| কবরখানার গাছ |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
কংক্রিটের বিশাল বিশাল ফ্ল্যাটবাড়ি ঘেরা দীর্ঘ একখানা কবরখানা। যতদূর চোখ যায় নাম গোত্র ফলকহীন এক একটা কবর। এ সব কবর দেখে সনাক্ত করা যাবে না কার আদরে কোন শরীর দফন করা আছে। এই কবরখানায় গাছ গাছালি আছে। মৃতের পরিবার চারা লাগিয়ে যায় বড় ভালোবেসে। ও দেখেই শরীর চেনে পরিবার। ও গাছেই প্রাণ রেখে যায় আব্বুর, আম্মির, ফুফার, দাদির। নতুন হাওয়া আসে চারপাশে, ওটাও তো প্রাণ, নতুন নিশ্বাস। কত না ফিসফাস, ফোঁপানি, অনুযোগ অগোছালো পরে থাকে গাছের ছায়ায়। কবরের জন্য।
বসন্তে এরকমই কোন সাতমহলা থেকে দেখা দৃশ্য দাঁড়িয়ে থাকে দেখার অপেক্ষায়। ওখানে মৃতদেহ সযত্নে নরম মাটি চাপা দেওয়া, আতর চাপা দেওয়া, ফুল, পুরনো দারিদ্র্য স্মৃতি চাপা দেওয়া। বড় অনাদরে। ওখানে মাটি জোটে, ফলক জোটেনা, এপিটাফ নৈব নৈবচ!
এখন বসন্ত এই শহর জুরে। রোদ্দুর জ্বলা দুপুরবেলা বসন্ত হেঁটে যায় গান গাইতে গাইতে সজনে গাছের নিচে যুবতী ছায়ায়। কবরখানার ছায়ায়। ওখানে আরো গাছ আছে। নাম জানিনা। তবে মাথা উঁচু করে আছে ওই ফ্ল্যাটবাড়ি গুলোর সাথে পাল্লা দিতে।
রোববারের এই অলস দুপুরবেলা গুলোয় এখানে ভেড়ার পাল ঘাস খেতে আসে। কবরের শক্ত পাথরের নিচে যে নরম ঘাস । ফ্যাকাশে সবুজ। কাঁচা বাতাবীর মতো সবুজ ঘাস, তার সুঘ্রাণ যেটুকু ছিল তা মৃত শরীর শুষে নিয়েছে তার হাড়ে মজ্জায়, করোটিতে। এখন এখানে প্রায়মৃত কিছু সবুজ। এখানে কেউ রোজ জল দিতে আসেনা গোড়ায়।
ভেড়ার দল কিলবিল করে ঘাস খেয়ে যায়। কবরের এ কোন ও কোন থেকে যতটুকু সবুজ খেয়ে নেওয়া যায় পেট ভরে। ফলকহীন, নামহীন সবুজ। এরা সব্বাই কুরেশিদের ভেড়া। কুরেশিদের মাংসের দোকান আছে। জবাই করে রোজ তিন খানা খাসি বা ভেড়া। অনেকটা মাংস গোটা দিন ধরে আয়েস করে বিক্রি করে।
ভেড়া গুলোকে প্রতি রোববার এই কবরখানায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ঘন্টা দেড়েকে পেট পুরে ঘাস খায় কবরখানার, কোতল হোওয়ার আগে।
সিরিয়াতে ও তো এরকম নাম ফলকহীন অনেক কবর আছে। ওখানে গাছ পোতা হয়? কাশ্মীরে ও তো কবর আছে। ওখানে বরফের চারপাশে ঘাস দেখা যায়? আর রাষ্ট্রসংঘে? ওখানে শুনেছি অনেক ভেড়া খেলা করে। প্যালেস্টাইনে ও সবুজ আছে বোধহয়। ওখানেও কি ভেড়া খোঁজ নিয়ে যায় কবরের?
ভেড়াগুলোকে কেউ বারন করে না আদরের গাছ গুলোকে না খেতে। গাছ খেয়ে ওদের তন্দুরস্তি আসে, পুষ্টি পায় ওরা জুম্মাবারে জবাই হবার আগে। কোন গাছের ছায়ায়।
ভেড়াদের কবর হয় না। কোতল হয়।
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment