই ডাইরি গুলো মাটির নিচে যে ট্রাঙ্ক রাখা থাকে এসব দোকানে, সেখান থেকে লোক বুঝে বের করা হয়।
এগুলো বই আকারে বিক্রি করা হয়।
আমি সেরকমই একটা বই খুঁজে পেলাম। বইটা বুকে আগলে রেখে পুরো পথ চলতে গিয়ে অদ্ভুত লাগলো। ইয়া ইতিহাস বই এর সমান মোটা, হলদে হয়ে যাওয়া বন্ড পেপারে ছাপা।
বাসে ধাক্কা মেরে কেউ চলে গেলেও রেগে গেলাম না। আলতো করে কাছে টেনে নিলাম বইটাকে।হাত বোলাচ্ছি ওর গায়ে। ও যেন আঙুল ছুঁতে পারে।
বাড়ি ফিরে বইটা একান্তে খুলতে হবে। খুললে একটা বহু বছর ধরে জমতে থাকা সুবাস নাকে আসে আর একঝাঁক প্রজাপতি বই এর ভিতর থেকে বের হয়ে সারা ঘর ছড়িয়ে পরে। এরকম গন্ধ বিবাহিত মেয়েদের গায়ে থাকে। আতর, রান্নার গন্ধ, দুপুরের আনন্দলোক মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় যে গন্ধে।
প্রজাপতি গুলো জড়ো হয়ে ঘুরে বেড়ায়। ওদের গায়ে জোনাকি বাস করে। সারা রাত জেগে ওরা উড়ে বেড়ায় প্রজাপতির ডানায় চেপে। আমার সারা ঘর জুড়ে নিওন আলোর প্রজাপতি। উড়ে বেড়াচ্ছে। মশারি ভেদ করে শরীরের বিভিন্ন অংশে বসতে চায়। মশা থাকেনা এদের জ্বালায়।
আলতো করে চোখ বুজে এলে ব্যাটারা বই এর ফাঁকে ফিরে যায়। আমি জানি কারণ আমি আধঘুম দিতে পারি। এমন একটা সময় আসে যখন চোখ খোলা থাকে কিন্তু ছবি গুলো সংরক্ষিত হয় না। এই কারণে বেশিরভাগ সময় আমি ভুলে যাই ওরা রাত জেগে কি করে।
বই এর একুশ নম্বর পাতায় অবশ্য প্রজাপতির মথ হয়ে ওঠার আভাস পাই। রাতের অন্ধকারে, অসম্ভব সুন্দর কোন কম্পনে এরা একে একে সাধারণ হয়ে ওঠে।
এই বইটা একটা অষ্টাদশীর প্রেমের গল্প। ভারি সুন্দর করে, গুছিয়ে লেখা। এর জীবনের সবকিছু গোলাপি। তাই হয়তো এই পাতাগুলো পড়ার সময় আমার সাদা প্লাস্টার উঠে যাওয়া দেওয়ালে গোলাপি ছোপ। টিকটিকির গায়ে আজ জোনাকি বসেছে। সারারাত ঘুরে ফিরে বই এর ভাঁজে একটা টিকটিকি এসে ঢুকে গেছে। মেয়েটি মিনি মাউস ছাপ টেপ জামা পরে শুতে যায়।
ঘুম থেকে উঠে সকালে একটা গোলাপি রঙের সাপ দেখি কুন্ডলি পাকিয়ে বইটার চারপাশে শুয়ে। সেদিন রাতে বইটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল মেয়েটি এত কম বয়সে বিয়ে করে ভুল করলো বাড়ির চাপে।
এখন আমি একশো তিন নম্বর পাতায়। ঘরে প্রজাপতির সংখ্যা কমে এসেছে। আসেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু জোনাকি দীপ্ত। কিছু টিইবলাইট এর আঁচে ঝোলসে গেছে। মৃত।
মেয়েটা প্রতি রাতে মার খাচ্ছে বরের কাছে। আর ধর্ষিতা ও হচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শাশুড়ি গালমন্দ করছে। মেয়েটার রোজ অফিস যেতে দেরি হয় আর কালসিটে ঢাকতে কুরি মিনিট চলে যায়।
আমার মশারির চারপাশে মশা ফিরে এসেছে।
বইটার উপর সকালে চায়ের কাপ রাখি। কভার এ একটা গোল দাগ হয়ে গেছে। দেরশো নম্বর পাতায় যেমন মেয়েটার সারা শরীরে খুন্তি আর সিগারেটের ছ্যাঁকার উল্লেখ মেলে। মেয়েটা ভেউভেউ করে কাঁদে আর মায়ের কথা ভাবে। আমার ঘরে সকাল হলে এখন বই এর ফাঁক থেকে মথ বেড়োয়। প্রজাপতি গুলো পালিয়ে গেছে।
দুশো পাতার পরে কেরোসিন, বর এর অন্য মেয়ের সাথে মন্দারমনি ঘুরতে যাওয়া, শাশুড়ির তাতে সম্মতি ও মশারির মধ্যেই পেটে লাথির বিবরন পাই।
আমার বাড়িতে কাজ করে পারুল মাসি সকালে আমায় ঘুম থেকে জাগিয়ে কয়েকশো পিপড়ে
বইটার আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে দ্যাখালো ও ফের রসগোল্লা ঘরে না খাওয়ার উপদেশ দিলো। এই এক সপ্তাহে আমি রোজ রাতে মেপে তিন পেগ রামের চেয়ে বেশি অন্য কিচ্ছুটি ঘরে খাইনি। অষ্টাদশীর কসম।
আজ রাতে খেয়ে উঠে বিছানায় উঠেছি, বইটা বালিশের পাশেই থাকে। দেখি গুচ্ছের ম্যাগোট বালিশের চারপাশে। বইটা খুলতেই একটা মাংস পোড়া গন্ধ আর অজস্র ম্যাগোট কালো, কুৎসিত। দুপুরে কয়েক পাতা পরছিলাম। সেখানে অষ্টাদশী মা কে একটা চিঠি লিখে বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে। টপটপ করে জল পরছে। বন্ধ ঘরের বাইরে প্রবল চিৎকার, হুমকি।
আমার গা গুলিয়ে বমি আসতে পারে। কাল সকালে বইটা বিক্রি করতে হবে। কেউ কিনতে চাইলে জানাবেন।
-------ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment