কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, June 16, 2016

| ঋতুপর্ণ ঘোষ |

দু হাজার ষোলো সালে যখন বুম্বাদা পোসেনজিৎ এর ক্ষেত্র থেকে ও ঋতু দি Mrs. Sen গোছের কিছু ছবির মায়া কাটিয়ে চলচ্চিত্রে একসাথে, তুই তখন প্রাক্তন।
আমি, আমরা যারা তোর ছবি দেখতে দেখতে বাংলা ভাষার ছবির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম আমাদের বয়ঃসন্ধিকালে তাদের মধ্যেই কেউ যে এত তারাতারি তোর মৃত্যু সংবাদ break করবার তাগিদে দৌড়াদৌড়ি লাগাবে ভাবিনি।
আজকের দিনে, তিন বছর আগে, ঝিরঝির বৃষ্টির এক dry morning shift। সঞ্জয়ন দা গুঞ্জনটা আনে। সঞ্জয়ন দা লেপ চাপা দিয়ে তোর নিথরতার বিবরন দেয়।
বেশ তো ছিলি। third sex বলে কিছু একটা খায় ও মাথায় দেয়, সেই ফান্ডা মধ্যবিত্তের ড্রইংরুমে এনে ফেললি। অভিনয় ও সে মত বেঁচে ও নিলি কয়েক বছর কি সুন্দর মাথা কামিয়ে, কানে দুল, সুন্দরী গয়না পরে।
আগে তোর ঝাকড়া চুলে, বাঁ কাঁধে নক্সা করা উত্তরীয় নেওয়া পাঞ্জাবীর সাথে, দারুণ লাগতো। মা এর সামনে বিয়েবাড়ি যাওয়ার আগে ওরকম ভাবে সেজে দাঁড়ালে মা দাঁত খেঁকিয়ে বলতো, ঋতুপর্ণ ঘোষ হবি নাকি?
তোর মত হয়ে ওঠা হলো কই? তোর ছবি দেখে আমিও মনে মনে ভেবেছি ছবি বানাবো। বাথরুমের কমোডে বসে কতবার নিজের ছবির ছক কষেছি, কাস্টিং করেছি, জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেছি। তোর ছবিকে দীর্ঘ কাঁটাছেড়া ও করেছি। তোর ছবিগুলি stretched teleছবি না শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের বিনোদন ছিল? যে ভূমিকা পালন করছে এখন টকশো গুলো?
আজ থেকে পাক্কা তিন বছর আগে তোর মৃতদেহের ঠিক কয়েক হাত দূরে সৃজিত দাঁড়িয়ে ছিল। ঋতুর পর ঋজু রাজ শুরু হয়েছিল। জানিস হয়তো multiplex যাওয়া, Texus এ বাটি চচ্চড়ি রান্না করা বা চৈত্র সেল এ নাইটি কেনা রুচিসম্মত বাঙালির কত আপন ছিলি তুই। তোর থেকেই তো পরের প্রজন্মের শেখা শহুরে ছবির রেসিপি।
বেদের মেয়ে জোছনার ভারি শরীর পেরিয়ে, বাঙালি যে একটা দহন, একটা উৎসবে মেতে উঠতে পারে, সেই ভাবে আমাদের ভাবিয়ে তো ছিলি। তবু কেন যেন তোকে সর্বকালের সেরা পরিচালকের আসনে বসাতে পারিনি। কেন বলতো?
জানিস, তোর set design, ছবির ছোটো ছোটো নান্দনিকতা, সাজসজ্জা, তোর অদ্ভুত dubbing করিয়ে নেয়া মুগ্ধ করতো। আমাদের মতো মধ্যমেধার মানুষকে আলোকিত করতো।
করবে নাই বা কেন? সবাই তো মফস্বল শহরের বড় পর্দায় সবসময় Autumn Sonata র মতো ছবি নিজের ভাষায় দেখতে পারেনা। আর দেখতে পেলেও বা। উনিশে ত্রপ্রিল এর তাতে বয়েই গেল। তোর ছবি তোরই মত।
আজ থেকে পাক্কা তিন বছর আগে সকালে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, তা থামলো কই?
সেদিন সকালে নাকি তুই দুটো AC চালিয়ে, লেপের তলায় ঘুমিয়ে ছিলি। আগের রাতে জানতি যে সকালে আর রেনকোটের দরকার পরবে না?
বাড়ি নাম তাশের ঘর, তখন ছিলি ন্যারা, মেয়েলি পোষাক, লেদার ব্যাগ।
রোববার হলেই first person টা পড়তাম। সেখানেই জেনেছিলাম তোর পরপর মা ও বাবার চলে যাওয়া তোর কাছে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। মা এর কাছে যাওয়ার ফন্দি ছিল?
তাই কি অতৃপ্ত ইচ্ছেগুলো এক এক করে পূর্ণ করা? তাই কি হাতে গোনা যে কয়েকটি কৃতী কে নিয়ে বাঙালি উদ্বাহু নেত্ত করে তাদের মধ্যে থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলি?
শুনেছি একলা ঘরে টাটকা স্মৃতি মনে ঘুমাতে alzolam লাগে। তোর তো অনেক ওষুধ কিনতে হত। অনেক ওষুধের মাঝে মা কে স্বপ্নে আঁকড়ে ধরতে চাইতি?
তোকে আজ তুই বলতে পেরে হালকা লাগছে। এটাও তো তোরই আমদানি।
সেদিন ঝাপসা চোখ কি কৃষ্ণ কে খুঁজে বের করতে পেরেছিল? একরাশ ছাতা তোকে আগলে আর তুই শয়তান ফন্দি এঁটে ওপারে মা বাবাকে জড়িয়ে ধরার অপেক্ষায়।
পরের জন্ম যদি থাকে তবে খুব সুন্দর সেজেগুজে, রাধার মতো ফিরে আসিস। বনমালী সবাই হতে পারে না। হলেও তোর মত বাঁচতে পারে না।
ভালো থাক ঋতু দা। আমরা তোর হ্যাংওভার নিয়ে এগিয়ে চলি। বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হিসেবে তুই থাক এই দিনটা। বাকি দিনগুলো ইষ্টিকুটুম, শিবপ্রসাদ, গান, কবিতা, রবিবারের সাপ্তাহিক এ বাঁচি।
-----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment