কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Saturday, November 3, 2018

রয়্যাল বেঙ্গল লজ্জা, আত্মবিস্মৃত টাইগারদের কিসসা ও ভোট

| রয়্যাল বেঙ্গল লজ্জা, আত্মবিস্মৃত টাইগারদের কিসসা ও ভোট |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

অবাস্তব তবু ধরে নিন সলমান খান দুম করে একটা বাইট দিয়ে দিল সর্বভারতীয় মিডিয়ায় যে তিনি মুসলমান তাই তার পিছনে ২০ বছর পর ও লাগা হচ্ছে আর যারা আদিবাসী তারা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার মেরে ও বহাল তবিয়ৎ। এতটা পড়ে আলবাত নড়েছেন চড়েছেন।

একটা খেলা খেলি চলুন। ধরে নিন শ্রী চৈতন্যদেব, রামকৃষ্ণদেব, বিবেকানন্দ, লালন সাঁই, রবি ঠাকুর, মাইকেল, সত্যজিৎ, ঋত্বিক, অমর্ত্য, সৌরভ নামের আইকনেরা সব ভ্যানিশ হয়ে গেল। বাঙালি যাদের নিয়ে দিন রাত গৌরবের ঢেকুর তোলে তারা কেউ নেই, বা বাংলায় জন্মায়ই নি। এবার কি হবে? কাকে নিয়ে  মাথায় তুলে নাচবে বাঙালি? অনুব্রত মন্ডল না সুদীপ্ত সেন?

বাংলা এককালে ছিল ভারতের রাজধানী। কলকাতা ছিল বাণিজ্য ও সংস্কৃতি রাজধানী, সাহেবদের হাতে বানানো মেট্রো সিটি। প্রথম শিল্প, সাহেবিয়ানা, উন্নয়ন, ভূমি আন্দোলন, ট্রাম, মেট্রো। তারপর সব গেল। আন্তর্জাতিক মানের যা কিছু তা সব গেল। বাকিরা এগোতে থাকলো। কেউ আর বেঙ্গল বা বাংলা শব্দটা নিজের সাথে যুক্ত করে না। কেউ না। ওই এক টাইগার বাদে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ম্যাজেস্টিক এক জন্তু যে এখনো নিজের নামের সাথে বেঙ্গল শব্দটা রেখে দিয়েছে। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে মাত্র ৩০০০-এর মতো আছে। ইদানীং একটা কমলো। সৌজন্যে বাংলা থুড়ি বেঙ্গল।

বিলেতে অরণ্য বিশারদেরা বলাবলি করে, একটা তাজমহল ভেঙে গেলেও তা হয়তো আবার বানানো যাবে। কিন্তু সুন্দরবন,তার বাঘ, অন্য জন্তুজানোয়ার, ম্যানগ্রোভ, সংস্কৃতি একবার খোয়া গেলে, কোন প্রযুক্তি দিয়েই তা আবার তৈরি করা সম্ভব নয়। আত্মবিস্মৃত বাঙালি সেদিকেই এগোচ্ছে। পিছনের দিকে এগোতে ভালোবাসে মিনিবাস চড়া বাঙালি। "বাঘের বাচ্চা" বাঙালি।

আবার খেলাটা খেলি চলুন। ধরুন, আপনার সমস্ত টাকাকড়ি ভ্যানিস। ঘরে অনেকটা রেশন মজুদ। এবার রোজ দেখছেন তা অনেকটা করে কমছে। আপনি কিন্তু খাচ্ছেন না। কিন্তু কমছে। আপনার যে হলঘরটা ছিল সেটাও আর নেই। খাটে কেউ বা কারা স্টিলের বিম লাগিয়ে দিয়েছে। শুতে পারছেন না। মেঝেতে গুচ্ছের প্লাস্টিক, দুর্গন্ধময় অচেনা গন্ধ, বিকট আওয়াজ যাতে আপনি অভ্যস্ত নন। আরো আছে। ধরুন এ সবের জ্বালায় আপনাকে একটা সুটকেস নিয়ে আজ এ বাড়ি কাল ও বাড়ি করতে হচ্ছে একলা। আর যেখানেই যাচ্ছেন, ওখানকার লোকেরা ভাবছে সন্ত্রাসবাদী বা পাগল। আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তীর পাথর ছুঁড়ছে, দামামা বাজাচ্ছে। এ সব হচ্ছে কিন্তু আপনাকে মারতে। আপনি নিজের খাটেই শুয়ে আছেন, কারো অনিষ্ট করছেন না তবু। আপনাকে শিকার একটা উৎসবে পরিনত। ভাবছেন আপনার দোষ কি ছিল? আবার পুরো প্যারা টা পড়ে নিচের প্যারাতে আসুন। ময়ূখ বুঝিয়ে দিচ্ছে।

আপনাকে যে পরিস্থিতি তে ফেলা হল, ঠিক এক পরিস্থিতি তে বাঘেদের ফেলা হচ্ছে। লালগড়ের নিহত বাঘটিকে ফেলা হয়েছিল বা অন্যন্য বন্যপ্রাণীদের। ক্রমশ নিজেদের বিচরণক্ষেত্র কমে যাচ্ছে নগরায়নের ফলে। যথেচ্ছ বন কাটা, চোরাচালান, ইকো সিস্টেমের পরিবর্তন। বাঘেদের খাওয়ার কমে আসছে একদিকে আর অন্যদিকে জমছে প্লাস্টিক। এক জঙ্গল থেকে আর এক জঙ্গল মাইগ্রেট করছে এরা। বাধ্য হচ্ছে। তারপর এক অদ্ভুত দানবীয় খেলায় মেতে উঠছি আমরা যারা নিজেদের হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স বলি। যারা উন্নত। যারা ভোটের আসলে তোষণ করতে ভালোবাসি।

সলমান একখানা কৃষ্ণসার শিকার করেছিল। খারাপ করেছিল। কিন্তু গোটা দেশে এই ২০ বছরে প্রায় ডজনখানেক কৃষ্ণসার মারা হয়েছে প্রাচীন শিকার উৎসবের নামে। চোরাচালান হয়েছে গন্ডার, হাতি, হরিন এমনকি বাঘ ও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক মানুষেরা যুক্ত। কোন এফআইআর বা কনভিকশন হয়নি। করা হয়নি কারণ প্রশাসন শিথিল ছিল। বাঘ মরেছে বলে অন্য বাঘেদের আন্দোলন হয় না, তারা থানায় ঢুকে কাঁমড়ায় না, ভোট বয়কটের হুমকি দেয়না, তাই দোষী মানুষদের শাস্তি ও নেই।

বাঙালি নিজেকে বাঘের বাচ্চা বলতে আত্মিক সুখ পায়। কারণ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। নববর্ষ মঙ্গল শোভাযাত্রা গুলোয় দেখি বাঘের মুখোশ, পটের ওপর ডোরাকাটা বেঙ্গল টাইগার। গদগদ মুখ। আমাগো বাঘমামা এডা। আর সেই অহমিকার বাঘ খুন হলে ও আত্মবিস্মৃত বাঙালি বাংলা বনধ করে না। ট্রেন আটকে দেয় না, ব্যারিকেড ভেঙে দেয় না। স্বাভাবিক।  এই রাজ্যেই তো ভারীশিল্প রাজ্যছাড়া করতে পারলে উল্লাস হয়। দেবীর জন্ম হয়। অন্য রাজ্যে শিল্প গেলে শোকসভা হয়।

ভাগ্যিস WWF  টুথলেস টাইগার নয়তো উচিৎ ছিল  রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার থেকে বেঙ্গল শব্দটা বাদ দিয়ে দেওয়া। রাজ্য ও ভারতের বনদপ্তরকে ও লজ্জা দেওয়া জরুরি।

আত্মবিস্মৃত বাঘের বাচ্চারা পয়লা বৈশাখী বাঘের মুখোশে, উমাপ্রসাদ মৈত্রের 'এক যে ছিল বাঘ' ছবিতে, অনুপ ঘোষালের 'পায়ে পরি বাঘ মামা' গানে, বাঘবন্দি খেলাতেই খুশী থাক। ভোট উৎসবেই খুশী থাক। এক সুন্দরবন সমান গভীর রয়্যাল বেঙ্গল লজ্জা নিয়ে।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment