কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Wednesday, January 25, 2017

| দলিত প্রজাতন্ত্র |

যে বামুনের ছেলে দুবেলা ভাত খেতে পারেনা, শ্রমের বিনিময় খিস্তি খায় বিপিএল কার্ড চেয়ে, সে কি দলিত নয়?

যে তপশীলি  ছেলেটির বাবা কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি করে, ঘুষ খায়, সরকারি আবাসনে থাকে, সে ও দলিত তবে?

যে সংখ্যালঘু পরিবার, সেই পাড়াতে সংখ্যাগুরুদের হুমকি খেয়ে পাড়ার একটা দোকান কোনক্রমে চালায়, সে দলিত নয়?

দলিত কি শুধুই ভোট? পেট এ লাথি খাওয়া, পুলিস এর কাছে খিস্তি খাওয়া, বস্তার, কালাহান্ডি তে প্রচন্ড রাগ এ ফেটে পরা যুবক নয়?

মণিপুর এর মেয়েটি যাকে রোজ কাপড় খুলে প্রমান করতে হয় সে মানব বোমা নয়, সে ও ভারতীয়, সে দলিত নয়?

রোদ-জল-বন্যা তে দু মুঠো চালের খোঁজে লড়াই করা "প্রজাতন্ত্র থেকে কিচ্ছু টি না পাওয়া" সমস্ত প্রজাই তো পদ-দলিত।

প্রজাতান্ত্রিক এই দেশ এ অর্থনৈতিক ভিত্তিতে সংরক্ষণ এর লড়াই। চাই। চিৎকার টা দরকারি হয়ে পরে ব্রাহ্মণ্যবাদ ও দলিতবাদ থেকে মনুষ্যবাদ এর লড়াই লড়তে।

কেউ যদি বেশি খায়, খাওয়ার হিসেব নাও,
কেন না অনেক লোক ভালো করে খায় না।

Sunday, January 15, 2017

| বাঙালি নির্বাচন |

যে সমস্ত মানুষ কুসুম সমেত তিনটে ডিম সেদ্ধ খায় না,

হাত দিয়ে মেখে মাংস ভাত খায় না ও খাওয়ার পর হাত চেটে ঝোল খায় না,

মুরগির ঠ্যাং কুচি কুচি করে চিবিয়ে, বোন ম্যারো সুরুৎ করে চুষে নেয় না,

যারা কাঁটাওয়ালা মাছ খেয়ে, বীরের মত থালার সাইডে কাঁটা সাজিয়ে রাখেনা,

যারা বিরিয়ানির পর থামস আপ খেয়ে আওয়াজ করে রাম ঢেকুর তোলে না,

যারা রাম, সেদ্ধ ছোলা, ডিমের পকোড়া দেখে নাক সিঁটকোয় আর বিনি পয়সাতে ফ্লেবারড ভটকা দেখে হাবাতের মত বার কাউন্টার এ লাইন দেয়,

তারা বাঙালির নামে কালি। জ্যোতি বাবুর ধুতিতে, মমতার শাড়িতে, নবান্ন-র দেওয়ালে।

এরা জাহান্নম বা নরক যেখানেই যাক, এদের পেঁয়াজ, কাঁচা লংকা,আদা, রসুন, ডিমের গোলা মাখিয়ে ছাকা তেল এ ডিপ ফ্রাই করা উচিত।

ট্যাঁস ছাড়া শুয়োর বা গরুর স্বাদই আলাদা।

-- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

| আমার বারবেলা |

আলুথালু থ্যাতলানো লাল টিপ, সাদা শাড়ি গায়ে চড়িয়ে হেঁটে চলা তুলতুলে নরম ডিমসেদ্ধ ফালি করে শোয়ানো, ওপরে গোলমরিচ, ঝাল নুন, ধনে পাতা ছড়ানো। ধবধবে সাদা প্লেটে ৮ পিস শুয়ে।

চাটুতে রোষ্ট করা পাপড়, স্টিলের বাটিতে নুন পেঁয়াজ মাখানো বাদাম।

পাশে ধনে পাতা, লাল লংকা, পুদিনা, রসুন, মরিচ সোহাগ করে বাটা চাটনি। করাচির মত সবুজ, হীনা রাব্বানি খার এর মত নেশা ধরানো।

অর্ধেক মুরগী মারাঠি মশলা মাখানো, আদুরে তন্দুর এ আধো আধো ঝলসাও, লেবু মাখাও, পুদিনার প্রলেপ লাগাও। অবিন্যস্ততা সহ ঘেমো পরিবেশন।

খুব গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকা লাল ঘোলাটে রাম। এক বোতল। সাথে স্বচ্ছ বরফ কুচি, কোলা, ঠান্ডা জল। গ্নাসের গায়ে জলের বিন্দু। ঠোঁটে লাগা ঠান্ডা, অল্প যদিও।

বাকিটা অতল খোঁজা। আরো গভীরতর। বাদামের একটা টুকরো গেলাসের নিচে পরে থাকে যেমন। রাম, জল, বরফ, চুমুক এর নিচে, অস্থিরতায়। তার ও নিচে। আরো অতল খোঁজার আকুতি।

আমার "বার" বেলা।

Happy New Year 2017.

অনেক গুলো একই রকম বছর কাটিয়ে ফেলার পর ২০১৬ আক্ষরিক অর্থতেই আমার কাছে ঘটনাবহুল।

আয়ে মারম্ভ শুভায় ভবতু। Let the Beginning be auspicious!

এবিপি আনন্দ তে চার বছর কাজ করেছি, হাঁপিয়ে উঠছি "Growth" এর খোঁজে, এমন সময় দৈবের বশে টাইমস নাও থেকে ডাক পেলাম। অর্ণব গোস্বামী বললো, বম্বে এসো। কাজ শুরু করো। আমিও মন কে প্রস্তুত হতে বললাম।

আমার প্রথম সব গোপন কথা পুষে রাখার শহর কলকাতা কে ছেড়ে, বিমানবন্দর এ নিজের মানুষ গুলোকে কাঁদিয়ে মুম্বাই পাড়ি দিলাম।

আমার কলেজ জীবনের বন্ধু Monalisa Chatterjee Ghosh, ঘটনাচক্রে আমার স্ত্রী ও, তার অফিস কলকাতাতেই, তাকে একা রেখে চলে এলাম। একা করে দিলাম আমার হন্ডা এক্টিভা স্কুটি, রাতের সফর।

এবিপি আনন্দেও তো অনেক কিছু  রেখে এলাম। গড়িয়াহাট মলের প্রত্যেক দেওয়াল, আলো, আর মানুষজন যে আমার খুব পরিচিত। আর ওই বন্ধুরা? দাদাগুলো? প্রেস ক্লাব? বা অনুপমের ওই ভাড়া বাড়ি?

প্রতি রবিবার আড্ডা মারার আস্তানা, যাদবপুর সেট্রাল রোডে পূর্বিতার বাড়ি, জয়, ঈন্দ্র? তথা, উরমি?

নাকতলা আর নরেন্দ্রপুরের মানুষ গুলোকেও তো ছেড়ে এলাম। ঠাকুমা, দিদা।

মুম্বাই এসে বিশ্বমানের টেলিভিশন এর কাজ শিখলাম, সাংবাদিকতার আধুনিক পাঠ নিলাম, বিশাল ক্যানভাস এ কাজ করার সুযোগ। ও হ্যা, নিজের প্রথম বাইলাইন টাও পেলাম টাইমস এর সাংবাদিক হিসেবে।

এর মাঝে আমার জীবন অনেক বদলে গেছে। পেয়িং গেষ্ট হয়ে থাকতে শিখেছি, জ্বর হলে একা ট্যাবলেট আর জলপট্টি। ধন্যবাদ তো সৌভিক এর ও প্রাপ্য।  আমার প্রথম গার্জেন এই অচেনা শহর এ।

অনেকগুলো গলার কাছে কান্নার মাঝে, একটা বিশাল শহর পেলাম। যোগ্যতাকে তারিফ করে যে শহর, শ্রম এর সঠিক মূল্য দেয় যে শহর, মুরি আর মুরখি আলাদা বাটিতে রাখতে জানে যে শহর। বম্বে শহর এ আমার সাত মাস।

বম্বে আমাকে শক্ত হতে শিখিয়েছ, লোভ বেড়েছে কারন দেখেছি যত কাজ করবে তার যোগ্য পারিশ্রমিক পাবে। আর এর কোন শেষ সংখ্যা নেই।

২০১৭ আমার আবার নতুন করে শুরু করার বছর। ইংলিশ,হিন্দি তে লেখা সব নতুন মাইল ফলক। রান লোলা রান।

বম্বে তে একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট নিচ্ছি, বউ আসবে। এখানে সব সাংবাদিকরাই দেখি ভিজিটিং কার্ড রাখে পকেটে। আমিও রাখা শুরু করলাম। আর মুম্বাই প্রেস ক্লাব এর মেম্বার হওয়ার দরখাস্ত ও করলাম।

একটা বিরাট বিপ্লব এর স্বপ্ন আজ ও দেখি। স্বপ্ন দেখতে ভালোই লাগে। স্বপ্ন সত্যি করার প্রতিস্পর্ধা।

অপেক্ষায় থেকো আমার ভিটে, আমার পাড়া, লেপ এর তলার উষ্ণীষ, মধ্যরাতের ফ্লাইওভার। আমি ফিরবো।

নতুন বছর সবার শুভ হোক।
Happy New Year 2017.

| লাভ ইন দা টাইম অফ ডিমুদ্রিকরন |

গোটা দেশ যখন পরি কি মরি করে আধ কাটা দাড়ি আর আধ ধোয়া নিতম্ব নিয়ে ডিজিটাল হচ্ছে, আমরা বর-বউ কেন পিছিয়ে থাকি? লাভ ইন টাইম ওফ ওয়ার যদি হয় লাভ ইন টাইম অফ ডিমুদ্রিকরন কেন হইবে না? আসা যাওয়ার মাঝে বাঙালি দম্পতির প্রেম বিনিময় বাপুজি কেক এই কেন আটকে থাকবে? মেরা দেশ বদল রাহা হ্যা! এখন পায়ে বাঁধা প্রেমপত্র নিয়ে আর কবুতর আসেনা। তারা বাইকে চেপে, বাক্স হাতে আসে। কমিশন এর টাকা পেটিএম এ পায়। গল্প ঠিক সেখান থেকে শুরু।

'হ্যাপিনেস' কখনো সখনো বাক্সবন্দি হয়ে আসে। তাতে ছটা সাহেবি বানরুটি নানা রকম 'সিনফুল' জিনিস পেটে ঠাসা, উপরে চকোলেট, ক্যারামেলাইজ ক্রিম, শুকনো ফল বা চিজ দিয়ে আঁকা হাসিমুখ।

'হ্যাপিনেস' এর আর এক নাম চমকে দেওয়া উপহার। মুম্বাই এর কোন অফিসে পৌছে যাওয়া স্ত্রী Monalisa Chatterjee Ghosh এর বাক্সবন্দি ভালোবাসা, হাত এ হাত শক্ত করে ধরা, দারুণ মন খারাপি নিরোধক ছটা ডোনাট।

'হ্যাপিনেস' আজ সন্ধেবেলা এসেছিল। একটা বেঁটেখাটো ঝগড়াটে দুপুর,হাপুসহুপুস কান্না কাঁদে মন কিন্তু জিভে ভিষন রাগ ওঠা দুপুরের তরজার শেষে মোনালিসা কলকাতা বসে সুইগি থেকে অর্ডার দিয়েছিল 'ম্যাড এবাউট ডোনাট' এর এক বাক্সজাত 'হ্যাপিনেস'। সাথে এই ছবিটা আর বাকিটা ব্যক্তিগত কিছু খুনসুটি যা মুচকি হাসিয়ে দেয়।

কিছু 'হ্যাপিনেস' ওষ্ঠে শান্তি পায়, কিছু এভাবে। এতে অনেকটা চুমু বরাদ্দ থাকে গল্পের শেষে। লাস্ট  সিন এ ডোনাট মাখামাখি প্রেম করতে করতে মুম্বাই এর রাস্তা দিয়ে চলেছে দুজন। ড্রিম সিকুয়েন্স। পেছনে পিয়ানোর আবহ। আশপাশ এ তখনো হাজার মানুষ এটিএম এর লাইন, নোট এর হাহাকার, বিমুদ্রাকরনের বিরুদ্ধতায় মিছিলে সুর চড়াচ্ছে। চারিদিকে বারুদ আর গরম গরম সদ্য বেক হওয়া ডোনাট এর গন্ধ।

"কবুতর" তখন সুইগির জামা পরে, ঘেমে নেয়ে প্রবল বেগে আর এক বাড়িতে 'হ্যাপিনেস' ডেলিভার করতে যাচ্ছে। পেটিএম ছেড়ে আঙ্গুল তখন আঙ্গুলে মিশেছে, ঠোঁট চকোলেট এ। লাভ ইন দা টাইম অফ ডিমুদ্রিকরন।

------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ