কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Friday, May 20, 2016

| যারা আগুন খেয়েছিল |

" চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে / গাছে ডাকছে পাখি, ভুলের কথা ভুলে গিয়ে/ আগুনে হাত রাখি।"
দুজনেই আগুন ভালোবাসতো। তবে ধর্ম ও লিঙ্গ এক ছিল না । একজন যুবক, ধর্মে দেশলাই আর একজন খাতুন, বারুদ সম্প্রদায়। বাড়ির লোকের চাপে যে কোনদিন খাতুন, বেগম হয়ে যাবে। বারুদ বেগম।গল্প সেখানেই বাঁক নেবে।
একজন blue blooded বারুদ ছিল, মামা কাকা, পিসির পরিবার এর সাথেই একটা বারুদ পাড়ায় পাশাপাশি থাকে দীর্ঘদিন আর অন্যজন দেশলাই কূল, বন্ধুদের সাথে গাদাগাদি করে থাকতে থাকতে গোষ্ঠিছাড়া, ভিড়ে একক।
ধরা যাক একজনের নাম অগ্নিস্নাত আর একজন অগ্নিমিতা। দেশলাই বারুদ সমাজে ওদের নামের গোঁড়ামি নেই। আগুন কে আগুন আর জলকে জল বলে। পানি ফল হয় আর চাপাতি মানে মোটা ছোট রুটি।
তবে ওরা জানে পানি হোক বা জল, এদের থেকে দূরে থাকতে হয়। দেশলাই এর নিজের একটা ডবকা, লক্ষ্মী শ্রী বারুদ আছে। একসাথে থাকে এরা। যেরকম বারুদের প্রেমিক আছে। ছিল।
বড় সোহাগ করে কাঠিতে বারুদ ডুবিয়ে মিলন ঘটে। তখন চারপাশে অনেকে আলো, সানাই, রাত জেগে খুনসুটি। বিদায় বেলায় কাঁদতে হয়, কান্নার জলে আগুন লাগে না। একসাথে অনেকগুলো বছর থাকার অঙ্গীকার করে দুজন। জল সরবরাহ নিস্প্রয়জন।
অগ্নিস্নাত আর অগ্নিমিতার দেখা অনেক পরে হবে। এই ছেলে মেয়ে দুজনেই খুব আগুন খেতে ভালবাসে। আগুন খেলে ওদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মাথায় মুখে আগুন লাগে, ঝলসে যায়, নতুন করে শুরু হয়, আগুন ধারন। এসবই কল্পনা অবশ্য।
দেশলাই বিবাহিত বেশকিছু দিন। তার বউয়ের আগুন ভালো লাগে না। আগুন জ্বলে কেবল কর্মরত থাকলে। কমিউন থেকে বেরিয়ে নিজেকে জ্বালিয়ে দেয়া। এদের এখনো সেই সুযোগ আসেনি। একইভাবে একইসাথে পাশাপাশি থাকতে থাকতে damp পরে যাচ্ছিল ওরা। বারুদকে দেশলাই আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু বারুদ ঝুরঝুরে হয়ে এদিকে সেদিকে ছিটিয়ে যাচ্ছিল। বেডরুমে চাদর গায়ে বুঝতে পারতো ওরা।
অগ্নিমিতা আবার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে চেয়েছিল ধুমা প্রেমে পড়ে। পারেনি কারণ সুযোগ পায়নি। চিৎকার, ঝগড়ার মাঝে দুম করে ঝাপিয়ে পড়ে চুমু খেতে চেয়েছিল, এর ওর ঠোঁটে বারুদ লেগে থাকুক চেয়েছিল। বারুদ হয়ে আগুন এ শুয়ে সোহাগ করতে চেয়েছিল।
অগ্নিস্নাত আর অগ্নিমিতা কোন এক দারুণ গরমে প্রেমে পড়ে গেছিলো। দুজনেই আগুনে পুড়ে প্রেম করতে চেয়েছিল।
আগুন না মেনে নেওয়া সম্পর্কের উত্তাপ, সামাজিক চাপ, অনেক কিছু জানতে পারার ভয় থেকে তৈরি করা হয়। নিষিদ্ধ বাতাস আগুনকে লালন করে।
একদিন অগ্নিস্নাত আর অগ্নিমিতা ব্যাগ গুছিয়ে ভোর বেলা দিঘার বাসে উঠে পড়লো। একসাথে অনেক নেশা করেছে, আজ আগুন খেতে যাবে। delux বাসে গান চলছে: একটা দেশলাই কাঠি জ্বালাও, তাতে আগুন পাবে। অগ্নিমিতা শক্ত করে অগ্নিস্নাত-র হাত চেপে ধরলো। বাস রামনগর পেরিয়েছে।
জায়গাটা তাজপুর। এসি ঘর, জলের জগ আছে, দরজা খুললে ঝাউ গাছ, পাশের জানালায় একটা নোনতা গামছা মেলা।
অগ্নিস্নাত আলতো করে কাছে টেনে নিলো অগ্নি কে। অগ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ও। নিশ্বাস ঘন হয়ে আসে। এসির শব্দ ছাড়া দূরে দুপুরে সমুদ্রের গর্জন।
পাথরে পাথর ঘষে আগুন লাগে। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে আয়োজন শুরু হয়, অগ্নিমিতা আগুন হতে পারে, অগ্নিস্নাত তা বুঝতে পারছে। বুঝতে পারছে ক্রমশ উত্তাপ বাড়ছে, যেকোন সময় দাবানল হবে।
অগ্নিমিতা এখন অসম্ভব সুন্দর লাগছে। চারদিক খুব উজ্জল আলোতে ভোরে উঠেছে। এখন সম্ভোগ হবে। অগ্নিস্নাত থরথর করে কাঁপছে। অগ্নিসংযোগ হবে এবার কিন্তু অগ্নি কাঁদছে কেন না চোখ কয়েক ফোঁটা জল সরবরাহ করছে শেষবেলা?
এখন দুটো শরীর যতটা সম্ভব জাপটে আছে, ঠোঁটে ঠোঁট রাখা, পিঠে আঙুলের আঁকিবুকি, শিহরণ শরীর জুড়ে।
হঠাৎ ফশ্ করে একটা শব্দ। আগুন লেগেছে। দুজনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, মুখ মিলিয়ে গেল আগুনে। হাতে হাত ধরেই আগুন খেলো ওরা। পিঠে আঁকিবুকি খেলতে খেলতে।
-------------- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ।
ঋনস্বীকার: " চাঁদ উঠেছে......" জয় গোস্বামীর কবিতার লাইন।

No comments:

Post a Comment