কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Thursday, June 16, 2016

| সংখ্যাগরিষ্টতা |


ঘাসের উপর সংখ্যাগরিষ্টতা /
বহুল জিতে ও গোষ্ঠিদন্দ্ব হয়।
মদের শেষে শাসন জুড়লে পরে/
বিরোধী শিশুর লাথি খাওয়ার ভয়।
সংখ্যাই তো চেনায় শাসকদল/
সংখ্যাগুলো মারছে বিরোধিতা।
সংখ্যাই দম্ভ প্রসব করে/
বিরোধীশূন্য রাজ্য এদের গিতা।
এখানে কোন কেলেঙ্কারি নেই/
সাজানো বাগান উন্নয়নের গতি।
সহনাগরিক একজনও চোর হলে/
পিটিয়ে মারা ধর্মীয় সংস্কৃতি।
পাঁচটা বছর সহজ নাব্যতা/
অন্তর্মুখী বিরোধী নেতার জয়।
পাঁচটা বছর শেখাক শালীনতা/
গনতন্ত্র বিরোধীদের ও হয়।
------- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| প্রাক্তন |

অনেক বছর আগে ফেলে আসা প্রেমিকার নিঃশ্বাস নিতে/
শুকিয়ে যাওয়া জল ঠোঁটে লেগেছ ক্লান্তির মত,
এসো আবেশ এ, এসো সোহাগী।
এসো সারস্বত, সামান্য যা কিছু ছিল বাকি/
আজ হয়ে যাক বলা।
ওষ্ঠ হোক শুদ্ধ, অভিব্যক্তি নিশাচর/
যেভাবে চাঁদের রাত জেগে থাকে গল্প বুকে।
এখানে কবিতার খাতা আঁচলের খুঁটে/
বুকের খাঁজে জেগেছিল শিহরণ প্রথম বছর,
এখন বহুল ব্যবহৃত পিঠের আঁচড়.....
সমস্ত কৃতকর্মের একবুক দীর্ঘশ্বাস ফেলে/
প্রাক্তনী তুমি এসো স্মৃতিসুখে বাঁচো ।
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আর অব্যক্ত প্রেম এমনই হায়/ তোমার পাল্টে যাওয়া নম্বর ও ডিলিট করা দায়।

আর অব্যক্ত প্রেম এমনই হায়/
তোমার পাল্টে যাওয়া নম্বর ও ডিলিট করা দায়।।
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| শৃঙ্গ জয় |


বাঁধা থাক নিথর দেহ/
সামলে রেখো, ঝড় বাদলে।
বরফেই সতেজ থাকে বিজয়-গাথা/
হিমালয়ে আটকে গেলে।
বরফেই খুঁজতে এসো/
দেহই সে তো, সময় হলে।
ফিরে যাক বন্ধু যত/
গল্প কত, শৃঙ্গ জয়ের।
-----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| ঋতুপর্ণ ঘোষ |

দু হাজার ষোলো সালে যখন বুম্বাদা পোসেনজিৎ এর ক্ষেত্র থেকে ও ঋতু দি Mrs. Sen গোছের কিছু ছবির মায়া কাটিয়ে চলচ্চিত্রে একসাথে, তুই তখন প্রাক্তন।
আমি, আমরা যারা তোর ছবি দেখতে দেখতে বাংলা ভাষার ছবির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম আমাদের বয়ঃসন্ধিকালে তাদের মধ্যেই কেউ যে এত তারাতারি তোর মৃত্যু সংবাদ break করবার তাগিদে দৌড়াদৌড়ি লাগাবে ভাবিনি।
আজকের দিনে, তিন বছর আগে, ঝিরঝির বৃষ্টির এক dry morning shift। সঞ্জয়ন দা গুঞ্জনটা আনে। সঞ্জয়ন দা লেপ চাপা দিয়ে তোর নিথরতার বিবরন দেয়।
বেশ তো ছিলি। third sex বলে কিছু একটা খায় ও মাথায় দেয়, সেই ফান্ডা মধ্যবিত্তের ড্রইংরুমে এনে ফেললি। অভিনয় ও সে মত বেঁচে ও নিলি কয়েক বছর কি সুন্দর মাথা কামিয়ে, কানে দুল, সুন্দরী গয়না পরে।
আগে তোর ঝাকড়া চুলে, বাঁ কাঁধে নক্সা করা উত্তরীয় নেওয়া পাঞ্জাবীর সাথে, দারুণ লাগতো। মা এর সামনে বিয়েবাড়ি যাওয়ার আগে ওরকম ভাবে সেজে দাঁড়ালে মা দাঁত খেঁকিয়ে বলতো, ঋতুপর্ণ ঘোষ হবি নাকি?
তোর মত হয়ে ওঠা হলো কই? তোর ছবি দেখে আমিও মনে মনে ভেবেছি ছবি বানাবো। বাথরুমের কমোডে বসে কতবার নিজের ছবির ছক কষেছি, কাস্টিং করেছি, জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেছি। তোর ছবিকে দীর্ঘ কাঁটাছেড়া ও করেছি। তোর ছবিগুলি stretched teleছবি না শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের বিনোদন ছিল? যে ভূমিকা পালন করছে এখন টকশো গুলো?
আজ থেকে পাক্কা তিন বছর আগে তোর মৃতদেহের ঠিক কয়েক হাত দূরে সৃজিত দাঁড়িয়ে ছিল। ঋতুর পর ঋজু রাজ শুরু হয়েছিল। জানিস হয়তো multiplex যাওয়া, Texus এ বাটি চচ্চড়ি রান্না করা বা চৈত্র সেল এ নাইটি কেনা রুচিসম্মত বাঙালির কত আপন ছিলি তুই। তোর থেকেই তো পরের প্রজন্মের শেখা শহুরে ছবির রেসিপি।
বেদের মেয়ে জোছনার ভারি শরীর পেরিয়ে, বাঙালি যে একটা দহন, একটা উৎসবে মেতে উঠতে পারে, সেই ভাবে আমাদের ভাবিয়ে তো ছিলি। তবু কেন যেন তোকে সর্বকালের সেরা পরিচালকের আসনে বসাতে পারিনি। কেন বলতো?
জানিস, তোর set design, ছবির ছোটো ছোটো নান্দনিকতা, সাজসজ্জা, তোর অদ্ভুত dubbing করিয়ে নেয়া মুগ্ধ করতো। আমাদের মতো মধ্যমেধার মানুষকে আলোকিত করতো।
করবে নাই বা কেন? সবাই তো মফস্বল শহরের বড় পর্দায় সবসময় Autumn Sonata র মতো ছবি নিজের ভাষায় দেখতে পারেনা। আর দেখতে পেলেও বা। উনিশে ত্রপ্রিল এর তাতে বয়েই গেল। তোর ছবি তোরই মত।
আজ থেকে পাক্কা তিন বছর আগে সকালে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, তা থামলো কই?
সেদিন সকালে নাকি তুই দুটো AC চালিয়ে, লেপের তলায় ঘুমিয়ে ছিলি। আগের রাতে জানতি যে সকালে আর রেনকোটের দরকার পরবে না?
বাড়ি নাম তাশের ঘর, তখন ছিলি ন্যারা, মেয়েলি পোষাক, লেদার ব্যাগ।
রোববার হলেই first person টা পড়তাম। সেখানেই জেনেছিলাম তোর পরপর মা ও বাবার চলে যাওয়া তোর কাছে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল। মা এর কাছে যাওয়ার ফন্দি ছিল?
তাই কি অতৃপ্ত ইচ্ছেগুলো এক এক করে পূর্ণ করা? তাই কি হাতে গোনা যে কয়েকটি কৃতী কে নিয়ে বাঙালি উদ্বাহু নেত্ত করে তাদের মধ্যে থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলি?
শুনেছি একলা ঘরে টাটকা স্মৃতি মনে ঘুমাতে alzolam লাগে। তোর তো অনেক ওষুধ কিনতে হত। অনেক ওষুধের মাঝে মা কে স্বপ্নে আঁকড়ে ধরতে চাইতি?
তোকে আজ তুই বলতে পেরে হালকা লাগছে। এটাও তো তোরই আমদানি।
সেদিন ঝাপসা চোখ কি কৃষ্ণ কে খুঁজে বের করতে পেরেছিল? একরাশ ছাতা তোকে আগলে আর তুই শয়তান ফন্দি এঁটে ওপারে মা বাবাকে জড়িয়ে ধরার অপেক্ষায়।
পরের জন্ম যদি থাকে তবে খুব সুন্দর সেজেগুজে, রাধার মতো ফিরে আসিস। বনমালী সবাই হতে পারে না। হলেও তোর মত বাঁচতে পারে না।
ভালো থাক ঋতু দা। আমরা তোর হ্যাংওভার নিয়ে এগিয়ে চলি। বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হিসেবে তুই থাক এই দিনটা। বাকি দিনগুলো ইষ্টিকুটুম, শিবপ্রসাদ, গান, কবিতা, রবিবারের সাপ্তাহিক এ বাঁচি।
-----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| এক অষ্টাদশীর বই বিক্রি আছে |

বইপাড়াতে অনেক গোপন দোকান আছে যেখানে যত্ন করে খুঁজলে সোনার গিল্টি করা বাঁধানো ডাইরি খুব কম দামে পাওয়া যায়। সারে পাঁচটা নাগাদ এই ডাইরি গুলো মাটির নিচে যে ট্রাঙ্ক রাখা থাকে এসব দোকানে, সেখান থেকে লোক বুঝে বের করা হয়।
এগুলো বই আকারে বিক্রি করা হয়।
আমি সেরকমই একটা বই খুঁজে পেলাম। বইটা বুকে আগলে রেখে পুরো পথ চলতে গিয়ে অদ্ভুত লাগলো। ইয়া ইতিহাস বই এর সমান মোটা, হলদে হয়ে যাওয়া বন্ড পেপারে ছাপা।
বাসে ধাক্কা মেরে কেউ চলে গেলেও রেগে গেলাম না। আলতো করে কাছে টেনে নিলাম বইটাকে।হাত বোলাচ্ছি ওর গায়ে। ও যেন আঙুল ছুঁতে পারে।
বাড়ি ফিরে বইটা একান্তে খুলতে হবে। খুললে একটা বহু বছর ধরে জমতে থাকা সুবাস নাকে আসে আর একঝাঁক প্রজাপতি বই এর ভিতর থেকে বের হয়ে সারা ঘর ছড়িয়ে পরে। এরকম গন্ধ বিবাহিত মেয়েদের গায়ে থাকে। আতর, রান্নার গন্ধ, দুপুরের আনন্দলোক মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় যে গন্ধে।
প্রজাপতি গুলো জড়ো হয়ে ঘুরে বেড়ায়। ওদের গায়ে জোনাকি বাস করে। সারা রাত জেগে ওরা উড়ে বেড়ায় প্রজাপতির ডানায় চেপে। আমার সারা ঘর জুড়ে নিওন আলোর প্রজাপতি। উড়ে বেড়াচ্ছে। মশারি ভেদ করে শরীরের বিভিন্ন অংশে বসতে চায়। মশা থাকেনা এদের জ্বালায়।
আলতো করে চোখ বুজে এলে ব্যাটারা বই এর ফাঁকে ফিরে যায়। আমি জানি কারণ আমি আধঘুম দিতে পারি। এমন একটা সময় আসে যখন চোখ খোলা থাকে কিন্তু ছবি গুলো সংরক্ষিত হয় না। এই কারণে বেশিরভাগ সময় আমি ভুলে যাই ওরা রাত জেগে কি করে।
বই এর একুশ নম্বর পাতায় অবশ্য প্রজাপতির মথ হয়ে ওঠার আভাস পাই। রাতের অন্ধকারে, অসম্ভব সুন্দর কোন কম্পনে এরা একে একে সাধারণ হয়ে ওঠে।
এই বইটা একটা অষ্টাদশীর প্রেমের গল্প। ভারি সুন্দর করে, গুছিয়ে লেখা। এর জীবনের সবকিছু গোলাপি। তাই হয়তো এই পাতাগুলো পড়ার সময় আমার সাদা প্লাস্টার উঠে যাওয়া দেওয়ালে গোলাপি ছোপ। টিকটিকির গায়ে আজ জোনাকি বসেছে। সারারাত ঘুরে ফিরে বই এর ভাঁজে একটা টিকটিকি এসে ঢুকে গেছে। মেয়েটি মিনি মাউস ছাপ টেপ জামা পরে শুতে যায়।
ঘুম থেকে উঠে সকালে একটা গোলাপি রঙের সাপ দেখি কুন্ডলি পাকিয়ে বইটার চারপাশে শুয়ে। সেদিন রাতে বইটা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল মেয়েটি এত কম বয়সে বিয়ে করে ভুল করলো বাড়ির চাপে।
এখন আমি একশো তিন নম্বর পাতায়। ঘরে প্রজাপতির সংখ্যা কমে এসেছে। আসেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু জোনাকি দীপ্ত। কিছু টিইবলাইট এর আঁচে ঝোলসে গেছে। মৃত।
মেয়েটা প্রতি রাতে মার খাচ্ছে বরের কাছে। আর ধর্ষিতা ও হচ্ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শাশুড়ি গালমন্দ করছে। মেয়েটার রোজ অফিস যেতে দেরি হয় আর কালসিটে ঢাকতে কুরি মিনিট চলে যায়।
আমার মশারির চারপাশে মশা ফিরে এসেছে।
বইটার উপর সকালে চায়ের কাপ রাখি। কভার এ একটা গোল দাগ হয়ে গেছে। দেরশো নম্বর পাতায় যেমন মেয়েটার সারা শরীরে খুন্তি আর সিগারেটের ছ্যাঁকার উল্লেখ মেলে। মেয়েটা ভেউভেউ করে কাঁদে আর মায়ের কথা ভাবে। আমার ঘরে সকাল হলে এখন বই এর ফাঁক থেকে মথ বেড়োয়। প্রজাপতি গুলো পালিয়ে গেছে।
দুশো পাতার পরে কেরোসিন, বর এর অন্য মেয়ের সাথে মন্দারমনি ঘুরতে যাওয়া, শাশুড়ির তাতে সম্মতি ও মশারির মধ্যেই পেটে লাথির বিবরন পাই।
আমার বাড়িতে কাজ করে পারুল মাসি সকালে আমায় ঘুম থেকে জাগিয়ে কয়েকশো পিপড়ে
বইটার আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে দ্যাখালো ও ফের রসগোল্লা ঘরে না খাওয়ার উপদেশ দিলো। এই এক সপ্তাহে আমি রোজ রাতে মেপে তিন পেগ রামের চেয়ে বেশি অন্য কিচ্ছুটি ঘরে খাইনি। অষ্টাদশীর কসম।
আজ রাতে খেয়ে উঠে বিছানায় উঠেছি, বইটা বালিশের পাশেই থাকে। দেখি গুচ্ছের ম্যাগোট বালিশের চারপাশে। বইটা খুলতেই একটা মাংস পোড়া গন্ধ আর অজস্র ম্যাগোট কালো, কুৎসিত। দুপুরে কয়েক পাতা পরছিলাম। সেখানে অষ্টাদশী মা কে একটা চিঠি লিখে বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে। টপটপ করে জল পরছে। বন্ধ ঘরের বাইরে প্রবল চিৎকার, হুমকি।
আমার গা গুলিয়ে বমি আসতে পারে। কাল সকালে বইটা বিক্রি করতে হবে। কেউ কিনতে চাইলে জানাবেন।
-------ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| মেঘের দেশের ডাইরি |

১||
মেঘের দেশে মেঘবালিকা কই?
রঙ বেরঙের ছাতার ফাঁকে লুকিয়ে আছে সব,
এক আধজনের সাথে দেখা যদিও হয়/
তারা অবশ্য মেঘ বালিকা নয়।
২||
খাদের ধারে জঙলা যে সব ঘাস,
তারা আবার মেঘ ধরতে জানে/
ঝুপ করে সন্ধ্যা নামার মতো,
চশমাতে সব বৃষ্টি ফোঁটা নামে।
৩||
মেঘবালিকা তুই, ওদের নাকি আদর করে ডাকিস?
রোজ রোজ তাই ঝমঝমালেও দারুন মজায় থাকিস?
৪||
একটানা বৃষ্টি আমার ভাল্লাগেনা, দুর ছাই ওদের থামতে বলনা।
৫||
বৃষ্টিতে চোখ ঝাপসা আমার,
দূরে দাঁড়িয়ে মেঘ বালিকা/
দেখা যাচ্ছে কই?
ধ্যাত, জয় গোস্বামীর লেখার মত মেঘ বালিকা কই?
৬||
রাস্তা গুলো রাত্রে ভিজে থাক,
নিঝুম রাতে বৃষ্টি কথা কও/
মেঘবালিকা দিনের ক্লান্তি ঝেড়ে,
আধো ঘুমে মেঘের দেশে যাও।
৭||
মেঘবালিকারা কি পুলিশবাজার থাকে?
টেবিল পেতে বর্ষাতি বেচে রোজ?
লালচে গাল আর ছোট্ট চোখের মাঝে/
জারি থাকুক মেঘবালিকার খোঁজ।
৮||
আজ সর্দি না হয় হোক,
বর্ষাতি ফেলে এক আকাশ ভিজবো চল/
পাহাড়গুলো ঘাপটি মেরে শীতকাতুরে,
এমন শ্রাবণ সন্ধ্যাবেলা সঙ্গে পেলে/
আজ রাত্তির আমার ঠোঁটে আসবি বল।।
-----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| আমার সিনেমাওয়ালা -রা |

সিঙ্গিল স্ক্রিনে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার থাকে।সেখানে যে ফিল্ম দেখে স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে আসে ও ফুঁপিয়ে কান্না ঝরে, সেই ছবি অসাধারণ।
অন্ধকার হলে, প্রজেক্টার এর দিকে একটানা তাকিয়ে থাকলে নাকি ম্যাজিক এর মতো টাইম মেশিনে চড়ে বসে যে কোন সময় নিয়ে আসা যায় সেলুলয়েডে।
আমার বাবা আমাকে প্রথম সিনেমা হলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় বান্টিতে। বান্টি একটি হলের নাম ছিল। ক্রমে গোটা এলাকার নাম হয়ে যায় বান্টি। নাকতলার পরের স্টপ। যেখানে হালে মেট্রো স্টেশন হয়েছে।
বান্টি তে জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র দেখি খুদা গাওয়া! স্কুল জীবনে এর অশ্লীল সমাস ও জানতে পারি। খুদা এসে....... নিয়ে হাওয়া। অমিতাভ বচ্চন ছিল ছবিটায়। আফগানী পটভূমিতে মশলাদার মনোরঞ্জন।
টিকিটের দাম মনে নেই তবে বাবা মা এর দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক অশান্তির নিক্তি তে মাপলে খুব বেশি কিছু ছিল না। তিন ঘন্টা অপলক দৃষ্টিতে মানুষগুলো তাকিয়ে থাকতো স্ক্রিনের দিকে।নেশা ওখানেই শুরু।
তখন আইনক্স ছিল না। থাকার মধ্যে আমার দুনিয়া জুড়ে ছিল বান্টি, মহুয়া, পদ্মশ্রী,মধুবন, মালঞ্চ। দক্ষিণ কলকাতার ছেলে আমি। আগাগোড়া গড়িয়া।
কাঠের চেয়ার, ঘুটঘুটে অন্ধকার হল, টর্চ লাইট জ্বালিয়ে সিট দেখিয়ে দেওয়া, সস্তার টিকিট এ মার্কার দিয়ে লেখা সিট নম্বর, ইন্টারভ্যালে প্যাটিস।
আমার এক নিমেষে হিপনোটাইস এর যন্ত্র ছিল সেলুলয়েড আর যারা তার সাথে যুক্ত ছিলেন তারা স্টার। নবীনা তে বয়স্ক মানুষটি প্রজেক্টার রুমে বসে ফাইল দেখতেন উনি বেঁচে আছেন? কাহো না প্যার হয় এর পর হৃতিক ওর সাথে ছবি তুলেছিল। আমি জানতাম। চাড্ডিখানি কথা।
মেনোকা ছিল শাহরুখ খানের। নবীনা সালমান আর মালঞ্চ হিট হলিউড ছবির হিন্দি ডাব্ডব ভার্সন এর।
আমার দারুণ লাগতো সিনেমা হলের ওই ভোঁটকা গন্ধ। হলে ওই EXIT লেখা আর চারপাশের অন্ধকার। ওখানে নাকি সপ্তাহে সপ্তাহে সপ্ন দেখা যায়। সপ্নে নায়ক অমর হয়ে যায় আর হল মালিক নিঃস্ব।
আইন্কস, পিভিআর এর মতো বাঙালি হল মালিক পাঁচ টাকার পপকর্ন একশো টাকায় বেচতে কুন্ঠিত বোধ করে। যেরকম অনলাইনে টিকিট বেচলে জাত যায় পূরবী কর্তার।
হলে অমর থাকে হকারের আনা সামগ্রী, পাইল করে আনা মদ। আপিস কেটে ছবির নেশা ও। আমার ইলেভেন, টুয়েলভ এ যেরকম ছিল ভবানী। স্কুল এর থেকে বেশি শিক্ষা পেতাম কাঠের চেয়ার ও ফ্যান এর শীতলতায়। বাকিটুকু উত্তেজনা ছিল।
ভবানীতে পাইল করে মদ আর ফ্যাপড়ার বড়া নিয়ে ঢুকতাম। গাদাখানেক সেদ্দো ছোলা ও গছিয়ে দিতো রাখাল দা। ভিতরে তিন ঘন্টার ব্রা খোলা, আচঁল ফস্কানো, মোখ ঘষাঘষি। নরম যৌনতা ছবি জুড়ে।
শোনা যায় এই সব হল মালিকদের নাকি এখন নির্বাসন দেওয়া হয়েছে। এরা নাকি আইনক্সের কোলার কাপে আত্মহত্যা করেছে, ইন্টারভ্যালে যা খাই আমরা তাতে নাকি এদের রক্ত থাকে। মানে যে ঠান্ডা পানীয় বড় গ্লাসে খাই তাতে কয়েক ফোঁটা হল মালিকদের রক্ত থাকে। যে মোমোটা খাচ্ছি তাতে বন্ধ হয়ে যাওয়া হল মালিকের চামড়া পোড়া গন্ধ থাকে।
একদিন সমস্ত হল এর সমস্ত কর্মী আত্মহত্যা করে। বাতানুকূল আইনক্স এর প্রতিটা কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে সেলুলয়েড।
হলগুলো আজ ভেঙে বহুতল ভবন। এদের পেটেও হোম থিয়েটার লাগানো। কিন্তু এদের কারোর মধ্যে আজও বোদহয় সেলুলয়েড এর পাগলামি নেই। বেশিরভাগটাই ডিজিটাল ধ্যাশটামি আর সস্তায় সপ্ন দেখার সুযোগ।
পুনশ্চঃ। সিনেমাওয়ালা র আসল নায়ক হরির চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি সেই অরুন গুহঠাকুরতা। পরান এই ছবিটা করবেন বলেই বেঁচে ছিলেন, কৌশিক এর অখ্যাতদের ট্রিবিউট দেওয়া ক্রমবর্ধমান।

| শ্রীবৃদ্ধি |

জীবনযাত্রা পাল্টে গেছে কবেই/
ছুটি মানেই পাটায়া ইদানিং।
ছত্রাক পরা অ্যালবাম এ বেঁচে থাকে/
মা বাবার সাথে পুরি, দার্জিলিং।
------ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| ভিনদেশী |

জীবন পাল্টাবো বলে শহর পাল্টানো /
যেটুকু পাল্টেছি তা রোদে, জলে কলকাতার।
চিলেকোঠার ছাদ, ঘুড়ির কৈশোরে আঁটকানো/
উচ্চাশার উড়োজাহাজ, খোঁজ রাখেনা তাঁর।
-------ময়ূখ ররঞ্জন ঘোষ

| অবস্থান |

ঝুঁকে পরছিলাম, ঝুঁকি নিয়ে নিলাম ।
করা হোক না হোক, কথা দিয়ে দিলাম ।
দেখা যাক ই না......
দেখা যাক ই না, লাভ গুনবো না,
পথই পথ চেনাক, বাণী শুনবো না
চল তৈরি হই. .....

| জামাই-ঢেকুর |

রাম ঢেকুর বড় বেয়াদব জিনিস। সচরাচর তেলেভাজা খাইয়া তৃষ্ণা নিবারণ করিলে ওঠে।
কিন্তু জামাই ঢেকুর উঠাইতে শ্রম ও অধ্যবসায়, দুই লাগে। এতে তৃপ্তি আছে, আবেশ আছে হেঁশেল সাধনার, ভালোবাসার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আছে।
শাশুড়িকে নিজে হাতে রন্ধন কার্য সম্পাদন করিতে হয় ও পাশপাশি এও নজর দিতে হয় যাতে জামাই আদরে আল্লাদে ঢেকুর তোলে। সর্টকাটে কোকা কোলা খাওয়াইয়া ঢেকুর তোলাইলে পয়েন্ট কাটা যায়।
আমি ভাগ্যবান!!
আজ আপিস হইতে আসিতেই আম, লিচু, কালো আঙুর, রাজভোগ, মাখা সন্দেশ।
এরপর আইলো ভেটকি মাছ এর ফ্রাই, পিছন পিছন লেনিনের দেশ খ্যাত সুগন্ধি সোমরস।
তারপর ক্রমাগত মাছ ও মদিরা রিফিল হইতেছে।
মধ্যরাতে অনাবিল মুখে আসিলো সাদা ভাত, নারকেল দেওয়া মুগডাল, ইয়া বড় গলদা চিংড়ি, খাসির লাল ঝোল সমেত মাংস। একে অন্যের শরীরে ঘষাঘোষি করিলে এদের স্বাদ খোলতাই হয়।
এ প্রবল যুদ্ধ শেষে রনক্লান্ত যোদ্ধা যখন পায়চারি করিতেছে অস্বস্তি কমাইতে ও আশ্রয় খোঁজে এসির হাওয়ার, সহসা শাশুড়ি আসিলো দুশ্চিন্তামুখর হইয়া। ওটাই কিস্তিমাত।
ময়ূখ এমা তোমায় ইলিশ মাছ দিতে একদম ভুলে গেছি গো! প্লেটে দিচ্ছি এমনি খেয়ে নাও।
ফ্যান এর দিকে তাকাইয়া আমি কিরকম উদাস হইয়া গেলাম।
একটি মঙ্গলসূচক ঢেকুর উঠিল।
বেঁচে থাক জামাই আদর। সিঁথি তে অক্ষয় থাক ঢেকুর গুলো তৃপ্তি মাখা।
----------ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| শুভ জন্মদিন |


চে আজ বৃদ্ধ হলেন নাকি?
বয়েস তো হল খাতায় অষ্টআশি।
প্রান্তিক প্রতিস্পর্ধা চে-তনায় জেগে থাক/
দিনবদলের দুঃসাহসরা আজও বেঁচে থাক।।
-------------ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ