কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Tuesday, February 18, 2020

একরত্তি সেলভা,আব্দুল্লাহ আর এক মজার খেলা

| একরত্তি সেলভা,আব্দুল্লাহ আর এক মজার খেলা |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

চার বছরের মেয়েটির নাম সেলভা। আপেলের মতো লাল গাল। মায়া পড়ে যায় এমন দুটো চোখ। বাবার চোখের মনি সেলভা। বাবার নাম আব্দুল্লাহ। ওরা সিরিয়ার ইদলিবে থাকে। ইদলিব সিরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর আলেপ্পো থেকে সামান্য দূরে। ছবির মতো শহর ছিল ইদলিব।

একদিন বৃষ্টি ফোটার মতো বোমা পড়তে শুরু করলো ওই শহরে। যে রাস্তা দিয়ে আইসক্রিমওলা হাঁক পেড়ে যেত, সেখানে কামান নিয়ে এলো লোকে। এক এক করে বাড়ি দেওয়ালের চুনের মতো ঝাড়ঝুড় করে মাটিতে মিশে যেতে লাগলো সব।

হামলার মুখে ইদলিবের বিভিন্ন অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে যেতে লাগলো হাজার হাজার মানুষ। আব্দুল্লাহ ও সেলভা আর ওর মাকে নিয়ে পালিয়ে এলো ক্যাম্পে। রোজ যুদ্ধবিমান এসে গুঁড়িয়ে দিতে লাগলো আব্দুল্লাহদের ফেলে আসা পাড়া, চিলেকোঠার ঘর, চৌকাঠ, দালানের সবটা। ধোঁয়া জানান দিলো ঘর জ্বলে গেছে ওদের। 

সিরিয়ার শিশুরা যুদ্ধ বিমানকে ভয় পায় খুব। একটা যুদ্ধ বিমান যাওয়ার মানে অনেক কিছু সাথে করে ওর চলে যাওয়া। ঘর, বাড়ি, মা বাবার লাশ। পৃথিবীর সব শিশুই বোধহয় ভয় পায় যুদ্ধ বিমান। কেঁদে ফেলে ওর শব্দ শুনে। চার বছরের সেলভা ভয় পায় না যুদ্ধ বিমানকে। 

সেলভাকে আব্দুল্লাহ একটা মজার খেলা শিখিয়েছে। যখনই যুদ্ধ বিমানের শব্দ পাওয়া যায় ওরা দুজন মিলে খুব জোরে হাসির প্রতিযোগিতা  করে। কে কতো জোরে হাসতে পারে তার প্রতিযোগিতা, কার হাসির শব্দে ওই বিচ্ছিরি পচা আওয়াজটা ঢাকা পড়ে যায় তার প্রতিযোগিতা।

সেলভা যুদ্ধ বিমান এলে ভয় পায় না আর। যখনই যুদ্ধ বিমানের শব্দ পাওয়া যায় গভীর রাতে, ওরা সব্বাই এই মজার খেলাটা খেলতে শুরু করে। বাড়ির সব্বাই মিলে সেলভার সাথে খুব জোরে জোরে হেসে যুদ্ধ বিমানদের হারিয়ে দেয়। যুদ্ধ বিমানরা একদিন ঠিক হেরে যাবে। বেঁচে থাকবে আব্দুল্লাহ আর সেলভারা। বেঁচে থাকবে সন্তানের কপালে চুমু খাওয়া গুলো। বেঁচে থাকবে বাবার শেখানো যুদ্ধকালীন মজার খেলাগুলো। 

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

তাপস পাল

| তাপস পাল |

---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 

নার্গিস বেগমকে মনে আছে? নার্গিস দত্ত না, বেগম। মনে পড়ছে? না? বেশ! নার্গিস বেগম তৃণমূলের বিধায়ক। বিধানসভায় প্রকাশ্যে বাম বিধায়ককে ধর্ষণের হুমকি দেন এই জনপ্রতিনিধি। 'তোমার ধর্ষণ হবে'।

আপনার অবশ্য নার্গিস বেগম নামটা মনে থাকবে না বেশীদিন। নার্গিস, তাপস পাল না। কিন্তু পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদরা সত্যি সত্যি কিন্তু ছেলে ঢুকিয়ে দিতে পারে ঘরে। বউ-মেয়েকে ধর্ষণ করে চলে যায় বিরোধী দলের দাদার ছেলেরা। ওটা ও গ্রাম দখলের লড়াইয়ের অংশ। পুলিশ ধর্ষণের মামলার থেকে বেশী জোর দেয় "রাজনৈতিক বিবাদ দীর্ঘদিন ছিল অভিযুক্ত ও নির্যাতিরার পরিবারের" - এই কয়েকটি শব্দে। পুলিশ তাপস পাল না। আপনার মনে থাকে না ওই বাইটের অংশ।

তাপসের পালের দেহ ছাই হয়ে গেলে ও গমগম করে তার "ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেবো" বাজবে। "চরণ ও ধরিতে দিও গো আমারে" সেখানে কই? ঠিক সেইভাবে সঞ্জয় দত্ত যতই 'সঞ্জু' বানাক, পাবলিকের কাছে ও টেরেরিস্ট। অমিতাভ বচ্চন মারা গেলে ও দেখবেন বোফর্স কামান আর রেখা ট্রেন্ড করবে। কারণ এরা তারকা। নার্গিস বেগম বা তাদের মতো সাধারণ না। এদের কৈফিয়ত দিতে হয় না রোজ, সমালোচিত হতে হয় না আজীবন। একবার করা কোন উক্তি যুগের পর যুগ হন্ট করে না। 

তাপস পাল মারা যাওয়ার পরে তার যৌবনের ছবিই মনে রাখতে চাইছে দেখি লোকে। তা কী হয়? সুমন চাটুজ্যেকে স্রেফ মনে রাখবেন আর কবীরকে বাদ দেবেন? ভূমি সংস্কারকে মনে রাখবেন, নন্দীগ্রামকে বাদ দেবেন? বিধানসভার ভাষন মনে রাখবেন, বিধানসভা ভাংচুরের ঘটনা বাদ দেবেন?

তাপস পাল বোকা ছিল। বেশীরভাগ হিরোরা যেমনটা হয়ে যায়। রাজেশ খন্না যেমন ছিল, মনোজ তিওয়ারি যেমন। তারা রুপোলী জগতের সংলাপ নির্বাচনী এলাকায় বলে আসেন। তাপস পাল ও সস্তা হাততালি পেতে বলেছিলেন। আমার ভয় লাগে সেই মানুষগুলোকে যারা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল সেদিন তাপস পালের 'ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেবো " শুনে। ওরা আমাদের চারপাশেই ঘুরছে। 

মারা যাওয়ার দিনটা সিনেমার শেষ সিনের মতো। ভিলেন শুয়ে আছে। কোন সংলাপ নেই। কোন বন্দুক নেই। আক্রমণ করবে না। আপনি নায়ক হিসেবে চাইবেন এরকম একটা সিনে টানা গুলি মেরে যেতে ওই শরীর লক্ষ্য করে? ওটা তো কাপুরুষেরা করে। আজ না হয় ক্ষমা করে দিলাম চন্দননগরের ছেলেকে। এই ক্ষমার রাজনীতি, ভালোবাসার রাজনীতিগুলোই জিতবে। এগুলো জিতলেই বুঝবেন ফের কোন এক সাহেব নিজের ক্যারিয়ার ভুলে নিঃস্বার্থভাবে নিজের কিডনিদান করে দিয়ে চলে আসবে৷ আগামীর জন্য সবচেয়ে আগে এই ঘৃণা বর্জনটা জরুরি। বিদায় তাপস পাল। হাসিটা মনে থাকবে। 

©------ ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ