কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Wednesday, December 28, 2016

| সিনেমা হলে সিরিয়াল ব্লাস্ট, সিটের নিচে ধুলাগড় |

বম্বে একটা অদ্ভুত মায়াবী শহর। এর শরীর জুরে একরাশ গল্প ছাপা। এ শহরের সমস্ত কিছুতেই গল্প বুঁনে রাখা। সমস্ত দালান কোন ইতিহাস বহন করে চলেছে। সমস্ত রাস্তার নাম কোন উত্তরাধিকার সযত্নে বহন করে চলেছে। বা কোন গভীর ক্ষত। এ শহর সমস্ত টা দিব্বি নিজের মতো গল্পে বাঁচিয়ে রেখেছে।

আমি একা সিনেমা দেখতে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত। ভারি গায়ে লাগে মাল্টিপ্লেক্স এ ৫০০টাকা খরচ করতে একার জন্য। তাছাড়া ছোটবেলা থেকে সিঙ্গিল স্ক্রিন যে আমায় দারুন হাতছানি দেয়।

সিঙ্গিল স্ক্রিনে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার থাকে।সেখানে যে ফিল্ম দেখে স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে আসে ও ফুঁপিয়ে কান্না ঝরে, সেই ছবি অসাধারণ।

অন্ধকার হলে, প্রজেক্টার এর দিকে একটানা তাকিয়ে থাকলে নাকি ম্যাজিক এর মতো টাইম মেশিনে চড়ে বসে যে কোন সময় নিয়ে আসা যায় সেলুলয়েডে।

আমার বাবা আমাকে প্রথম সিনেমা হলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় বান্টিতে। বান্টি একটি হলের নাম ছিল। ক্রমে গোটা এলাকার নাম হয়ে যায় বান্টি। নাকতলার পরের স্টপ। যেখানে হালে মেট্রো স্টেশন হয়েছে।
বান্টি তে জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র দেখি খুদা গাওয়া! তিন ঘন্টা অপলক দৃষ্টিতে মানুষগুলো তাকিয়ে থাকতো স্ক্রিনের দিকে।নেশা ওখানেই শুরু।

তখন আইনক্স ছিল না। থাকার মধ্যে আমার দুনিয়া জুড়ে ছিল বান্টি, মহুয়া, পদ্মশ্রী,মধুবন, মালঞ্চ। দক্ষিণ কলকাতার ছেলে আমি। আগাগোড়া গড়িয়া।

কাঠের চেয়ার, ঘুটঘুটে অন্ধকার হল, টর্চ লাইট জ্বালিয়ে সিট দেখিয়ে দেওয়া, সস্তার টিকিট এ মার্কার দিয়ে লেখা সিট নম্বর, ইন্টারভ্যালে প্যাটিস। আমার এক নিমেষে হিপনোটাইস এর যন্ত্র ছিল সেলুলয়েড।

আমার দারুণ লাগে সিনেমা হলের ওই ভোঁটকা গন্ধ। হলে ওই EXIT লেখা আর চারপাশের অন্ধকার। ওখানে নাকি সপ্তাহে সপ্তাহে স্বপ্ন দেখা যায়। স্বপ্নে নায়ক অমর হয়ে যায় আর হল মালিক নিঃস্ব।

বম্বে শহর এ আমার ভাড়াবাড়ির ঠিক পাশেই একটা দারুণ সিনেমা হল আবিষ্কার করেছি। দাদুলদা দের প্রিয়ার মতো ঝকঝকে তকতকে। দোতলার সিট ১৫০ টাকা। বম্বের তুলনায় সস্তায় পুষ্টিকর।

প্রতি সপ্তাহে একটা ছবি বাঁধা। সাথে টুকটাক। আর বাকিটা ওই অন্ধকার ঘরটা। নেশার মতো। অফিসে আমার এই আবিষ্কার নিয়ে আজ কথা হচ্ছিল। আমাদের অফিসেই এক  প্রবীণ মারাঠি সাংবাদিক আমায় খুব স্নেহ করেন। শুনে টুনে বললেন, প্লাজা তে আমরা ও বহু ছবি দেখেছি। বাড়ি থেকে মারাঠি ছবি দেখতে যেতাম। তারপর আর যেতে পারিনা। পুরনো কথা মনে পরে, অর্ধেক শরীর উড়ে যাওয়া বন্ধুর কথা।

আমি মাঝপথে থামিয়ে দিই। মানে?

প্রবীণ মারাঠি ভদ্রলোক বলেন, বাবু, প্লাজা সিনেমা ৯৩' সিরিয়াল বম্ব ব্লাস্ট এর একটা টার্গেট ছিল। সিটের নিচে আরডিএক্স রেখে দেওয়া হুয়েছিল ওই অন্ধকার ঘরটায়। অন্ধকার হলে, প্রজেক্টার এর দিকে একটানা তাকিয়ে থাকা লোক গুলো টের ও পায়নি। ম্যাজিক এর মতো সেলুলয়েডে বুঁদ হয়েছিল। ৫৩ জন মানুষ মারা যায় ওই বিস্ফারণ এ। প্লাজা সিনেমা তে।

প্লাজা তে লিওপল্টের মতো বন্দুক এর চিহ্ন স্বযত্ন রাখা নেই। রাখার মধ্যে প্রচুর পুরনো ছবির সিলভার জুবিলি, গোল্ডেন জুবিলি স্মারক। আর ভারি অদ্ভুত নেশাতুর চারপাশ।

অন্ধকার ওই ঘর স্বপ্ন দেখায়। যারা ওই স্বপ্ন কে খুন করে, তারা কাপুরুষই। তাদের কোন মতবাদের দোহাই দিয়েই বিপ্লবী বা স্বাধীনতা সংগ্রামী বলতে পারবো না।

আমার রাজ্যেও এই ধরনের কিছু মানুষ ঢুকে পরেছে। যারা কিছু টাকার বিনিময় সিটের তলায় বোম বা নিচের পেটে বেল্ট বেঁধে উড়িয়ে দিতে পারে আমার সমস্ত স্বপ্ন। তারা আমার বন্ধু নয়, তারা গান ভালোবাসে না, ভালো গরুর মাংস কষা রান্না করতে জানে না। এরা ঘটনা চক্রে কোন নির্দিষ্ট ধর্ম মেনে চলে। বাকিটা খুব খারাপ কিছু গুরুর আয়াত। মানুষ এ মানুষ এ লড়াই করার ফতোয়া।

আমার দেশের চূড়ামণি ও অনেকটা এরকম। ত্রিশূল শান নিচ্ছে প্রতিদিন। কি জানি এর মাঝে আমাদের ছবি দেখা গুলো কবে প্রচন্ড বিস্ফারণ এর শব্দে লাশ এ বদলে যাবে। মুম্বাই এর প্লাজা তে বিস্ফারণ নাকি কোন মসজিদ গুড়িয়ে দেওয়ার বদলা ছিল। কিন্তু হাওড়া?

সিটের নিচে বোমা রাখা। টিক টিক টিক টিক হয়েই চলেছে। দিদি শুনতে পাচ্ছো?

----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Wednesday, December 21, 2016

প্রতিস্পর্ধা

প্রতি প্রশ্নে প্রতিস্পর্ধা/রাষ্ট্র প্রতিপক্ষ যার,
ভোটের আগে বরাদ্দ হয়,এনকাউন্টার।

--- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Monday, November 28, 2016

বিলম্বে বিমান উদয়: প্রফেট চদ্রিল

চন্দ্রিল দা কাল আনন্দবাজার পত্রিকার উত্তর সম্পাদকীয়তে বিমান বাবু বা সিপিএম এর কোমায় চলে যাওয়া নিয়ে যা লিখেছিল, তাতে বহু দলীয় সদস্য কাঁচা খিস্তি শুরু করেছিল। হেব্বি সব চকচকে গাল দেওয়া হচ্ছিল ও কেন এই হরতাল ঠিক তার বিবরন দেওয়া হচ্ছিল। প্রবীণ নেতা কে খাস্তা করা তাদের অতি তাত্বিক মস্তিস্কে রক্তক্ষরনের সামিল ছিল।

আজ সর্বহারার মহান নেতা শ্রী বিমান বসু মেনে নিলেন যে হরতাল বিফল হয়েছে, খুব কম সময়ে ডাকা এই হরতাল সফল হয়নি। তাঁদের বিচার বিবেচনা করে দেখতে হবে এই নিয়ে। এটি একটি জটিল বিষয়। অত সহজ নয়।

সাবাস কমরেড! বিশাল এক বেড়াল ফোলালেন, ভাবলেন বাঘ হয়েছেন, লালন পালন করলেন তাকে, বিপ্লবী ভাষণ ছাড়লেন সর্বহারার প্রতিনিধি হয়ে ওঠার আর শেষমেষ ঘ্রোঁয়াও ক্রমাগত মিয়াওঁ এ বদলে গেল। তারপর ঢোঁক গিলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। সেই কবে জননেতা বুদ্ধ বাবু হাত জোর ক রেছিলেন, ব্যস হা রে রে করে মধ্যমেধা সব নামিলো ক্ষমা চাইতে। যাই হোক সরি দাদা।

বিশাল সব নেতা। পাড়ার মোড়ের বিপ্লবী। দল বলেছে হরতাল হবে, বেশ! চল শালা বিপ্লবের কল এসেছে। এই পবিত্র কাজ যদি না করতে পারি তবে মেম্বারশিপ নিয়ে কি হল এই অশান্ত সময়ে?

মনে করিয়ে দিই, কাল আনন্দবাজার এ প্রফেট চন্দ্রিল লিখেছিলেন যা ফাস্ট হুবহু তুলে দিলাম।

" কী বিপদে না পড়লাম! যারা মোদীর এই নোট বাতিলের যাত্রাপালার পক্ষে, তারা সব্বাই হয়ে গেল বিজেপি। আর যারা বিপক্ষে, সব্বাই হয়ে গেল তৃণমূল। আমরা পড়ে রইলাম মাঝামাঝি, ঝুলন্ত, ঝুল। একটু-আধটু চোপা করছি, ভান করছি যেন আমাদের ঘটেও বুদ্ধি খেলছে জিভে গজাচ্ছে চাড্ডি জ্বালাময়ী দড়াম, আমাদেরও আছে কর্মসূচি নেওয়ার ধক ও প্ল্যান। কিন্তু কী করব? মমতা আগেই এমন পালে হাওয়া লাগিয়ে বসে আছেন, এত দ্রুত উনি হইহইটা শুরু করে দিতে পারেন, তত দুদ্দাড়িয়ে আমাদের মিটিং-এর ঘরের তালা অবধি খোলা হয় না। কাজেই যত ক্ষণে উনি কোমর বেঁধে এটিএম-এর সামনে, তত ক্ষণে আমাদের ঢুলুন্তি মগজ সিধে হয়ে শুধু চোখ গোলগোলিয়ে দেখছে মাত্তর, লেনিনকে পেন্নাম ঠুকে প্রাথমিক গলা-খাঁকারিই শেষ হয়নি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমরা ভেবে বের করলাম আশ্চর্য ঘনঘটা: বন্‌ধ ডাকব। লোকে শুনে শিউরে উঠল। আজি হতে শতবর্ষ আগেও এই পার্টি প্রতিবাদ করতে হলে সহস্র মাথা চুলকে সেই বন্‌ধই ডাকত, এখনও চিন্তা-দেওয়ালে মাথা কুটে সেই বন্‌ধই ডাকছে। কী ব্রেন-বিবর্তন!"

কি ভুল বলেছিল? আজ তো আপনি নিজেই বলে দিলেন ভুল ভুল সবই ভুল। পুঁজিবাদী আনন্দবাজার খঁক খঁক করে খিল্লি নিচ্ছে নিশ্চয়। টিএমসি তো কবেই দুদু ভাতু করে দিয়েছে আপনাদের, এখন সর্বহারার ও খিল্লি টপিক না হয়ে যান।

সবাইকে মিডিয়া ফ্রেন্ডলি হতেই হবে কেউ দিব্বি দেয়নি কিন্তু একই মানুষ যদি একই ভুল বারবার করে?

মশাই আপনারা নিজেরা একে কনফিউজড টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি, তার উপর স্থবির আর মিনিটে মিনিটে স্বীকার করেন নিজেদের ভুল। বুকে হাত রেখে বলুন তো ফিদেল বা লেনিন এরকম লিডার হলে বিপ্লব কি হত? জ্যোতি বাবু যদি সিদ্ধান্তহীন হতেন ২৫ বছরভর লাল পতাকা
থাকতো?

এরপর ও বন্ধু বলবেন মমতা কেন এত সফল? কেন মোদি হিট? লিডারশীপ বাওয়া!

দেওয়াল লিখন পরিস্কার! মায়োপিয়া থাকলে চশমা পাল্টান আর পারলে ধারনা। দুনিয়া বদলেছে, আম্বানিরা এখন অনেক ক্ষমতাশালী, আপনি রিপ ভ্যান উইংকিল। বাঁশি বাজাচ্ছেন যাচ্ছেতাই আর তাতেই ইদুঁরের দল পিল পিল করে গা এ গা ধা এ ধা মেলাচ্ছে। কেউ মাথা খাটাচ্ছে না। কেউ অন্য সুর এ কথা বলছে না।

ফিদেল আপনি ঘুমান। আমরা এই অবস্থা দেখবো বলে জেগে থাকি। স্বপ্ন দেখি।

পুনশ্চ: আমি শ্রেণিশত্রু, পাতিবুর্জোয়া, তিনোমূলি বা চাড্ডী নই। আরো খারাপ। আপনারা অযাচিত ভালো। হবেন না। প্লিজ।

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Tuesday, November 15, 2016

| সাব-অল্টার্ন,নোট পাল্টান ও কোল্যাটেরাল যা কিছু |

আমাদের প্রধানমন্ত্রী ধাপ্পা দিতে হেব্বি ভালোবাসেন। ছেলেবেলার ধাপ্পা খেলা। পেছন থেকে অতর্কিতে এসে কাউকে চমকে দেওয়া আর সে সত্যি মিথ্যে বুঝে ওঠার আগেই সজোর চ্যাঁচানো "ধাপ্পায়ায়ায়ায়ায়ায়া"।

দেশের সাংবাদিককুল ও এডিটর রাতের হ্যান্ডওভার ও প্ল্যানিং এ যখন একগুচ্ছ ক্লিনটন ও ট্রাম্প এর কভারেজ গুঁজছে, তখনই মোদীজির ধাপ্পায়ায়ায়ায়ায়ায়া। চমক। বুকের সাইজ নিয়ে কোন প্রশ্ন হবেনা। এই ধাপ্পার কোল্যাটেরাল ড্যামেজ নিয়ে হবে।

৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার ফলে আমাদের সমস্যা হবে। তবে যাদের পেটে সপাটে লাথিটা পরলো তারা আমাদের চারিপাশ ছাইপাশ মানুষগুলো।যারা দিন আনে, দিন খায়।

আজ আমার চোখের সামনেই যেরকম দেখলাম। লোয়ার পরেল এর টাইমস নাউ অফিস এর ক্যান্টিন টা বিশাল। ইটি নাউ,জুম, রেডিও মিরচি সহ সবার খাবার জায়গা। মহান প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক ঘোষণা শেষ, নিউজ আওয়ার ও খতম, খেতে এসেছি ক্যান্টিন এ। আমার সাথেই খাবার জন্য দাঁড়িয়েছে এক রাজ মিস্ত্রি। ৫০ টাকার মিল খাবে। রাতে সাংবাদিক সহ সবাই চলে গেলে এদের কাজ করতে হয়। এখানেই খাবার খায়।

আজ একটা ৫০০ টাকার চকচকে নোট, একটাই নোট নিয়ে খেতে এলো। ভাত, চারটে রুটি, ডাল, আলুর দম, একটা সব্জি, ভাজা, মিল্ক পাউডার এর ক্ষীর। ৫০ টাকা। রাজা প্রজার পুষ্টিকর খাদ্য।

সবে ৫০০ টাকাটা দিয়েছে, আমাদের ক্যান্টিন এর ছেলেটি বলে উঠলো,  ক্যা ইয়ার টিভি ভি নেহি দেখতে? ৫০০ টাকা আর বৈধ নয়। এই সব নোট বাতিল। ব্যাংক এ বদলে আনো। ১০০ টাকার নোট দাও, খাবার নাও বা নাম লিখে রাখছি, কাল দিও টাকা। মিস্ত্রির মুখ চুন, এক পেট খিদে। জন ধন প্রকল্পে নাম আছে কিনা জানা নেই। আপাতত ধন বলতে ৫০০ টাকা। খালি পেটে মাথা বেশি গরম হয়। শোনা যায় নাকি এরকমই এক নভেম্বর মাসে পেটে খিদে নিয়ে কিছু মানুষ দুম করে বিপ্লব করে ফেলেছিল। 

মিস্ত্রি ভদ্রলোক কাঁপতে কাঁপতে চেঁচিয়ে উঠলো,  সারাদিন কাজ করবো না টিভি চালিয়ে বসে থাকবো? তারপর এক ঝটকায় পেছন ঘুরে হন হন করে হাঁটা দিল। ক্যান্টিন এর ছেলেটি কিন্তু শ্রেণিশত্রু নয়। ও ডাকার চেষ্টা করেছিল আর মাইরি বলছি, প্রাথমিক বমকে যাওয়া কাটিয়ে উঠে আমিও বাইরে বেড়িয়ে খুঁজেছিলাম কিন্তু সে কোথাও নেই। এখন নোওয়ান লুক ব্যাক ইন Anger হয়তো।

এতটা লিখলাম একটাই কারনে। ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার ফলে আমাদের সমস্যা হবে। তবে যাদের পেটে সপাটে লাথিটা পরলো তারা আমাদের চারিপাশ ছাইপাশ মানুষগুলো।যারা দিন আনে, দিন খায়ে।

দয়া করে অতি চালাক হয়ে কেউ নিজের আশে পাশের সব্জি মাসি, মাছওয়ালা, কাজের দিদিকে এই সুযোগ এ ৫০০ টাকা গছিয়ে দিয়ে নিজে দায়মুক্ত হবেন না। বিশ্বাস করুন ওই লাথি টা ক্যাঁৎ করে লাগবে পেটে। এক পেট খিদে, সারাদিনের ঘাম, অপমান, রক্তবমি করে ফেলতে পারে। মোছার লোক থাকবে না।

আসলে আমরা যারা ছেঁড়া, ফাটা নোট প্রথমেই ওদের গছিয়ে দিই, চুরি গেলেই ওদের ঝোলা সার্চ করাই, আবার প্রবল খাটিয়ে মোক্যাম্বোতে খাওয়াতে নিয়ে যাই তারাই এটা করবো।

আমরা যারা আজন্ম মধ্যবিত্ত হয়ে গাড়িয়া থেকে বিবাদি বাগ মিনিতে করে গেলাম, মেট্রোতে বিহারি মুটে উঠতে দেখলে নাক শিঁটকে গেলাম আর বলাবলি করতে থাকলাম তাদের থুতু ফেলার বদ অভ্যাস নিয়ে, আমরা যারা কেউ দেখছে না ভেবে নাকের পোটা বা চিউয়িং গাম হোটেলের দেওয়াল বা রেঁস্তরা টেবিল এ চিপকে দিই, আমরা যারা পূজোর বাজার করতে কোয়েস্ট মল যাই আর ফেরার পথে গড়িয়াহাটার ফুটপাথ থেকে মালতীদির জন্য তিনশো টাকার শাড়ি কিনি।তারাই এটা করবো।

আমরা বাসে উঠেই ঘেমো গন্ধকে ঘৃণা করিনা? বা যে গ্রামের মেয়েটি প্রথম বাসে উঠে টানা বমি করে চলে তাকে উপদেশ দিই না টাক্সি করে যাওয়ার? সাথে আবার জানালার ধারে বসার টোটকা ও তো দিই বিনামূল্যে।

কারন আমরা ধনীদের ভয় পাই। গরীবের পেছন মেরে শান্তিতে ঘুমাই। একটা ডায়েট কোক ৩০ টাকা দিয়ে কিনি, থাকে ২০০এমএল, বাকিটা প্যাকেজিং। আর একটা ডাব ২৫টাকা শুনলেই বাব্বা, এত দাম!!

৫০০ টাকার সাথে সাথে এ সব ও যদি বদলানো যেত।

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Wednesday, November 2, 2016

আপনাকে

জুন মাসের মাঝামাঝি যখন আমি আনন্দবাজার গোষ্ঠীর খবরের চ্যানেল এবিপি আনন্দ থেকে বিদায় নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করছি, এক সন্ধেবেলা শুলনাম অভীক বাবু, আনন্দবাজার গোষ্ঠীর প্রধান সম্পাদক পদত্যাগ করেছেন। আমাদের কিছু এসে যাবেনা কিন্তু বাঙালির অনেক কিছু এসে যাবে।

চমকে গেছিলাম শুনে। মেনে নেওয়া টা সহজ নয়। আজন্মকাল আনন্দবাজার এর শেষ পাতায় নাম, মাটিতে লুটোচ্ছে ধুতি, বিশাল সম্পাদকীয় প্রতিপত্তি, আদ্যোপান্ত ভিক্টোরিয়ান বাঙালি। আমার মত সাব-অল্টারনেটস দের কাছে ব্যাপার একটা। মানে যেটা হ্যাংলামির কাছাকাছি আরকি।

অভীক বাবুর চলে যাওয়া আমায় বুঝতে শিখিয়ে ছিল যে নিজের ভাবনা চিন্তা, ধ্যান, ধারণা আরো আরো ফ্লেক্সিবিল ও সময় এর সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখতে হবে। পাথর এর মত স্থিত, স্থবির হয়েছো কি কম্পালসারি ওয়েটিংরুম বরাদ্দ।

আরবসাগর এর পাশে কমলা মিলস নামক যে বিশাল জায়গাতে টাইমস নাও এর অফিস সেখানেও সেই মন্ত্রেই দিক্ষিত হয়েছিল একটা গোটা প্রজন্ম।  যাদের বয়স ২৩ থেকে ৩৩। হ্যা এটাই টাইমস নাও এর সম্পাদকীয় মানব সম্পদের গড় বয়স। টেবিল রিপোর্ট করছে, ফোন এ প্রধান অভিযুক্তকে চোখা চোখা প্রশ্ন ছুঁড়ছে, দেশের এজেন্ডা সেট করছে, শো এর গেস্ট ঠিক করছে পাকিস্তান বা লন্ডন থেকে বা কোন নেতা কে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে।

এই সব টাই ২৩ থেকে ৩৩। এখানে সংবাদমাধ্যম এর সংগা রোজ বদল হয়েছে, ব্যাকরণ দুমড়েছে, লুটিয়ান দিল্লীর ফর্মালিটি বদলে এসেছে মধ্যবিত্ত স্বপ্ন দেখা কিছু দামাল ছেলে মেয়ের দাপাদাপি।  যারা ইংলিশ, হিন্দি, বাংলা, অহমিয়া, তামিল মিশিয়ে এক অদ্ভুত ভাষাতে কথা বলে, বাকিটা হাসি আর লজ্জা,ঘেন্না, ভয় ভুলে খবরদারি করা।

পুরোটাই শিখিয়েছিল যে, সাহস জুগিয়েছে যে, ছক ভেঙে চোখ এ চোখ রেখে প্রশ্ন করার, সে ১৮ই নভেম্বর ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেল।

দু বছর সাংবাদিকতা পড়েছি কলকাতায়, কিন্তু আসল শেখাটা বোধহয় প্রাথমিক ভাবে আনন্দবাজার আর বাকিটা ওই অহমিয়া ভদ্রলোক এর কাছে। বিশ্ববিদ্যালয় এ যা শিখিয়েছে আমার শহর তাতে ৮০র দশকের দূরদর্শন এ কাজ মিললেও মিলতে পারে।

অশান্ত সমুদ্রে সাঁতার কাটা সহজ নয়। কিন্তু সেটাই তো নতুন প্রজন্মকে শেখাতে চেয়েছে এরা। প্রজন্ম যারা ফোর জি তে আছে, যারা ডিজিটাল স্ট্রিমিং করে, হ্যাশট্যাগ এ কথা বলে আর ভবিষ্যৎ এর ৭০% মিডিয়া যারা নিয়ন্ত্রণ করবে।

এদের সেলাম ঠুকলে কি খুব আদিখ্যেতা হবে?

Tuesday, October 25, 2016

| প্রবাসে বাড়ি, বাংলায় ঘর |

একটা বিশাল বৃদ্ধাশ্রম। নাম কোলকাতা। প্রবাসের বহু ছেলেমেয়ে এই বৃদ্ধাশ্রমকে নিজের ঘর বলে মনে  করে। বাড়ি বানায়ে দিল্লী,বম্বে,লন্ডন।

কোলকাতায় রমরমা বাড়ে আয়া সার্ভিস, ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডার এর হোম ডেলিভারি, একাকিত্ব দূর করতে স্কাইপ শেখানো, ফিজিওথেরাপি, ডিলাক্স বৃদ্ধাশ্রম এর। এগুলোই রমরমা শিল্প।

কিছু লুম্পেন ধর্মের নামে ঘর জ্বালাচ্ছে, পুলিশ মারছে- তবে রাজ্যটা শান্তিতেই চলছে!

গোটা ভারত হাসছে বাঙালির লক্ষ্মী ও গনেশ পুজোর নিষ্ঠা দেখে, শিল্প বলতে সিন্ডিকেট, শিল্পপতি নেওটিয়া
- তবে রাজ্যটা ভালোই চলছে!

ভারি শিল্প তো কেবল দু লাখ চাকরি দেবে, বাকিদের কি হবে? তাই চপ, একশো দিনের কাজ বেঁচে থাক- রাজ্যটা ৩৪ বছরের কালো সময় শেষে তবু তো চলছে!

অন্য রাজ্যে টাটা বিদায় নিলে শোক পালন হয়, এখানে দেবীর জন্ম হয়। তবে রাজ্যটা ভালোই চলছে!

এখানে শিল্প কে বিসর্জন দিয়ে, বিসর্জন কে শিল্প করা হয়। রাজ্যটা ভালোই চলছে!

গোটা ভারত বাংলা কে নিয়ে রোমান্টিকতা করুক, পুজোর সময় ফিরুক, রসগোল্লা, মিষ্টি দই নিয়ে যাক, কলকাতার সস্তা জীবনযাত্রা, বনেদিপনা, সাহেবিয়ানা নিয়ে গ্নাসে গ্লাসে হতাশা চলুক।

রাজ্যটা ভালোই চলছে! কার্নিভাল আছে, দারুন পথঘাট,  সস্তার বার, সান্ধ্যকালিন স্টার জলসা, রাতে দিনের সেরা এক ডজন খবর, রাজারহাট এর ফ্ল্যাট, নীল সাদা উন্নয়ন।

বাকি যা কিছু থাক ভারতে।

-ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Zulfiqar REVIEW

| ঝুল- ফিকর |

ইন্দ্রের সহস্র চক্ষু রোগ হয়েছিল জানতাম, এখন দেখি দেবী ও সহস্রভূজা থিম এর চাপে।

কঠিন অসুখ, কঠিন সময়।

বাই দা ওয়ে, "ঝুল"ফিকর' এই পুজোতে এক বার অন্তত দেখা উচিৎ।  রাজ চক্কোবত্তির চেয়ে ভালো, ভালো চলচ্চিত্রের চেয়ে খারাপ।  মুম্বাই থেকে এসে প্রথম ছবি দেখা এটাই।

ঝুল হল কারন কোন কারন ছাড়াই ১০ মিনিট দর্শক গুলির শব্দ শুনে গেল ও গুলির ঠাই ঠাই দেখে গেল। পরিচালক অনেক কিছু করতে চেয়েছিল বোধহয় কিন্তু ওই "ঝুলে" গেল।

"ফিকর" টা পরিচালককেই নিয়ে। এই পরিচালক অত্যাধিক মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত ও পড়াশুনো করা একজন মানুষ। এদের সংখ্যা কম।

বাজার এর চাপে যদি এই ধরনের মাল ছাড়তে থাকে প্রতি পুজোতে, বেশি কাটতি,  বেশি ওপেনিং এর খোঁজে, খুব শিগগির আমাদের মোহভঙ্গ হইবে। আশা করি হেমলক সোসাইটি বা চতুষ্কোণ এর মত একটা দারুন চিত্রনাট্য বা ফেলুদা ফেরত এর মত একটা অসামান্য ভাবনা আবার দেখতে পাবো।

ও হ্যা, এই ছবির রিসার্চ খুব ভালো প্রথম দিকে। বেশিরর ভাগই আসল ঘটনা যা বাংলা নিউজ এ দেখানো হয়েছে সেই ভিত্তিক। তবে খিদিরপুরে এত ইংলিশ এ কথা হয় কি?

দেব, প্রসেনজিৎ, কৌশিক সেন, রাহুল দারুন। নুসরত এর প্রত্যেকটা ফ্রেম প্রমাণ করে কেন হাজত থেকে মুক্ত মন্ত্রী থেকে সদ্য হাজতগামী সন্ত্রী তার পায়ে লুটিয়ে পরে। বাড়ি ফিরেছি নচিকেতা নিয়ে ঠোঁটে।

এক বাটি শেকসপিয়র এ অল্প গডফাদার, দু চামচ পোর্ট মাফিয়া রাজ, দুটো খবরের শিরোনাম আর অনুরাগ কাশ্যপেয় স্টান্টবাজি করলেই রুচিশীল ছবি হয় না ইদানীংকালে। চারদিকে বহু ভালো ছোট, চ্যাপটা, ডিজিটাল, মোবাইল ছবি বানানো হচ্ছে। সেগুলি প্রযোজক পায়েনা, আমার তাই নিয়ে ফিকর। বাকি ফিকর এর জন্য জুলফিকর এর নির্মাতারা আছেন।

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

পুজোয় আসছি

শেরাওয়ালি ভক্তি শেষে মুম্বাই যখন শুতে যাবে, আমি তখনই কেটে পরলাম।

ভোর পাঁচটা চল্লিশ এর জেট । সিটবেল্ট টাইট করে বেঁধে নিতে হবে। শেষবার যখন কলকাতা ছেড়ে গেছিলাম, তখন 'বঙ্গ' তে 'পশ্চিম' ছিল, সিঙ্গুরে টাটার জমি ছিল। বাঙালির স্বপ্ন ছিল রাজ্যেই।

কুনাল ও মদন বাবু জেলে ছিল, আনন্দবাজার এর শেষ পাতার নিচে অভীক বাবুর নাম ছিল।

আমার জানালা জুড়ে ছিল কলকাতার শ্বাস প্রশ্বাস আর শহর জুড়ে শিল্প না হওয়ার মনখারাপি।

আমি ও ছিলাম। মোল্লার দৌড় ছিল গড়িয়া টু গড়িয়াহাট।

সিটবেল্ট শক্ত করে বাঁধা ভালো। কলকাতাগামী বিমান। বিমান এর ওপার থেকে বহু নিশ্বাস ছেড়েছি।

আরবসাগর পার মানেই সর্বসুখ আমার তা বিশ্বাস ছিল না। থাকতে পারেনা। কারন কলকাতায় কিছু মানুষ তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে। করেই যাচ্ছে।

হুগলি নদীর এপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে/
অষ্টমীর ভোরবেলা প্লেন ছেড়েছে ওপারে ।

পুজোয় আসছি ।

Saturday, October 8, 2016

পুজোয় আসছি

ভোর পাঁচটা চল্লিশ এর জেট । সিটবেল্ট টাইট করে বেঁধে নিতে হবে। শেষবার যখন কলকাতা ছেড়ে গেছিলাম, তখন 'বঙ্গ' তে পশ্চিম ছিল, সিঙ্গুরে টাটার জমি ছিল। বাঙালির স্বপ্ন ছিল রাজ্যেই।

কুনাল ও মদন বাবু জেলে ছিল, আনন্দবাজার এর শেষ পাতার নিচে অভীক বাবুর নাম থাকতো।

আমার জানালা জুরে ছিল কলকাতার শ্বাস প্রশ্বাস আর শহর জুরে শিল্প না হওয়ার মনখারাপি।

আমি ও ছিলাম। মোল্লার দৌড় ছিল গড়িয়া টু গড়িয়াহাট।

সিটবেল্ট শক্ত করে বাঁধা ভালো। কলকাতাগামী বিমান। বিমান এর ওপার থেকে বহু নিশ্বাস ছেড়েছি। আরবসাগর পারেই সর্বসুখ আমার বিশ্বাস ছিল না। থাকতে পারেনা। কারন কলকাতায় কিছু মানুষ তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে। করেই যাচ্ছে।

হুগলি নদীর এপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে/
অষ্টমীর ভোরবেলা প্লেন ছেড়েছে ওপারে ।

পুজোয় আসছি আমি

Thursday, October 6, 2016

Muzaffarnagar Ramlila starring Nawazuddin Siddiqui cancelled after local Hindus protest

( The test is tougher to prove yourself as a loyal citizen of India if you are a Muslim. Even if you condemn Uri attacks, even if you support Indian Army in operations they are conducting, even if you are a famed actor who can play the role of Ram and Rahim with equal ease, even if you are from the village where you spend your childhood)

PTI:
Bollywood actor Nawazuddin Siddiqui has pulled out of a Ramleela programme at his native place in Budhana here due to opposition by right-wing activists, police said today.

The Ramlila program featuring Nawazuddin has been cancelled following opposition by some Hindu activists, SP (rural) Rakesh Jolly said.

The organisers had to cancel the programme after the activists approached them and expressed their displeasure over Nawazuddin's participation, he added.

"My childhood dream could not come true, but will definitely be a part of Ramleela next year. Check the
rehearsals," he tweeted with a link of the rehearsal video.

The actor said he wanted to play Maarich, a rakshasa
(demon), because the demon wanted to be killed by the arrows
of Ram. PTI

Monday, October 3, 2016

| শহিদ জওয়ান |

কাশ্মীর এর এই কফিন থেকে বিউগল শোনা যায়/
মায়ের কান্না বিছিয়ে দেওয়া হয় ফুলে।

ফুঁপিয়ে ওঠা বান্ধবী ও একুশ তোপ এ চুপ/
বিদায় নিলাম রাষ্ট্র-শেখানো সব দুশমনি ভুলে।

---ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

কাঁটাতার নির্ধারণ করতো যদি দেশ/ গোলাপ গাছই উদ্বাস্তু ভেবে নিতো স্বদেশ

কাঁটাতার নির্ধারণ করতো যদি দেশ/
গোলাপ গাছই উদ্বাস্তু ভেবে নিতো স্বদেশ।

Sunday, October 2, 2016

তোর প্রেমে ছোবল খেয়েছি সেটাই শিরোনাম/ এক তরফা হাত ও কবে পেয়েছে তালির দাম।

তোর প্রেমে ছোবল খেয়েছি সেটাই শিরোনাম/
এক তরফা হাত ও কবে পেয়েছে তালির দাম

Saturday, October 1, 2016

| বঙযাত্রীর বোম্বে ডাইরি -৫ |

| ম্যাজিক- রিয়ালিটি |

ম্যাজিক হয় হয়। চারপাশেই হয়। বাথরুম, বারান্দা এমন কি দেবী পক্ষেও হয়। যারা জানার তারা জানে। আমি জানি। কিন্তু ম্যাজিক রিয়ালিসম এর ল্যাজ ধরেই থাকে। তাই হয়তো সব ম্যাজিক এ জাপ্টে থাকে বাস্তব এর কিছু ভাগ।

প্রভাদেবী এলাকাতে সকালবেলা যে বাজার টা বসে তা হুবহু গড়িয়া বাজার এর মত হয়ে যায় আমি গেলেই। কত মাছ, সব্জি। কেবল মাছ গুলো বেশিরভাগ চালানি আর চাপাতি দিয়ে পিস পিস করে। আমাদের রথতলা বাজার এর স্বপন কেও বোধহয় এক আধবার দেখা যায়।

গোরেগাঁও স্টেশন এর সামনের রাস্তাঘাট পুরো যেন যাদবপুর স্টেশন রোড আমি যখনি যাতায়াত  করি। কি গ্যাঞ্জাম, কাদা, হকার এর ভিড়। কেবল হাজার পাক লাগালেও ইউনিভার্সিটি এক নম্বর গেট লাগোয়া ঝুপড়ি দোকানের মত দারুন মটন ঘুগনি আর পোঁড়া পাঁউরুটি মেলে না।

আর কোলাবা তে তাজ এর পিছনের যে বাজার টা। সেটাও তো অনেকটা এসপ্ল্যানেড। বাদিক ঘুরলেই শ' বার। আমি যেতাম।

এরকম বহু ম্যাজিক ঘটে যায় এখানে। রাতে বা কাঠ ফাটা দুপুরবেলা। সবচেয়ে গা ছমছম ম্যাজিক টা ঘটালো সোহম। মহালয়ার ভোররাত এ।

সোহম আমার ভাই ই বটে। প্রাক্তন কলিগ। বহু 'কান্ডের' সহযোগি।

সেদিন রাতে প্রায় দুটো বেজে গেছিল অফিস থেকে বেরতে। আমি একটা পিজি তে থাকি অফিসের পাশেই। বাকিরা কেউ ব্যাঙক বা বেসরকারি অফিস এ কাজ করে। সন্ধে সাতটায় বাড়ি এসে দাড়ি কামানোর সময় পায়। আমি রাতে ফিসফিসিয়ে ঢুকি। ফোনে কথা বলি না। বাকিরা বিরক্ত হয় ভোররাতে আমার আড্ডায়।

মহালয়ার ভোরে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার ইচ্ছে থাকলেও আমার রেডিও নেই ফোনে, নেট সেদিনই স্লো আর হেডফোন কেউ ঝেপে দিয়েছে।

আমার মতোই প্যাঁচা দের সাথে চ্যাট এ কথা বলতে বলতে সোহম শুনলো আমার ব্যাথা। আর তার কিছু পরেই ঘটিয়ে দিলো এক গা ছম ছম ম্যাজিক। 

মহিষাসুরমর্দিনী সবে শুরু হবে বোধহয়, আমার ফোন টানা বেজে চলেছে। সোহম।  কি হল রে?

সোহম : কথা বলতে হবে না, চুপচাপ কানে ফোন ধরে থাকো।

১২৩ আর ম্যাজিক। মুম্বাই এর সেই ঘরে যার একটা জানালা দিয়ে সিদ্ধি বিনায়ক মন্দির আর দূরে সমুদ্র দেখা যায়, সেখানে ভোরের আলো ফুটছে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র জানালা, দেওয়াল, বিছানার চাদরে। আমার গড়িয়ার বাড়ির দেওয়াল, দেওয়াল এ ঝোলানো ছবি, আমার বই এর আলমারি, আমার ল্যাধ খাওয়ার খাটের কোনা সবকিছু আমার চারপাশ জুরে।

আমার ঘরের গন্ধতে রাতের গরম ভাত, মাছ, বউ এর পারফিউম, আমার সেভিং ক্রিম লেপ্টে। মুম্বাই অব্দি চলে এসেছে। আমায় না জানিয়ে।

পুজো চলে এলো। আর সাতদিন। ওই শহর আমার সমস্ত কিছু জানে। আমায় মন খারাপ গুলো নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে। আমায় যেতে হবে সব ম্যাজিক গুলো রিয়ালিটিতে বদলে ফেলতে।

----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ