| এখন অন্ধকার, আশেপাশে সমস্ত ডাক্তার মৃত |
আপনার শিরা, উপশিরা, ধমনীতে জমতে থাকা রাগ, দারুণ রাগ ফেটে পরেছে ডাক্তারদের উপর। আর একটাও ডাক্তার পড়ে নেই। ডাক্তারদের ডেথ সার্টিফিকেট লেখার ডাক্তার নেই। মৃত ঘোষনা করবার ডাক্তার নেই। রক্ত লাগা স্টেথোস্কোপ এদিক ওদিক, একটা দুটো ফ্রিতে পাওয়া কলম আর দলা পাকানো রাগ ছড়িয়ে আছে।
এখন অন্ধকার। সমস্ত ডাক্তার মৃত। মৃত ডাক্তার এর দেহ তে সবচেয়ে আগে কোন বুম পৌছয় তা নিয়ে রসিকতা করার ডাক্তার বেঁচে নেই। হাসপাতাল এ পিকনিক করার খবর বেঁচে নেই। থাকার মধ্যে স্টেথোস্কোপ। কম্পন অনুভূত হচ্ছেনা। গন শত্রু মৃত।
রাজ্য জুরে এখন ডাক্তার এর গাম্ভারি মুখে কে কত ডেসিবল এ ওয়াক থুঃ করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। পান থেকে চুন খসলো কি মুখে কালি লাগিয়ে বুম খেদিয়ে ক্যালাও। পৃথিবীর সবচেয়ে বদ কাজটি এ যেন করেছে। ডাক্তারি পড়ে রোগ দেখার কাজ।
ভাবুন তো কিরকম ছাট জ্বলবে একটি ট্যাক্সি চালক এর যদি পিছনে বসা আরোহী ক্রমাগত আস্তে না জোরে, বাঁ দিকে বেশি কাটানো না গাড়ি থামানোর অর্ডার দিয়ে যায়। বা কোন সাংবাদিককে কোন কেরোসিন তেল বিক্রেতা বাতলে দেয় কোন লাইনটা আগে লিখতে হবে আর কোন জায়গা তে গিয়ে কিভাবে খবর করতে হবে। বা তার ক্যামেরাম্যান কে পাড়ার দাদা বোঝাতে আসে ওয়াইট ব্যালেন্স কি, কোথায় ফোকাস হবে।
ডাক্তারদের ও ছাট জ্বলে। জ্বলা ভালো কারন ততক্ষন তারা মানুষ থাকে। বাকি সময় ভগবান থাকে রোগ গায়েব হলেই।
সরকারের দারুন প্রচেষ্টা বেসরকারি হাসপাতালের বাঁদরামি রুখে দিয়ে। চিকিৎসক শিল্পপতিদের সবার সামনে লজ্জা দিয়ে। বিল পাশ করিয়ে। বিরোধীরা হ্যান করেংগা, ত্যান করেংগা, আসলে ঘোড়ার ডিম করেংগা করে আবার শীতঘুমে।
জনতা "জিতা রহে দিদি" হাঁকাচ্ছে। পাবলিক হেব্বি খুশী। মহিষাসুর হিসেবে কোন ডাক্তার কে রাখা হবে তাও ফিক্সড। গন্ডোগোল বাঁধলো এর পরে।
ইদানীংকালের ট্যাগিং পলিটিক্স অনুসারে শুরু হলো সমাজের বিবেক সাজা। পালা করে খোঁজা কোথায় অল্প সেলাই এদিক ওদিক হলো, কার ঠ্যাং কার গলায় গেল।
আমরা কমবেশি সবাই গনপেটাতে ভালোবাসি। একজন গর্ততে পরে থাকতে দেখলে, আচ্ছা করে পেছন, সামনে, খচ্চরের মত মেরে দিই। এতে খারাপ কিছু নেই। সবজান্তা কাকু ও এতে খারাপ কিছু দেখেননা। যেরকম বাম, ধর্মনিরপেক্ষ নেতার মেয়ে মুসলিম কে নিকা করলে চাপকানো জরুরী।
কোন দোষ না করলেও কিছু মানুষের মুখ দেখলেই খিস্তি করতে ইচ্ছে করেনা? আপিস ফেরত চোর ধরা পরলে ধোলাই দিতে? নিশ্চয়ই মাসের শেষ এদিকে বউ এর ক্যান্সার। ওদিকে মিউচুয়াল ফান্ড এর টাকা বাকি। এবার ভাবুন তো ডাক্তার এর মত মাখো মাখো একটা খিস্তি করার আইটেম পেলেন।
বিকৃত করিয়া মুখ গন পেটাইতে বড় সুখ। সরকার বুঝিলো ডিএ দেওয়ার চেয়ে জরুরি সাময়িক রিলিফ দেওয়া। সুতরাং দাও তাল ঠুকে। নেতাদের হাসপাতাল, চিটফান্ড মালিকের হাসপাতাল, প্রোমোটার এর হাসপাতাল, মোটা টাকা মন্ত্রীর ঘরে পাঠায় তার হাসপাতাল অথচ খিস্তি খাবে ডাক্তার।
উচ্চাশা থাকা কি অপরাধযোগ্য? একজন ডাক্তার যে ১০ বছরভর মাথা গুজে শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, তার উপর আরো দক্ষ হওয়ার শিক্ষা, ক্লিনিক এ রোগী দেখা শেখে, তার কি শখ থাকতে পারেনা রোগী দেখে একটি টয়োটা কেনার? একটি ফটকায় ব্যাবসা করা দালাল, ড্রেন তৈরির টাকা থেকে কাটমানি খাওয়া কাউন্সিলর ও স্কোরপিও চড়ে। আর ডাক্তার জ্যান্ত লোকের কল কব্জার ভার নিয়েছে।
যে ভাবে ডাক্তারদের ঘাড়ের উপর মিডিয়া, কানের কাছে মালিক আর রক্তচক্ষু নিয়ে সরকার দাঁড়িয়ে, ডাক্তার থাকবে তো? এরপর ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে থাকবে তো? থাকলেও যে সমস্ত শাখা যেরকম রেডিওলোজী, চোখ, চামড়া ইত্যাদি যেখানে ইমারজেন্সি নেই, মানুষ এর রোষ এর মুখে পরার সম্ভাবনা কম সেখানে ভিড় বারবেনা তো?
জিপি বা সার্জেন হতে হলে বাংলাতে এখন ডাকাবুকো হতে হবে, খিস্তি খাওয়া অভ্যাস করতে হবে, মিডিয়ার থেকে ডাক্তারি শিখতে হবে, লোকাল নেতার থেকে ওষুধ দেওয়া।
এগুলো না জানলে ডাক্তার হওয়া যাবে না। যে মানুষ সারা জীবন প্র্যাক্টিস না করে মেডিকাল কলেজ এর প্রফেসর হয়ে থেকে গেলেন, তার মাইনে ছাত্রের গাড়ির তেল এর খরচা। এর পরের প্রজন্ম ডাক্তার এর মাস্টার মশাই হতে চাইবে? গুটখা কোম্পানি কে হাসপাতাল তৈরি করার সুযোগ রাষ্ট্র দিয়েছে। আমরা সুবিধা করে দিচ্ছি। আর ডাক্তারদের বানিয়েছে মাইনে করা একজিকিউটিভ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত চেম্বার এ। যেখানে পান এ পিক ফুলের টব এ ফেলে মালিক বাহাদুর বলে:
"কি ছিড়ছো? হচ্চে না ডাক্তার। কয়েকটা ভেন্টিলেটর দাও।"
এন্টি-বায়োটিক ইমিউনিটির কথা শুনেছি। ভালো ভালো ডাক্তারদের ইমিউনিটির কথা কি ভেবেছি? প্রশ্ন করেছি কেন সব সরকারি হাসপাতাল এর বেহাল দশা? কটা মন্ত্রী সরকারি হাসপাতাল এ চিকিৎসা করান? কেন ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর ঠুঁটোজগন্নাথ হয়ে থাকবে? কেন মানুষ কে এটা ও বোঝানো হবেনা যে ডাক্তার ও রুগীর আত্মীয়র পারস্পারিক বিশ্বাস থাকা প্রধান প্রয়োজন আর দ্বিতীয় তাকে কাজটা করতে দেওয়া।
অনেক মন্ত্রী যেরকম গরীর মানুষ এর টাকা লুট করে জেলে যায়, অনেক সাংবাদিক যেরকম ফ্রি এর মদ, দামি উপহার নিয়ে বেনামি হাসপাতাল কে জনপ্রিয় আর জঘন্য ডাক্তার শিল্পপতি কে ভগবান এ রুপান্তরিত করে, ঠিক সেরকম অনেক চশমখোড় ডাক্তার আছে। এই আগাছা গুলো ছেটে ফেলতে হয়। গোটা গাছ কেটে সমস্যার সমাধান হয় না।
আসুন রোগ প্রতিরোধ করি এবার । রোগী কল্যাণে নিউজ প্রিন্ট প্রচুর খরচ হল।
-- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment