| ভিঞ্চি দা কী আদৌ সৃজিত এর ছবি? |
#Review #ভিঞ্চিদা
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
এবছরের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা Riddhi Sen অনুরাগ কশ্যপের এই ছবিতে মেরেকেটে দশমিনিট ছিলেন। ঠান্ডা গলায় ডায়লগ ডেলিভারি, ব্যাট নিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মারার পাল্প ফিকশন, ডিমলাইটে ক্যাথারসিস বা ক্রাইম সিনে চাপা হাসির মুহুর্ত নির্মাণ যেমনটা করেন ঠিক তেমনি করেছেন ওই দশমিনিট। তারপর প্রসথেটিক মেকআপ তুলে ফিরে গেছেন বম্বে। জানেন নিশ্চয়ই?
প্রসথেটিক মেকআপ অনুরাগ বসু ও ব্যবহার করেছেন Director's Chair এ বসে৷ ওই একটা ছোট্ট তোতলা প্রেমের গল্প বলার জন্য। মিষ্টি একটা এবড়োখেবড়ো প্রেম। আমরা জানতাম এরকম সাধারণ চরিত্রদের ম্যাজিকাল করে তোলা কৌশিক গাঙ্গুলি বা Anurag Basu দ্বারাই সম্ভব। আমরা ধরে নিলাম বন্ধুর কথায় ওরাই সেটে প্রসথেটিক মুখোশে ওই দৃশ্য গুলো পরিচালনা করেছেন।
দিবাকর ব্যানার্জি নিশ্চিত দাড়ি কামিয়ে নিয়েছিলেন সৃজিত এর ছাঁচ পরার আগে। ওরকম মেকআপ নিতে হলে দাড়িতে রঙ আটকে যাওয়ার একটা সমস্যা হয়। উনিই তো এই ছবিকে টানটান ধরে রাখলেন নাকি?
ভাবাই যায় না এতো শরীর খারাপ নিয়ে ও ইরফান খান যেভাবে আদি বোস এর অভিনয় করলেন। রাজকুমার রাও যেভাবে দিব্বি Rudranil Ghosh Rudy সাজলেন। থুড়ি ভিঞ্চি দা।
না? বলছেন এরা কেউ ছবিটার সাথে যুক্ত নয়? এটা টলিগঞ্জের শিল্পীদের নিয়ে সৃজিত আর কেবল সৃজিত মুখুজ্জের ছবি? তবে তো মশাই এবার মিম আর খিস্তি করা বন্ধ করতে হবে। বিমুদ্রাকরণ পরবর্তী দিনে আরো বেকারত্ব মোটেও ভালো না।
অনেক গুনীজনরা একইভাবে দুধরনের কাজ করেন। একটা গ্রাসাচ্ছদনের আর একটা আত্মসুখের৷ আমার মনে হয় সৃজিত মুখুজ্জের একটা চাপ থাকে প্রতি ছয় মাস অন্তত একটা করে ছবি দেওয়ার। বাজারের কথা ভেবেই এই চাই। সৃজিতের নামে দর্শক আসে ও হলে। আজ যেমন চার বছরের এক বাচ্চা নিয়ে এসেছিল এক দম্পতি দিল্লির এক হলে। বাচ্চাটি আপাত শান্ত ছিল কিন্তু তারপর শুরু হলো তার প্রশ্নবিচিত্রা। মাম্মা পাদলাতোদা কি? মাম্মা তারকাটা কি? মাম্মা সৃজিত নাম শুনেই হলে এসেছেন বাংলা ছবি দেখতে। সুতরাং ডিসিডিডি পোদ্দার ও এই কনক্লুশনে উপনিত হবেন যে সৃজিতের যেন তেন ভাবে কনটেন্ট বানানোর চাপ বোধহয় আছে। না থাকলে একটা "উমা" দিয়েই মানুষ এক বছর বিলেতে পছন্দের রেডমিট খেয়ে কাটিয়ে দেয়।
বাংলায় মানুষ রোজ বাজারি কাগজ আর একটা ঘন্টাখানেকের চ্যানেলকে খিস্তোয়। যে ভাবে বিরাট কোহলির ক্যাপ্টেনসি দেখে বলে দেয় এর দ্বারা কিচ্ছু হবে না। অথচ রোজ সন্ধেবেলা মানুষ ওই চ্যানেল আর সকালে ওই কাগজটা দিয়েই প্রাত্যকৃত্য করে। কোহলি সেঞ্চুরি করলেই উদবাহু নেত্য করে। সৃজিত মনের মতো ছবি করলে।হ্যাঁ, ঋতুর পরে ঋজুই এখন বঙ্গজীবনের অঙ্গ।
সৃজিতের ছবি খারাপ, ভয়ংকর খারাপ কিন্তু তবু মানুষ বারবার সেটা দেখতে যায় কেন? বারবার দেখে তেড়ে মিম আর খিস্তি করে। হ্যাটা করে বলে ধ্যাৎ একে ভেবেছিলাম ফেলিনি। এক স্বনামধন্য সম্পাদক আমাকে বলেছিল, এক শ্রেনীর পাবলিক যদি তোমায় সব সময় খিল্লি করে বুঝতে হবে তার সুপ্ত হতাশা গুলো কোথাও তুমি নাড়া দিচ্ছো। তুমি পাল্টাতে যেও না নিজেকে। কারণ সে পয়সা দিয়ে তোমার চ্যানেল বা ছবি বারবার দেখবে তোমাকে গালাগাল দিতে। ওর রাগ বা হতাশা প্রকাশ করতে। সেটা করতে দাও।
'ভিঞ্চি দা' সৃজিতের ওই কামব্যাক ইনিংস। দুটো পর পর ডট বলের পরে একটা 'বাপি বাড়ি যা' শট। প্রমান করা যে অনুরাগ কশ্যপ, অনুরাগ বসু, ইমতিয়াজ আলী, দিবাকর ব্যানার্জি, ইরফান খান ছাড়াও এরকম একটা ছবি গঞ্জে হয়। টলিগঞ্জে হয়। আর Amalgamation of Quality particles হয় সৃজিত মুখুজ্জে। যদিও ম্যাজিক ওয়ান্ড অনুপম বড্ড সাধারণ এখানে। ততধিক ধর্মবিচ্যুত এর ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড।
ভিঞ্চি দা সৃজিত এরই ছবি কিন্তু এর রক্ত মাংসে লেগে থাকবে রুদ্রনীল, ঋত্বিক, সোহিনী, ঋদ্ধি আর অনির্বাণ। এরা সত্যি বলিউডকে দশ গোল দিতে পারে ঠিকঠাক বাজেট পেলে।
সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন তুলসী চক্রবর্তী ছিলেন ভারতের মরিস শিভ্যালিয়র। হলিউডে জন্মালে অস্কারে ভরে থাকতো ড্রইংরুম। আমরা আত্মবিস্মৃত জাত। মদ খেতে খেতে আজ থেকে দশ বছর পরে রুদ্রনীল, ঋত্বিক, সোহিনী, ঋদ্ধি আর অনির্বাণকে নিয়ে ঠিক এই আপশোস গুলোই করবো।
©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment