| শ্রাবন্তীর পুনঃবিবাহ আর কালেক্টিভ ছিছিক্কার |
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
কিশোর কুমার চারবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল। একবার তো নিজের ছেলের পাত্রী দেখতে গিয়ে ডাগর মেয়েটিকে এতো পছন্দ হয়ে যায় যে নিজেই বিয়ে করে ফেলেন। কিশোর কুমার কে আমরা গুরু বলি। বারো ভাতারি না।
সেরকমই সত্যজিৎ রায় নিজের সম্পর্কে দিদি বিজয়াকে বিয়ে করেন। করতেই পারেন৷ প্রেম পেলে যাকে খুশী তাকে ছোঁ। আমরা বান দিয়ে কোন চার অক্ষর বসিয়ে গাল পাড়ি তাই বলে?
এসব তো মহাপুরুষ। মহাপুরুষের সাত খুন মাফ হতে হয়। ঘরের কাছে আমাদের বুম্বাদাকে নিয়ে কথা বলি চলুন। রসিক মানুষ উনি। তিনবার বিয়ে করেছেন। এই অপরাধে বাংলা ওকে 'পোসেনজিত' বলার সাহস দেখিয়েছে কিন্তু কাউকে বেশ্যা বলে ডাকতে শুনিনি।
আমরা বাঙালি জাতি নিজেদের যাবতীয় কিছুর ধারক ও বাহক ভাবি৷ কোন বিহারি দেখলে খোট্টা বলে ডাকি তাকে আর ঘামের গন্ধমাখা ঝলমলে জামা পরতে দেখলে গাঁইয়া। আমাদের দারুণ গর্ব রামমোহন আর বিদ্যাসাগর নিয়ে কিন্তু আদপে সযত্নে ২০১৯ সালের করোটিতে ১৯১৯ সালের নর্দমার পচাজল ধরে রাখি। মাঝে মাঝে নখ, দাঁত বের করে তারা।
শ্রাবন্তী বলে এক মিষ্টি দেখতে সাধারণমানের অভিনেতা আছে। সাধারণই। অসাধারণ হলে হয় স্বেচ্ছাচারী বা তাসলিমা নাসরিন বলা হতো। তো এই সাধারণ অভিনেতার ইচ্ছে হয়েছে সে তৃতীয় বিয়েটা করবে। প্রথম দুটো ভুল সিদ্ধান্ত হয়তো তৃতীয়বার ঠিক হবে। তার বিয়ে, তার টাকা, তার টোপর। কার বাপের কি? এটাই তো সভ্য ভাবনা। কিন্তু আমাদের প্রগতিশীল অনলাইন দুনিয়ার মনে হয়েছে এটা বেশ মুচমুচে একটা বিষয় ছিছিক্কার করার। কারণ মেয়েদের অর্গাজম যেমন থাকতে নেই সেরকমই বহু পুরুষে আসক্তি থাকতে নেই। থাকলেও বা এক পুরুষ ছেড়ে নতুন পুরুষ নিয়ে ঘর বাঁধলে ধরে নিতে হবে মেয়েছেলেটার চরিত্রে কাদা আছে, মা বাবার শাসনের অভাব ও আছে। মেয়েটির মায়ের ও চরিত্র খতিয়ে দেখা হতে পারে। গসিপের Add On আবার শ্রাবন্তীর ছেলে। কে কার সাথে শোবে তার ক্যালকুলেশন করছি প্রোফাইলে প্রোফাইলে আমরা।
আমরা মানে যারা বিপ্লবী হয়ে মোমবাতি জ্বালাই ধর্ষণ হলে আর যারা ভাবি মেয়েদের নাইট শিফট থেকে ফেরা আর খদ্দের খুশী করে ফেরা সমান। আমরা যারা মেয়েদের দোষ খুঁজি বাচ্চা না হলে আর শ্বশুরবাড়িতে মার খেলে বলি, মানিয়ে নে মা।
আমরা যতই হতাশ হয়ে বলি, মেয়েরা পুরুষদের থেকে অনেক সুবিধা পাচ্ছে, স্রেফ মেয়ে বলে প্রোমোশন পাচ্ছে, পাখনা গজিয়ে যাচ্ছে মুক্ত হাওয়ায় , আদপে কিন্তু আমরাই লাটাই ধরে। উড়তে দিচ্ছি অফিসে, মলে, মিটিংয়ে, মিছিলে, রাতের চাদরে।
আমাদের ঠিক করে দেওয়া এই গন্ডির মধ্যেই হতে হবে এদের বিচরণ৷ ওই যে চিড়িয়াখানার বাঘেদের যেমনটা হয়। এর বাইরে বেরিয়েছো কি সাত কান্ড শেষে ঘরে ফিরে অগ্নিপরিক্ষায় বসানো হবে। দেগে দেওয়া হবে বাছা বাছা চার অক্ষরে। কারণ তুমি হয় মেয়েমানুষ, মেয়েছেলে বা মাগি।
মন্দ মেয়ে হয়ে সবাই বাঁচতে পারেনা। গুটিকয়েক সুচিত্রা সেন, অপর্ণা সেন ছাড়া। বাকি যারা সাধারণ তাদের জন্য বহুবিবাহ শেষে পদবী রাখা থাকে- বারো ভাতারি।
অর্ধেক আকাশ নিয়ে কাব্য করে বা নারী দিবসের গোলাপফুলে এ শুদ্ধ হবে না। হবে যেদিন কাগুজে পুরুষসিংহের হাতের লাটাই টা হাতেই থাকবে আর ভোকাট্টা বলে পাগলী ঘুড়িটা দূরে অনেক দূরে ভাসতে ভাসতে গিয়ে পরবে যেদিকে ইচ্ছে মন চায়।
©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ