মুম্বই শহরের রাত, রাস্তা, রোমাঞ্চ যে আহাম্মক একা পায়ে হেঁটে উপভোগ করেনি, তার অবিলম্বে 'দেশ' এ ফিরে যাওয়া উচিত। দেশ অর্থাৎ বিহার, ব্যারাকপুর, বনগাঁ কিংবা বিধানপল্লী।
রাত একটা সাতের স্লো লোকাল আসতে তখনো তিন মিনিট দেরি। আমি অফিস থেকে দশ মিনিটের হাঁটা পথ ধরে লোয়ার প্যারেল স্টেশনে পৌঁছে দু নম্বর প্লাটফর্ম এসেছি। গোটা প্লাটফর্ম এ আমি ও একটি চা বিক্রেতা। বাকি চা শেষ। বাসন ধুতে ধুত গান শুনছে " রাত কলি এক খওয়াব মে আই"।
গানটা কিশোর না মুকেশ এর, ভাবতে ভাবতে চার্চগেটগামী ট্রেন হাজির। মারাঠী আরজে এখন কি নিয়ে যেন ওপিনয়ন পোল করছে আর দর্শক টানতে খালি পুরনো সব দারুন দারুন গানের নাম বলছে।
সেকেন্ড ক্লাস ভাড়া পাঁচ টাকা। ওখানেও এক ছবি। শুনশান একটা বগি। সিটে পা তুলে বসে আছি। দেখি দূরে এক বৃহন্নলা আর এক দারোগা পাশাপাশি বসে।
এক ঝলকে দেখলে স্বামী স্ত্রী মনে হবে। বৃহন্নলা মুম্বই সেন্ট্রাল নেমে যাবে আর দারোগা কানে হেডফোন গুঁজে নেবে। আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এখন। একটু ঝুঁকে দেখি ব্যাকলেস ব্লাউজ আর সিফন শাড়ি কিরকম যেন পুরুষালি ভাবে চলতে শুরু করেছে। গোটা প্লাটফর্ম এখন বৃহন্নলার।
চটির মচর মচর, কাঁচের চুড়ির ছনছন আর শাড়ির আঁচলে লাগানো স্টোন এর মিলিত আওয়াজ। আমি গুনগুনিয়ে শুরু করলাম " এক আকেলা ইস শহর মে"।
ট্রেন থেকে নেমে এবার সমুদ্রের পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছি, ঝিরঝিরে বৃষ্টি, দারুণ হাওয়া আর এক অকেলা।এই মায়ার শহরে।
আজ বাড়ি যেতে দেরি হোক। কজনেরই বা সমুদ্রের ছাঁট এসে চশমাতে লাগে? কজনেরই বা বসার সুযোগ হয় মাঝরাতে মুখোমুখি সমুদ্রের। কিছু জিনিস পরাবাস্তবই ভালো।
.................ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
No comments:
Post a Comment