কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Monday, August 7, 2017

| রবি ঠাকুরকে গনহত্যার মামলায় সমন |

| রবি ঠাকুরকে গনহত্যার মামলায় সমন |

©---ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই তুমি?
যে বৈশাখ বদলে দিলো জন্মভূমি।
মধ্যবর্তী যেই বা আসলো খরকুটো,
শ্রাবণ মাসের বাইশে সমন/
মৃত্যু গুনি।

গুরুদেব প্রনাম। আপনার লেখা পড়ে বড়ই আনন্দ অনুভব করি। কিন্তু এই চিঠি লিখে আমি আপনার লেখা গান, কবিতা বা গদ্যের প্রশংসা করতে পারলাম না। আমি অপারগ।

এই লেখা মারফৎ আপনাকে সমন করা রবীন্দ্র সদন চত্বরে। একটি মৃতদেহদের আদালতে।

শ্রী রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আপনার বিরুদ্ধে IPC 301,302,306, 307 সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে কিছু মৃতব্যক্তি। জীবদ্দশায় তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাফসোল কবি, ক্ষ্যাপা লেখক বা চিত্রকর হিসেবে পরিচিত ছিল।

আপনার হাতে যদি শতবার হাত ধোয়ার পরেও দোয়াতের কালি লেগে থাকে,তবে তা আপনার ভ্রান্তি। কলম বিলাস কখন ক্ষমতার উৎস হয়ে উঠেছে আপনি নিজেও জানেন না। ভালো করে গোল চশমা পরে হাত দুটো দেখুন। দেখবেন তাতে রক্ত লেগে কত অখ্যাত লেখকের। যারা আপনার তলায় চাপা পড়ে গেছিল।

অনেক দিস্তা কাগজ কলম খরচা করেও নতুন কিছু লিখতে পারেনি। প্রতি বছর প্রতি রাতে পায়চারি করেছে এ ঘর ও ঘর। যাই লিখতে গেছে, আপনি তা অনেক বছর আগে লিখে ফেলেছেন। বেচারা লিখে আবার কুচি কুচি করে সেই কাগজ ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। কেবল সিলিং ফ্যান সাক্ষী ছিল এদের ব্যর্থতার। এদের না লিখতে পারা গল্পের। এদের না ভাবতে পারা মৌলিকতার। শেষে ওই সিলিং ফ্যানেই গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পাওয়া গেছিল এদের। এক বিশাল গোলাছুটের মাঠে।

যেভাবে সারাজীবন কেরানি হয়ে থেকে গেছিল কেউ কেউ কারন লেখক হতে চাইলেও নতুন কিছু লিখতে পারেনি। পারেনা। তবে পড়তে ভালোবাসে। পড়েও। পানু থেকে কামু।

আপনার সাথে আমার পরিচয় নিতান্তই বাড়ির চাপে। জোর করে মা দুটো গান আর তিনটে কবিতা মুখস্থ করিয়ে রেখেছিল। যেখানেই হোক, আউড়ে দিতাম। এতে শুনেছি মায়ের শান্তিতে ঘুম হতো।

এভাবে জোর করতে করতে একদিন কিছু কথার মানে বুঝতে শুরু করি। মানে বুঝে মন দিয়ে গেয়ে ফেললাম কিন্তু আপনার স্বঘোষিত স্তাবক-চ্যালার দল আমাদের ধমকালো। " বাবা, রবি ঠাকুরের গান রবিন্দ্রসঙ্গীত এর মতো গাও, এটা লাড়ে লাপ্পা নয়। একটু সিরিয়াস হও!!!!

কিভাবে হই। কিভাবে গাই। আমার তো WALKMan প্রজন্মে জন্ম। পরদেশী পরদেশী জানা নেহি গাইতে বেশি আনন্দ। এ আর রহমান আর চন্দ্রবিন্দু ভগবান। আপনি তো কেবল মা বাবার শাসন আর ইচ্ছেতে। আমার কৈশোরে বিনোদ রাঠোর। আমার কৈশোর এ বাড়ির শক্ত শাসন হারমোনিয়াম এর।

গুরুদেব আপনি অজান্তেই বহু মানুষের, বহু প্রতিভা, বহু সম্ভাবনার অকাল মৃত্যুর কারণ। তারা আপনার তলায় পিষ্ট হয়ে থেকে গেছে রবীন্দ্র সদন এর গাছে, নন্দন এর পাচিঁলে বা মোহরকুঞ্জতে। এদের সাধারণ মানুষ ভূত, দৈত্য বা পিষাচ বলে- আমরা বলি ব্যর্থ।

এরা এতটাই ব্যর্থ আর অপদার্থ যে পঁচিশে বৈশাখ এরা অদ্ভুতুরে কান্ড ঘটাতে পারে না, রবি ঠাকুর কে ভেঙে চুরমার করে একটা নতুন লেখা, ছবি, একটা গান গাইতে, লিখতে পারে না। ভয় পায়। গরুর মাংস ফ্রিজে রাখলে যে ভয় আছে আরকি।

আজ পচিশে বৈশাখ আপনি আসুন এই মৃতদেহ গুলোর সামনে। সালিশি হোক। আপনি কি সত্যিই গোঁড়া ছিলেন না ওই বাটিক ছাপ রাবীন্দ্রিক মৌলবিরা আপনার আপাদমস্তক মোল্ডিং করে? ঠিক যেভাবে প্যালেস্টাইন এর যিশু কখন যেন গির্জার শৃঙ্খল এ ফাদার এ বিদ্ধ। আপনি ও তো বিদ্ধ। সিনেমা শুরুর আগে। একজন ও না দাঁড়ালে সে এন্টি-ন্যাশনাল।

আপনার মত লিখতে হবেই? গাইতে হবেই? একই বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতে হবেই আপনার সুরে? না করলেই নাম খোদাই করে দেওয়া হবে কপালে- জর্জ বিশ্বাস?

হাজার হাজার মৃত কবি,লেখক, গায়ক আজ এসেছে আপনার কথা শুনতে। আপনি আসুন। আপনার ওজনে দুমড়ানো মোচড়ানো প্রতিভাগুলো একসাথে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে। বুকে নতুন কিছু আইডিয়া, একটা কথার মোচড়, কিছু সুর ঠাসা বিস্ফোরক নিয়ে।

আপনি নেমে আসুন কবি। ধর্ম নিয়ে ফের লিখতে হবে। মুক্তমনাদের চাপাতির কোপ থেকে বাঁচানোর জন্য লিখতে হবে। কানামাছি খেলার মত যাকে পাবি তাকে দেশবিরোধীর তকমা লাগানোর বিরুদ্ধবাদ করতে হবে। ভারতবর্ষ মানে যে শুধু হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থান নয়, সে গান গাইতে হবে।

সেদিন বিধাতা একা রবেন বসে, নীলিমাহীন আকাশে, ব্যক্তিত্বহারা অস্তিত্বের গনিততত্ব নিয়ে।

ছ'ফুট তখন জোব্বা পরে, অস্থির পায়চারি করছে। পাশের গ্রামের কালো হরিন চোখে কে বা কারা যেন এসিড ছুঁড়ে মেরেছে। ছোট নদীর মাঝিকে কে যেন হুমকি দিয়ে গেছে। নৌকায় ভারত মাতা কি জয় লেখা বাধ্যতামূলক। লালন সাঁই কি অহিন্দু? রামনবমীর দিন ঘর ওয়াপসির তোরজোড় করছে এক দল। একতারার বদলে ত্রিশূল নিতে হবে। ওদিকে একের পর এক ধানের গোলা জ্বলছে গুজবের আগুনে।

রেডিওতে সদ্য জন গন মন শেষ হল। এবার অনন্ত, অসংখ্য, লোকে লোকান্তরে এ বানী ধ্বনিত হবে। হবেই। মিঁত্রোওওওওও...............

---©---ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Thursday, August 3, 2017

টেস্টনি আসলে হ্যাকিং ও সমস্ত তথ্য চুরির বেষ্টনী |

টেস্টনি ক্লিক করা বন্ধ করুন নয়তো প্রস্তুত থাকুন হ্যাকিং,স্প্যামিং ও তথ্য অপপ্রয়োগের।

একেই বোধহয় বলে বিশ্বজোড়া ফাঁদ। চিটফান্ডের চেয়ে অমায়িক, জোচ্চুরির চেয়ে আধুনিক, যেচে প্রশংসার থেকে স্বাস্থ্যকর।

ভাবুন তো কয়েক বছর আগেও থার্ড পার্টি ভেন্ডারদের কি কাল ঘাম না ফেলতে হত ডেটা সংগ্রহ করতে। মলের সামনে কাগজ হাতে, ফোন কম্পানিগুলোকে ঘুষ খাইয়ে, কলেজের ছেলে মেয়েদের প্রতি ১০০ ডেটাবেস প্রতি অর্থ দিয়ে।

তারপর এল সেই বৈপ্লবিক বিপণন বুদ্ধি। সোশাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে, মজার ছলে, অজান্তে সব তথ্য নেওয়া ও সিলেক্টিভ ইউজের সম্মতি নিয়ে তথ্য হাসিল। টেস্টনি আসলে তাই। একটা ডেটা কালেকশন সফটওয়্যার। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন স্যাম্পল সাইজ, সেগমেন্ট, কনজিউমার ভাগ করে বিভিন্ন সহজ খেলা, ফ্যান্টাসি গেম, ইম্যাজিন ও রোল প্লে গেম খেলা।

শুধু একটা ছোট্ট গল্প আছে। এই খেলার বা কুইজের রেজাল্ট পেতে গেলে আপনাকে আপনার মোবাইল ও প্রোফাইল এর সমস্ত তথ্য ব্যবহার ও সংগ্রহ করার অনুমতি দিতে হবে। আপনি উত্তর জানার আনন্দে ঝটপট দু তিনটে বোতাম টিপে ওকে বলে দেন। ডট ডট ঘুরতে থাকে, আপনার ডেটা কালেক্ট করা হচ্ছে বলা হয়, একটা থার্ড পার্টি ভেন্ডার যার প্রোফাইল জানেন না, ওয়ার্ক প্যাটার্ন জানেন না, কোথায় রেজিস্টারড জানেন না, তাকে সমস্ত তথ্য দিয়ে দেন। ভাবেন জুকারবার্গ সামলে নেবে।

না আসলে ফেসবুক দায় নেবে না। ফেসবুক ক্যান্ডি ক্রাস বা ফেসবুক লাইভের দায়িত্ব নিতে পারে কিন্তু ফেসবুক পলিসিতে কোথাও টেস্টনি বা তার মত হাজার খানেক জেনে নিন অমুক, দেখে নিন তমুক সাইটের দায়িত্ব নেয় না।

শ্রীজিত, মীর,শ্রীজাত বা এদের মত আরো কয়েক ডজন তারকা দেখি এদের ফাঁদে পা দিয়েছেন। মজা পাচ্ছেন, শেয়ার করছেন, বাকিদের রেজাল্ট রিপোষ্ট করছেন। আসলে অজান্তে নিজেদের অনলাইন সমস্ত তথ্য, কন্টেন্ট, ইমেল লিস্ট, ফোনবুক, সার্ফিং প্যাটার্ন, ব্রাউজিং হিস্ট্রি এক অজানা, অচেনা থার্ড পার্টিকে দিয়ে দিচ্ছেন। এদের কোন একাউন্টেবিলিটি আছে? কোটি কোটি যে তথ্য এরা জোগাড় করছে তা কিসে ব্যবহার হবে আমরা জানি? স্প্যামিং বা হ্যাকিং হবে না এই তথ্য ব্যবহার করে কোন নিশ্চয়তা আছে?

টেস্টনির সাইটে পরিষ্কার লেখা আছে তারা ব্যাবসাহিক কাজে আপনার তথ্য ব্যবহার করবে। আপনি হয়তো নিউজলেটার, মেল, এসএমএস পেতে পারেন হাজার প্রোডাক্ট সম্পর্কিত। তারপরই লেখা এটা আমেরিকা ও ইউরোপ এর দেশগুলিতে প্রযোজ্য। অর্থাৎ ভারতে এর ক্ষেত্রে এর ইউটিলিটি স্পষ্ট নয়।

আসলে মজার ছলে এসব খুনসুটি। কেই বা এত কিছু ভাবে? কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর লড়াইটা তো ছিল তথ্যের অধিকার ও রাইট টু প্রাইভেসি- একই সাথে। ডেটা ইস দি নেক্সট ওয়েল।

আপনার ফোনবুক, কত ঘন্টা কথা বলেন, মাঝরাতে কোন সাইট দেখেন, কোন ছবি ডাউনলোড করেছেন, কোন প্যাটার্ন সাধারণত থাকে পাসওয়ার্ড এর, কার সাথে কোন শব্দ সবচেয়ে বেশী বার ব্যবহার করেছেন- এদের সব জানা চাই। বা হুক অর বা ক্রুক। না জানতে পারলে কেমিক্যাল ওয়েপেনের মত টেস্টনি ছড়িয়ে দাও। বোকা বোকা সাদৃশ্য,অলীক কল্পনা, জনপ্রিয় চরিত্রায়ন করুন। করতে বাধ্য করুন। টকিং পয়েন্ট হবে। আরো ক্লিক অর্থাৎ আরো ডেটা।

আমরা সবাই দিবাস্বপ্ন দেখি। সবাই লুকিয়ে থাকা সুপারহিরো পুষি আর তার সাথে সামান্য মিল কেউ মিলিয়ে দিলেই জাহির করি। কেউ আসলে কথা বলি না। একে অপরের উত্তর পড়ি। মজা পাই যখন নিজেকে টেস্টনি সিনেমায় সত্যজিৎ, কবিতায় সুনীল, ঔরসে বাহুবলী ও রাজনীতিতে মমতার সাথে তুলনা করে। খিল্লি করি, অবাক হই, জাহির করি, ট্যাগ করি, খিস্তি করি কিন্তু শেয়ার করি। করতেই থাকি।

ফোর জি লাইফকে জিংগালালা করেছে। মুঠোয় অগাধ নেট ডেটা কিন্তু সেই নেট ডেটা ব্যাবহার করতে শিখুন। আপনার নিজেকে শক্তি, সুনীল, বুদ্ধদেব, বিবেকানন্দ ভাবতে ভালো লাগতে পারে কিন্তু নিজের সমস্ত প্রাইভেসি সমর্পণ করে নয় নিশ্চই।