| ইনসাল্লাহ আর জয় শ্রীরাম বললেই মুসলিম বা হিন্দু হয়না |
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
Islamophobia আর Islamophilia দুটোই মানবসভ্যতার জন্য সমান চিন্তার কারণ। এই দুই ধরনের মানুষকেই সমান ভাবে আমাদের প্রতিরোধ করে এগিয়ে চলাটাই কাম্য। ওই যে বলে না অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
Islamophobia তো আমরা জানি। মুসলমানের নাম শুনলেই বিচুটি ঘষার মতো চুলকোয় মাথাখানা৷ গুষ্টি শুদ্ধু সবাইকে সন্ত্রাসী ভাবি, মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণ হলেই মনে মনে আনন্দ হয়, "মরুক শালারা নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করে"। মুসলমান শবে বারাতের হালুয়া আনলেও ভাবি তাতে গরুর মাংস কিমা করে খাইয়ে দেবে ইত্যাদি।
Islamophilia একটু জটিল। এটা আসে নিজেকে বহুত্ববাদী, ধর্মনিরপেক্ষ প্রমান করার তাগিদ থেকে৷ বলে না সদ্য জাত বদল করা মুছোলমানের গরু খাওয়ার তাগিদ থাকে বেশী, সেরকমই তার ঠিক উল্টোটা মানে বিশেষ উদ্দেশ্যে লিবারেল প্রমাণ করার তাগিদে Islam এর সব কিছু অমৃতসমান ভেবে ফেলে এরা। একটা সময় Obsession এ বদলে যায় এই ইসলাম-প্রীতি। তখন কট্টর মৌলবাদীদের ও মনে হয় সুফিবাদী। ধর্মীয় গোঁড়ামিকে ও মনে হয় মানবতার দর্শন। কারণ প্রমাণ করতে হবে যে আমার একই বৃন্তে দুইটি কুসুম হিন্দু মুসলমান। সে যতই Inter Caste Marriage এর নাম শুনলে আকাশ ভেঙে পড়ুক আর সব বিপ্লব শেষে মায়ের পছন্দের গোত্রের মেয়ের সাথে সাতপাকে বাঁধা পরি৷
মুসলমানদের ভালোবাসতে হলেই কথায় কথায় ইনসাল্লাহ ইনসাল্লাহ করতে হয়না। কোন মুসলমান মেয়ের প্রেমে পরলেই যেমন তাকে বেগম বলাটা বোকামি ঠিক সেরকম আবোদা ব্যাপার এটা। কিংবা যে লোকটা সারাদিন না খেয়ে আছে, তার পাশে অশ্লীলভাবে ভরাপেটে নামাজ পড়ার ভান করতে হয় না ঢেকুর তুলে। রামজান মাসে তার ওই উপোসটাকে সম্মান জানালেই সে খুশী হয়। তার সাথে খাবার ভাগ করে নিলেই সে আনন্দ পায়। তার এই যে এক মাস খাবার-জল না খেয়ে থাকা, তা সন্ধে নামলে উদযাপন করলেই ভালোবাসা বাড়ে। কেবল ফেজ টুপি পরলে না।
মুসলমানদের বাড়িতে রোজ গরুর মাংস রান্না হয়না। বাবাকে আব্বাজান বা মাকে আম্মি ও সবাই বলেনা৷ আপনার বাড়িতে যেমন শাক, পনীর বা মুশুর ডাল রান্না হয় ও বাড়িতে ও সেই গন্ধই পাওয়া যায়। কাবাবের গন্ধ রোজ রোজ আসেনা।
এই যে গোটা বিশ্বে এতো গুলো সন্ত্রাস হামলা হচ্ছে আর তার সাথে কোন না কোন ইসলামী সংগঠনের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে, এটা জেনে সাধারণ মুসলমানদের মাথা হেঁট হয়ে যায়। তারা একঘরে করতে চায় ওই শয়তানদের যারা ইসলামকে ঢাল করে এসব করে। গড়পড়তা মুসলমান সত্যি চায় এদেরকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যেতে কিন্তু গড়পড়তা মুসলমানকে কালাশনিকভ বা চাপাতির যোগান কোন রাষ্ট্র বা সর্বশক্তিমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেয় না। জানেন নিশ্চয়ই ওসামা বিন লাদেনকে টাকা, ক্ষমতা আর অস্ত্র প্রদান করে বাঘ বানিয়েছিল আমেরিকাই।
মুসলমানরা নিজেরা ও এই তোষণের ধ্যাষ্টামিটা নিতে পারেনা। গরিব মুসলমানেরা কিছু বলে না কারণ কার না pampered হতে ভালো লাগে। এরা গরিবদের তোষণ করা হলে বোধহয় বেশি খুশি হতো। কারণ কোন রাষ্ট্র যদি নির্লজ্জভাবে গরিবের তোষণ করে বুঝতে হবে সেই রাষ্ট্র ঝলমলে এক ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে৷
আমরা আসলে নিজেদের মধ্যেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ওই যে বৃত্ত তাতেই খুশী। এর পরে যা কিছু আমরা guess guess খেলি। কেউ জয় শ্রী রাম বলছে মানে সে সাচ্চা হিন্দু। ওই বাড়িতে যে খ্রিস্টান সে নিশ্চিত রাতে খাওয়ার পরে মাডপুডিং খায় আর ওই যে বৌদ্ধ সে নিশ্চয়ই বাড়িতে লামাদের মতো সাজপোশাক পরে। মুসলমানদের নিয়ে তো আমাদের মিথের অভাব নেই। এদের জীবনে কোন সাবরিনা নেই, ইয়াসমিন নেই, জুঁই ফুলের সুগন্ধ নেই। সত্যিই তো বিজেপি নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ নেই।
আসলে শেষমেশ জাত ধর্ম নিয়ে চুলোচুলি হয়ে গেলে ওই লালন সাঁই আর ঠাকুর রবীন্দ্রনাথই বেঁচে থাকে। বাকি যা তা জাতের নামে বজ্জাতি করবে বলে বসে। আপনি ঠিক করুন কোন ধরনের ভালোবাসাটা আপন করবেন। মুসলমানদের বাড়িতে গোস্ত খেয়ে ও তাদের পাড়াতে হেলমেট না পরার প্রবনতাকে কটাক্ষ করে না স্রেফ ভোটমারানি সেজে সুভানাল্লা ইনসাল্লাহ বলে মৌলবাদীদের আস্কারা দিয়ে।
"তোমার ঘরে বাস করে কারা
ও মন জানো না, তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা, মন জানো না"। তোমরা সত্যি জানো না তোমার ঘরের বাসিন্দাদের। ভাবো হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানই সব। ভাবো ইনসাল্লাহ বা জয় শ্রী রাম বললেই সাত খুন মাফ৷ ওদিকে বর্গী আসছে দেশে আর তোমরা ওদের ফাঁদে পা দিয়ে দাঙ্গা করছো। জাপ্টে থাকো। একে অপরের উদযাপনের ভাগিদার হও। শ্যামল কাকু আর সেলিম চাচা বেঁচে থাক। সাবরিনা আর সুজন প্রেম পাক।
ওই যে কথায় কথায় রাম কে নাম বা খুদার কসম খাও নাপাক কারবারি করার আগে, সত্যি বাঁচাবে তো রাম বা রামজান?
©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment