কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Saturday, September 24, 2016

| মোগ্যাম্বো, মধ্যবিত্ততা আর ঘামের গন্ধে অসুখ |


আমরা প্রত্যেকে এক একটা মোক্যাম্বো সেজে ঘুরে বেরাচ্ছি। হাগছি, মুতছি, মদ খেয়ে আবেগময় সেল্ফি তুলছি।
সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে মোক্যাম্বোর নগ্নতা পৃথিবীর সামনে এসেছে। কিন্তু ক্ষতটা কি আরো গভীরতর নয়?
আমরা যারা আজন্ম মধ্যবিত্ত হয়ে গাড়িয়া থেকে বিবাদি বাগ মিনিতে করে গেলাম, মেট্রোতে বিহারি মুটে উঠতে দেখলে নাক শিঁটকে গেলাম আর বলাবলি করতে থাকলাম তাদের থুতু ফেলার বদঅভ্যাস নিয়ে, আমরা যারা কেউ দেখছে না ভেবে নাকের পোটা বা চিউয়িং গাম হোটেলের দেওয়াল বা রেঁস্তরা টেবিল এ চিপকে দিই, আমরা যারা পূজোর বাজার করতে কোয়েস্ট মল যাই আর ফেরার পথে গড়িয়াহাটার ফুটপাথ থেকে মালতীদির জন্য তিনশো টাকার শাড়ি কিনি, ক্ষতটা তাদের।
আমরা বাসে উঠেই ঘেমো গন্ধকে ঘৃণা করিনা? বা যে গ্রামের মেয়েটি প্রথম বাসে উঠে টানা বমি করে চলে তাকে উপদেশ দিই না টাক্সি করে যাওয়ার? সাথে আবার জানালার ধারে বসার টোটকা ও তো দিই বিনামূল্যে।
যেভাবে বিনামূল্যের সরকারি হাসপাতালের বেড পেতে আমরা চেনা বিধায়ক কে মাঝরাতে ফোন করি, নিখরচায় চিকিৎসা করাই আর বাড়ি ফিরে সরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামোর মুণ্ডপাত করি।
আমার দিদার বাড়িতে 'জমাদার ঢোকার' পিছনের গেট ছিল, অনেকের বাড়িতে তো সুন্দর লোহার প্যাঁচানো সিঁড়ি থাকতো। যেরকম পৃথক বাথরুম থাকে বাড়ির ২৪ ঘণ্টার কাজের মাসির। তার বাথরুম এ হিসু করে আসাই যায় অন্য বাথরুমে কেউ গেলে, কিন্তু মাসি যদি ভুলেও আমাদের বাথরুম এ ঢোকে, নিশ্চিত চারিদিক নোংরা করে রাখবে বা কলের প্যাঁচ কেটে যাবে। যাবেই।
আসলে আমরা প্রত্যেকে এক একটা মোক্যাম্বো সেজে ঘুরে বেরাচ্ছি। হাগছি, মুতছি, মদ খেয়ে আবেগময় সেল্ফি তুলছি ভিখিরি মায়ের সাথে। হাতে তুলে দিচ্ছি আধ খাওয়া চোকোলেট। পুরোটা ফেসবুক লাইভ এ। হাজার লাইক তারপর বিস্মৃতি। যে পরিমান লাইক তার সম পরিমান চাল যদি ফুটপাথ পেত, এক সপ্তাহ চলে যেত ওদের।
যে মহৎ আত্মা গুলো ফি বছর পূজোর সময় ঢাক ঢোল পিটে কিছু পথশিশু জোগাড় করে, নতুন জামা কিনে, মিডিয়া ডাকে আর তারপরই মোক্যাম্বো সেজে ওই বাচ্চা গুলোকে সামনে রেখে নিজেদের প্রচার করে, তাদের সামনে আয়না রাখা হবেনা? ওদের মাথায় কি খোদাই করে মোক্যাম্বো গুলো লিখে দেয় না "রাস্তার ছেলে মেয়ে"?
মোক্যাম্বো আমাদের ভিতরেই আছে। সে রোজ সকালে জেগে ওঠে বাসে, ট্রামে, ইউরিনাল এ। রোজ সকালে আমরা তিনবার ভাবি, ড্রাইভার এর পাশের সিটে বসবো কিনা নিজের গাড়িতে।
রোজ আমরা মোক্যাম্বো সেজে খিস্তি করি হাগরে হাবাতেদের। আবার বিশাল প্রতিষ্টান কাদায় পরতে দেখলেও সমস্ত রকম খেউর করি। তা কখনো হয় ম্যাগি বা মোক্যাম্বো। বড় কোম্পানি কে ছোট থেকেই সন্দেহের চোখে দেখতে শেখানো হয় আমাদের।
মোক্যাম্বো দিয়েই শুরু হোক বদল। আমরাই তো ঘেমো জামা, ময়লা প্যান্ট আর থতমত মুখ রেঁস্তরায় পাশের টেবিল এ বসলে ফিসফাস করি, কোথার থেকে সব গাঁইয়াদের তুলে এনেছে। পয়সা থাকলেই হয় না বাওয়া!!! সফিস্টিকেশন আর বনেদিয়ানা আলাদা ব্যাপার।
আমরাই তো কথায় কথায় বলি tacky, বলি LS। আমরাই তো মানসিক ভারসাম্যহীনদের পাভলব এ নগ্ন করে, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি। বাড়ির সামনে ঘেমে নেয়ে ফেরিওয়ালা এসে বসলে দূর ছাই করি বা ছেলে ধরা ভাবি।
ভাগ্যিস নবারুণ বেঁচে নেই। মোক্যাম্বোর সামনে নয়তো জমা হত ময়লা কাপড়, বাংলা মানে বই, তাল তাল গু। রাতে এসে আপনাকেও গা ঘোঁষে ঘোঁষে ধুতে হত, সুগন্ধী সাবান, স্ক্রাব দিয়ে। তারপর ফের মুছতে হত নরম তোয়ালে দিয়ে। আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মোক্যাম্বো কবে ঝাপ বন্ধ করবে? সেদিন ব্রিগেড জুরে মোচ্ছোপ করা হবে।
বিশাল মাঠ জুরে কলা পাতা, বসার জন্য খবরের কাগজ। রাম, ফ্যাপড়া বড়া, ডিম সেদ্ধ, সেদ্ধ ছোলা, বিট নুন, গরুর ঝাল, শুয়োর ভাজা। সাথে গলা খুলে গান।
ড্রাইভার এর গান, মুটে মজদুরি গান, কলেজ পালানোর গান, মায়ের গলায় ছোটবেলায় শোনা গান। দুপুরবেলা গরম ভাত, ঘি, তেলের বড়া, শুঁটকিমাছ এর ঝাল, সকালের বেঁচে যাওয়া গরুর ঝাল, শুয়োরের ঝোল হোক।
DECLASSED হবেন তো আসুন না হলে দুদিন এর খ্যামটা ডিলিট করুন।
-----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

No comments:

Post a Comment