শ্রীজাত কে রাষ্ট্র নিরপত্তা দেবে। কবি লিখবে রাষ্ট্রীয় শোকগাথা। ভালো কথা। এটাই কাম্য। ঘটনা এখানে শেষ। কিন্তু কবির জন্য কেঁদে আকুল মানুষ এর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গা জ্বলাচ্ছেন কিছু শখের উদারপন্থী, গাঢ় গামবাট বামপন্থী।
এরা একজন কে শিক্ষা দিতে আর একজন কে পিটিয়ে দেয়। আকলাখ এর জন্য রাস্তায় নামলে সবাই মিলে গরু খেয়ে প্রমাণ করতে চায় তারা কত বড় লিবারেল। অথচ এরাই শুয়ার এর মাংস, গরুর মাংস একসাথে এক থালায় নিয়ে রাস্তায় প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। পাছে সংখ্যালঘুদের অসম্মান করা হয়। সমস্যাটা ঠিক এখান থেকেই জন্ম নেয়। লড়াইটা ছিল যার যা ইচ্ছে খাওয়ার, প্রার্থনা করার, বক্তব্য বলার। সেখান থেকে হয়ে যায় তোষণ।
শ্রীজাত একটা কবিতা লিখেছে। বেশ করেছে। অপার বীর্যশালী যোগী যদি মৃত যোনি ক্ষতবিক্ষত করে ত্রিশূল এ/ সে ত্রিশূলে কি তখনো পবিত্র ধর্ম লেগে থাকে? থাকে না বোধহয়। এবার এই কবিতা নিয়ে এক উচ্চিংড়ে হিন্দু সংহতি সমর্থক যদি একটা এফআইআর করে সেটা নাগরিক হিসেবে সে করতেই পারে। লড়াইটা ছিল এই উচ্চিংড়ের দলকে এক ঘরে করার। এরা যারা একাই হিন্দুদের দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে, তাদের জানানোর যে আমরাও হিন্দু তবে আমরা কবিকে ত্রিশূল নিয়ে বিদ্ধ করার ভয় দেখাই না। আমাদের মত মুসলিম মানুষের সংখ্যা ও কম না। যারা দুর্গা পুজোতে প্যান্ডেল এ আড্ডা জমায় আবার ইদ এর বিরিয়ানি রেঁধে বন্ধুদের কে নেমতন্ন করে খাওয়ায়। এ সংখ্যা কম নয়।
গন্ডগোল করে ফেলে সেই অতি লিবারেল, অতি ধর্মনিরপেক্ষর দল। এরা মুসলিমদের আসল দোস্ত বোঝাতে তেড়ে খিস্তি করে হিন্দু দেবদেবী কে। অশ্লীল দৃশ্য রচনা করে দেবতার রতিসুখ বা দেবীর শরীরের। এতে জামাতের মতাদর্শ আনন্দ পায় কিন্তু যারা ওই আমার আপনার মত হিন্দু অথবা মুসলিম কিন্তু রোজ পেটের জন্য লড়াইটাকে বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকি তারা আঘাত পায়, মাঝেমধ্যে রেগে ও যায়।
ভারতের মত দেশে ধর্ম বাদ দেওয়া কঠিন। রাশিয়াতে ধর্ম নিষিদ্ধ করার পরিবেশ হয়েছিল কিন্তু লেনিন ভগবান হয়ে গেছিল। আমরা সবাই অবলম্বন খুঁজি,কারন আমরা সবাই কমবেশি ভীতু।হিন্দুর-ও "ধর্মানুভূতি" থাকতে পারে। এটা মানতে শিখুন। ধর্মনিরপেক্ষতা ও তোষন এক জিনিস নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার লড়াই করতে গিয়ে বহু রক্ত ঝড়েছে কারন লড়াইটা কঠিন। কারোর ধর্মকে আঘাত না করে, তোষন না করে ঠান্ডা গলায় 'না' বলা সহজ নয়।
যদি সত্যি ধর্মনিরপেক্ষতার লড়াই এ সামিল হতে চান, তোষন বন্ধ করুন। কবির পাশে দাঁড়ান তবে দুর্গা-কে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে নয়। এতে বহু মানুষ আঘাত পেতে পারে। আরএসএস এটাই চায়। হিন্দু ভোট একত্রিত হোক, মুসলিম ভোট ভাগাভাগি হোক। এই ফর্মুলা উত্তর প্রদেশ এর। কিছু বামপন্থী বলে দাবি করা বৃদ্ধ গামবাট ও সবজান্তা তরুন ঠিক এটাই করছে অজান্তে। তাদের স্বপ্নে স্তালিন বলে গেছে কিনা জানা নেই যে হিন্দুদের খিস্তি করলেই মুসলিমদের কাছাকাছি হওয়া যায় না হে কাফের!
আসুন না, যেটা যার ভুল সেটা বলি। যদি মসজিদ ভেঙে দেওয়া হয় আসুন ঘেন্না করি একসাথে, যদি মন্দিরে গরুর মাংস ছুড়ে দেওয়া হয় সেটার ও নিন্দা করি। আমি এরকম বহু মানুষকে চিনি দুই বাংলায় যারা ধর্মকে অসম্মান না করেও এর গোঁড়ামির বিরুদ্ধতা করছে।
আসুন না দুই ধর্ম থেকেই হাত ধরি শপথ নিতে। কেউ যদি বেশী পায়, পাওয়ার হিসেব নাও কেন না অনেক লোক ভালো সব পায়না। লড়াইটা চাকরি পেতে, দু বেলা খেতে, পড়তে পাওয়ার জন্য হোক। মন্দির, মসজিদ তৈরি করলে শিল্প আসেনা। উন্নয়ন এর রথ যাত্রা কবে হবে এই পোড়া দেশে? কবে দাঙ্গা বাঁধবে বিশ্বমানের কারখানা, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প পেতে নিজের মাটিতে। দেখবেন প্রত্যেক কারখানা তখন মন্দির, মাজার হবে। ধর্ম হবে উন্নয়নের গতি। ত্রিশূল সামগ্রী।
--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ