কবির কদর নেই জীবদ্দশায়, কবির কবর দেয়া হয় না।
থাকলে,এপিটাফ কদর দিত/কোন নিষিদ্ধ প্রেমিকার মতো।

mayukh speaks

My photo
kolkata, west bengal, India
A media professional and a wanderer by passion. Blogger and social observer. loves to watch world films and hear different music genre.

Tuesday, November 28, 2017

| গেঁয়ো যোগী বঙ্গে ভিক পায়না, পায় একরাশ বিস্মৃতি |

| গেঁয়ো যোগী বঙ্গে ভিক পায়না, পায় একরাশ বিস্মৃতি |

----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

যোগীর আগে নিদেনপক্ষে একটা আদিত্যনাথ বা ভৌগলিক দূরত্ব সৃষ্টি হলে তবে তার দাম বাড়ে বঙ্গে। যেরকম বিদেশী পুরস্কার আনলে সত্যজিৎ ভালো ছবিকরিয়ে।

দূরত্ব সম্ভ্রম জন্ম দেয়। আপনার আমার চারপাশে ফ্যা ফ্যা ঘুরলে আপনি আবাল কোটা। বিলেতফেরত হলে আপনি সাহেব। বাঙালি ভাবে। ভাবাতে ভালোবাসে।

কমরেড পল্টু বা কমরেড বিশু গোছের সম্ভাষণ শুনলেই হ্যাটাযুক্ত হাসি পায়। শ্লেষ ও থাকে তাতে। কিন্তু গলায় বাড়তি ব্যারিটোন এনে কমরেড নামুদ্রিপাদ বা নিদেনপক্ষে কমরেড কারাত বললেই যার পর নাই তুষ্টি পাই। কমরেড লেনিন বা স্ত্যালিন হয়, সন্তু বা সিরাজ হয় না।

তেনজিং, হিলারি পাঠ্যবিষয় হয়। রাধানাথ শিকদার নাম বললে চোখ কপালে তুলি। অথচ গোটা এভারেস্ট এর মাপ-জোক থেকে ত্রিকোণমিতিক গণনা করে এই বান্দাই সর্বপ্রথম নির্ণয় করেন যে, এই শৃঙ্গ বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। তবে নামাঙ্কনের সময় নাম দেওয়া হয় তার সাহেব জর্জ এভারেস্টের নামে।

যদিও জর্জ স্বয়ং তাঁর নিজের নাম ব্যবহারের বিরোধী ছিলেন কারন এভারেস্ট নামটি হিন্দিতে লেখা যায় না ও ভারতীয়রা উচ্চারণ করতে পারেন না। এরপরেও বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম তাঁর নামানুসারে রাখা হয় মাউন্ট এভারেস্ট। মাউন্ট রাধানাথ বা মাউন্ট শিকদার হলে আমাদের নাক শিঁটকোতে হত।

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম কোথায় যেন পড়েছেন তাই না? মহেঞ্জোদারোর নাম শুনেছেন।উনি মহেঞ্জোদাড়ো পুনরাবিষ্কার করেন। অথচ কাজপাগল এই মানুষটির সারাজীবনে জুটেছিল নানাবিধ দুর্ভোগ। জওহরলাল নেহরু অব্দি তাঁর  ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া বইতে মহেঞ্জোদরো-র দুনিয়া কাঁপানো প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের কৃতিত্ব পুরোটাই দিয়েছেন জন মার্শালকে। অথচ এ ক্ষেত্রে রাখালদাসের কাজকেই আজ মান্যতা দেওয়া হচ্ছে সারা বিশ্বে। মৃত্যুর একশো বছর বাদে।

পৃথিবীর দ্বিতীয় ও ভারতের প্রথম টেস্টটিউব বেবী তৈরি করে এক বাঙ্গালী ডাক্তারকে আত্মহত্যা করতে হয়। ড. সুভাষ মুখোপাধ্যায়। পৃথিবীর জানতে ৫০ বছর লেগে যায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর অবদান। সার্দান অ্যাভিনিউর ছোট ফ্ল্যাটে সামান্য কিছু উপকরণ আর একটা ছোট ফ্রিজ ব্যবহার করে আইভিএফ-ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে তৈরি করলেন দুর্গা।

বদলে প্রথমে তাকে বদলী করে দেওয়া হলো কলকাতা থেকে বাঁকুড়ার একটি হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে। যাতে তিনি পরবর্তীতে তার গবেষণা চালিয়ে যেতে না পারেন। এরপর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তবু চারতলার সিঁড়ি বেয়ে তাকে রোজ কাজ করতে যেতে হতো। জাপান থেকে তার কাজের উপর একটা সেমিনারে বক্তৃতা করার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। চুড়ান্ত অপমান সহ্য করার পর ১৯৮২ সালে ১৯ শে জুন আত্মহত্যা করেন। বাঙালির ভাগ্যিস তখন স্টার জলসা ছিল না। তাই এক হপ্তা তবু আলোচনা হয়েছিল তারপর ফের ভিনদেশি মুগ্ধতা।

এরা ও বাংলার হ্যালোজেন হতে পারতো। এরা খুন হয়েছিল অবহেলায়। রোজ ট্রামে বাসে ধর্মতলার মোড়ে যে ভাবে অজস্র প্রতিভা লাশ হয়ে ঘরে ফেরে। মাসকাবারি বাজার, ফ্ল্যাটের ইএমআই, মেয়ের নতুন জামা কেনার চাপে দম আটকে বাঁচে।

দূরত্ব সম্ভ্রম জন্ম দেয়। পাত্তা কম দিলে নাকি গুরুত্ব বাড়ে। আধা লেখা বুঝলে নাকি সে লেখা কালজয়ী। পাঁচতারা হোটেলে বাঙালির ধারকবাহক সেজে একে অপরের পিঠ চাপড়ে দিলেই তা অভূতপূর্ব সিনেমা, অকল্পনীয় কবিতা।

জ্যোতি বাবু বলতেন, মানুষ ও নেতার মধ্যে সামান্য হলেও দূরত্ব থাকা দরকারি। নেতা যদি প্রজার মত বারবার ভুল করে, ক্ষমা চায়, দিকভ্রান্ত হয়, তবে তার প্রতি সম্ভ্রম কমে।

কি জানি তাই হয়তো বাঙালিকে কসমোপলিটান  প্রমাণ করতে বাংলাভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে খিল্লি করতে হয়। উদার প্রমাণ করতে নিজভূমে হিন্দিতে কথা চালাতে হয়, রেগে গেলে বা শিক্ষিত জাহির করতে ইংলিশ আউড়াতে হয়।

গাঁড় মেরেছে বলাতে কোন সফিস্টিকেশন নেই। ফাক শব্দতে আছে। যেরকম শতাব্দী প্রাচীন তৃপ্তি বারে পুরনো কাঠের চেয়ারে বসে রাম, কাতলা মাছভাজা, ফালি ফালি ভিনিগারে চোবানো আদা, নুন, সেদ্ধ ছোলা শেষ করাতে কোন আভিজাত্য নেই। ওহ! ক্যালকাটা বা মোক্যাম্বোতে আছে। সম্ভ্রম, পচে যাওয়া বাঙালিয়ানাকে ফর্মালিন মাখিয়ে পরিবেশন করতে ফাইন ডাইনিং শেফ লাগে। পাইস হোটেলের রাঁধুনে ঠাকুর কবেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।

©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ