কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Tuesday, November 15, 2016

| সাব-অল্টার্ন,নোট পাল্টান ও কোল্যাটেরাল যা কিছু |

আমাদের প্রধানমন্ত্রী ধাপ্পা দিতে হেব্বি ভালোবাসেন। ছেলেবেলার ধাপ্পা খেলা। পেছন থেকে অতর্কিতে এসে কাউকে চমকে দেওয়া আর সে সত্যি মিথ্যে বুঝে ওঠার আগেই সজোর চ্যাঁচানো "ধাপ্পায়ায়ায়ায়ায়ায়া"।

দেশের সাংবাদিককুল ও এডিটর রাতের হ্যান্ডওভার ও প্ল্যানিং এ যখন একগুচ্ছ ক্লিনটন ও ট্রাম্প এর কভারেজ গুঁজছে, তখনই মোদীজির ধাপ্পায়ায়ায়ায়ায়ায়া। চমক। বুকের সাইজ নিয়ে কোন প্রশ্ন হবেনা। এই ধাপ্পার কোল্যাটেরাল ড্যামেজ নিয়ে হবে।

৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার ফলে আমাদের সমস্যা হবে। তবে যাদের পেটে সপাটে লাথিটা পরলো তারা আমাদের চারিপাশ ছাইপাশ মানুষগুলো।যারা দিন আনে, দিন খায়।

আজ আমার চোখের সামনেই যেরকম দেখলাম। লোয়ার পরেল এর টাইমস নাউ অফিস এর ক্যান্টিন টা বিশাল। ইটি নাউ,জুম, রেডিও মিরচি সহ সবার খাবার জায়গা। মহান প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক ঘোষণা শেষ, নিউজ আওয়ার ও খতম, খেতে এসেছি ক্যান্টিন এ। আমার সাথেই খাবার জন্য দাঁড়িয়েছে এক রাজ মিস্ত্রি। ৫০ টাকার মিল খাবে। রাতে সাংবাদিক সহ সবাই চলে গেলে এদের কাজ করতে হয়। এখানেই খাবার খায়।

আজ একটা ৫০০ টাকার চকচকে নোট, একটাই নোট নিয়ে খেতে এলো। ভাত, চারটে রুটি, ডাল, আলুর দম, একটা সব্জি, ভাজা, মিল্ক পাউডার এর ক্ষীর। ৫০ টাকা। রাজা প্রজার পুষ্টিকর খাদ্য।

সবে ৫০০ টাকাটা দিয়েছে, আমাদের ক্যান্টিন এর ছেলেটি বলে উঠলো,  ক্যা ইয়ার টিভি ভি নেহি দেখতে? ৫০০ টাকা আর বৈধ নয়। এই সব নোট বাতিল। ব্যাংক এ বদলে আনো। ১০০ টাকার নোট দাও, খাবার নাও বা নাম লিখে রাখছি, কাল দিও টাকা। মিস্ত্রির মুখ চুন, এক পেট খিদে। জন ধন প্রকল্পে নাম আছে কিনা জানা নেই। আপাতত ধন বলতে ৫০০ টাকা। খালি পেটে মাথা বেশি গরম হয়। শোনা যায় নাকি এরকমই এক নভেম্বর মাসে পেটে খিদে নিয়ে কিছু মানুষ দুম করে বিপ্লব করে ফেলেছিল। 

মিস্ত্রি ভদ্রলোক কাঁপতে কাঁপতে চেঁচিয়ে উঠলো,  সারাদিন কাজ করবো না টিভি চালিয়ে বসে থাকবো? তারপর এক ঝটকায় পেছন ঘুরে হন হন করে হাঁটা দিল। ক্যান্টিন এর ছেলেটি কিন্তু শ্রেণিশত্রু নয়। ও ডাকার চেষ্টা করেছিল আর মাইরি বলছি, প্রাথমিক বমকে যাওয়া কাটিয়ে উঠে আমিও বাইরে বেড়িয়ে খুঁজেছিলাম কিন্তু সে কোথাও নেই। এখন নোওয়ান লুক ব্যাক ইন Anger হয়তো।

এতটা লিখলাম একটাই কারনে। ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার ফলে আমাদের সমস্যা হবে। তবে যাদের পেটে সপাটে লাথিটা পরলো তারা আমাদের চারিপাশ ছাইপাশ মানুষগুলো।যারা দিন আনে, দিন খায়ে।

দয়া করে অতি চালাক হয়ে কেউ নিজের আশে পাশের সব্জি মাসি, মাছওয়ালা, কাজের দিদিকে এই সুযোগ এ ৫০০ টাকা গছিয়ে দিয়ে নিজে দায়মুক্ত হবেন না। বিশ্বাস করুন ওই লাথি টা ক্যাঁৎ করে লাগবে পেটে। এক পেট খিদে, সারাদিনের ঘাম, অপমান, রক্তবমি করে ফেলতে পারে। মোছার লোক থাকবে না।

আসলে আমরা যারা ছেঁড়া, ফাটা নোট প্রথমেই ওদের গছিয়ে দিই, চুরি গেলেই ওদের ঝোলা সার্চ করাই, আবার প্রবল খাটিয়ে মোক্যাম্বোতে খাওয়াতে নিয়ে যাই তারাই এটা করবো।

আমরা যারা আজন্ম মধ্যবিত্ত হয়ে গাড়িয়া থেকে বিবাদি বাগ মিনিতে করে গেলাম, মেট্রোতে বিহারি মুটে উঠতে দেখলে নাক শিঁটকে গেলাম আর বলাবলি করতে থাকলাম তাদের থুতু ফেলার বদ অভ্যাস নিয়ে, আমরা যারা কেউ দেখছে না ভেবে নাকের পোটা বা চিউয়িং গাম হোটেলের দেওয়াল বা রেঁস্তরা টেবিল এ চিপকে দিই, আমরা যারা পূজোর বাজার করতে কোয়েস্ট মল যাই আর ফেরার পথে গড়িয়াহাটার ফুটপাথ থেকে মালতীদির জন্য তিনশো টাকার শাড়ি কিনি।তারাই এটা করবো।

আমরা বাসে উঠেই ঘেমো গন্ধকে ঘৃণা করিনা? বা যে গ্রামের মেয়েটি প্রথম বাসে উঠে টানা বমি করে চলে তাকে উপদেশ দিই না টাক্সি করে যাওয়ার? সাথে আবার জানালার ধারে বসার টোটকা ও তো দিই বিনামূল্যে।

কারন আমরা ধনীদের ভয় পাই। গরীবের পেছন মেরে শান্তিতে ঘুমাই। একটা ডায়েট কোক ৩০ টাকা দিয়ে কিনি, থাকে ২০০এমএল, বাকিটা প্যাকেজিং। আর একটা ডাব ২৫টাকা শুনলেই বাব্বা, এত দাম!!

৫০০ টাকার সাথে সাথে এ সব ও যদি বদলানো যেত।

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment