কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Wednesday, November 14, 2018

কবরখানার গাছ

| কবরখানার গাছ |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

কংক্রিটের বিশাল বিশাল ফ্ল্যাটবাড়ি ঘেরা দীর্ঘ একখানা কবরখানা। যতদূর চোখ যায় নাম গোত্র ফলকহীন এক একটা কবর। এ সব কবর দেখে সনাক্ত করা যাবে না কার আদরে কোন শরীর দফন করা আছে। এই কবরখানায় গাছ গাছালি আছে। মৃতের পরিবার চারা লাগিয়ে যায় বড় ভালোবেসে। ও দেখেই শরীর চেনে পরিবার। ও গাছেই প্রাণ রেখে যায় আব্বুর, আম্মির, ফুফার, দাদির। নতুন হাওয়া আসে চারপাশে, ওটাও তো প্রাণ, নতুন নিশ্বাস। কত না ফিসফাস, ফোঁপানি, অনুযোগ অগোছালো পরে থাকে গাছের ছায়ায়। কবরের জন্য।

বসন্তে এরকমই কোন সাতমহলা থেকে দেখা দৃশ্য দাঁড়িয়ে থাকে দেখার অপেক্ষায়। ওখানে মৃতদেহ সযত্নে নরম মাটি চাপা দেওয়া, আতর চাপা দেওয়া, ফুল, পুরনো দারিদ্র্য স্মৃতি চাপা দেওয়া। বড় অনাদরে। ওখানে মাটি জোটে, ফলক জোটেনা, এপিটাফ নৈব নৈবচ!

এখন বসন্ত এই শহর জুরে। রোদ্দুর জ্বলা দুপুরবেলা বসন্ত হেঁটে যায় গান গাইতে গাইতে সজনে গাছের নিচে যুবতী ছায়ায়। কবরখানার ছায়ায়। ওখানে আরো গাছ আছে। নাম জানিনা। তবে মাথা উঁচু করে আছে ওই ফ্ল্যাটবাড়ি গুলোর সাথে পাল্লা দিতে।

রোববারের এই অলস দুপুরবেলা গুলোয় এখানে ভেড়ার পাল ঘাস খেতে আসে। কবরের শক্ত পাথরের নিচে যে নরম ঘাস । ফ্যাকাশে সবুজ।  কাঁচা বাতাবীর মতো সবুজ ঘাস, তার সুঘ্রাণ যেটুকু ছিল তা মৃত শরীর শুষে নিয়েছে তার হাড়ে মজ্জায়, করোটিতে। এখন এখানে প্রায়মৃত কিছু সবুজ। এখানে কেউ রোজ জল দিতে আসেনা গোড়ায়।

ভেড়ার দল কিলবিল করে ঘাস খেয়ে যায়। কবরের এ কোন ও কোন থেকে যতটুকু সবুজ খেয়ে নেওয়া যায় পেট ভরে। ফলকহীন, নামহীন সবুজ। এরা সব্বাই কুরেশিদের ভেড়া। কুরেশিদের মাংসের দোকান আছে। জবাই করে রোজ তিন খানা খাসি বা ভেড়া। অনেকটা মাংস গোটা দিন ধরে আয়েস করে বিক্রি করে।

ভেড়া গুলোকে প্রতি রোববার এই কবরখানায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ঘন্টা দেড়েকে পেট পুরে ঘাস খায় কবরখানার, কোতল হোওয়ার আগে।

সিরিয়াতে ও তো এরকম নাম ফলকহীন অনেক কবর আছে। ওখানে গাছ পোতা হয়? কাশ্মীরে ও তো কবর আছে। ওখানে বরফের চারপাশে ঘাস দেখা যায়? আর রাষ্ট্রসংঘে? ওখানে শুনেছি অনেক ভেড়া খেলা করে। প্যালেস্টাইনে ও সবুজ আছে বোধহয়। ওখানেও কি ভেড়া খোঁজ নিয়ে যায় কবরের?

ভেড়াগুলোকে কেউ বারন করে না আদরের গাছ গুলোকে না খেতে। গাছ খেয়ে ওদের তন্দুরস্তি আসে, পুষ্টি পায় ওরা জুম্মাবারে জবাই হবার আগে। কোন গাছের ছায়ায়।

ভেড়াদের কবর হয় না। কোতল হয়।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Monday, November 5, 2018

ভোডাফোন থেকে বলছি

| ভোডাফোন থেকে বলছি |

#অনুগল্প

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আমরা যারা পুজোয় কলকাতার অনেক দূরে  ভিনদেশের কোন উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির একটা খোপ দিয়ে শরৎকালের আকাশ দেখি আর রাতে ঝুল বারান্দায় সিগারেট খেতে খেতে দেখি তারা, তারা ও পুজো পুজো গন্ধ পাই। ধুলো মাখা গোবলয়ের হাওয়াতে ও পাড়ার ছাতিমফুলের গন্ধ আসে।

এ সব সময় মনে হয় নীল রঙে ডুবিয়ে আকাশটাকে শুকোতে দিয়েছে কেউ। আর সেই আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো টুকরো টুকরো ধবধবে সাদা মেঘ কলকাতা থেকে এনে লাগানো। ওসব মেঘের পাশ দিয়েই মা তাঁর ছেলেপুলেকে নিয়ে ফেরে আমাদের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। আমরা যারা প্রবাসে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত, তারা ও ঘরে ফিরি ওরকমই কোন মেঘ দেখতে দেখতে উড়োজাহাজ চেপে।

আজ সকালটা বড্ড বেশি দুর্গাপুজোর মতো। হাওয়া ও দিচ্ছে মিঠে। যেমনটা ষষ্ঠীর সকালে দেয়৷ সদ্য ঢাকে কাঠি পরেছে আর ধুনুচির ওম মাখানো একটা সকাল নিয়ে এসেছে রোদ৷ এসব সকালে পুজোর সোনালি স্মৃতির গান শুনতে হয় পাড়ার মাইকে। ওদিকে ছাদে বইগুলো আর হারমোনিয়ামটা রোদে দিতে হবে। রান্নাঘরে চাল গুঁড়িয়ে চালের নাড়ু চিনির পাকে সুজির নাড়ু আর কুচো নিমকি তৈরির আয়োজন হবে।

খবরের কাগজওয়ালা অন্যদিনের মতো কাগজ গ্রিলে গুঁজে দিয়ে পালায় না এসব দিনে। যত্ন করে পুজোসংখ্যা নিয়ে আসে। ওগুলো ধরে নাকের কাছে নিলে টাইমমেশিনের টিকিট কাটা যায়। এক একটা পুজোসংখ্যায় এক একটা প্রচ্ছদ। কোনটা সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, কোনওটায় সুধীর মৈত্র, কৃষ্ণেন্দু চাকী বা অনুপ রায়ের। এদের প্রত্যেককে বুকে আগলে কলিং বেল বাজায় কাগজওয়ালা দাদা । একবার দুবার বেশ কয়েকবার। ঘুম ভেঙে মোবাইল ফোনে কলিং বেলের রিংটোন শুনি।

- হ্যালো?

- নমস্কার আমি ভোডাফোন থেকে উমা কথা বলছি৷ আপনি এই নম্বরে নেটওয়ার্ক পোর্ট করিয়েছেন স্যার?

- না আমি সার্কেল চেঞ্জ করিয়েছি।

- ওঃ! আপনি এখন কোথায় আছেন?

- দিল্লি।

- স্যার, আপনি ফিরবেন না?

কিছু কিছু নিস্তব্ধতা কখনোই সম্মতির কারন হয়না। ওর শরীর জুরে লেগে থাকে 'ফিরবো বললে ফেরা যায় নাকি"র মুখরা। ও গান বোধহয় ভোডাফোন কলারটিউনে ব্যবহার করতে দেয় না। দিল্লির এই ফ্ল্যাটের বাইরে যেমন কোন খবরের কাগজওয়ালা শারদ সংখ্যা হাতে বেল বাজায় না।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Saturday, November 3, 2018

রয়্যাল বেঙ্গল লজ্জা, আত্মবিস্মৃত টাইগারদের কিসসা ও ভোট

| রয়্যাল বেঙ্গল লজ্জা, আত্মবিস্মৃত টাইগারদের কিসসা ও ভোট |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

অবাস্তব তবু ধরে নিন সলমান খান দুম করে একটা বাইট দিয়ে দিল সর্বভারতীয় মিডিয়ায় যে তিনি মুসলমান তাই তার পিছনে ২০ বছর পর ও লাগা হচ্ছে আর যারা আদিবাসী তারা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার মেরে ও বহাল তবিয়ৎ। এতটা পড়ে আলবাত নড়েছেন চড়েছেন।

একটা খেলা খেলি চলুন। ধরে নিন শ্রী চৈতন্যদেব, রামকৃষ্ণদেব, বিবেকানন্দ, লালন সাঁই, রবি ঠাকুর, মাইকেল, সত্যজিৎ, ঋত্বিক, অমর্ত্য, সৌরভ নামের আইকনেরা সব ভ্যানিশ হয়ে গেল। বাঙালি যাদের নিয়ে দিন রাত গৌরবের ঢেকুর তোলে তারা কেউ নেই, বা বাংলায় জন্মায়ই নি। এবার কি হবে? কাকে নিয়ে  মাথায় তুলে নাচবে বাঙালি? অনুব্রত মন্ডল না সুদীপ্ত সেন?

বাংলা এককালে ছিল ভারতের রাজধানী। কলকাতা ছিল বাণিজ্য ও সংস্কৃতি রাজধানী, সাহেবদের হাতে বানানো মেট্রো সিটি। প্রথম শিল্প, সাহেবিয়ানা, উন্নয়ন, ভূমি আন্দোলন, ট্রাম, মেট্রো। তারপর সব গেল। আন্তর্জাতিক মানের যা কিছু তা সব গেল। বাকিরা এগোতে থাকলো। কেউ আর বেঙ্গল বা বাংলা শব্দটা নিজের সাথে যুক্ত করে না। কেউ না। ওই এক টাইগার বাদে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ম্যাজেস্টিক এক জন্তু যে এখনো নিজের নামের সাথে বেঙ্গল শব্দটা রেখে দিয়েছে। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে মাত্র ৩০০০-এর মতো আছে। ইদানীং একটা কমলো। সৌজন্যে বাংলা থুড়ি বেঙ্গল।

বিলেতে অরণ্য বিশারদেরা বলাবলি করে, একটা তাজমহল ভেঙে গেলেও তা হয়তো আবার বানানো যাবে। কিন্তু সুন্দরবন,তার বাঘ, অন্য জন্তুজানোয়ার, ম্যানগ্রোভ, সংস্কৃতি একবার খোয়া গেলে, কোন প্রযুক্তি দিয়েই তা আবার তৈরি করা সম্ভব নয়। আত্মবিস্মৃত বাঙালি সেদিকেই এগোচ্ছে। পিছনের দিকে এগোতে ভালোবাসে মিনিবাস চড়া বাঙালি। "বাঘের বাচ্চা" বাঙালি।

আবার খেলাটা খেলি চলুন। ধরুন, আপনার সমস্ত টাকাকড়ি ভ্যানিস। ঘরে অনেকটা রেশন মজুদ। এবার রোজ দেখছেন তা অনেকটা করে কমছে। আপনি কিন্তু খাচ্ছেন না। কিন্তু কমছে। আপনার যে হলঘরটা ছিল সেটাও আর নেই। খাটে কেউ বা কারা স্টিলের বিম লাগিয়ে দিয়েছে। শুতে পারছেন না। মেঝেতে গুচ্ছের প্লাস্টিক, দুর্গন্ধময় অচেনা গন্ধ, বিকট আওয়াজ যাতে আপনি অভ্যস্ত নন। আরো আছে। ধরুন এ সবের জ্বালায় আপনাকে একটা সুটকেস নিয়ে আজ এ বাড়ি কাল ও বাড়ি করতে হচ্ছে একলা। আর যেখানেই যাচ্ছেন, ওখানকার লোকেরা ভাবছে সন্ত্রাসবাদী বা পাগল। আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তীর পাথর ছুঁড়ছে, দামামা বাজাচ্ছে। এ সব হচ্ছে কিন্তু আপনাকে মারতে। আপনি নিজের খাটেই শুয়ে আছেন, কারো অনিষ্ট করছেন না তবু। আপনাকে শিকার একটা উৎসবে পরিনত। ভাবছেন আপনার দোষ কি ছিল? আবার পুরো প্যারা টা পড়ে নিচের প্যারাতে আসুন। ময়ূখ বুঝিয়ে দিচ্ছে।

আপনাকে যে পরিস্থিতি তে ফেলা হল, ঠিক এক পরিস্থিতি তে বাঘেদের ফেলা হচ্ছে। লালগড়ের নিহত বাঘটিকে ফেলা হয়েছিল বা অন্যন্য বন্যপ্রাণীদের। ক্রমশ নিজেদের বিচরণক্ষেত্র কমে যাচ্ছে নগরায়নের ফলে। যথেচ্ছ বন কাটা, চোরাচালান, ইকো সিস্টেমের পরিবর্তন। বাঘেদের খাওয়ার কমে আসছে একদিকে আর অন্যদিকে জমছে প্লাস্টিক। এক জঙ্গল থেকে আর এক জঙ্গল মাইগ্রেট করছে এরা। বাধ্য হচ্ছে। তারপর এক অদ্ভুত দানবীয় খেলায় মেতে উঠছি আমরা যারা নিজেদের হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স বলি। যারা উন্নত। যারা ভোটের আসলে তোষণ করতে ভালোবাসি।

সলমান একখানা কৃষ্ণসার শিকার করেছিল। খারাপ করেছিল। কিন্তু গোটা দেশে এই ২০ বছরে প্রায় ডজনখানেক কৃষ্ণসার মারা হয়েছে প্রাচীন শিকার উৎসবের নামে। চোরাচালান হয়েছে গন্ডার, হাতি, হরিন এমনকি বাঘ ও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক মানুষেরা যুক্ত। কোন এফআইআর বা কনভিকশন হয়নি। করা হয়নি কারণ প্রশাসন শিথিল ছিল। বাঘ মরেছে বলে অন্য বাঘেদের আন্দোলন হয় না, তারা থানায় ঢুকে কাঁমড়ায় না, ভোট বয়কটের হুমকি দেয়না, তাই দোষী মানুষদের শাস্তি ও নেই।

বাঙালি নিজেকে বাঘের বাচ্চা বলতে আত্মিক সুখ পায়। কারণ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। নববর্ষ মঙ্গল শোভাযাত্রা গুলোয় দেখি বাঘের মুখোশ, পটের ওপর ডোরাকাটা বেঙ্গল টাইগার। গদগদ মুখ। আমাগো বাঘমামা এডা। আর সেই অহমিকার বাঘ খুন হলে ও আত্মবিস্মৃত বাঙালি বাংলা বনধ করে না। ট্রেন আটকে দেয় না, ব্যারিকেড ভেঙে দেয় না। স্বাভাবিক।  এই রাজ্যেই তো ভারীশিল্প রাজ্যছাড়া করতে পারলে উল্লাস হয়। দেবীর জন্ম হয়। অন্য রাজ্যে শিল্প গেলে শোকসভা হয়।

ভাগ্যিস WWF  টুথলেস টাইগার নয়তো উচিৎ ছিল  রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার থেকে বেঙ্গল শব্দটা বাদ দিয়ে দেওয়া। রাজ্য ও ভারতের বনদপ্তরকে ও লজ্জা দেওয়া জরুরি।

আত্মবিস্মৃত বাঘের বাচ্চারা পয়লা বৈশাখী বাঘের মুখোশে, উমাপ্রসাদ মৈত্রের 'এক যে ছিল বাঘ' ছবিতে, অনুপ ঘোষালের 'পায়ে পরি বাঘ মামা' গানে, বাঘবন্দি খেলাতেই খুশী থাক। ভোট উৎসবেই খুশী থাক। এক সুন্দরবন সমান গভীর রয়্যাল বেঙ্গল লজ্জা নিয়ে।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Tuesday, October 30, 2018

উপহার

| উপহার |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ওই যে ওই পাহাড়খানা দেখছেন, ওটা বোগলদাবা করে বাড়ি নিয়ে গেলে কেমন হয়? শিশিরভেজা ঘাস থাকবে, নরমমাটি থাকবে নিয়মিত ধসের অপেক্ষায়, পায়ের ছাপ থাকবে কোন বন্যপ্রাণীর বা বিষ্ঠা ও থাকতে পারে৷ আমার জামায় এসবের দাগ ও থাকতে পারে। ছাড়া জামা নজর এলে মেঘ জমতে পারে ওর মুখে।

পাহাড়টার ভালোবাসা ছিল শুনেছি এক নদীর সাথে। সেই কোন সুদূর হিমালয়ের থেকে নদীটা পাহাড়কে দেখবে বলে এসেছিল একবার৷ তারপর রোজ আসতো, প্রতি দিন, অনেক রাত ধরে আসতো।কত জন্ম ধরে ছাপ ছেড়ে যেত। শব্দ করতো গভীর কোন রাতে ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল। ওর শরীরে লেপে যেত আজন্ম পাহাড়ের মাটি, খুচরো অভিমানের পাথর, জ্যোৎস্না ভরা দাম্পত্য রাত, হতাশার কোন বৃদ্ধ গাছের ছাল- জন্মজন্মান্তর ধরে।

নদীটা পাহাড়ের জন্য রোজ একটা করে ভেসে যাওয়া ফুল রেখে যেত। ওই ফুলের কোন নাম নেই। হিমালয়ের কোন বরফের মাঝে নাকি বারো বছর অন্তর ফোটে। নদী যত্ন করে নিচে নিয়ে আসতো এরকমই কিছু ফুল। এভাবে অনেক অনেক ফুল জমতে জমতে একদিন গোটা পাহাড়টা মিষ্টি গন্ধ ছাড়তে শুরু করলো। পাখী আসতে লাগলো, প্রজাপতি, ঈগল, সাধু সন্তের দল, আমরা।

পাহাড় আর নদীর মিশে যাওয়া কোন ক্যানভাসে মেঘ জমেছিল সেদিন। আমরা আসার পর বৃষ্টি ও হল অল্প। আমাদের লাল ভারী পছন্দের রঙ। সেদিন ও লাল রঙ কেবল আমরা নিয়ে এসেছিলাম অনেক দূর থেকে। পাহাড় সেদিন জংলা সবুজ পড়েছিল আর নদী ধুসর গোধূলি। মেঘের ক্যানভাসের অনেকটা আমরা রঙিন করে দিয়েছিলাম। ওপরের ওই সাদাটুকু বাদে। সাদা অংশ ও বেরঙিন পাহাড় নদীর গল্পে সুগন্ধী ফুল এঁকে যায়। নদীতে পা ভেজাতে গেলে ফুল রেখে যায়, প্রেমিকার জন্য।

আমার আর পাহাড় নিয়ে ফেরা হয়নি৷ বৃষ্টি ভেজা পথের বাঁকে ওর হাত ধরতে গিয়ে দেখলাম একটা ভেজা ফুলের গন্ধ। আমার পকেটে কখন যেন নুড়িপাথর রেখে দিয়েছে কে।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Thursday, September 13, 2018

আপনবাপনদিল্লিযাপন - পর্ব ৩

#আপনবাপনদিল্লিযাপন - পর্ব ৩

| হুজুগে পাততাড়ি গোটায় ঝড়, পানশে ঝাপ্টা with 49 others |

----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

আমরা যারা মহানগর নামক কংক্রিট জঙ্গলে থাকি। আমরা যারা উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির একটা কোন খোপ দিয়ে আকাশ দেখি আর রাতে ঝুল বারান্দায় সিগারেট খেতে খেতে দেখি তারা। আমরা যারা বাজারের থোলে হাতে অনলাইন আনাজপাতি কিনি আর ইনস্টাগ্রামে ভিন্ডি আলুর ছবি পোষ্ট করি রোজ। আমরা যারা সমস্বরে টুইট করে ট্রেন্ড করি ঝড়, তারা বড্ড হ্যাংলাথেরিয়ামে ভুগি। এ অসুখ ক্রনিক অসুখ। এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স এর ফলে কঠিন এ রোগ সারানো।

প্রবল ঝড় ধেয়ে আসছে বলে দেশের অর্ধেক রাজ্যেই সতর্কতা জারি করেছিল আবহাওয়া দপ্তর। সরকারি হাওয়া বাবুরা ১০০র নিচে গতি ভাবতেই পারছিল না। বেসরকারি পেশাদারেরা ৭০ এ। চ্যানেলে ওয়েবে কাউন্টডাউন শুরু আছড়ে পরার। শট ডিভিশন হয়ে গেছে। ফ্রেমের বাঁদিকে ভাঙা ঘর নিশ্চই থাকবে, সেন্টারে উপড়ে পরেছে গাছ কোন দামি গাড়ির চালে, এদিক ওদিক পাতা ছড়ানো পিচের রাস্তায়, যত্র তত্র প্লাস্টিক পরে থাকবে বা ভাগ্য সদয় হলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া লাশ। আর অনেক অনেক ঝোড়ো হাওয়ার স্টক শট। ব্রেকিং নিউজ বানিয়ে রাখার অপেক্ষা ছিল।

দিল্লির চারপাশের রাজ্য দিয়ে ঝড় ধেয়ে আসছে সন্ধে থেকে। ছবি ঢুকছে, খবর ঢুকছে। এ যেন Marvel series এর Thanos এর এন্ট্রি। রুদ্ধশ্বাস প্রতিক্ষা। ধুলোর ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যাবে নয়ডা-দিল্লি-গুরুগ্রাম। সিনেমায় যেমনটি হয়।

আমি যদ্দিন আর নিউজ চ্যানেলে কাজ করবো, তদ্দিনই সম্ভবত প্রাইমটাইমের খাঁড়া মাথায় ঝুলবে। তদ্দিনই বোধহয় দুপুরবেলা থেকে মধ্যরাতের এই শিফট থাকবে। আজ ও যেমনটি ছিল। আমি নিউজরুমে, গিন্নী ফ্ল্যাটে। সেই দুপুর থেকে ঘোষণা করে দিয়েছি ঘরোয়া ওয়াটসাপ গ্রুপ গুলোতে সাবধানে থেকো হে। ঝড় বিকেলে আছড়ে পরবে। কলকাতাতে ও ঘন ঘন ফোন করে খোঁজ নিচ্ছি খবরের সত্যতা মিললো কিনা।

এ ঝড় ওই কলেজের সুন্দরী জুনিয়ারটির মত। চিনচিনে ব্যাথা দিয়ে যাবে ওড়নার ফাঁক দিয়ে, ধরা দেবে না। বিকেল বলে সন্ধে হল, সন্ধে হল রাত, এখনো কুমির এলো না। আশা শেষ। হাওয়া বাবুদের প্রতি ভক্তি শেষ। ঝড়ের মত গুরুগম্ভীর একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ক্রমশ মনে হচ্ছে রাইটার্স বিল্ডিং এ আটকে থাকা পেনশনভোগীর ফাইলের মত। আসবে কিন্তু আসছে না।

বউকে ইতিমধ্যে তিনবার বলে দিয়েছি গোটা ফ্ল্যাটের দরজা জানালা ভিতর থেকে সিল করে দিয়ে চুপটি করে ঝড় দেখতে। প্রথম দেখা দিল্লির ধুলো ঝড়। ধুলো কুন্ডলী পাকিয়ে উপরে উঠে যাবে।  ওই যে যেসব ধুলোর মধ্যে থেকে লর্ড ভলডেমর্ট জেগে ওঠে। এরপর বিদ্যুৎ চমকাবে। হয়তো বা বৃষ্টি হবে এ রুক্ষতায়।

দূর ছাই। কোথাও কিচ্ছু নেই। প্রায় সারে দশটা নাগাদ খবর এলো হরিয়ানার রোহতাকে ঝড় হচ্ছে। সাথে বৃষ্টির ঝাপটা। রোহতাক থেকে দিল্লি খুব দূরে নয়। আবার আশায় বুক বাঁধলো পাতলা হয়ে যাওয়া নিউজরুম। নিশ্চই এবার এন্টেনা উপড়ে যাবে। সমস্ত হোর্ডিং দুমড়ে মুচড়ে যাবে। ধুলো ঢুকে আসবে ক্যামেরার লেন্সে। সে এক অদ্ভুত সেডিস্টিক প্লেজার। ধ্বংস ধরা থাকবে । মধ্যরাতে উত্তেজনা হবে টিভির পর্দা জুরে।

মানুষ যত সভ্য হচ্ছে তত তার অসভ্যতা, আদেখলাপনা বাড়ছে। যে ভাবে মানুষের বনভোজনের বা দারুণ দাপাদাপির কারণে বন্যপ্রাণী আর সচারচর আর দেখা যায় চেনা বনে, সেখাবে প্রাকৃতিক ঘটনাচক্র ও নিজের দিক পরিবর্তন করছে হয়তো মানুষের এই হ্যাংলামোতে।

সামান্য হাওয়া দিলো কি দিলো না, ছেয়ে দিলাম টুইটার ফেসবুক, চ্যানেলের টিকারে "আছড়ে পরলো", "আশংকা সত্যি হল", "মধ্যরাতে সাইক্লোনের কড়া নাড়া" ইত্যাদিতে।

১২ ঘন্টায় ৩০০ মিমি বৃষ্টিপাতেই বন্যা আখ্যা দেওয়া হয় মুম্বাই এ। বৃষ্টি ফোঁটা মাটি স্পর্শ করলো কি করলো না স্বস্তি বলা হয় হেডলাইনে। আজ ৬০ কিমি এ বয়ে চলা হাওয়াকেই ঝড় বলে চালিয়ে দিলাম। মজা পেলাম টুইটার ট্রেন্ডে।

এসব ঝড়ের শেষে ম্যাক্সি পড়ে কুকুর নিয়ে ও ফ্ল্যাটের মিসেস চৌবের খোঁজ নিয়ে হয়। ঝড়ে কোন ঝাড়বাতির কাঁচ নষ্ট হল কিনা। এসব ঝড়ের শেষে খালি গায়ে ফিউজ ঠিকঠাক আছে কিনা, গাড়িটা অক্ষত আছে কিনা দেখতে যেতে হয়।

আমরা মহানগর নামক কংক্রিট জঙ্গলে থাকি। আমরা উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির একটা কোন খোপ দিয়ে আকাশ দেখি আর রাতে ঝুল বারান্দায় সিগারেট খেতে খেতে দেখি তারা। আমরা বাজারের থোলে হাতে অনলাইন আনাজপাতি কিনি আর ইনস্টাগ্রামে ভিন্ডি আলুর ছবি পোষ্ট করি রোজ। আমরা সমস্বরে টুইট করে ট্রেন্ড করি ঝড়।

আমাদের বয়েই গেল ঝড়ের দাপটে ত্রিপূরার কোন অখ্যাত গ্রামে ১০জন মারা গেলে। আমাদের বয়েই গেল গাছ পরে কোন নাইটগার্ড আহত হলে। আমাদের বয়েই গেল শয়ে শয়ে ঝুপড়ি ঝড়ে উড়ে গেলে। খোলা আকাশের নিচে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, দশ মাসের শিশু, আবাল বৃদ্ধ বনিতা রাত কাটালে।

মিঠে এসির হাওয়া, কাঁচের ওপারে সোঁ সোঁ শব্দ, টুইটারে,ফেসবুকে ঝোড়ো আপডেট আর টিভিতে একরাশ উতকন্ঠা নিয়ে কোন সংবাদপাঠিকা যতক্ষণ আমাদের শহুরে হ্যাংলাপনার ঝাপ্টা দিয়ে যাচ্ছে, আমরা ততক্ষণ সেফ with 49 others।

©---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Monday, August 20, 2018

পরশী দেশের পাক ইরাদা, নাপাক করবে বিগ ব্রাদার

| পরশী দেশের পাক ইরাদা, নাপাক করবে বিগ ব্রাদার |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ভাষন শুনছিলাম লাইভ স্ট্রিমিং এ৷ পুরুষমানুষ নাকি গ্রেসফুলি বৃদ্ধ হলে তার আকর্ষণ দ্বিগুণ বাড়ে। ইনি  তো বাইশ গজের মতোই এখানে এই রতিভূবনের ও ক্যাপ্টেন। কত যে পাকিস্তানি আম্মির বুকে চিনচিন ব্যাথা বাড়লো আজ টিভিতে ওকে দেখে। ছেষট্টি বছর বয়সে হাফ রিম চশমা পরে বসলেন কাগজ হাতে।

মেপে মেপে একঘন্টার ভাসন। তার মূল প্রতিপাদ্য নয়া পাকিস্তানের স্বপ্ন। আগেই বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ব্যবহার করবেন না। আজ বললেন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত করবেন৷

ওর বক্তৃতা শুনে জানলাম, ওদেশে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ৫২৪জন মানুষ কর্মরত। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের জন্য ৮০টি গাড়ি বরাদ্দ আর ৩৩টি বুলেট প্রুফ ভ্যান মজুত ছিল। কাপ্তান সাহাব প্রথমদিনেই সিক্সার মেরে ঘোষণা করলেন, দুটো বুলেট প্রুফ গাড়ি আর দুজন কর্মী রাখবেন নিজের ব্যবহারের জন্য৷ বাকি সব নিলাম করে বিক্রি করবেন। সেই টাকা শিক্ষাখাতে ব্যবহার হবে৷

এমনিতে এদেশে ও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সাংসদ, মন্ত্রীদের পাল্লায় সব প্রাসাদ বা সরকারি বাংলো। পাঁচ কামরা ছয় কামরার সব লুট্যিয়ান স্থাপত্য।  এরপর আছে রাজ্যে রাজ্যে রাজভবন। পাখা, আলো, জল, গাড়ি, প্রজা, প্রহরী সবকিছু ট্যাক্স এর টাকায়। উঠিয়ে দেওয়া যায় কিনা জানা নেই কিন্তু একবার নাকি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সব সাংসদ বাংলো মেরামত করে আরো ঘর বানানোর। যাতে আরো সাংসদের থাকার জায়গা হয়। হোটেলে রাখতে না হয়। অবশ্যই মানা হয়নি৷

খান সাহেব আরো বললেন, দেশের মাদ্রাসাগুলোকে আধুনিক করে তুলবেন। ওখান থেকে যাতে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার উঠে আসতে পারে। এ সূত্রে জানিয়ে রাখি, ২৬/১১ র কাসাব ও অন্যান্যদের মাথা খাওয়া শুরু হয় এক মাদ্রাসা থেকেই। হাফিজ সঈদ ও মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় জ্ঞান বিতরণ করে বেড়ান৷ তবে বলছি না সব মাদ্রাসাই সন্ত্রাসীদের আঁতুড়ঘর। এসব বললে এ দেশের অনেকে গোঁসা করবে। নাগপুরে চলে যাওয়ার ও দাওয়াই দিতে পারে৷

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পাকিস্তানিদের কাছে ইমরান সরকার আপিল করবে পাকিস্তানের জন্য ডলার দিয়ে সাহায্য করতে৷ অর্থনীতি মজবুত করতে।

আর একটা কাজ ইমরান করবেন বলে বলেছেন, তা হলো পর্যটন শিল্পের উন্নতিসাধন। বিদেশীদের আশ্বস্ত করবেন, রিসোর্ট বানাবেন গোটা দেশ জুরে। এটা সত্যি পাকিস্তানের ভৌগলিক সৌন্দর্য্য বিশ্ব কেবল একভাগ দেখেছে৷ গিলগিট, বালটিস্থান, বালুচ, সিন্ধ, পাক অধিকৃত কাশ্মিরের অনেক জায়গা বিশ্বমানের টুরিস্ট স্পট হতে পারে সন্ত্রাসের ভয় না থাকলে।

এসবই পাক প্রস্তাব৷ স্বাধীনতার ৭৩ বছর বাদে যদি কোন রাষ্ট্রপ্রধান এগুলোর মন দেন, ভালো লাগবেই৷ কেজরিওয়ালকে নিয়ে ও অনেকে এরকম স্বপ্ন দেখেছিল৷ প্রথম দিন এসেই বলেছিলেন বিদ্যুৎ এর বিল হাফ করে দেবেন। করে ও ছিল। এ ও দুম করে করে দিতে পারে।

তবে টেনশনে আছি।একজন ম্যাভারিক শো ম্যান প্রধানমন্ত্রী যার পকেটে পরমানু বোমা রাখা আর চোখে উচ্চাশা৷ ক্ষমতায় এসেছে সেনার কাঁধে ভর করে আর তালিবানদের পিঠে চড়ে৷ এরকম একটা কম্বিনেশন প্রথমদিনেই একটা সমাজতান্ত্রিক আর জাতীয়তাবাদী মেশানো তেলচুপচুপে দেশত্ববোধ খাইয়ে দিয়েছে পাকিস্তানিদের৷ এর পর কি করবে তা আল্লাই জানে।

কিন্তু আমার ভয় অন্য। ইমরান যে গতিতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এসব নিয়ে, খোদা না খাস্তা যদি সত্যি নয়া পাকিস্তান টাইপ কিছু বানিয়ে ফেলেন যেখানে শান্তির দূতই কেবল পতাকা নাড়াবে আর ফরিস্তারা আঙুল, তবে এ পারে আমাদের কপালে দুঃখ আছে৷ অবিলম্বে চায়না, জাপান, বাংলাদেশ বা নিদেনপক্ষে ভুটানকে প্রধান শত্রু চিহ্নিত করতে হবে। রাবন মরলে কি আর রামের বীরগাঁথা জমে? রাম সাজতে হলে রাবন সাজাতে পারা দরকারি। না পারলে সব কিছু ঝোলা থেকে বেরিয়ে যাবে।

তখন কথায় কথায় পাকিস্তানের চক্রান্ত বলা যাবেনা। পাড়ার কলে জল না এলে ও পাকিস্তানের দোহাই দেওয়া যাবে না। দেশে মুদ্রাস্ফীতি হলে ও পাক সন্ত্রাস বলা যাবেনা। বিরোধী প্রশ্ন করলেও থামানো যাবেনা সীমান্তের সেন্টিমেন্ট দিয়ে৷ সে বড় অস্বস্তি হবে। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা না খেললে আর কি বা খেললাম। কুড়িয়ে বাড়িয়ে কিছু হিন্দু-মুসলিম খেলা আর ওই কাস্ট কাস্ট দ্বন্দ্ব।

অবশ্য জাঙ্গিয়ার যেরকম বুক পকেট হয়না, তৃতীয় বিশ্বের দেশের ও বিসামরিকীকরণের বিলাসিতা মানায় না। এতে বিগ ব্রাদারেরা রেগে যায়। আপনার শিক্ষার বাজেট যদি ফ্রান্স থেকে যুদ্ধবিমান কেনার বাজেটের বেশি হয়, বুঝতে হবে আপনি অপদার্থ। অবিলম্বে অস্ত্র বর্ষণ করে সরকার ফেলে দেওয়া শ্রেয়। ইজরাইল থেকে কেনা অস্ত্রের থেকে আপনি যদি বেশি উত্তেজিত হন, দেশের সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সমৃদ্ধি নিয়ে, সিরিয়াস রাষ্ট্রীয় প্রবলেম বাওয়া।

সুতরাং পেট্রো ডলার আর কালাশনিকভ চমকালেই ভারত পাক ঝলমলাবে৷ এ দুই দেশের ঝামেলা শেষ হওয়া মানে বৃহত্তর ক্ষতি। অস্ত্র বাজারে খাঁ খাঁ শূন্যতা। মুক্ত বাজারে তা কি করে বরদাস্ত করা যায় মিঁঞা!পরশী দেশের পাক ইরাদা থাকতেই পারে, নাপাক করবে বিগ ব্রাদার৷ আংকেল স্যামের দিব্বি লেকে রহেংগে পাকিস্তান।

অগত্যা কোক স্টুডিও দূর হাটাও। পুষে রাখা ঘৃণার দুশমনি যতাও। মাথায় রাখবেন,  আপনি যতই মনে মনে স্বপ্ন দেখেন না কেন শচীন আর শোয়েব আখতার একদিন একটিমে খেলবে আর সব বিশ্বকাপ অবিভক্ত ভারত জিতে নেবে, র‍্যাডক্লিফ সাহেব অন্যত্র ভেবেছিলেন ও সে মতো ৪৭ সালে পিচ ও বানিয়ে গেছিলেন। এবার আজীবন শত্রু শত্রু খেলুন।

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ