কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, June 16, 2016

| আমার সিনেমাওয়ালা -রা |

সিঙ্গিল স্ক্রিনে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার থাকে।সেখানে যে ফিল্ম দেখে স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে আসে ও ফুঁপিয়ে কান্না ঝরে, সেই ছবি অসাধারণ।
অন্ধকার হলে, প্রজেক্টার এর দিকে একটানা তাকিয়ে থাকলে নাকি ম্যাজিক এর মতো টাইম মেশিনে চড়ে বসে যে কোন সময় নিয়ে আসা যায় সেলুলয়েডে।
আমার বাবা আমাকে প্রথম সিনেমা হলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় বান্টিতে। বান্টি একটি হলের নাম ছিল। ক্রমে গোটা এলাকার নাম হয়ে যায় বান্টি। নাকতলার পরের স্টপ। যেখানে হালে মেট্রো স্টেশন হয়েছে।
বান্টি তে জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র দেখি খুদা গাওয়া! স্কুল জীবনে এর অশ্লীল সমাস ও জানতে পারি। খুদা এসে....... নিয়ে হাওয়া। অমিতাভ বচ্চন ছিল ছবিটায়। আফগানী পটভূমিতে মশলাদার মনোরঞ্জন।
টিকিটের দাম মনে নেই তবে বাবা মা এর দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক অশান্তির নিক্তি তে মাপলে খুব বেশি কিছু ছিল না। তিন ঘন্টা অপলক দৃষ্টিতে মানুষগুলো তাকিয়ে থাকতো স্ক্রিনের দিকে।নেশা ওখানেই শুরু।
তখন আইনক্স ছিল না। থাকার মধ্যে আমার দুনিয়া জুড়ে ছিল বান্টি, মহুয়া, পদ্মশ্রী,মধুবন, মালঞ্চ। দক্ষিণ কলকাতার ছেলে আমি। আগাগোড়া গড়িয়া।
কাঠের চেয়ার, ঘুটঘুটে অন্ধকার হল, টর্চ লাইট জ্বালিয়ে সিট দেখিয়ে দেওয়া, সস্তার টিকিট এ মার্কার দিয়ে লেখা সিট নম্বর, ইন্টারভ্যালে প্যাটিস।
আমার এক নিমেষে হিপনোটাইস এর যন্ত্র ছিল সেলুলয়েড আর যারা তার সাথে যুক্ত ছিলেন তারা স্টার। নবীনা তে বয়স্ক মানুষটি প্রজেক্টার রুমে বসে ফাইল দেখতেন উনি বেঁচে আছেন? কাহো না প্যার হয় এর পর হৃতিক ওর সাথে ছবি তুলেছিল। আমি জানতাম। চাড্ডিখানি কথা।
মেনোকা ছিল শাহরুখ খানের। নবীনা সালমান আর মালঞ্চ হিট হলিউড ছবির হিন্দি ডাব্ডব ভার্সন এর।
আমার দারুণ লাগতো সিনেমা হলের ওই ভোঁটকা গন্ধ। হলে ওই EXIT লেখা আর চারপাশের অন্ধকার। ওখানে নাকি সপ্তাহে সপ্তাহে সপ্ন দেখা যায়। সপ্নে নায়ক অমর হয়ে যায় আর হল মালিক নিঃস্ব।
আইন্কস, পিভিআর এর মতো বাঙালি হল মালিক পাঁচ টাকার পপকর্ন একশো টাকায় বেচতে কুন্ঠিত বোধ করে। যেরকম অনলাইনে টিকিট বেচলে জাত যায় পূরবী কর্তার।
হলে অমর থাকে হকারের আনা সামগ্রী, পাইল করে আনা মদ। আপিস কেটে ছবির নেশা ও। আমার ইলেভেন, টুয়েলভ এ যেরকম ছিল ভবানী। স্কুল এর থেকে বেশি শিক্ষা পেতাম কাঠের চেয়ার ও ফ্যান এর শীতলতায়। বাকিটুকু উত্তেজনা ছিল।
ভবানীতে পাইল করে মদ আর ফ্যাপড়ার বড়া নিয়ে ঢুকতাম। গাদাখানেক সেদ্দো ছোলা ও গছিয়ে দিতো রাখাল দা। ভিতরে তিন ঘন্টার ব্রা খোলা, আচঁল ফস্কানো, মোখ ঘষাঘষি। নরম যৌনতা ছবি জুড়ে।
শোনা যায় এই সব হল মালিকদের নাকি এখন নির্বাসন দেওয়া হয়েছে। এরা নাকি আইনক্সের কোলার কাপে আত্মহত্যা করেছে, ইন্টারভ্যালে যা খাই আমরা তাতে নাকি এদের রক্ত থাকে। মানে যে ঠান্ডা পানীয় বড় গ্লাসে খাই তাতে কয়েক ফোঁটা হল মালিকদের রক্ত থাকে। যে মোমোটা খাচ্ছি তাতে বন্ধ হয়ে যাওয়া হল মালিকের চামড়া পোড়া গন্ধ থাকে।
একদিন সমস্ত হল এর সমস্ত কর্মী আত্মহত্যা করে। বাতানুকূল আইনক্স এর প্রতিটা কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে সেলুলয়েড।
হলগুলো আজ ভেঙে বহুতল ভবন। এদের পেটেও হোম থিয়েটার লাগানো। কিন্তু এদের কারোর মধ্যে আজও বোদহয় সেলুলয়েড এর পাগলামি নেই। বেশিরভাগটাই ডিজিটাল ধ্যাশটামি আর সস্তায় সপ্ন দেখার সুযোগ।
পুনশ্চঃ। সিনেমাওয়ালা র আসল নায়ক হরির চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি সেই অরুন গুহঠাকুরতা। পরান এই ছবিটা করবেন বলেই বেঁচে ছিলেন, কৌশিক এর অখ্যাতদের ট্রিবিউট দেওয়া ক্রমবর্ধমান।

No comments:

Post a Comment