কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Monday, November 28, 2016

বিলম্বে বিমান উদয়: প্রফেট চদ্রিল

চন্দ্রিল দা কাল আনন্দবাজার পত্রিকার উত্তর সম্পাদকীয়তে বিমান বাবু বা সিপিএম এর কোমায় চলে যাওয়া নিয়ে যা লিখেছিল, তাতে বহু দলীয় সদস্য কাঁচা খিস্তি শুরু করেছিল। হেব্বি সব চকচকে গাল দেওয়া হচ্ছিল ও কেন এই হরতাল ঠিক তার বিবরন দেওয়া হচ্ছিল। প্রবীণ নেতা কে খাস্তা করা তাদের অতি তাত্বিক মস্তিস্কে রক্তক্ষরনের সামিল ছিল।

আজ সর্বহারার মহান নেতা শ্রী বিমান বসু মেনে নিলেন যে হরতাল বিফল হয়েছে, খুব কম সময়ে ডাকা এই হরতাল সফল হয়নি। তাঁদের বিচার বিবেচনা করে দেখতে হবে এই নিয়ে। এটি একটি জটিল বিষয়। অত সহজ নয়।

সাবাস কমরেড! বিশাল এক বেড়াল ফোলালেন, ভাবলেন বাঘ হয়েছেন, লালন পালন করলেন তাকে, বিপ্লবী ভাষণ ছাড়লেন সর্বহারার প্রতিনিধি হয়ে ওঠার আর শেষমেষ ঘ্রোঁয়াও ক্রমাগত মিয়াওঁ এ বদলে গেল। তারপর ঢোঁক গিলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। সেই কবে জননেতা বুদ্ধ বাবু হাত জোর ক রেছিলেন, ব্যস হা রে রে করে মধ্যমেধা সব নামিলো ক্ষমা চাইতে। যাই হোক সরি দাদা।

বিশাল সব নেতা। পাড়ার মোড়ের বিপ্লবী। দল বলেছে হরতাল হবে, বেশ! চল শালা বিপ্লবের কল এসেছে। এই পবিত্র কাজ যদি না করতে পারি তবে মেম্বারশিপ নিয়ে কি হল এই অশান্ত সময়ে?

মনে করিয়ে দিই, কাল আনন্দবাজার এ প্রফেট চন্দ্রিল লিখেছিলেন যা ফাস্ট হুবহু তুলে দিলাম।

" কী বিপদে না পড়লাম! যারা মোদীর এই নোট বাতিলের যাত্রাপালার পক্ষে, তারা সব্বাই হয়ে গেল বিজেপি। আর যারা বিপক্ষে, সব্বাই হয়ে গেল তৃণমূল। আমরা পড়ে রইলাম মাঝামাঝি, ঝুলন্ত, ঝুল। একটু-আধটু চোপা করছি, ভান করছি যেন আমাদের ঘটেও বুদ্ধি খেলছে জিভে গজাচ্ছে চাড্ডি জ্বালাময়ী দড়াম, আমাদেরও আছে কর্মসূচি নেওয়ার ধক ও প্ল্যান। কিন্তু কী করব? মমতা আগেই এমন পালে হাওয়া লাগিয়ে বসে আছেন, এত দ্রুত উনি হইহইটা শুরু করে দিতে পারেন, তত দুদ্দাড়িয়ে আমাদের মিটিং-এর ঘরের তালা অবধি খোলা হয় না। কাজেই যত ক্ষণে উনি কোমর বেঁধে এটিএম-এর সামনে, তত ক্ষণে আমাদের ঢুলুন্তি মগজ সিধে হয়ে শুধু চোখ গোলগোলিয়ে দেখছে মাত্তর, লেনিনকে পেন্নাম ঠুকে প্রাথমিক গলা-খাঁকারিই শেষ হয়নি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমরা ভেবে বের করলাম আশ্চর্য ঘনঘটা: বন্‌ধ ডাকব। লোকে শুনে শিউরে উঠল। আজি হতে শতবর্ষ আগেও এই পার্টি প্রতিবাদ করতে হলে সহস্র মাথা চুলকে সেই বন্‌ধই ডাকত, এখনও চিন্তা-দেওয়ালে মাথা কুটে সেই বন্‌ধই ডাকছে। কী ব্রেন-বিবর্তন!"

কি ভুল বলেছিল? আজ তো আপনি নিজেই বলে দিলেন ভুল ভুল সবই ভুল। পুঁজিবাদী আনন্দবাজার খঁক খঁক করে খিল্লি নিচ্ছে নিশ্চয়। টিএমসি তো কবেই দুদু ভাতু করে দিয়েছে আপনাদের, এখন সর্বহারার ও খিল্লি টপিক না হয়ে যান।

সবাইকে মিডিয়া ফ্রেন্ডলি হতেই হবে কেউ দিব্বি দেয়নি কিন্তু একই মানুষ যদি একই ভুল বারবার করে?

মশাই আপনারা নিজেরা একে কনফিউজড টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি, তার উপর স্থবির আর মিনিটে মিনিটে স্বীকার করেন নিজেদের ভুল। বুকে হাত রেখে বলুন তো ফিদেল বা লেনিন এরকম লিডার হলে বিপ্লব কি হত? জ্যোতি বাবু যদি সিদ্ধান্তহীন হতেন ২৫ বছরভর লাল পতাকা
থাকতো?

এরপর ও বন্ধু বলবেন মমতা কেন এত সফল? কেন মোদি হিট? লিডারশীপ বাওয়া!

দেওয়াল লিখন পরিস্কার! মায়োপিয়া থাকলে চশমা পাল্টান আর পারলে ধারনা। দুনিয়া বদলেছে, আম্বানিরা এখন অনেক ক্ষমতাশালী, আপনি রিপ ভ্যান উইংকিল। বাঁশি বাজাচ্ছেন যাচ্ছেতাই আর তাতেই ইদুঁরের দল পিল পিল করে গা এ গা ধা এ ধা মেলাচ্ছে। কেউ মাথা খাটাচ্ছে না। কেউ অন্য সুর এ কথা বলছে না।

ফিদেল আপনি ঘুমান। আমরা এই অবস্থা দেখবো বলে জেগে থাকি। স্বপ্ন দেখি।

পুনশ্চ: আমি শ্রেণিশত্রু, পাতিবুর্জোয়া, তিনোমূলি বা চাড্ডী নই। আরো খারাপ। আপনারা অযাচিত ভালো। হবেন না। প্লিজ।

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Tuesday, November 15, 2016

| সাব-অল্টার্ন,নোট পাল্টান ও কোল্যাটেরাল যা কিছু |

আমাদের প্রধানমন্ত্রী ধাপ্পা দিতে হেব্বি ভালোবাসেন। ছেলেবেলার ধাপ্পা খেলা। পেছন থেকে অতর্কিতে এসে কাউকে চমকে দেওয়া আর সে সত্যি মিথ্যে বুঝে ওঠার আগেই সজোর চ্যাঁচানো "ধাপ্পায়ায়ায়ায়ায়ায়া"।

দেশের সাংবাদিককুল ও এডিটর রাতের হ্যান্ডওভার ও প্ল্যানিং এ যখন একগুচ্ছ ক্লিনটন ও ট্রাম্প এর কভারেজ গুঁজছে, তখনই মোদীজির ধাপ্পায়ায়ায়ায়ায়ায়া। চমক। বুকের সাইজ নিয়ে কোন প্রশ্ন হবেনা। এই ধাপ্পার কোল্যাটেরাল ড্যামেজ নিয়ে হবে।

৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার ফলে আমাদের সমস্যা হবে। তবে যাদের পেটে সপাটে লাথিটা পরলো তারা আমাদের চারিপাশ ছাইপাশ মানুষগুলো।যারা দিন আনে, দিন খায়।

আজ আমার চোখের সামনেই যেরকম দেখলাম। লোয়ার পরেল এর টাইমস নাউ অফিস এর ক্যান্টিন টা বিশাল। ইটি নাউ,জুম, রেডিও মিরচি সহ সবার খাবার জায়গা। মহান প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক ঘোষণা শেষ, নিউজ আওয়ার ও খতম, খেতে এসেছি ক্যান্টিন এ। আমার সাথেই খাবার জন্য দাঁড়িয়েছে এক রাজ মিস্ত্রি। ৫০ টাকার মিল খাবে। রাতে সাংবাদিক সহ সবাই চলে গেলে এদের কাজ করতে হয়। এখানেই খাবার খায়।

আজ একটা ৫০০ টাকার চকচকে নোট, একটাই নোট নিয়ে খেতে এলো। ভাত, চারটে রুটি, ডাল, আলুর দম, একটা সব্জি, ভাজা, মিল্ক পাউডার এর ক্ষীর। ৫০ টাকা। রাজা প্রজার পুষ্টিকর খাদ্য।

সবে ৫০০ টাকাটা দিয়েছে, আমাদের ক্যান্টিন এর ছেলেটি বলে উঠলো,  ক্যা ইয়ার টিভি ভি নেহি দেখতে? ৫০০ টাকা আর বৈধ নয়। এই সব নোট বাতিল। ব্যাংক এ বদলে আনো। ১০০ টাকার নোট দাও, খাবার নাও বা নাম লিখে রাখছি, কাল দিও টাকা। মিস্ত্রির মুখ চুন, এক পেট খিদে। জন ধন প্রকল্পে নাম আছে কিনা জানা নেই। আপাতত ধন বলতে ৫০০ টাকা। খালি পেটে মাথা বেশি গরম হয়। শোনা যায় নাকি এরকমই এক নভেম্বর মাসে পেটে খিদে নিয়ে কিছু মানুষ দুম করে বিপ্লব করে ফেলেছিল। 

মিস্ত্রি ভদ্রলোক কাঁপতে কাঁপতে চেঁচিয়ে উঠলো,  সারাদিন কাজ করবো না টিভি চালিয়ে বসে থাকবো? তারপর এক ঝটকায় পেছন ঘুরে হন হন করে হাঁটা দিল। ক্যান্টিন এর ছেলেটি কিন্তু শ্রেণিশত্রু নয়। ও ডাকার চেষ্টা করেছিল আর মাইরি বলছি, প্রাথমিক বমকে যাওয়া কাটিয়ে উঠে আমিও বাইরে বেড়িয়ে খুঁজেছিলাম কিন্তু সে কোথাও নেই। এখন নোওয়ান লুক ব্যাক ইন Anger হয়তো।

এতটা লিখলাম একটাই কারনে। ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার ফলে আমাদের সমস্যা হবে। তবে যাদের পেটে সপাটে লাথিটা পরলো তারা আমাদের চারিপাশ ছাইপাশ মানুষগুলো।যারা দিন আনে, দিন খায়ে।

দয়া করে অতি চালাক হয়ে কেউ নিজের আশে পাশের সব্জি মাসি, মাছওয়ালা, কাজের দিদিকে এই সুযোগ এ ৫০০ টাকা গছিয়ে দিয়ে নিজে দায়মুক্ত হবেন না। বিশ্বাস করুন ওই লাথি টা ক্যাঁৎ করে লাগবে পেটে। এক পেট খিদে, সারাদিনের ঘাম, অপমান, রক্তবমি করে ফেলতে পারে। মোছার লোক থাকবে না।

আসলে আমরা যারা ছেঁড়া, ফাটা নোট প্রথমেই ওদের গছিয়ে দিই, চুরি গেলেই ওদের ঝোলা সার্চ করাই, আবার প্রবল খাটিয়ে মোক্যাম্বোতে খাওয়াতে নিয়ে যাই তারাই এটা করবো।

আমরা যারা আজন্ম মধ্যবিত্ত হয়ে গাড়িয়া থেকে বিবাদি বাগ মিনিতে করে গেলাম, মেট্রোতে বিহারি মুটে উঠতে দেখলে নাক শিঁটকে গেলাম আর বলাবলি করতে থাকলাম তাদের থুতু ফেলার বদ অভ্যাস নিয়ে, আমরা যারা কেউ দেখছে না ভেবে নাকের পোটা বা চিউয়িং গাম হোটেলের দেওয়াল বা রেঁস্তরা টেবিল এ চিপকে দিই, আমরা যারা পূজোর বাজার করতে কোয়েস্ট মল যাই আর ফেরার পথে গড়িয়াহাটার ফুটপাথ থেকে মালতীদির জন্য তিনশো টাকার শাড়ি কিনি।তারাই এটা করবো।

আমরা বাসে উঠেই ঘেমো গন্ধকে ঘৃণা করিনা? বা যে গ্রামের মেয়েটি প্রথম বাসে উঠে টানা বমি করে চলে তাকে উপদেশ দিই না টাক্সি করে যাওয়ার? সাথে আবার জানালার ধারে বসার টোটকা ও তো দিই বিনামূল্যে।

কারন আমরা ধনীদের ভয় পাই। গরীবের পেছন মেরে শান্তিতে ঘুমাই। একটা ডায়েট কোক ৩০ টাকা দিয়ে কিনি, থাকে ২০০এমএল, বাকিটা প্যাকেজিং। আর একটা ডাব ২৫টাকা শুনলেই বাব্বা, এত দাম!!

৫০০ টাকার সাথে সাথে এ সব ও যদি বদলানো যেত।

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

Wednesday, November 2, 2016

আপনাকে

জুন মাসের মাঝামাঝি যখন আমি আনন্দবাজার গোষ্ঠীর খবরের চ্যানেল এবিপি আনন্দ থেকে বিদায় নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করছি, এক সন্ধেবেলা শুলনাম অভীক বাবু, আনন্দবাজার গোষ্ঠীর প্রধান সম্পাদক পদত্যাগ করেছেন। আমাদের কিছু এসে যাবেনা কিন্তু বাঙালির অনেক কিছু এসে যাবে।

চমকে গেছিলাম শুনে। মেনে নেওয়া টা সহজ নয়। আজন্মকাল আনন্দবাজার এর শেষ পাতায় নাম, মাটিতে লুটোচ্ছে ধুতি, বিশাল সম্পাদকীয় প্রতিপত্তি, আদ্যোপান্ত ভিক্টোরিয়ান বাঙালি। আমার মত সাব-অল্টারনেটস দের কাছে ব্যাপার একটা। মানে যেটা হ্যাংলামির কাছাকাছি আরকি।

অভীক বাবুর চলে যাওয়া আমায় বুঝতে শিখিয়ে ছিল যে নিজের ভাবনা চিন্তা, ধ্যান, ধারণা আরো আরো ফ্লেক্সিবিল ও সময় এর সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখতে হবে। পাথর এর মত স্থিত, স্থবির হয়েছো কি কম্পালসারি ওয়েটিংরুম বরাদ্দ।

আরবসাগর এর পাশে কমলা মিলস নামক যে বিশাল জায়গাতে টাইমস নাও এর অফিস সেখানেও সেই মন্ত্রেই দিক্ষিত হয়েছিল একটা গোটা প্রজন্ম।  যাদের বয়স ২৩ থেকে ৩৩। হ্যা এটাই টাইমস নাও এর সম্পাদকীয় মানব সম্পদের গড় বয়স। টেবিল রিপোর্ট করছে, ফোন এ প্রধান অভিযুক্তকে চোখা চোখা প্রশ্ন ছুঁড়ছে, দেশের এজেন্ডা সেট করছে, শো এর গেস্ট ঠিক করছে পাকিস্তান বা লন্ডন থেকে বা কোন নেতা কে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে।

এই সব টাই ২৩ থেকে ৩৩। এখানে সংবাদমাধ্যম এর সংগা রোজ বদল হয়েছে, ব্যাকরণ দুমড়েছে, লুটিয়ান দিল্লীর ফর্মালিটি বদলে এসেছে মধ্যবিত্ত স্বপ্ন দেখা কিছু দামাল ছেলে মেয়ের দাপাদাপি।  যারা ইংলিশ, হিন্দি, বাংলা, অহমিয়া, তামিল মিশিয়ে এক অদ্ভুত ভাষাতে কথা বলে, বাকিটা হাসি আর লজ্জা,ঘেন্না, ভয় ভুলে খবরদারি করা।

পুরোটাই শিখিয়েছিল যে, সাহস জুগিয়েছে যে, ছক ভেঙে চোখ এ চোখ রেখে প্রশ্ন করার, সে ১৮ই নভেম্বর ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেল।

দু বছর সাংবাদিকতা পড়েছি কলকাতায়, কিন্তু আসল শেখাটা বোধহয় প্রাথমিক ভাবে আনন্দবাজার আর বাকিটা ওই অহমিয়া ভদ্রলোক এর কাছে। বিশ্ববিদ্যালয় এ যা শিখিয়েছে আমার শহর তাতে ৮০র দশকের দূরদর্শন এ কাজ মিললেও মিলতে পারে।

অশান্ত সমুদ্রে সাঁতার কাটা সহজ নয়। কিন্তু সেটাই তো নতুন প্রজন্মকে শেখাতে চেয়েছে এরা। প্রজন্ম যারা ফোর জি তে আছে, যারা ডিজিটাল স্ট্রিমিং করে, হ্যাশট্যাগ এ কথা বলে আর ভবিষ্যৎ এর ৭০% মিডিয়া যারা নিয়ন্ত্রণ করবে।

এদের সেলাম ঠুকলে কি খুব আদিখ্যেতা হবে?