কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Saturday, June 24, 2017

| ধর্মনিরপেক্ষ বিরিয়ানি |

| ধর্মনিরপেক্ষ বিরিয়ানি |

----ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

ধর্মনিরপেক্ষ বিরিয়ানি বানানো সহজ নয়। তবে কলকাতা বানাতে পারে। ব্রাহ্মণ, দলিত, কাফের, কবীর, সন্ত, শেখ এক পাতে খায়। সস্তায় পুষ্টিকর, অরাজনৈতিক।

কোলকাতা ওয়াজিদ আলি শাহের। বিরিয়ানির। বিরিয়ানির নরম আলুর। কাঠি রোলের। এখানে চাড্ডি, চাড্ডির অতি দেশভক্তি আর নিরামিষাশী হিন্দি হিন্দু, হিন্দুস্থানের জায়গা হল কবে?

ওয়াজিদ আলি শাহ বড় খুশবুদার খানার সৌকিন ছিলেন। শোনা যায় বিরিয়ানিতে আলু তার কল্যানেই। ছোড় চলে লক্ষ্ণৌ নগরী, ওয়াজিদ কো দিল কে নসদিক কলকাত্তা মিলি।

অবস্থা খারাপ, পয়সা নেই বললেই চলে, ব্রিটিশ পেনশেন ও অনিয়মিত কিন্তু নবাব এর বিরিয়ানি, গোস্ত, শাহি টুকরা চাই। হাত ধোয়ার রুপোর গামলা হাতে লোক চাই, অল্প মিঠে, অনেকাংশ লালচে হবে নরম পাতার পান চাই, পিক ফেলার দান।

নবাবের ফরমায়েশ। মেটিয়াবুরুজ থেকে মোমিনপুর, বন্দর, ময়দান, ডোমজুর, অধুনা হেস্টিংস দৌড় দৌড়। এখান থেকে চাল তো ওই বাজার থেকে জাফরান ও মশলা। স্বাদের খোঁজ, ফেলে আসা লক্ষ্ণৌর হেঁসেলের দীর্ঘশ্বাস।

লক্ষ্ণৌর অওয়াধি বিরিয়ানির অনুপ্রেরণা নিয়েই কোলকাতায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিরিয়ানি। "মুসলিম নবাবের" কল্যানে। জনগনতান্ত্রিক ভাবে এর রান্না শিখেছে শহর। ভরপেট ৮০টাকা প্লেট। যে বিরিয়ানি সিপিএম, তৃনমূল, বিজেপি, হিন্দু, মুসলিম, নিমাই বা নেওটিয়া নির্বিশেষে খায় চেটে, চুষে, ঢেকুর তুলে।

ঐতিহ্যশালী পুক্কি প্রথা মেনেই রান্না কোলকাতা বিরিয়ানি। সাথে ফেলে দেওয়া হয় আলু আর ডিম পেট ভরাতে, মাংস পরিমাণ কমাতে। বাংলা কখনোই বড়লোক নয়। দেশভাগ, দাঙ্গা, অনাহার, অন্ন চাই প্রান চাই, বেকারত্ব, চলবে না। আলু প্রয়োজন। পেট ভরে।

মশলার সঙ্গে আধসেদ্ধ করা হয় অল্প মাংস, ভেজে রাখা হয় আলু, আলতো মাখানো হয় দারচিনি, জয়িত্রী ও কেসর। সেদ্ধ করা হয় সুগন্ধী বাসমতী চাল। কোলকাতা তাই খায়।

ঈদের আগে পয়সা জোগার হয়ে যায়। করতে হয়। ঈদের দিন রাখা থাকতো এলাহি দাওয়াত। বাসমতি চাল আধ সেদ্ধ করা হয় মসলিন ব্যাগে ভর্তি মশলা দিয়ে তারপর একটা বড় থালায় সেই আধ সেদ্ধ ভাত ভালো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় |

অন্য একটা পাত্রে ডিম, মুরগি, পাঁঠার মাংসও আধ সেদ্ধ করা হয় আওয়াধি সব মশলা যেমন শা জিরে,জায়ফল,মেস,দারচিনি,লবঙ্গ ,এলাচ আর তেজ পাতা দিয়ে |

আমন্ড বাদাম গরম জলে ভিজিয়ে রাখা হয় যতক্ষণ না খোসা কুঁচকে যাচ্ছে | সঙ্গে ঘি,গোলাপ জল আর দুধে ভেজানো জাফরান হাতের কাছে রাখা হয়েছে |

এবার আসল কাজ। ডিম খানা পুরে দেওয়া হবে মুরগিতে। মুরগি পুরে দেওয়া হবে পাঁঠার পেটে। এবার পুরো আয়োজন এর মধ্যিখানে একটা বড় গর্ত বানিয়ে আস্তে আস্তে মাংসের স্টক ঢেলে দেওয়া হবে যাতে ভাত আর মাংস একসাথে রান্না হয়|

তারপর অনেকটা ঘি যাতে ভাতটা পুরো ঢেকে যাবে | এরপর হালকা করে গোলাপ জল দিয়ে হাড়ির মুখ ভালো করে আটা মাখা দিয়ে সিল করে দেওয়া হল | বিরিয়ানি দম পুক্ত করে ধীরে ধীরে অল্প আঁচে চাপিয়ে দেওয়া হয় | শেষের পনেরো মিনিট জলন্ত কয়লা হাড়ির মাথায় চাপিয়ে দেওয়া। এই কোলকাতাতেই। শহরবাসী একসাথে এক বিশাল পাত্রে খেত। নাই বা হল মুসলমান নাই বা রাখলো এক মাসের রোজা।

ভাবুন তো একদিন এই শহর থেকে এই বিরিয়ানির হাঁড়িটা, ওই একসাথে বসে গোস্ত খাওয়া, ওই কান পাতলে মিলে মিশে থাকার ইতিহাস, এই রাঁধুনি, ওই নবাব এর পরিবার, মোছলমান সব লোকেদের খেদিয়ে বার করে দেওয়া হল? দেশদ্রোহী বলে?

বর্গী  ও বিজয়বর্গীয়রা রান্নাঘর অবধি চলে এসেছে। হারে রে রে রে অস্ত্র মিছিল। ইমতিয়াজ আর আমি এঁঠো হাতে হাত রেখে। বিরিয়ানির থালা পরে। কার হাঁড়িতে কি রাঁধা হচ্ছে তার জরিপ চলছে। পছন্দ না হলেই পিটিয়ে মারা হবে। সজাগ থাকুন খেতে খেতে। একসাথে। বিসমিল্লা।

©-- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Thursday, June 8, 2017

| মুরর্গাজম |

| মুরর্গাজম |

তখন ঘ্রাণ তুঙ্গে। পাচনতন্ত্র সজাগ।

বিকেলে আনা মুরগি, মুরগির মেটে গিলে সযত্নে ম্যারিনেট করে রেখেছিলাম। দই ছিল, তেল ছিল, রসুন আদা বাটা, লাল লংকা, ধনে বাটা, নুন পরিমাণ মত।

এরপর এলো মোনালিসা জান! খুন্তি হাতে আর খুচরো কিছু জাদু নিয়ে, যা কড়াইতে মেশানো হবে।

গিলে মেটে লালচে থকথকে হবে। উপরে এক চামচ মাখন নামানোর আগে। গন্ধেগন্ধে অর্গাজম। ফুডের।

মাংসের ঝোল হবে হলদেটে। ওতে দই আছে, কাজু বাটা আছে, বাঙালি যা মশলা নিয়ে ঘর করে তার উল্লেখ আছে। এই মাংসের ঝোলের ভাগ হয়না। এটা খাওয়া উচিত ভাত দিয়ে তবে আজ রুটিতেই সই। কেনা। পাশেই জৈন ধাবা। নিরীহ রুটি জানেও না এ ঘরে কে অপেক্ষা করছে তার। জরিয়ে খাবার।

গিলে মেটে কথামতো লালচে হয়েছে। এবার কড়াই থেকে নেমে ওর সোহাগ করার পালা। ঘোলাটে পানীয়, অবিন্যস্ত বাদাম ছোলা ভাজা, ঠান্ডা জল অনেক ক্ষন অপেক্ষারত। মাখো মাখো। ঠোঁটে লাগবে, জিভে লাগবে, লাগানো হবে পানীয়, খুচখাচ, আনুষঙ্গিক যা কিছু।

এরপর কথা থাকে না। সাদা থালা রাখা থাকে। গিলে মেটে কথামতো লালচে গোটা থালা জুরে। কয়েক পিস গাজর, টমেটো, পেঁয়াজ আগলে রেখেছে স্বাদ। গম্ভীর মুখ ছিল। চামচে করে একটা মেটে মুখে যাবে। গলে যাবে। তারপর....

থাক, আর লেখা নয়। আমার লাল মাংস খাওয়া বারন অতএব মুরগাতেই ফ্যান্টাসি।

এরপর ঘ্রাণ থাক। পাচনতন্ত্রে জান থাক। আগামী মুরর্গাজম তক!

-----  ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Saturday, June 3, 2017

বাহুবলীর আফিম

আমরা বোধহয় সবসে অচ্ছে দিন আর সবসে বুড়ে দিন এর মাঝামাঝি কোথাও বসে বাহুবলী দেখলাম। মাহেশমতি বন্দনা যেই না করতে যাব, খেয়াল হল সিয়াচেন মে হামারে জওয়ান মর রহে হে। তিন ঘন্টা শেষে বাস্তবে ফিরে এলাম।

আমি সেই সিনেমা বানাই যে সিনেমা দর্শককে এক অলীক জগৎ এর গল্প বলে। যেখানে সবসময় সত্যের জয় হয় আর দুশমন মার খেতে খেতে মারা যায়। যেখানে দারুণ সুন্দরী নায়িকা চুমু খেয়ে যায় আর প্রেম এর কথা বলতে নায়ক দারুন গান গায়। আনি সেই সিনেমা করি।

না আমি সিনেমা এযাবৎ বানাই নি। এ কথা গুলো মনমোহন দেশাই সাহেব এর। প্রখ্যাত পরিচালক। মশলা ছবির।

আমাদের রোজনামচার জীবনে মশলা বড় কম। কিন্তু নাটকীয়তা সবাই ভালোবাসি। তারাও যারা বাস্তবতার দোহাই দেয়, ক্ষুধাতুর শ্রমিকদের নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র মন দিয়ে দেখে রোববার।